Man cannot live alone. মানুষ একা বাস করতে পারে না। কথাটা সার্বজনীন এবং আদিম যুগ থেকে আধুনিক সভ্যতায় এখনও চলমান । হিংস্র পশুপাখির হাত থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য মানুষ সংঘবদ্ধ হতে থাকে , খাদ্য সংগ্রহের জন্য পশু শিকার করা , কৃষি কাজ করা, এমনকি সমষ্টিগতভাবে পাহাড়ের গুহায় একই স্থানে বসবাস শুরু করে। এভাবে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে কালে কালে গঠন হয় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধতা যা থেকে সৃষ্টি হয় United Nation বা জাতিসংঘ। আর সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা হলো যে কোন সমাজের একটি মূল স্তম্ভ। এ স্তম্ভের উপরেই নির্ভর করে সমাজের ঐক্যতা ও আদর্শ। এমন কি ধর্মীয় আচার-আচরন ধারণ, অনুশীলন ও প্রতিপালনের শক্ত ভীত তৈরী করার জন্য প্রয়োজন সামাজিক একাত্মতা ও সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা। সামাজিক সংগঠনগুলো সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই মানুষ সামাজিক জীব হিসাবে সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়ানো ও সম্পর্ক রক্ষা করা সময়ের দাবী। দার্শনিক এরিস্টটল বলেন, ” Pleasure in the job put perfection in the work.সংগঠন মানুষের নেতিবাচকতা, হতাশা ও দুঃখবোধ দূর করে মানুষকে ইতিবাচকতা, আনন্দ ও সম্প্রীতিতে সাহায্য করে। সংগঠনের অপর নাম ঐক্যবদ্ধতা,সামাজিক ঐক্যবদ্ধতা জীবন চলার পথে একে অপরকে সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরী করে। জীবনের প্রতি পলে পলে জীবনকে উপভোগ ও উপলব্ধি করার পূর্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় প্রাণে প্রাণে ঐক্যের সেতুবন্ধনে । ঐক্যবদ্ধতা জাতি, সমাজ , পরিবারকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে ।এ প্রসঙ্গে ছোটবেলার এক গল্প মনে পড়ে গেল, এক বৃদ্ধের পাঁচ সন্তান ছিল। বৃদ্ধ একদিন সবাইকে ডেকে বললো, তোমাদের একটা করে লাঠি দিলাম, তোমরা ইহা ভাঙ্গতে পার কিনা চেষ্টা কর? নিমিষেই সন্তানেরা লাঠিখানা ভেঙ্গে ফেলল। এবার বৃদ্ধ পাঁচখানা লাঠি একত্রে করে সকল পুত্রদের ভাঙ্গতে আদেশ করলো। তখন কেউ আর শত চেষ্টা করেও পাঁচখানা লাঠি এক সাথে ভাঙ্গতে পারলো না। অতএব বৃদ্ধ পাঁচ পুত্রদের উপদেশ দিলেন তোমরা ব্যক্তিগত ভাবে যতই শক্তিশালী হও , একা একা থাকলে সবাইকে যে কোন কেউ ক্ষতি করতে পারবে আর একত্রে থাকলে কেউ তোমাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ভাঙ্গতে বা ক্ষতি করতে পারবে না । শত কষ্ট হলেও “একতাই শক্তি” জেনে আমার অবর্তমানে সকল ভাইয়েরা মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধভাবে বাস করবে তাতে তোমাদের উন্নতি হবে এবং শক্তি ও সাহস বৃদ্ধি পাবে। তাই পবিত্র ত্রিপিটকে বলা হয়েছে “ সংঘং শরনং গচ্ছামি “ – আমি সংঘ বা একতার শরণ গ্রহন করছি । পবিত্র কোরানের আয়াতে উল্লেখ আছে, “তোমরা কল্যানমূলক কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অগ্রসর হও” ( সুরা বাকারা, আয়াত ১৪৮) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নবুওয়াত পাওয়ার আগেই সমাজ সেবার জন্য তরুনদের নিয়ে “হিজফুল ফুজুল” নামে সেবাসংঘ গঠন করেছেন। সারাদেশব্যাপী করোনাকালে মৃতদেহ সৎকারে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দায়িত্ব পালনে সর্বাগ্রে এগিয়ে এসেছেন যথাক্রমে ইকরামুল মুসলিমীন, টিম খোরশেদ, তাকওয়া ফাউন্ডেশন, আল-মারকাজুল, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন আল- রশিদ ফাউন্ডেশ ও মহানগর বৌদ্ধ দাহক্রিয়া কমিটিসহ আরো অনেক সংগঠন। আবার তদ্রুপ এই করোনাকালে মহামারীর দিনে খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজের মধ্যে খাদ্যাভাব প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে দেখা দিলে তখন প্রায় প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে মানবতাবাদী ভিক্ষু সংঘরা নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী প্রদানের সময় সমবেত হয়েছেন স্ব স্ব এলাকার হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান আবালবৃদ্ধরমণীসহ বোরখা পড়া মায়েদেরও একই কাতারে মিলেমিশে একাকার হতে দেখেছি। করোনা মানবসমাজকে সামাজিক ঐক্যবদ্ধতার এক অসাধারণ শিক্ষা চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকাশ পেয়েছে ধর্ম যার যার কিন্তু সামাজিক সংগঠনগুলো সবার। এভাবে যুগের পর যুগ ধরে মানুষের সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধতা সমাজের জন্য পাথেয় হিসাবে সামাজিক সংগঠনগুলো মানবতার কাজ করে চলেছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখি, জার্মানি ইউরোপের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জার্মানিতে নগরায়নের হার অত্যন্ত উঁচু। বার্লিন দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। জার্মান ভাষা তাদের প্রধান ভাষা। জার্মানরা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বহু অবদান। জার্মানিতে বহু অসাধারণ লেখক, শিল্পী, স্থপতি, সঙ্গীতজ্ঞ এবং দার্শনিক জন্মগ্রহণ করেছেন। কার্ল মার্কস, ফ্রিডরিশ নিৎসে, ইয়োহান, ভোলফগাং ফন গোটে এবং টমাস মান জার্মান সাহিত্যের দিকপাল। জার্মান বিশ্বের একটি প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। এটির অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পরে বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম। ১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তি যুক্তরাজ্য, মার্কিনযুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত করে। মিত্র দেশগুলি দেশটিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে। ব্রিটিশ ফরাসি মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা একেকটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা শক্তিগুলির মধ্যকার মিত্রতা ১৯৪০ এর দশকের শেষে ভেঙ্গে গেলে সোভিয়েত অঞ্চলটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তথা পূর্ব জার্মানিতে পরিণত হয়। পশ্চিম নিয়ন্ত্রিত বাকী তিন অঞ্চল একত্রিত হয়ে পশ্চিম জার্মানি গঠন করে। যদিও জার্মানির ঐতিহাসিক রাজধানী বার্লিন পূর্ব জার্মানির অনেক অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিল, তাসত্ত্বেও এটিকেও দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু পূর্ব জার্মান অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক। পশ্চিম জার্মানিতে অভিবাসী হওয়া শুরু করলে ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মান সরকার বার্লিনে একটি প্রাচীর তুলে দেয়।