১১-৩-৯৩ ইং রোজ বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটির শিক্ষিত চাকমা অধ্যুষিত স্থান ট্রাইবেল অফিসার্স কলোনী। তথায় আয়োজন করা হয় অষ্ট পরিষ্কার ও সংঘদান। উক্ত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন শ্রদ্ধেয় বনভান্তে এবং তাঁর শিষ্যমন্ডলী। রাঙ্গামাটির প্রায় গন্যমান্য ব্যক্তি ও এ মহতী পূণ্যময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শীল গ্রহণ করে প্রথমে অষ্ট পরিষ্কার দান ও সংঘদান সম্পন্ন হয়। ভিক্ষু সংঘের ভোজনের পূর্বে শ্রদ্ধেয় বনভান্তে এক নাতিদীর্ঘ তাৎপর্যপূর্ণ দেশনা প্রদান করেন। দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন- আজ তোমাদের নিকট এক ব্রিটিশ আমলের ঘটনা শোনাব। জনৈক ইউরোপিয়ান সাহেব শুনতে পেলেন কুকীরা কাপড় পরিধান করে না। অথবা কেউ কেউ লেংটি পরিধান করে। তিনি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র হয়ে কতকগুলি প্যান্ট-শার্ট নিয়ে যান। তিনি প্রথমে কুকীদেরকে দেখেই লজ্বাবোধ করলেন। কেননা, সবাই উলঙ্গ। শুধু তিনিই কাপড় পরিধান করা ব্যক্তি। সাহেবের লজ্বা লাগলে কি হবে? তাদের কোন লজ্বা-শরম নেই। তিনি তাদের প্রতি প্যান্ট-শার্ট বিতরন করলেন। কেউ কেউ অসুবিধা বোধ করে খুলে ফেললো। কেউ কেউ মধ্যে মধ্যে পরিধান করে। উক্ত সাহেব তাদের প্রতি ধর্ম প্রচার ও কাপড় পরিধান করতে শিখাতে লাগলেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে সে এলাকায় একজন লোকও কাপড় পরিধান করে না। এমনকি তাদের রাজাও সে অবস্থায় দিন কাটায়।

শ্রদ্ধেয় বনভান্তে ব্রিটিশ আমলের ঘটনা বলার পর বললেন- আজ এখানে আমিও কুকী পাড়ায় ইউরোপিয়ান সাহেব এসেছি। একথা বলার সাথে সাথেই আমরা (সংকলক) সমস্বরে হেসে উঠলাম। আমরা হাসতে দেখেই তিনি বললেন- এটা কতটুকু সত্য কথা তোমরা বল? কেউ কেউ বললেন- ভান্তে এটা সম্পূর্ণ সত্য। বনভান্তের দেশনা চলাকালে কাহারো কাহারো হাসির ঢেউ বন্ধ হচ্ছে না। অন্যদিকে লক্ষ্য করা গেল- মানুষ যত বলবান হোক না কেন ফোড়ায় চাপ পড়লে চেহারায় বিষাদের ছবি নেমে আসে। ঠিক তেমনি কাহারো কাহারো চেহারায় ঘনকালো মেঘ নেমে এল। তিনি দেশনায় বলেন- গরু বা পশু পক্ষী মদ খায়? উপাসকেরা বললেন- না। ভান্তে বললেন- মানুষ মদ খায় ঠিকই। কিন্তু মানুষ মরে পশু পক্ষী হয়ে আসলে আর খেতে পারবে না। ইহজীবনে যত পারে তত খেয়ে নেয়। জনৈক মদ্যপায়ী উপাসকের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন- তুমি বৃদ্ধ হয়েছ। এখনও সময় আছে। মানুষ ভুল করে। কিন্তু সংশোধন করা যায়। শীলরূপ কাপড় পরিধান কর। আজকে শীল গ্রহণ করেছ তা কুকীদের মত ফেলে দিও না। উক্ত সাহেব খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার ও কাপড় বিতরণ করেছিলেন। আর আমি নির্বাণ ধর্ম প্রচার ও শীলরূপ কাপড় বিতরণ করতেছি। লজ্বা-শরম কি জান? তাহল পাপের প্রতি লজ্বা। কাপড়ের লজ্বায় তেমন কিছু যায় আসে না। কাপড় পরিধানে লজ্বাটা নিবারন করা যায়। কিন্তু পাপের প্রতি যদি লজ্বা না থাকে তাহলে কেউ মুক্ত হতে পারে না। তাই তোমরা শীলরূপ কাপড় পরিধান কর। মুক্ত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হও।

শ্রদ্ধেয় বনভান্তে পুনরায় দেশনা প্রসঙ্গে বলেন- পূর্বেকারদিনে বা ভগবান বুদ্ধের সময়ে উপাসক-উপাসিকারা শীল গ্রহণ করে নির্বাণ ধর্ম পালন করত এবং মার্গফল লাভ করে পরম বিমুক্তি সুখ প্রত্যক্ষ করত। কিন্তু বর্তমানে কোন ফল লাভ হচ্ছে না কেন? একমাত্র কারণ হচ্ছে শীলরূপ কাপড় পরিধান করছেনা।

শীলরূপ বস্ত্র পড় অন্যথায় নয়।
ধ্যান, প্রজ্ঞা পূর্ণ হলে তম তৃষ্ণা ক্ষয়।

#লেখাটি  Subrata Barua  কর্তৃক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । 

 

error: Content is protected !!