এক সময় পূজ্য বনভান্তে নিজ আবাসিক ভবনে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় শ্রদ্ধেয় বনভান্তের জনৈক বিশিষ্ট উপাসক এক প্রশ্নের সমাধানের জন্য বন বিহারে উপস্থিত হয়েছেন। শ্রদ্ধা জ্ঞাপনান্তে তিনি বলেন, ভান্তে, স্বর্গ-নরক আছে কি নেই? অনুগ্রহ পূর্বক আমাকে বুঝিয়ে বললে খুবই সন্তুষ্ট হব। বনভান্তে বললেন, তুমি কি জ্ঞান চক্ষুতে দেখতে চাও, নাকি শুধু চর্ম চক্ষুতে দেখতে চাও?

স্বর্গ-নরক আছে। যদি তুমি জ্ঞান চক্ষুতে দেখতে চাও, তবে জ্ঞান চক্ষু উৎপন্ন কর। নিজে নিজেই দেখতে পাবে।

শাস্ত্রে উল্লেখ আছে চক্ষু পাঁচ প্রকার। যথা-
(১) চর্ম চক্ষু (২) দিব্য চক্ষু (৩) জ্ঞান চক্ষু (৪) সামন্ত চক্ষু (৫) বুদ্ধ চক্ষু

(১) চর্ম চক্ষুতে যাহা সম্মুখে প্রত্যক্ষ হয় তাহা মাত্র দর্শন করা যাই কিন্তু কোন কিছুতে আবৃত থাকলে যথার্থ দর্শন করতে অসমর্থ হই। কিন্তু অদেখা বস্তু কত কিছু যে রয়েছে তা আমরা চর্ম চক্ষুতে দেখতে পারি না। যেমন, ধরুন আপনি আমেরিকা, চীন, জাপানে কি হচ্ছে তা দেখতে অসমর্থ।

(২) দিব্য চক্ষু লাভ করতে হলে ধ্যান সাধনা করতে হয়। দিব্য চক্ষু দৃষ্টিতে আপনি শতযোজন দূরে কি হচ্ছে তা দেখতে সমর্থ।

(৩) জ্ঞান চক্ষুতে যেখানে দেখতে ইচ্ছা হয় সেখানে দেখা যায়। স্বর্গ নরক এমনকি একত্রিশ লোকভূমি পর্যন্ত দেখা যাই। এইগুলো ধ্যান-সাধনার মাধ্যমে আয়ত্ব করতে হবে।

(৪) সামন্ত চক্ষুতে সম্যক সম্বুদ্ধের ধ্যান-চিত্ত সম্বন্ধে জানা যায়। যেমন, অনুরুদ্ধ স্থবির সামন্ত চক্ষু বিশিষ্ট ছিলেন। ভগবান বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের সময় শত সহস্র অর্হৎ মার্গফল লাভী ভিক্ষু ছিলেন। সবাই দিব্য চক্ষু, জ্ঞান চক্ষু প্রাপ্ত কিন্তু কেউ তথাগত বুদ্ধের ধ্যান চিত্তের গতিবিধি অবগত নয় অর্থাৎ তাদের সেই সামন্ত চক্ষুর দৃষ্টি জ্ঞানটুকু নেই।(বিস্তারিত দীর্য় নিকায় ২য় খন্ড,মহাপরিনির্বাণ সূত্রে উল্লেখ আছে)

(৫) বুদ্ধ চক্ষুতে দশ সহস্র চক্রবাল(একত্রিশ লোক ভূমিতে এক চক্রবাল) সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে অবগত হওয়া যায়।

সুতরাং, তোমার জ্ঞান চক্ষু উৎপন্ন করার প্রয়োজন।আপনি জ্ঞান চক্ষু উৎপন্ন করুন, নিজেই আপনি সমাধান পেয়ে যাবেন। জ্ঞান-চক্ষুতে অবিদ্যা,তৃষ্ণা ধ্বংস হয় এবং যাবতীয় দুঃখ হতে মুক্তি হওয়া যায়। শ্রদ্ধেয় বন ভান্তের ধর্ম দেশনা শ্রবণ করে উক্ত বিশিষ্ট উপাসক অত্যান্ত সন্তুষ্টচিত্তে চলে যান।

উল্লেখ্য যে, শ্রদ্ধেয় বনভান্তে একদিন আমাকেও বলেছিলেন-চোখখোলা অবস্থায় তেমন কিছু দৃষ্টিগোচর হয় না। বরঞ্চ চোখ বন্ধ অবস্থায় সবকিছু দেখা যাই। তাতে বুঝলাম জ্ঞান চক্ষুর দৃষ্টির পরিধি ব্যক্ত করা মহা কঠিণ ব্যাপার।
অর্থাৎ, বনভান্তে জ্ঞান চক্ষুর কথা বলেছেন।
তাই বনভান্তে বলতেন,,
“জ্ঞান চক্ষু সৃষ্টি কর যদি চাও মুক্তি,
একাগ্র ধ্যান চিত্তে কর শ্রদ্ধা, স্মুতি ভক্তি”।

আমি বলতে চাই, যারা স্বর্গ-নরক অবিশ্বাসী তারা সূত্র পিটকের দীর্ঘ নিকায়ের অন্তর্গত “পায়াসী সূত্র” পড়ুন। এবং অন্ধের মতন প্রলাব না করে জ্ঞান চক্ষু উন্মেলন করুন।

সাধু সাধু সাধু
সকলের সত্যধর্ম ও সত্যজ্ঞান উৎপন্ন হোক,,,

# লেখাটি    কর্তৃক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । 

error: Content is protected !!