১৯৮৯ সালে পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের জনগন বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলে। এই ঘঠনাটিকে পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদের পতন ও জার্মানির পুনঃ একত্রীকরণের প্রতীক হিসাবে গন্য করা হয়। ১৯৯০ সালে ৩রা অক্টোবর দুই জার্মানি একত্রিত হয়ে জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্র গঠন করে। পুনঃ একত্রীকরনে জার্মান অর্থনীতিতে চরম চাপ পড়লে আনুমানিক ১.৫ ট্রিলিয়ন ইউরো খরচ হয়। এ বিপুল ব্যয়ের মূলে ছিল পূর্ব জার্মানির দূর্বল অর্থনৈতিক কাঠামো। দুই জার্মানিক মুদ্রাকে সমমান করতে গিয়ে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে, ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করতে গিয়ে প্রচুর লোকসান হয়। এখনো প্রতিবছর পূর্ব জার্মানে উন্নয়নের জন্য ১০ বিলিয়ন ইউরো খরচ হয়। এরপরও সম্প্রীতি, সৌহার্দ ও ঐক্যবদ্ধতার জয়কে সকলে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ৩রা অক্টোবর “জার্মান ঐক্য দিবস” পালন করে এবং ঐদিন সরকারী ছুটি ঘোষনা করা হয়।তথাগত বুদ্ধ বলেছেন, সুখো বুদ্ধানং উপপাদো সুখা সদ্ধম্মদেসনা, সুখা সঙ্ঘসস সামগগী, সমগগানং তপো সুখো (পালি, ধম্মপদ-১৯৪)বাংলায় অনুবাদে হয়, জগতে বুদ্ধগনের উৎপত্তি সুখজনক, সদ্ধর্মের উপদেশ প্রচার সুখকর, সংঘের একতা সুখদায়ক, ঐক্যবদ্ধগণের তপস্যা সুখপ্রদ। মহামতি গৌতম বুদ্ধ সুদীর্ঘ ৪৫ বৎসর সদ্ধর্ম প্রচারে একসময়ে সারন্দদ চৈত্যে বৃজি বংশেদের সম্মিলিত করে “সপ্ত অপরিহানীয় ধর্ম্ম ” জাতিকে ঐক্যবদ্ধকরণে উপদেশ দিয়েছেন তা সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য যদি কোন জাতি তা মনেপ্রানে ধারণ ও প্রতিপালন করেন সে জাতি উন্নত জাতিতে পরিনত হবে নিঃসন্দেহে। তা নিম্নে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।প্রথমতঃ সভাসমিতির মাধ্যমে যাঁরা সর্বদা একত্রিত হয় তাঁদের সর্বদা শ্রীবৃদ্ধি হয়।দ্বিতীয়তঃ যাঁরা একতাবদ্ধভাবে সভাসমিতিতে সম্মিলিত হয়, সভাশেষ হলে একত্রে চলে যায় এবং কোন প্রকার নূতন করণীয় উপস্থিত হলে সকলে মিলিতভাবে সম্পাদন করে, তাঁদের সর্বদা উন্নতি হয়ে থাকে এবং অবনতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।তৃতীয়তঃ যাঁরা সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে নূতন কোন প্রকার দূর্নীতি চালু করে না, পূ্র্ব প্রচলিত সুনীতির উচ্ছেদ সাধনও করেনা এবং প্রাচীন নীতিগুলি যথাযথভাবে পালন করে চলে – সর্বদা তাঁদের শ্রীবৃদ্ধিই হয়ে থাকে, পরিহানী হয় না।চতুর্থতঃ যাঁরা বয়োবৃদ্ধদের সৎকার করে, তাঁদের প্রতি গৌরব প্রদর্শন করে, সম্মান ও পুজা করে এবং তাঁদের আদেশ পালন করা উচিত বলে মনে করে – গাহর্স্থ্য জীবনে সর্বদা তাঁরা উন্নতি লাভ করে থাকে।পঞ্চমতঃ যাঁরা অন্য কুল বধূ ও কুলকুমারীদিগকে বলপূর্বক ধরে এনে স্বীয় গৃহে আবদ্ধ করে রাখে না তাঁদের প্রতি কোন প্রকার অন্যায় আচরন করে না- গাহর্স্থ্য জীবনে সর্ব্বদা তাঁদের শ্রীবৃদ্ধিই হয়ে থাকে, কখনও পরিহানী হয় না।ষষ্ঠতঃ যাঁরা স্বগ্রামের বাইরে কিংবা অভ্যন্তরে পূর্ব্ব পুরুষদের নির্ম্মিত যে সমস্ত চৈত্য আছে, সেইগুলির যথাযথ সংস্কারসাধন করে, রীতিমত পূজা-সৎকার করে এবং সৈই চৈত্যগুলির উদ্দেশ্যে পূ্র্বপুরুষদের প্রদত্ত সম্পত্তি নিজেরা ভোগ না করে বিহারের কাজেই ব্যয় করে থাকে – গাহর্স্থ্য জীবনে তাঁদের উন্নতিই হয়ে থাকে, কখনও অবনতি হয় না।সপ্তমতঃ যাঁরা অর্হৎ ও শীলবান ভিক্ষুদিগকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি (চতুপ্রর্ত্যয়) দান দিয়ে সেবা ও রক্ষা করে, তাঁদের সর্বদিক সুখসুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়, দেশে সে সকল অর্হৎ আগমন করেন নাই কি প্রকারে তাঁদের আনয়ন করা যায় সেই চিন্তা করে এবং স্বগ্রামে অবস্থিত অর্হৎ ও শীলবান ভিক্ষুদের নিরাপদে অবস্থান করছেন কিনা সব্বর্দা সন্ধান নিয়ে থাকে- গাহর্স্থ্য জীবনে সর্বদা তাঁদের শ্রীবৃদ্ধিই হয়ে থাকে, কখনও পরিহানী হতে পারে না।তথাগত বুদ্ধের উপরোক্ত উপদেশসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন করে প্রাচীন ভারতে বৃজি বংশ অজেয় এবং উন্নত জাতিতে পরিণত হয়েছিলেন। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, “সংঘ শক্তি” তথা ঐক্যবদ্ধতা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সমাজের প্রতিটি ছোট বড় সামাজিক সংগঠন জাতির বৃহত্তর স্বার্থে একত্রীভূত হয়ে সমাজ বির্নিমানে কাজ করলে সমাজের বহুবিধ কল্যান সাধিত হবে অবশ্যম্ভাবী।