চীনদেশে চেং নামে একজন নিম্নপদস্থ সরকারী লােক ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ এবং দয়ালু ছিলেন। যদিও তিনি সামান্য বেতনের চাকুরী করতেন, মাঝে মাঝে বাজার থেকে জীবিত মাছ ও মুরগী কিনে ছেড়ে দিতেন।

তার অনেক ছেলেমেয়ে এবং নাতি-নাতনি ছিলেন। চীনদেশের পরিবারে সন্তানাদি বেশী থাকলে তাদেরকে সৌভাগ্যবান পারিবার নামে অভিহিত করা হয়। চেং কোন সময় আজে বাজে খরচ করতে পছন্দ করতেন না।

চেং এর অনেক বয়স হয়েছে, তাই সরকারী অফিস থেকে অবসর নিয়েছেন। বাড়ীতে ছেলে-মেয়ে এবং নাতি-নাতিনীদের নিয়ে তার সময় কাটে । পরিবারের কেউ প্রাণী হত্যা করেন না। বাড়ীর সবাই নিরামিষাশী ছিলেন। এর ফলে চেং এবং তার পরিবারের সবাই ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। চেং এর বয়স এখন প্রায় একশত বছর। তিনি এখনও একজন পূর্ণ যুবকের মত চলাফেরা করেন। তার চোখের দৃষ্টি স্বচ্ছ, গায়ের চামড়া টান টান, চুলগুলি কালাে। এমনকি তার শরীরে বার্ধক্যের ছাপ পড়েনি।

একদিন চেং বাড়ীর সবাইকে ডাকেন। চেং বলেন, আমার বিগত জীবনে, আমি অনেক প্রাণীর জীবন রক্ষা করেছি। ভগবানের কৃপায় আমরা সবাই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। জীবনে, আমি কোনদিন জীবহত্যা করি নাই, এজন্য তােমাদের সবাইকে নিয়ে আমি সুখী আছি। আমার কৃতকর্মের জন্য স্বর্গের রাজপ্রাসাদ হতে আমার ডাক এসেছে। তােমাদের সবাইকে | আশীর্বাদ করছি। আমার উপদেশ মতাে তােমরা জীবন-যাপন করবে। এতে তােমরা। | অনেক উন্নতি করবে। আমার মৃত্যুর পর তােমরা আমার উপদেশ মনে রাখবে এবং অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। জীবনে কখনও প্রাণীহত্যা করবেনা। অন্য কাউকে হত্যা করতে দেখলে তাদের রক্ষা করতে চেষ্টা করবে।

চেং এর কথা শেষ হলে, পরিবারের সকলেই এক মধুর সঙ্গীত শুনতে পায়। তারা কোনদিন এরকম সঙ্গীত শুনেনি। মধুর সংগীতের শব্দটি আকাশ হতে শােনা যায়। কিন্তু আকাশে কিছুই দেখা যায় না। পরিবারের লােকজন উপরে তাকিয়ে আছেন এবং হঠাৎ আশ্চর্য হয়ে দেখেন, স্বর্গ হতে পাঠানাে এক স্বর্ণকারুকার্যময় চেয়ারে চেং বসে আছেন। ঘরের মধ্যে চেৎ নেই। তার সমস্ত শরীর স্বর্গীয় আভায় দিপ্তমান। তিনি অর্হৎ প্রাপ্ত হয়ে তুষিত স্বর্গে চলে যান। পরিবারের লােকেরা অহং চেং এর উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন। করেন এবং সবাই দীর্ঘজীবন লাভ করে সুখে ও শান্তিতে বাস করতে থাকেন।

সুত্রঃ সজল কান্তি বড়ুয়ার লিখা প্রানির প্রতি দয়া বই থেকে সংগৃহীত

error: Content is protected !!