চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর পূর্বে-দক্ষিণে চানখালি ও মুরালী খাল দ্বারা পরিবেষ্টিত আনােয়ারা উপজেলার অন্তর্গত, ৮নং চাতরী ইউনিয়নস্থ ঐতিহ্যবাহী কেয়াগড় গ্রাম সুজলা, সুফলা, সবুজ বনানী দ্বারা ঢাকা এক শান্ত পতিরূপ নন্দিত জনপদ। প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদের মতে, খ্রিস্টিয় ৪র্থ ও ৫ম শতাব্দীর বৌদ্ধযুগের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ পন্ডিত বিহার এ গ্রাম থেকে প্রায় ২/৩ কিলােমিটার পশ্চিমে দেয়াং পাহাড়েই (পশ্চিম পটিয়ার বড় উঠান) অবস্থিতি ছিল বলে অনেকের বিশ্বাস। বেশ কয়েক বছর আগে। পশ্চিম পটিয়ার বড় উঠানে পন্ডিত বিহারের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই সময়ে অত্র গ্রামে এক বিরাট কেয়াংঘর ছিল। যেখানে প্রায় শতাধিক ছাত্র অবস্থান করে পন্ডিত বিহারে গিয়ে লেখাপড়া করতেন। সেই কেয়াংঘর থেতে কেয়াগড় গ্রামের উৎপত্তি । কালের বিবর্তনে এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে এই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে কেয়াগড় সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার। যা,বাংলাদেশ সরকারি অফিসে নথিবদ্ধ। এ বিহারটি শুধু অত্র গ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশ বৌদ্ধদের জন্য এক পবিত্র তীর্থ স্থান। কেননা এই গ্রামেরই ধার্মিক উপাসক প্রয়াত ভৈরব চন্দ্র বড়ুয়ার স্বপ্নে প্রাপ্ত আসামের লুসাই পাহাড় থেকে “কালাে গোঁসাই” নামে, একটি মূর্তি এনে এই বিহারেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। অদ্যবধি মূর্তিটি অত্র বিহারে সংরক্ষিত আছে। অত্যন্ত পুত ও পবিত্র মন নিয়ে যে কোন ব্যক্তি কালাে গোঁসাই’র কাছে প্রার্থনা বা মানত করলে অথবা পূজা দিলে ব্যক্তির ইচ্ছে সফল হয়। তা অবিশ্বাস্যভাবে সত্য ও প্রমাণিত। কেননা এই পবিত্র “কালাে গোঁসাই” মূর্তিটি একদা ভেঙ্গে গিয়েছিল। ধড় থেকে মাথা আলাদা হয়ে গিয়েছিল। এই গ্রামেরই আরেক জন ধার্মিক উপাসক প্রয়াত শৈলেন্দ্র লাল বড়ুয়াকে স্বপ্ন দেখালেন যে, ডাবের পানি ও দুধ দিয়ে স্নান করে দিলে আমি আবার জোড়া লেগে যাবাে। সত্যিই! প্রয়াত ধামিক উপাসক ডাবের পানি ও দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে মাথাভাঙ্গা অংশে বসিয়ে দেয়ার পর পরেই নিখুত ভাবে জোড়া লেগে যায়। সেই থেকেই সাধারণ মানুষের কাছে এই বিরল ঘঠনাটি। অসাধারণ হয়ে যায় এবং মনে বিশ্বাস জন্মে। “কালাে গোসাইর” সত্যতা ও গুণ সবদিকে ছড়িয়ে পরে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, শহর থেকে শহরান্তরে। সব ধর্মের মানুষ এই বিহারে এসে পরিদর্শন করে, প্রার্থনা ও মানত করে এবং পূজা দেয়। তাই জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে এই বিহারটি খুবই পবিত্র স্থান। এই বিহারের পবিত্রতা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে সকলেরই আন্তরিক সহযােগিতা একান্ত কাম্য । বিহারের নব রূপকার এবং প্রধান ধর্মীয় পুরােহিত বা অধ্যক্ষ হলেন এই গ্রামেরই জন্মজাত কৃতি সন্তান বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার সহ-সভাপতি, কর্মবীর শ্রীমৎ আৰ্য্যকীৰ্ত্তি মহাথের।
যেভাবে যাবেন ঃ চট্রগ্রাম কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ থেকে আনোয়ারার বাসে করে আনোয়ারা থানার সামনে নেমে । লোকাল CNG পাওয়া যায় কেয়াঁগড় বড়ুয়াপাড়া যাবার। CNG করে সরাসরি আপনি কেঁয়াগড় সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারে যেতে পারবেন । অথবা আপনি চট্রগ্রাম শহর থেকে যেকোনো গাড়ি / CNG করে সরাসরি কেয়াঁগড় বড়ুয়াপাড়া যেতে পারেন । সেক্ষেত্রে একই উপায়ে আপনাকে আনোয়ারা থানার সামনে নেমে যেকোনো মানুষের সহযোগিতায় কেয়াঁগড় বড়ুয়াপাড়া যেতে পারেন ।
বি,দ্রঃ আপনি রাস্তা চিনতে কোনো অসুবিধা হলে ত্রিরত্ন ডট কমের হটলাইন নাম্বার এ কল করতে পারেন । আমাদের হটলাইন নাম্বারঃ ০১৮৪৫৮৩৯০৩১