পরিশেষে অনুভবে বলতে চাই, সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার সর্বপ্রথম ঐক্যবদ্ধতার কোন বিকল্প নেই। আর এই ঐক্যবদ্ধতার মূলভিত্তি হচ্ছে শিক্ষা । যে জাতি শিক্ষা- দীক্ষা- জ্ঞান-গরিমায় যত উন্নত সে জাতি তত বেশী দেশপ্রেমের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ। শিক্ষিত জাতি সর্বদিকে অনেক সমৃদ্ধ ও নৈতিক গুণসম্পন্ন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজসেবা, গণসচেতনতা, সুনাগরিকত্ব, নৈতিকতা, ধর্মীয় অনুশাসন, শিল্পসাহিত্য, গঠনমূলক সমালোচনা, দায়িত্বশীলতা, প্রবীন- নবীনের সম্পর্ক, মূল্যবোধ জাগ্রত করা এবং নেতৃত্বগুণসম্পন জাতি গঠনে সামাজিক সংগঠনগুলো পাড়ায়, মহল্লায়, ওয়ার্ডে, ইউনিয়নে, গ্রামে, উপজেলা এবং জেলা ভিত্তিক গড়ে উঠলে , সাথে “চেইন-অব-কমান্ড” ফলো করলে সমাজে যে অবক্ষয় ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে তা সহজে চিহ্নিত করে সমস্যা দূর করা সম্ভব বলে মনে করি। যুব সমাজকে খেলাধুলায় ও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় বেশী বেশী সম্পৃক্ততা করা হলে সৃজনশীল মেধার বিকাশ হবে এবং অপকর্ম থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। তাই মান-অভিমান ভেদাভেদ ভুলে একে অপরকে সম্মান করে , সমাজ বিনির্মাণে , উন্নত সমাজ তৈরীর চেষ্টায় ছোট-বড় সব সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে মিলেমিশে কাজ করে , সমাজের অনিয়মগুলোকে চিহ্নিত করে এবং সমাজের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর , আদর্শিক ও মানবিক সমাজ উপহার দেওয়ার চেষ্টা করাই হোক আমাদের আজকের লক্ষ্য। সাম্যের আর দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচিত বিদ্রোহী কবিতার লাইন দিয়ে শেষ করছি,”যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত”।
যেই গ্রামে বিহার যত
সেই গ্রামে বিভাজন তত।
যেই সমাজে নেতা যত,
সেই সমাজটি তত ক্ষত।
যাহা ঐক্য নাশে অবিরত।
প্রতিবন্ধক শত শত।
বর্তমানে বড়ুয়া সমাজে যে বিষয়টি বার বার পরিলক্ষিত হয় তা হল বিহার কমিটি, ভিক্ষু-গৃহীদের নেতৃত্বের বারাবারি। বিহার কমিটি আর দায়ক ভিক্ষু নিয়ে বর্তমানে প্রতিটি বৌদ্ধ গ্রাম দু-তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে । আগে প্রতিটি গ্রামে পূর্বপুরুষদের স্থাপিত বিহারগুলো ছিল সার্বজনীন। সেখানে ব্যাপক উৎসাহ আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে গ্রামের সকলের উপস্থিতিতে সকল অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন হতো । কিন্তু সার্থান্বেষী নাম স্বর্বস ভিক্ষু ও গৃহীবাবুদের কবলে ক্রমেই সেই পূর্বপুরুষের ঐক্যতায় স্থাপিত বিহারগুলোতে চরম মতানৈক্য দেখা দেয় ও ভিন্ন একটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। বংশ গৌরব আর মাতব্বরি ফলানোয় ব্যাঘাত ঘটায়, একে অন্যকে মেনে নিতে পারে না। ফলে তাদের পক্ষ-বিপক্ষের রোষে উভয় সংকটের মুখে পরতে হয় ভিক্ষুকে। একপক্ষ আলাদা মন্দির স্থাপন করে, সেখানে তাদেরকেও সগৌরবে সমর্থন করতে অন্য ভিক্ষুরাও উঠে পরে লাগে। উভয় পক্ষের সমস্যার সমাধানের দিকে না গিয়ে আয়োজন করেন নানা অনুষ্ঠানাদি, অন্যপক্ষও তারই জবাবে চালিয়ে যান নানা অনুষ্ঠান, তাও আবার একই দিনে। এভাবেই আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান আর কীর্ত্তন চলতে থাকে দুইভাগে। কার আয়োজন কত ভালো হয়, কে কত সফলতার সাথে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলো, এমন অভ্যন্তরীণ তর্ক বিতর্কও চলে। মোটকথা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো দুইপক্ষের শক্তি সামর্থ্য আর হিংসা প্রদর্শনের এক অভিন্ন মাধ্যম হয়ে ওঠে।
এভাবেই ধর্মের নামে গ্রামবাসী দিনের পর দিন একে অপরের শত্রু হয়ে যায়। সামাজিকভাবেও তারা একে অপরকে বয়কট করতে শুরু করেন। এক পক্ষের কেউ অন্যপক্ষের কারো বাড়িতে বিয়ে, শ্রাদ্ধ বা যে কোন সামাজিক বা ধর্মীয় অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে থাকেন। একপক্ষের লোকজন অন্যপক্ষকে তাদের এলাকার রাস্তা ব্যবহার করতে দেবেন না, অন্যপক্ষের লোকজনের দেয়া দোকান থেকে কোন পন্য কিনবেন না, এমনি করে দুই পক্ষ সম্পূর্ণরুপে একে অপরের শত্রু হয়ে ওঠেন।মাঝেমাঝে দুইপক্ষে ছোট-খাটো মারামারি হাতাহাতিও চলে, যা থানা কোর্টকাচারি অবদি গড়ায়। কয়েক দফায় মীমাংসা শালিশ হলেও, কে কার কথা শোনে!!!
ধর্ম অবশেষে আমাদের কি দিল? একজনও ভক্তি শ্রদ্ধা নিয়ে বিহারে যান না। নীতি নৈতিকতার কোন চর্চা নেই। বাড়লো হিংসা বিভেদ আর হানাহানি। ধর্ম সমাজকে ভিন্ন করলো, নতুন জেনারেশনের মাঝে একটা আকাশ সমান দেয়াল তৈরী করে দিল, আর শত্রুতার বিষে ভাই বন্ধু হয়ে গেল শত্রু। বড়ুয়াদের অনৈক্যতার সূচনা হয় মূলত এখান থেকে। একারনে বড়ুয়ারা কোনো দিন ঐক্য থাকতে পারবে না। ঐক্য না থাকার কারণে যারা জ্ঞানী গুণী নিবেদিত প্রাণ এদের সম্মান ও মান্যতা কালে কালে উপেক্ষিত হয়েছে, হচ্ছে, এবং আগামীতেও হইবে। এমনকি জাতিয় পর্যায়েও স্বঅধিকার আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে। কিছু অদূরদর্শী গতানুগতিক ভিক্ষু ও গৃহীরাই এরজন্য দায়ী। এদের হাতেই সূচনা হয় পক্ষ বিপক্ষ
সমর্থন করা। এর মধ্যেই কিছু কিছু ভিক্ষুরাও এমন একটি পক্ষ বিপক্ষের কোন্দলে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগকে ভিক্ষুজীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন মনে করেন। তাই তারাও বুদ্ধাদর্শ ভুলেগিয়ে বাবুদের অধীনে অনুষ্ঠানাদিতে যোগাদান সহ দায়কদের ফাং গ্রহন-বর্জনে একচোখা হয়ে পরেন। আজ সংঘরাজ নিকায়ের কোন ভিক্ষু যদি সমাজ ও জাতীয় কল্যানে এগিয়ে আসে মাথের নিকায়ের পক্ষের ভিক্ষুরা বলবে ভিন্ন কথা, আবার অন্য দিকে মাথের নিকায়ের কোন ভিক্ষু যদি সমাজ ও জাতির কল্যানে ব্রতী হন সংঘরাজ নিকায়ের ভিক্ষুরা বলবে ভিন্ন কথা। এছাড়া উচিহ্লাবাদী, শীলানন্দবাদী, দিপাংকরবাদী, শরনংকরবাদী ইত্যাদি ইত্যাদি, এক দল এক দলকে ভিন্ন চোখে দেখে। এদের সবাই সূচি পবিত্র পরিশুদ্ধ বলে নিজ নিজ ভক্তরা শ্লোগান তুলে। আর দায়ক ভক্তরা পূর্বাপর চিন্তা না করে অর্থবলে বিহারের পর বিহার, সংঘটনের পর সংঘটন প্রতিষ্ঠা করে।
