পূজ্য বনভান্তেকে নিয়ে অলৌকিক ঘটনা
 ============================

বন্দুকভাঙা মৌজায় কুকি উদান্যা (কামিনী কার্বারী পাড়া) নিবাসী জনৈক পুষ্পকান্ত চাকমা (গাপাল্যা) শ্রদ্ধেয় বনভান্তে প্রতি বীতশ্রদ্ধ ও বিশ্বাস কেরতো না। প্রায় সময় বনভান্তের বিরুদ্ধে কুৎসা কথা বলতো এবং নানারূপ সমালোচনাও করতো। কিন্তু তার বাড়ীর অন্যান্য ব্যক্তিরা শ্রদ্ধেয় বনভান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রায় সময় বনবিহারে দানাদি করতো। পুষ্পকান্ত(৭৫) শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে শ্রদ্ধা ও দান করা দূরের কথা কেউ তার সামনে বনভান্তের নাম বললেও রাগ করতো। ১৯৯১ সালে একদিন পুষ্পকান্ত চাকমা মদ খেয়ে ভীষণ নেশাগ্রস্থ হয় এবং আবোল-তাবোল বলে মাতলামী করতে করতে বাড়ীতে টাঙানো শ্রদ্ধেয় বনভান্তের ছবি নিয়ে সুপারী গাছের নীচে ছবিটা ধরে বলতে থাকে, “প্রায় লোকেরা বলে থাকে বনভান্তে অর্হৎ। সত্যিই যদি অর্হৎ হয়ে থাকে, ছবিটা অবশ্যই গাছ থেকে সুপারী পেরে দিতে পারবে।” এভাবে যে দুই-তিনবার ছবিটি উপরে ছুঁড়ে মারতে থাকে। সে আরো বলল, “সুপারী পেরে দিতে পারেনি কি রকম অর্হৎ?” অতঃপর সে উক্ত ছবিটি ঘাটে নিয়ে বলল, “দেখি, পানিতে ডুবালে বুঝা যায় কিনা কি রকম অর্হৎ?” পরিশেষে ঢেকিতে ছবিটি পিষতে থাকে। তখন বাড়ীর সকলেই তাকে অনেক বাঁধা দেয়। কিন্তু সকলের বাঁধা উপেক্ষা করে পা দিয়ে চাপা দিতে থাকে। তবে পায়ে চাপা দেয়ার সাথে সাথেই অনেকটা দৃষ্ট ধর্মের বেদনীয় কর্মস্বরূপ তার পা ব্যাথা করতে আরম্ভ হয়। আরো আশ্চর্যের বিষয় সঙ্গে সঙ্গে তার পা ফুলে যায় ও অবশ হয়ে যায়। এমন কি নাড়াচাড়া করার শক্তিও লোপ পায়।
 
           অতঃপর পুষ্পকান্ত চাকমা গ্রামে নানা ধরণের চিকিৎসা করতে থাকে, কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। উপায়ান্ত না দেখে অবশেষে তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা মিলে পুষ্পকান্ত চাকমার আরোগ্য মানসে শ্রদ্ধেয় বনভান্তের নিকট সবিনয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, এবং সংঘদান করে দেয়। আর আশীর্বাদ প্রার্থনা করে বলল, “শ্রদ্ধেয় বনভান্তে, সে মদ পান করে মাতাল হয়ে এ অঘটন ঘটিয়েছে। অনুগ্রহ পূর্বক তাকে ক্ষমা করে দিন।” শ্রদ্ধেয় বনভান্তে বললেন, “সে আমাকে কিছু করেনি শুধু ছবিটা ভেঙে পায়ে চাপা দিয়েছে।” শ্রদ্ধেয় বনভান্তে তাদেরকে বিভিন্ন ধর্মদেশনা প্রদান করেন। কিছুদিন পর পুষ্পকান্ত চাকমা একটু আরোগ্য লাভ করে। কিন্তু বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় লাঠির সাহায্যে একটু একটু হাঁটতে পারে।
এ ঘটনাটি সংগ্রহ করে দিয়েছেন বন্দুকভাঙা মৌজার ভারবুয়াচাপ বনবিহারের শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ প্রজ্ঞাপাল ভিক্ষু।

(সূত্র: বনভান্তের দেশনা-৩; পৃষ্টা নং ১০৬; লেখক: অরবিন্দু বড়ুয়া)
error: Content is protected !!