গৃহী সমাজে বুদ্ধের অহিংসা নীতি

by Ven. Jnanasree Bhikkhu
আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কলেজ, Songkhla, থাইল্যান্ড

সর্বদর্শী ভগবান বুদ্ধ সুর্দীঘ পয়তাল্লিশ (৪৫) বছর ব্যাপি মানব সহ সকল প্রাণীর মঙ্গলের জন্য অমৃতময় বাণী প্্রচার করেছেন।সেসব বাণী গুলি যারা পালন করে জীবন যাপন করেন তারা বর্তমান জীবনে সুখ শান্তি লাভ করতে পারে এবং মৃত্যুর পর সুগতি প্রাপ্ত হয় । ভগবান বুদ্ধের অন্যতম বাণী হল অহিংসা পরম ধর্ম অর্থাৎ সকল জীব তথা সকল মানবের প্রতি সমভাবে মৈত্রী প্রদর্শন করা। হিংসা পরিহার করে অহিংসাময় জীবন যাপন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মা যেমন সন্তানের প্রতি অবিরত ভাবে অহিংসা পরায়ন থাকেন ঠিক সেরুপ ভাবে সকল জীব তথা মানবের প্রতি সকল মানব অহিংসা পরায়ন হলে সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে মানবগন সুখে জীবন যাপন করতে পারবে। আজ আধুনিক বিশ্বে বুদ্ধের বাণী আহিংসা না থাকার কারণে মারা-মারি,যুদ্ধ,রক্তপাত সহ বিভিন্ন ভাবে মানুষের জীবন যাপন হয়ে উঠছে বিষাদময়।

অন্য ধর্মের অনুসারিদের কথা বাদ দিয়ে শুধু বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারিদের কথায় আসা যাক,যেহেতু আমরা নিজেরা নিজেদেরকে বৌদ্ধ বলে দাবি করি সেহেতু বুদ্ধের বাণী মেনে চলা আমাদের কর্তব্য । আসলে আমরা কি বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম বাণীটি মেনে চলি বা আমরা বিশ্বাস করি, যদি বিশ্বাস করি তবে আমাদেরকে হিংসা পরিহার করতে হবে। আমরা যারা বৌদ্ধ আমরা কি যথাযথ ভাবে বুদ্ধের বাণী অনুসরণ করছি। আমার মনে হয় আমি করছিনা, যদি আমিসহ আমরা সবাই বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম পালনে রত থাকতাম তবে আজ দেশে, সমাজে,বিহারে, সংগঠনে, নিকায়ে এত ভেদাভেদ কথা কাঁটা-কাটি, মাম লামোর্কাদ্দমা হত না।

গৃহী সমাজে বুদ্ধের অহিংসা নীতির প্রতিপালন:

গৃহীরা সংসার ধর্ম পালন করেন,সংসারে আনন্দ-উল্লাস,হাসি-কান্না,মান-অভিমান,সুখ-দুঃখের মধ্যে দিয়ে মানুষ জীবন যাপন করেন। বুদ্ধের ভাষায় মানব জীবন অতি দুর্লভ,অতীতের অনন্ত অনন্ত পূর্ণ রাশির প্রভাবে মানব জীবন লাভ করা যায়। অনেক বিজ্ঞ ব্যাক্তি বলেন মানব হল সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে জীবন যাপন কালে সমাজকে উন্নত করার জন্য এবং একতা বদ্ধ ভাবে সুখে জীবন যাপনের জন্য সামাজিক সংগঠন বা সমিতি স্থাপন করা হয়। নিজ ধর্ম আচরনের জন্য বিহার ও ভাবনাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সংগঠন মানে আমি যা বুঝি তা হল সকলে একত্রিত হয়ে সমাজের, দেশের ও সর্বসাধারনের মঙ্গল বা হিত সাধন করা। এখন আমাদের বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমাজে বৌদ্ধ সংগঠনের সংখ্যা বাংলাদেশের যত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে প্রায় তার সমান। যদি সকল সংগঠন নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ি উন্নয়নমুলক কর্ম সম্পাদন করতেন তবে বাংলাদেশের বৌদ্ধরা আজ অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ আসনে সমাসিন হতে পারতেন। অহিংসা নীতি যথাযথ ভাবে পালন না করায় আজ আমরা বৌদ্ধরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলিত । বিশেষ করে বৌদ্ধরা, বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে অহিংসা পরায়ন হয় না । যারা সমাজের কান্ডারি বলে সমাজে কান্ডারির আসন দখল করে আছে তাদের অনেকের কারণে সমাজ উন্নতির চেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্ত। আমরা যারা সমাজের উন্নতির কথা ভাবি আবার দেখা যায় তারা নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে সমাজের ক্ষতি সাধন করে থাকি। আজ সে সকল সমাজ সেবকদের কারণে বৌদ্ধ পাড়ায়, বৌদ্ধ বিহারের পাশে, অন্য ধর্মের অনুসারিরা বসত-বাড়ী নির্মাণ করে বিভিন্ন ভাবে আমাদের ধর্মের ক্ষতি সাধন ও ক্ষতি কারক হিসাবে রুপ নিচ্ছে। তারা কি একটু ও চিন্তা করেন না। আমার সামান্য স্বার্থের জন্য আমার ধমের্র-সমাজের-পরিবারের অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। যদি চিন্তায় আসতো তবে ভাই-ভাই এর সাথে বিবাদ করে, অহিংসা নীতি ভুলে গিয়ে অন্য ধর্মের অনুসারিদের হাতে পূর্ব পূরুষের বাড়ী, পুকুর, শশ্মন তুলে দিতো না। এই সকল সমস্যায় চোখ-কান না দিয়ে মৃত বাসরে স্মৃতিচারণ করে –অপরের সমালোচনা করে-সংগঠন করে-বিহার ভিত্তিক রাজনীতি করে কি সমাজের উন্নতি সাধন করা যাবে। আমাদের মাঝে বুদ্ধের অহিংসা নীতি যথাযথ ভাবে  আচরণের অভাবে উন্নতির স্তানে অবনতির আলামত দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু আমরা সরল অন্য ধর্মের অনুসারিদের ক্ষেত্রে,বৌদ্ধরা বৌদ্ধেদের জন্য সরল না, ভাই-ভাই এর ক্ষেত্রে অনেক কঠিন, পিতা-পুত্রের ক্ষেত্রে অনেক কঠিন, আত্মীয়-আত্মীয় ক্ষেত্রে স্বার্থের জন্য অনেক কঠিন রুপধারণ করেন। একে অন্যের প্রতি হিংসা পরায়ন হয়ে অশোভনীয় কার্য্য, অসহনীয় আঘাত অপ্রতাশিত দুঃখ দিচ্ছে এবং দুঃখ পাচ্ছে।

error: Content is protected !!