সবার দাবী তাদের নিজ নিজ মান্যতাই শ্রেষ্ঠ। তারই সূত্র ধরে একগ্রামে পূর্বে অনেক গুলো বিহার থাকার পরও আবার নতুন বিহার হচ্ছে। কেউ যদি মনে করেন বিহার নির্মান পুন্যের কাজ বুদ্ধ প্রসংশিত। তবে তাতে আমার দ্বিমত রয়েছে। আপনি যদি এতো ধার্মিক হয়ে থাকেন তাহলে বলব- পুরোনো জীর্ণশীর্ণ পুর্বপুরুষদের স্থাপিত বিহারগুলো সংস্কার করুন আর না হয় যে গ্রামে ধর্মচর্চায় প্রতিকুল, যোগাযোগ বিছিন্ন, বিহার ভিত্তিক ধর্মচর্চা সুলভ্য নয় সেসব গ্রাম ও নগরে বিহার স্থাপন করুন তাতে আমার হাজারো সাধুবাদ। তবে দলাদলি আর নেতৃত্বের অপব্যবহারে পাশপাশি নতুন বিহার নয়। তবে হ্যাঁ, বিশ্বমানের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হলে ভিন্ন কথা। উভয় পক্ষের ভিক্ষুদের উচিত তাদের স্ব স্ব গৌরব অক্ষুণ্ণত রেখে জাতিয় ঐক্যের দূরদর্শী হয়ে কিছু স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া গৃহীনেতৃত্বের কবলে নিজেদেরকে বিলিয়ে না দেওয়া এবং বিহার কমিটির অধীনস্থ পঙ্গুত্বতা বরণ না করা। বিনয় লঙ্গিত সঙ্ঘ সদস্যেকে শাস্তি বা বর্জন করা। সাঙ্ঘিক কল্যাণমুখী কর্মে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখা। প্রতিটি বিহারের প্রভাতী ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ব্যয় সঙ্কোচন করে অসুস্থ ভিক্ষুদের চিকিৎসা, ফাং স্থাপন করা, ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরিশেষে আমাদের মনে রাখা উচিত- ভিক্ষুরা জাতির চালিকা শক্তি ও উত্তোরণের চাবিকাঠি। অনুরোধ থাকবে- কেউ বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে না নেওয়ার।
#লেখাটি Subrata Barua কর্তৃক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ।
সবার জীবনে প্রেম আসে নীরবে- সরবে , কারণে-অকারণে চলমান জীবন প্রবাহে । তাই কিংবদন্তী শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের গানে প্রেমের অনুভূতিটা জাগিয়ে তুলে মনে মনে বলি – প্রেম একবার এসেছিল নীরবে , আমারই এ দুয়ার প্রান্তে , সে তো হায় মৃদু পায় , এসেছিল পারিনি তো জানতে । বেশ কিছুদিন ধরে করোনা কালে সোশ্যাল মিডিয়ার এমন মন কাড়া কিছু আবেদনময়ী ছবি দেখে মনের একান্ত অনুভবে , ভালোবাসা ও প্রেম নিয়ে লেখার অনুভূতি জেগে উঠলো। ভালোবাসা পরের কল্যানে , পরহিত , স্বতন্ত্র , সার্বজনীন এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এক অনুভূতির নাম। ইহা মানবের কল্যানে নিবেদিত এক মহান ব্রত।ভালোবাসার কোন চাওয়া – পাওয়া বা দেনা – পাওনা নেই। মানবতার দায়িত্ববোধ থেকেই পরের কল্যানে নিজেকে সঁপে দেওয়া। আর প্রেম হলো ভালোবাসার একটা অংশ বটে কিন্তু সংকীর্ণ , স্বার্থপরতা , আত্মহিত , আত্মসুখ , আত্মতৃপ্তি ও কামনা বাসনাপূ্র্ন। ভালোবাসা হয় একপক্ষ থেকে আর প্রেম হয় উভয় পক্ষ থেকে। ভালোবাসার জন্য প্রেম আবশ্যক নয় কিন্তু প্রেমের জন্য ভালোবাসা অপরিহার্য। ভালোবাসা আর প্রেম সারাজীবন শব্দ দুটোর ব্যাপক ব্যবহার করে থাকি।কোনদিন গভীরভাবে ভেবে দেখা হয়নি শব্দ দুটোর আসলে পার্থক্য কিরূপ ! আপাতদৃষ্টিতে ভালোবাসা আর প্রেমের মধ্যে তেমন কোন পাথর্ক্য দেখা যায় না। কিন্তু ভালোবাসা আর প্রেমের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। “ভালো” হলো বিশেষণ আর “বাসা” ক্রিয়া তার অর্থ হলো উত্তম, শুভ, হিতকর, নীরোগ, সুস্থ, সৎ, নিরীহ, সুন্দর, দক্ষ বা কল্যান কামনা করা। এক কথায় ভালোবাসা শব্দটির অর্থ গভীর ও বিশাল। ভালোবাসা শাশ্বত ও চিরস্থায়ী। ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ মানব কল্যানে নিজেকে আত্মদান করা। মানব জীবনকে সমৃদ্ধ ও সামাজিক কাছে নিজেকে আত্মনিয়োগ বা সমর্পণ করা যায় একমাত্র ভালোবাসা বা পরের কল্যান সাধনে। ভালোবাসা সাধারনত এক তরফা হয়ে থাকে এবং বহুজনহিতকর ও মোহহীন। ভালোবাসাতে দুই পক্ষের কোন স্বার্থপরতা বিদ্যমান থাকে না। প্রধান ভূমিকা হলো আত্মত্যাগ তাই ভালোবাসা পরহিতকর, মঙ্গলজনক ও কল্যাণকামী। ভালোবাসাটা হচ্ছে মানুষের মনের আবেগ অনুভূতির একটা স্বাভাবিক রূপ। মানুষের প্রতি মানুষের বন্ধুত্ব , শ্রদ্ধাবোধ , মমত্ববোধ ও আত্মীয়তার বন্ধন থেকেই ভালোবাসার সৃষ্টি। ভালোবাসা একেক সময় একেক রকম রূপ , রং ও বৈশিষ্ট্যময়। মাতাপিতার সাথে সন্তানের ভালোবাসা , ভাই-বোনের ভালোবাসা , ছোটদের প্রতি বয়োজ্যেষ্ঠদের ভালোবাসা , সমাজে প্রতিটি স্তরে একে অপরের প্রতি আন্তরিকতার সহিত সুখে দুঃখে একাত্মতায় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ভালোবাসা ব্যতীত এ বিশ্বায়নের যুগে পূর্ব-পশ্চিমে ও উত্তর-দক্ষিণে সর্বত্র যে আত্মার বন্ধনে মিতালী চলছে তা কি আদৌ সম্ভব ছিল ! সত্যিকারের ভালোবাসা কোনদিন ভুলা যায় না বা দূরেও সরে যায় না। এ প্রসঙ্গে কবিগুরু রবি ঠাকুরের ভাষায় ,” নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে ,হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে হৃদয়ে রয়েছ গোপনে”।অন্যদিকে প্রেম হলো মনের প্রশান্তি বা মনের একান্ত চাওয়া। প্রেম হলো বিশেষ্য এর অর্থ বন্ধুত্ব , স্নেহ , শ্রদ্ধা , ভক্তি , প্রীতি , আসক্তি , আকর্ষণ , টান , পছন্দ , অনুরাগ , প্রণয় , সুহৃদ , প্রণয়ের পাত্র বা ভালোবাসা , স্বামী বা ভাললাগে এমন ব্যক্তি বা বিষয়। সাধারনত মনের একান্ত চাওয়া , আত্মহিত , আত্মসন্তুষ্টি থেকেই প্রেমের জন্ম বা প্রেমের উৎস। প্রেমটা অবশ্যই দু’পক্ষের হতে হয় কোনভাবেই এক পক্ষ থেকে প্রেম হয় না। প্রেমের গভীরতা বা আবেদন ভালোবাসা থেকেও অনেক বেশী। প্রেম ভালোবাসার একটা রূপ। মনের মত মন খুঁজে সত্যিকারের প্রেম করা এক ধরনের শিল্প বৈকি। প্রেম কখন কার জীবনে আসে বা হানা দেয় তা বলা মুশকিল। তাই বলা হয় , ” Love at first site” যে কোন বয়সে যে কোন সময় প্রেম মানুষের মনে দোলা দিয়ে যায়। অনেকটা মনের আনন্দ বা খোয়াকও বললে কটুক্তি হবে না। প্রেমে বয়স , সম্পর্ক , জাত , লিঙ্গ , সৌন্দর্য তেমন কিছু আসে যায় না মনের ভাললাগাটার প্রাধান্যই অন্যতম। ভালোবাসা ও আসক্তি বেড়ে যাওয়ার হলো প্রেম। দুইটি মন যখন খুব কাছাকাছি , জানাজানি ও বোঝাপড়ার ঐক্যমতে পৌঁছে তখন শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও তাদের মধ্যে প্রেম সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় প্রেম বিষয়টা বলার লোভ সামলাতে পাচ্ছি না। কর্মময় জীবনে দীর্ঘ পরিক্রমার প্রাণপ্রিয় এক কলিগের সাথে এমন হৃদয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি যা আমি আর ঊনার জীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। পূর্ব-পশ্চিম আমাদেরকে তেমন আলাদা করতে পারিনি। কোন কাম্যতাও নেই শুধু বিশ্বাস আর আস্হা বা বোঝাপড়া। অনেক স্বামী -স্ত্রী মধ্যেও এমন মিল আছে কিনা সন্দেহ ! লিঙ্গ আর বয়সটা নাই বা বললাম আপাতত। এটা হলো প্লেটোনিক প্রেম ( Platonic Love) বা শুদ্ধতম ভালোবাসা আবার আত্মিক ভালোবাসাও বলা যায়। এ প্রেম শরীরী নয় , অশরীরী। Platonic এ শব্দটির উৎপত্তি মূলত প্লেটোর “প্লেটোনিজম” মতবাদ থেকে। আবার প্লেটোর ছাত্র এরিস্টটল বলেন , যে প্রেম রাজাধিরাজের মতো দুহাত ভরে শুধু দিয়ে যায় , নেয় না কিছুই। যৌনতা ও কামগন্ধহীন শুধু হৃদয়ের বন্ধনেই এই সর্বোৎকৃষ্ট প্রেমকে লাভ করার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর দুঃসহ যন্ত্রনাসমূহও নীরবে সহ্য করতে হয়।কোন রকম চাহিদা বিহীন অনন্ত ভালোবাসা। যা ভালোবাসার সবোর্চ্চ পর্যায়ে এক গভীর ও প্রচন্ড ভালোবাসা ।এমন প্রেমকে স্বর্গ সুখ মনে হয় তা হলো Friendly Love.প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ তাঁর “পৃথক পাহাড়” কবিতায় বলেছেন , ” কতোটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়”। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে আজ অবধি ও মানব জন্মের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা। পৃথিবীর প্রায় সকল সমাজে এই প্রেমকে শাশ্বত এবং পবিত্র বলে ধরে নেওয়া হয়। পৃথিবীর অমর প্রেমগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়।পৃথিবীর প্রথম নর-নারী আদম-হাওয়া পরস্পরের প্রেমে পড়েছিলেন। এ ছাড়া শ্রী রামচন্দ্রের পবিত্রতা স্ত্রী সীতার প্রেমে পড়েছিলেন স্বয়ং রাবন। এজন্য তিনি সীতাকে অপহরণ করে অশোককাননে বন্দী রেখে দেহ-মন পাবার সমস্ত কলাকৌশল অবলম্বন করেছিলেন। বৌদ্ধশাস্ত্রে উল্লেখ আছে , কর্কশ বাক্যজনিত কারণে কর্মের বিপাকে আম্বপালি বৈশালী রাজ্যে রূপের অনন্য খ্যাতি সম্পনা সুন্দরী রমণী হয়ে জন্মেছিলেন। যাঁর চেহারা এত সুন্দর – যে কেউ শুধু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। বৈশালী লিচ্ছবী রাজকুমারগণ তাঁকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়েছিলেন। এমতাবস্থায় , বৈশালীর রাজা এ মহাবিতর্ক নিরসনে রাজকুমারদের গণিকা করে তাঁর প্রাপ্যতা নির্ধারণ করে দিলেন। মগধের রাজা বিম্বিসারও আম্রপালির প্রেমে মুগ্ধ ছিলেন। তাঁদের গোপন প্রেমে এক পুত্র সন্তান জন্ম দেন। সেই পুত্র বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজিত হয় , তিনি নিজের পুত্রের ধর্মসুধা শ্রবণ করে আম্রপালি ভিক্ষুণী হয়ে অচিরে অহর্ৎফল বা জ্ঞানচক্ষু লাভ করেন , দুঃখ হতে চিরমুক্তি হন এবং কর্মবিপাক উপলব্ধি করেন। যাহোক , সুন্দরের প্রেমে রাজা , মহারাজা ও রাজপুত্রগন কেউ বাদ পড়েন না কিন্তু সমাজে প্রেম ভালোবাসার স্বীকৃতি পাওয়াটা আজো কঠিন রয়ে গেল। অপূর্ব সুন্দরী হেলেনের প্রেমে পড়েছিল গ্রীক পুরাণের প্রেমিক পুরুষ প্যারিস। হেলেন তখন রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। তাই এই ভালোবাসা তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় স্বীকৃত ছিল না। ফলে ধ্বংস হয়েছিল ট্রয় নগরী। ইতিহাসে প্রেমে মিলনের চেয়ে বিরহটাই বেশী দেখা যায়। কথায় আছে , বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না ইহা দূরেও ঠেলে দেয়। যেমন সাইকি – কিউপিড (গ্রীক) , রাধা- কৃষ্ণ (ভারত উপমহাদেশ) , লাইলী- মজনু (পারস্য) , বেহুলা- লখিন্দর (বাংলাদেশ) , রোমিও – জুলিয়েট (রোম) , ওডিয়াস – পেনেলোপ (গ্রীক) , পিরামাস- থিসবি (গ্রীক) , পিগম্যালিয়ন – গ্যালাটিয়া (গ্রীক) , দেবদাস- পার্বতী (ভারত) , ভিক্টোরিয়া- আলবার্ট (বিট্রেন) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। শত বিরহের মধ্যেও ইতিহাস কাঁপিয়ে দেওয়া প্রেম কাহিনী অনেক আছে। তদ্মধ্যে অমর প্রেমের মহাকাব্য রচনা করেছেন মোগল সম্রাট শাহাজাহান তাঁর পরমাসুন্দরী স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম মমতাজ এর জন্য উৎসর্গকৃত সমাধির স্মৃতিসৌধ প্রেমের তাজমহল। আজো স্বগৌরবে নান্দনিক স্থাপত্যকলা ও নির্মাণশৈলীর জন্য পৃথিবীতে সপ্তমাশ্চ্যর্যের স্থান দখল করে আছে। সম্রাট শাহজাহান আর মমতাজ বেগম যে সৌধের ছায়ার চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তা আজও পৃথিবীতে বিরল প্রেমের ভালোবাসার নিদর্শন। এ প্রসঙ্গে আমার খুব মনে পড়ে কবিগুরু রবি ঠাকুরের রোমান্টিক উপন্যাস “শেষের কবিতার” প্রেমিক পুরুষ ব্যারিস্টার অমিত রায় তাঁর একান্ত ভালোবাসা কে প্রকাশ করে এভাবে , “কেতকীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধে ভালোবাসাই , সে যেন ঘড়ার তোলা জল প্রতিদিন তুলবো , প্রতিদিন ব্যবহার করবো। আর লাবণ্যর সঙ্গে আমার ভালোবাসা সে রইলো দীঘি , সে ঘরে আনবার নয় , আমার মন তাতে সাঁতার দিবে”।একান্ত অনুভবে , করোনাকালে মমতাময়ী মা যেমন করোনা ভাইরাস মরণব্যাধি জেনেও মাতৃত্বের বন্ধনে সন্তানকে বুকে নিতে কার্পণ্য করেনি। আবার জীবন জীবিকার সন্ধানে তরুণ স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের বিদায় বেলায় আলিঙ্গন থেকে দূরে থাকতে পারিনি। শ্বাসকষ্ট লাঘব করার জন্য নির্ঘুম পিতার বুকে সন্তানের ভালোবাসার জায়গাটার অভাব হয়নি তদ্রূপ প্রবীন জুটিরাও প্রেমের শেষ আলিঙ্গন করতে ভুলেননি। ভালোবাসা আর প্রেম একাকার হয়ে বিশ্বজগৎ কে মহিমান্বিত করে তোলে চিরকাল। এই ভালোবাসা ও প্রেমের কারণে রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা , গান , উপন্যাস , প্রবন্ধ , কাব্য , নাটক , চলচ্চিত্র শিল্পকর্ম তথা বিশাল সাহিত্য ও শিল্প জগত।প্রেম ছিল , আছে ও থাকবে পৃথিবীর সাথে একাত্ম হয়ে মিলেমিশে রচনা করবে হাজারো প্রেম কাহিনী।যেই দিন পৃথিবীতে ভালোবাসা ও প্রেম থাকবে না সেই দিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে । কারণ ভালোবাসা ও প্রেম থেকেই তো পৃথিবীর সৃষ্টি সভ্যতা চলমান , তাই প্রেম অম্লান ও ঐশ্বর্যময়। সকলেই ভালোবাসা ও প্রেম নিয়ে বাঁচতে চায় জীবনের শেষ অবধি। তাই পরিশেষে বলি, ” We are most alive , When we are in LOVE “.
প্রবীণের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও নবীনের তেজোদীপ্ত শক্তি : অনন্য পরম্পরা
ঝর্না বড়ুয়া
এক মহাপ্রাণ জীবনের হাত যখন উদীয়মান তেজস্বী দীপ্তমান যুবকের হাতে হাত রাখে তা যে কত দিক থেকে অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ হয় -তা সহজে উপলব্ধি করা যাবে না। কত বিনয়, শ্রদ্ধা, সম্মান, গভীর বিশ্বাস ও ভালবাসার জন্ম এই প্রবীণ ও নবীনের মেলবন্ধন এবং আস্থার এক বিশাল ভরসার জায়গাসহ প্রবীণের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ও নবীনের তেজোদীপ্ত শক্তির এক যেন মহামিলনের মহাক্ষণ। মানবজীবনের মানবিক গুণাবলীর মধ্যে নির্মল আচরণ অন্যতম। পরিবার থেকে এই মানবিক গুণাবলী রপ্ত বা অর্জন করে বড়দের শ্রদ্ধা-সম্মান, প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা ও উদারতা দিয়ে সমাজকে সুন্দর ও ঐক্যবদ্ধ করা যায়। এ মহৎ গুণাবলীতে পরিবারসহ সমাজের সর্বস্তরে সুখ-শান্তি বিরাজ করে। এরূপ সুন্দর মার্জিত আচরনের মধ্য দিয়ে একদিকে নিজেকে পরিশুদ্ধ জীবনের অধিকারী করা যায় অন্যদিকে বড়দের আস্থাভাজন হওয়া যায়। বড়দের ভালবাসা সহজে অর্জন করা যায়। বিনয় মানুষকে সর্বদাই মহান থেকে মহীয়ান করে তোলে। মহামতি গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা থেকে বলা যায় : ‘অসেবনা চ বালানং পন্ডিতানঞ্চ সেবনা / পূজা চ পূজনীয়ানং এতং মঙ্গল মুত্তমং’। ( পালি)। বাংলায় বলা হয়, ‘মূর্খ লোকের সেবা না করা, জ্ঞানী লোকদের সেবা করা ও পূজনীয় ব্যক্তিগণের পূজা করা উত্তম মঙ্গল’। সভ্যতার শুরু থেকে পরিবার বা সমাজে ছোট-বড় সকলে এক সাথে বসবাস করে আসছে। মাতাপিতা, বয়োজ্যেষ্ঠ ভাই-বোন, শিক্ষক -শিক্ষিকা ও অভিভাবকরাই সমাজে বড়জন বা গুণীজন। সমাজ সংসারে বয়োজ্যেষ্ঠরা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। জীবন ও জগৎ সংসারে বড়দের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা-চেতনা অনেক বেশী বাস্তবসম্মত সময়োপযোগী প্রাজ্ঞ, গভীর ও সঠিক চিন্তনের বহিঃপ্রকাশ হয় সমাজ বিনির্মাণের সর্বত্র। সেক্ষেত্রে বড়দের আদেশ-উপদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও বিনয়ী হয়ে জীবন চলার পথকে অনুসরণ করলে সে জীবনও হয়ে উঠে মহিমান্বিত, অনুশীলনীয় ও সমাজে দৃষ্টান্তস্বরূপ। কবিগুরু রবি ঠাকুরের ভাষায়, ‘পাতায় পাতায় আবোল-তাবোল, শাখায় দোলাদুলি, পান্থ হাওয়ার সঙ্গে ও চায় করতে কোলাকুলি ওগো প্রবীন, চলো এবার সকল কাজের শেষে নবীন হাসি মুখে নিয়ে চরম খেলার বেশে’। বৃদ্ধদের সম্মান করা মানবজীবনের গুণাবলীর অংশ। আমরা সাধারণত বয়স ও সম্পর্কের ভিত্তিতে ছোট-বড় পার্থক্য করে থাকি। বয়সের দিক থেকে কেউ বড় কেউ ছোট। সে বিবেচনায় পরিবার সহ সমাজের বয়োবৃদ্ধরাই সবচেয়ে বড়। তাঁরাই সবচেয়ে বেশি সম্মান, ভক্তি ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। আবার বড়-ছোট তারতম্য কখনো কখনো শক্তি – সামর্থ্য, জ্ঞান – বিজ্ঞান, পদ – পদবী, প্রভাব – প্রতিপত্তি, মর্যাদা ও ক্ষমতার উপরও নির্ভর করে। যেভাবে ধরা হোক না কেন, মানবের ধর্মই হলো গুণীর পুজা করা, সম্মান করা ও গৌরব করা। এতে করে যেমন গুণী সৃষ্টি হবে, প্রজন্মরা তা ধারণ করবে, গুণীজনদের জ্ঞান- অভিজ্ঞতা থেকে ধারাবাহিকভাবে ছোটরা তা গ্রহণ করে সমাজকে সুসংহত করবে। সর্বোপরি সমাজে ‘চেইন অব কমান্ড’ রক্ষা হবে এবং সবার মধ্যে মৈত্রীপূর্ণ সুসম্পর্ক সৃষ্টি হবে। সমাজে সুখ ও শান্তি বিরাজ করবে। বড়-ছোট সবার মধ্যে গভীর আন্তরিকতা ও বুকভরা আত্মতৃপ্তি নিয়ে আনন্দের সঙ্গে মিলেমিশে একাত্মা হয়ে পৃথিবীতে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। আর বড়রা ছোটদের স্নেহ, মায়া, মমতার পরশ দিয়ে আদর্শ চরিত্র, নেতৃত্ব, প্রতিভাবান ও সর্বোচ্চ পেশায় প্রতিষ্ঠিত করে থাকেন। এতেই বড়দের সাথে ছোটদের আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। যেখানে ছোটদের ভুল ত্রুটি গুলো বড়দের অভিজ্ঞতা দিয়ে সংশোধন করে আবার নতুন উদ্যেমে পথ চলতে সাহসী করে তোলে। এভাবেই আমরা সকলে একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠি। আবার অন্যভাবে যদি বলি, ‘সম্মান করলে সম্মান বাড়ে’। তাই বিনয় শিক্ষা গৌরবের শিক্ষা। গুনীজনদের সম্মান করলে গুনীরা যেমন আনন্দিত হয় তেমনি আশীর্বাদও করেন। সেই আশীর্বাদ একদিন গুণী হওয়ার পাথেয় হয়। আমরা আসলেই মানুষের গুণকে তেমনভাবে প্রশংসা না করে দোষ গুলোকে বেশী চিহ্নিত করি। যদি মানবের গুণ গুলো বেশি করে ফুটিয়ে তুলতে পারি তাতে করে মানুষের মনে যেমন শান্তি দেওয়া যায় তেমনি গুণ গুলো অনেকের জীবনে প্রতিফলনও হয়। গুণ বিবেচনায় মানুষকে সম্মান করা উচিত। এতে করে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সমাজে শান্তি- শৃঙ্খলা, আন্তরিকতাপূর্ণ সুন্দর ও সুখী জীবন অতিবাহিত করতে পারি। কবি মির্জা ওবায়দুর রহমান এর ভাষায় : ‘প্রবীণ হলেও বলোনা কখনও প্রবীণ মনটা প্রতিটি ক্ষণ রেখো নবীন, প্রবীণের মাঝে নবীন লুকায়িত নবীন থেকেই নবধারা প্রবাহিত’। ব্যক্তিগত অনুভবে বলতে চাই, মানবজীবনে যেসব লোক স্ব স্ব ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মর্যাদা ও সম্মান লাভ করেছেন তারা সকলেই প্রবীণদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজ মেধাশক্তিকে বিকশিত করে নব আবিষ্কার মানব জীবনে মঙ্গল বয়ে এনেছে। কেননা মানুষ বিশ্বাস করে সর্ববিধ গুণের অধিকারী প্রবীণরাই নবীনদের জীবনকে সর্বক্ষেত্রে বাসযোগ্য করে তুলেছেন তাঁহাদের আপন মহিমায়। কারণ প্রবীণরা হলো জ্ঞানবৃক্ষ। যদি বংশানুক্রমিক জন্মগত বৈশিষ্ট্য মানুষের মনোযোগ ও প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হয় তাহলে উত্তম আচার – আচরণ ও সকল ভদ্র আচরণকারী মানুষের সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করবে। প্রথমোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ হচ্ছে জন্মগত আর শেষোক্ত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উপার্জিত কর্মফল ও চিন্তা-শক্তি প্রসূত। আমাদের এই বিচার শক্তির মাধ্যমে সমগ্র জীবনব্যাপী সুকর্ম পরিচালনা করতে পারি। যাঁরা জীবনে শ্রেষ্ঠতা ও উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করেছেন তাঁরা সমাজে উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা বা নক্ষত্র হিসাবে মানবতার পথকে সুগম করেছেন। তাঁরা মানুষের নৈতিকতা ও ধর্মের পথে সঠিক পথ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এভাবে মানবজীবনে প্রবীণ ও নবীনের মধ্যে দূরত্ব দূর করে বংশপরম্পরার গুরু-শিষ্যের মত শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিয়ে এ জগৎ সংসারকে জয় করেছেন গুণীজনরা। আগামী প্রজন্মকে সত্য, সুন্দর ও সঠিকভাবে দিক- নির্দেশনা দিয়ে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে অগ্রসর করতে প্রবীণ ও নবীনের মেলবন্ধনই যথেষ্ট। সকলের চেষ্টা হউক, ” When you do your best, you become better of what you do”. জগতে সকলের মঙ্গল হউক। লেখক : প্রাবন্ধিক
শিক্ষা হলো মানুষের ইতিবাচক পরিবর্তন। যে শিক্ষা মনুষ্যত্ব বিকাশ সাধন করে তাই প্রকৃতশিক্ষা। একজন মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করে থাকে জীবনের প্রয়োজনে। যেশিক্ষা লাভ করে মনুষ্যত্বের পূর্ন বিকাশ ঘটে তাকেই পরিপূর্ণ মানুষ বলা যেতে পারে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে “মানব জীবন দূর্লভ”। এ দূর্লভ মানব জীবনকে সার্থক করতে হলে চাই আর্দশজীবন গঠন। এ আর্দশ জীবন গঠনে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা ধারন ও অনুশীলন করতে হবে।
আপাতদৃষ্টিতে মূল্যবোধ (Values) ও নৈতিকতা (Moral Principles / Code of Conduct) মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু মূল্যবোধ ও নৈতিকতার মাঝে স্পষ্টতই সুনির্দিষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। মূল্যবোধ শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট সমাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভৌগোলিক অবস্থানভেদে এর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়ে থাকে। কিন্ত নৈতিকতা হলো বিশাল অর্জন যা সর্বদা অনুশীলনীয়। এর প্রভাব সার্বজনীন ও গোটা জীবনে। পৃথিবীর সর্বক্ষেত্রে, সর্বস্থানে, সর্ববয়সেও সর্বত্র নিজেকে উপস্থাপন করার একমাত্র শিক্ষা হলো নৈতিকতা। তাই যার মধ্যে একবার নৈতিকতার বীজ বপন করা যায় তিনি সারাজীবন সুন্দরভাবে জীবন অতিবাহিত করে এবং অপরকেও আর্দশময় জীবন গঠনে সহযোগিতা করে। পরিবার সমাজ রাষ্ট্রে সর্বত্র প্রশংসিত হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে ভুটান দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট একটি রাজতন্ত্রের দেশ। ভুটান উত্তরে চীনের অঞ্চল, পশ্চিমে ভারতের সিকিম ও তিব্বতের চুম্বি উপত্যকা, পূর্বে অরুণাচল প্রদেশ এবং দক্ষিণে আসাম ও উত্তরবঙ্গ বিশাল বনভূমি বেষ্টিত সবুজে সবুজে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দৃষ্টিনন্দিত দেশ। ভুটানের মানুষ এক ঘন্টায় ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) গাছ লাগিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। মোট আয়তন মাত্র ১৪,৮২৪ বর্গমাইল। বিশ্বের ১৩৩তম ক্ষুদ্র দেশ। প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্যে। ভুটান জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে চলেছে যুগ যুগ ধরে। দেশটিকে এশিয়ার সুইজারল্যান্ড বলা হয়। যেখানে তামাক চাষ নিষিদ্ধ এবং বিক্রিও নিষিদ্ধ। পর্যটকরাএ আইন ভঙ্গ করলে বিরাট অংকের ফ্রি প্রদান করতে হয়। মোট জনসংখ্যা প্রায় আট লক্ষ। কৃষিনির্ভর দেশটিকে মোট জনসংখ্যার ৭০% লোক কৃষিজীবী। ভুটানের রাস্তায় কোন গৃহহীন মানুষ নেই। যদি কোন কারণে গৃহ হারান শুধুমাত্র রাজার শরণাপন্ন হতে হয়। রাজা জমি ও বাড়ির ব্যবস্থা করে দেন যাতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। তাহলে সহজে অনুমেয় বিশ্বের ১৩৩তম ছোট্ট একটা দেশ অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা না হয়েও কতটা সুখী জীবনের অধিকারী। মহাকারুনিক তথাগত বুদ্ধের দেশিত নৈতিক আর্দশ অনুশীলন ও ধারণ করে প্রতিটি নাগরিক হয়ে উঠেছেন সঠিক আদর্শবান ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। পরিশ্রম, সততা ও ন্যায়পরায়নতা দেশটিকে মহান সম্মান এনে দিয়েছে। সর্ব প্রাণীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বেশির ভাগ লোক নিরামিষ ভোজী ও প্রকৃতিপ্রেমী। কথিক আছে, কোন পর্যটক ভুল করে কোন ব্যাগ বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হারালে আবার সে স্থানে গিয়ে ঐসব হারানো দ্রব্যাদি একই অবস্থায় পেয়ে থাকে। কেউ কারো জিনিস অনুমতি ছাড়া ধরে না। কেমন মহৎ জীবনের অধিকারী ~ তা শিক্ষণীয় ও অনুশীলনীয়। বৌদ্ধিক আর্দশে ও ধর্ম শিক্ষালয়ে তাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেন। মহামতি বুদ্ধের পঞ্চশীল পালন করলে বিশ্বের প্রতিটি নাগরিক হয়ে উঠতে পারে আর্দশিক মানবতাসম্পন্ন ~ তা সহজে প্রমাণ পাওয়া যায় ভুটানের জীবনযাত্রা থেকে। বজ্রড্রাগনের দেশ নামে পরিচিত ভুটান এশিয়ার সবচেয়ে সুখী দেশ হিসাবে খ্যাত।
সমাজতান্ত্রিক নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও আর্দশে বিশ্বাসী ব্যক্তি হিসাবে লেলিন ও মাওসেতুংয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁরা রাশিয়া ও চীনে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। অথচ আজকের দিনে সমাজতান্ত্রিক আর্দশের নেতারা শ্রমিক রাজত্ব প্রতিষ্ঠার শ্লোগান দিয়ে নিজেরাই ভোগ বিলাসী জীবন যাপন করে থাকেন। এমন কি সমাজতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে সরে এসে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার দিকে ক্রমান্বয়ে ঝুঁকে পড়ছে। গনতান্ত্রিক আর্দশ বিকশিত হয়েছিল মানুষের মৌলিক অধিকার যথা বাক স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রকৃত মানবাধিকার গঠনে।
ইউরোপ ও আমেরিকার সমাজে যে মূল্যবোধ বিদ্যমান তা উপমহাদেশের সমাজে বড্ড বেমানান। পশ্চিমের সমাজে লিভ টুগেদার, বিবাহ বর্হিভূত সন্তান জন্ম দেওয়া, মধ্যপান খুবই নিত্য নৈমিত্তিক জীবনের অংশ। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিতে এ সমস্ত বিষয়াদি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না বরঞ্চ নিন্দাযোগ্য। তেমনি আরব সমাজে বহু বিবাহ ও অধিক সন্তান জন্ম দেওয়াও আমাদের উপমহাদেশের সমাজে গ্রহণযোগ্যতা নেয়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে মানব জীবনের মূল্যবোধকে বিচার করলেও প্রকৃত পক্ষে, সেইটাই প্রকৃত মূল্যবোধ হবে যা নিজের জন্য মঙ্গলজনক অপরের জন্যও মঙ্গলজনক এবং মানব সভ্যতাকে সুরক্ষার কর্মে বিরাজমান থাকবে ।
মানব শিশু জন্মের পর থেকে প্রথম পাঁচটা বছর যা শিখে যেমন হাঁটা, চলা, বসা, কথা বলা, খাওয়া-দাওয়া, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, জীবন পদ্ধতি এবং আশে পাশে পরিবেশ সম্বন্ধে ~ সেই শিক্ষা সারা জীবনের সাথে গেঁথে যায়। প্রকৃতির আলো, বাতাস, গাছপালা, ঝড়-বৃষ্টি, নদী- নালা, পশু-পাখী প্রভৃতি থেকেও মানব শিশু শিক্ষা লাভ করে থাকে। অর্থাৎ মায়ের কোলে শিশুর প্রথম হাতে কড়ি। ঘুম থেকে উঠা থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত একটা শিশুর করণীয় কর্তব্যগুলো ধাপে ধাপে মাতাপিতার কাছ থেকে আয়ত্ব করে। এতে করে পরিবারের আর্দশ শিশুর জীবনে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। মাতাপিতার সততা, সৎ চিন্তা, চেতনা ও উপদেশ ধীরে ধীরে শিশু মনে ধারণ করতে থাকে। পরিবারে কথা ও কাজে সমন্বয় থাকা চাই অন্যথা শিশুর কোমলমনে দ্বিধা-দ্বন্ধ দেখা দিবে। তাই পরিবারের কাছ থেকে সর্বদা শিশু সততা, সৎ, সত্যবাদিতা, মনের উদারতা ও ন্যায়পয়ারনতা শিক্ষা লাভ করবে। এভাবে শিশুরা পরিবার, বিদ্যালয়, খেলার সাথী, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে আর এই নৈতিক শিক্ষায় মানব জীবনে মূল্যবোধ জাগ্রত করে ।
শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলেন। সামাজিক, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, রীতিনীতি মূল্যবোধ ও নৈতিকতা তৈরী করেন। দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মানবিক গুনাবলীর বিকাশ ঘটানোর গুরু দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষকরা। যথা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরুতে ধর্মীয় উপদেশ, জাতীয় সংগীত এবং শরীর চর্চার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচী আরম্ভ করা হয়ে এতে করে শিশু মন থেকে ধার্মিকতা বা ধর্ম পরায়ন হওয়ার বীজ বপন করা , জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে দেশপ্রেম সৃষ্টি করা এবং শরীর চর্চার মাধ্যমে শরীরকে শক্ত মজবুত ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর শিক্ষা দিয়ে থাকে। শিক্ষা বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে শিশুদের মননশীলতা বিকাশে সৃজনশীল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। যেমন বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগিতা, ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, বির্তক ও উপস্থিত বক্তব্য, কবিতা আবৃত্তি, গানের প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোর পর্যালোচনাসহ আরো নানামুখী সংস্কৃতি কর্মে উদ্ভুদ্ধ করে শিশুর মানসিক বিকাশ সাধনে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। এভাবে আজকের প্রজন্ম আগামী দিনের সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে।
গুরুজনদের সন্মান করা, নমনীয় আচার আচরন করা, একে অন্যের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা, স্নেহ-মমতার মধ্য দিয়ে মানব প্রেম তৈরী করা সর্বজনীন মানবতাসম্পন্ন জীবন গঠনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা মাতাপিতা ও শিক্ষকদের দায়িত্ব মূখ্য। বিপদে ধর্য্য ধারণ করা, রাগসংবরণ করা, আপদে বিপদে একে অন্যকে সহযোগিতা করা, বন্ধুবৎসল হওয়া, পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া, পরিশ্রমী ও মনোবল সম্পন্ন হওয়া, সঠিক অধ্যাবসার মাধ্যমে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো, ভদ্রতা, নম্রতা ও দেশপ্রেম দিয়ে জীবন কে জয় করার নিয়মানুবর্তিতা যদি একবার ছাত্রছাত্রীর জীবন পদ্ধতির সাথে পরিচিত করে দেওয়া যায় তাতে মাতাপিতার জীবন সাথর্ক হয়ে উঠে। তাই সৎ নিষ্ঠাবান চরিত্র গঠন ও বিকাশের ক্ষেত্রে শিশুকালের গুরুত্ব সর্বাধিক। সে শিক্ষা পরবর্তীতে গোটা জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
তাই আর্দশ মানবিক মূল্যবোধ তৈরী করার মূল সূতিকাগার হলো পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রত্যেক মাতাপিতা চান তাদের সন্তানরা অনেক বড়ো হোক সমাজে প্রতিষ্ঠিত হউক। যদি মাতাপিতা এমন মানবিক শিক্ষায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারেন প্রতিটি সন্তানকে তাতে মা বাবার আশার যেমন প্রতিফলন ঘটে তেমনি মানবজীবনের সাথর্কতা পাওয়া যায়। সুখী সমৃদ্ধ ও আর্দশ জীবনের অধিকারী হয়ে সমাজে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।
ব্যক্তিগত অনুভবে দেখা যায় প্রতিটি সন্তানের সাথে যদি মাতাপিতাগণ বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে । সন্তানের মনের কথাগুলো আন্তরিকতার সহিত শুনা, তাদের চাহিদা গুলো যথাসম্ভব পূরণ করা, স্কুলের প্রতিদিনের কার্যাদি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষন করা, কোন ধরনের পরিবারের ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে ভালোভাবে তদারকি করা। ভালো, মন্দ, হিতাহিত জ্ঞান সম্বন্ধে সম্যক ধারনা দেওয়া। আশে পাশের পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে কিভাবে নিজেকে খাপ খাওয়ানো যায় তা কাউন্সিলিং করা। উপস্থিত বুদ্ধি তৈরী করা। অনন্ত প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা সময় আলাপ আলোচনা করা । উভয়ে মন খুলে কথা বলে এক কথায় মননশীলতা তৈরী করে দেওয়া মাতাপিতার প্রধান কাজ। কৈশোর বয়সে হরমোন পরিবর্তনে কারনে সন্তানের মাথা কীটে কীটে হয়ে উঠে তখন বিশেষ করে মাকে বেশী করে সন্তানদের সময় দিয়ে শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন সম্বন্ধে ধারনা দিয়ে কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত করা যায় তা খোলামেলা ভাবে আলোচনা করা দরকার। এতে করে সন্তানরা নিরাপদ বোধ করে পরিবারকে। এককথায় ব্যক্তি , সমাজ , জাতি সর্বক্ষেত্রে মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হলে প্রথমে পরিবার থেকে শিক্ষাটা শুরু করতে হবে ।
ব্যাপক অর্থে সন্তানকে জানতে হবে এবং জানাতে হবে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন, মূল্যবোধের কথা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প সংস্কৃতিবোধ এবং ইতিহাস, দেশপ্রেমও মানবতার মহাপ্রেম । তবেই “আলোয় আলো ভরা” হবে আগামী প্রজন্মের এই সন্তানেরা। গড়ে উঠবে সমৃদ্ধ দেশ, সুন্দর বিশ্ব ও আর্দশ মূল্যবোধের মানব জীবন । জীবনে মূল্যবোধ থাকলেই সে জীবন হবে সুন্দর , স্বার্থক , সর্বজন নন্দিত আত্মশুদ্ধির মানব জীবন | তাই প্রত্যেকের কর্ম হোক “DO ALL THINGS WELL” জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।