জাতক
সুমনাদেবীর কাহিনী
“ ইহলোকে নন্দিত হয় “ এই ধম্ম দেশনা ভগবান জেতবনে অবস্থান করিবার সময় সুমনাদেবীর কথা প্রসঙ্গে বলিয়াছিলেন ।
শ্রাবস্তীতে অনাথপিন্ডিকের গৃহে প্রতিদিন দুই হাজার ভিক্ষু ভোজন করেন । সেইরুপ মহাউপাসিকা বিশাখার গৃহেও । শ্রাবস্তীতে নাকি যাহারা দান দিতে ইচ্ছে করেন,তাহারা অনাথপিন্ডিক ও বিশাখা এই দুই জনের অবকাশ লইয়া দানকাজ আরম্ভ করেন। কেন না লোকেরা জিজ্ঞাসা করেন – তোমাদের দানকাজে বিশাখা এবং অনাথপিন্ডিক আসছিল কিনা ? যদি আসেন নাই বলিল বলেন , তাহা হইলে এত সহস্র কোটি দান করিলেও সেই আবার কি দান ? বলিয়া উপহাস করেন । তাহারা উপাসক উপাসিকা দুইজনেই ভিক্ষুসঙ্গের অভিরুচি ও অনুরূপ কাজসমূহ ভাল জানেন । ভিক্ষুদের খাবার সময় সেখানে যদি তাহারা বিচরণ করেন, তাহা হইলে ভিক্ষুরা যতারুচি আহার করিতে পারেন ।তাই সকলে দান দিবার আশাই তাঁহাদিগকে লইয়া যান । এই হেতু তাহারা ভিক্ষুদের নিজের ঘরে পরিবেশন করিতে করিতে লাগিলেন । অনাথপিন্ডিক ও তাহার মেয়ে মহাসুভদ্রকে তাহার কাজের ভার অর্পণ করিলেন এই অবসরে মহাসুভদ্রা ধম্মকথা শুনিয়া স্রোতাপত্তি ফল লাভ করিলেন । অনন্তর তিনি স্বামীর ঘরে চলিয়া আসিলেন । তৎপর তাহার কন্যা ছোট সুভদ্রার উপর এই কাজের ভার অর্পণ করিলেন। তিনিও সেইরূপ ভাবে ভিক্ষুদের পরিচর্যা করিতে করিতে শ্রোতাপন্ন হইয়া পতিকুলে চলিয়া গেলেন ।
অতঃপর তাহার ছোট মেয়ে সুমনাদেবীকে এই কাজে নিযুক্ত করিলেন।ইনি সকৃদাগামী ফল লাভ করিলেন।ইনি না-কি কুমারি অবস্থানতেই ছিলেন।এই সময় তাহার রোগ হয়,রোগাবস্থায় আহারে অনিচ্ছা প্রকাশ করিলেন । মৃত্যুর আসন্ন কাল বুঝিয়া পিতাকে দেখিবার ইচ্ছায় ডাকাইয়া পাঠাইলেন । তখন অনাথপিন্ডিক ছিলেন এক নিমন্ত্রন গৃহে। তিনি মেয়ের রোগসংবাদ শুনিয়াই চলিয়া আসিলেন। আসিয়া মেয়েকে জিজ্ঞেস করিলেন- মা সুমনা , তুমি কি বলিতে চাও ?
মেয়ে তাঁহাকে কহিলেন – কি বলিতেছে কনিষ্ঠভ্রাতা ?
মা প্রলাপ বকিতেছে ?
না, প্রলাপ বকিতেছিনা কনিষ্ঠভ্রাতা।
ভয় পাইতেছ মা ?
না ভয় পাইতেছিনা কনিষ্ঠভ্রাতা।
এতদুর বলিয়াই তাহার মৃত্যু হইল। শ্রেষ্ঠী স্রোতাপন্ন হইলেও মেয়ের মৃত্যুতে শোক সম্বরণ করিতে পারিলেন না । মেয়ের অন্তোষঠীক্রিয়া সম্পাদন করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে ভগবানের নিকট উপস্থিত হইলেন । ভগবান তাঁহাকে কাঁদিতে কাঁদিতে বলিলেন – কি গৃহপতি তুমি যে দুঃখিত মনে অশ্রুমুখে কাঁদিতে কাঁদিতে আসিতেছ ? এইরূপ বলিলে শ্রেষ্ঠী কহিলেন – ভন্তে আমার মেয়ে সুমনাদেবী মারা গিয়াছে।
তবে সেই জন্য এত অনুশোচনা কেন ? তুমি কি জান না, সকলেরই মৃত্যু একান্ত অনিবার্য ?
তাহা ত জানি ভন্তে,আমার মেয়ে যে ছিল লজ্জাশীলা,পাপকে বড় ভয় করিত,আমার এইরূপ মেয়ে না-কি মরণকালে স্মৃতি ঠিক রাখিতে পারিল না , প্রলাপ বকিতে বকিতেই মারা গেল, তাই আমার অন্তরে বড় দুঃখ উৎপণ্ণ হইতেছে।
তোমার মেয়ে কি বলিয়াছিল মহাশ্রেষ্ঠী ?
আমি ভন্তে,তাঁহাকে মা সুমনে বলিয়া ডাকিলাম,সে আমাকে জবাব দিল- – কি বলিতেছে কনিষ্ঠভ্রাতা ? তৎপরে আমি বলিলাম – প্রলাপ বকিতেছ মা ? না, প্রলাপ বকিতেছিনা কনিষ্ঠভ্রাতা । ভয় পাইতেছ মা ?
না ভয় পাইতেছিনা কনিষ্ঠভ্রাতা। এতদূর বলিয়া মারা গেল।
অতঃপর ভগবান তাঁহাকে কহিলেন – মহাশ্রেষ্ঠী তোমার মেয়ে প্রলাপ বকে নাই ।
তবে এইরূপ বলিল কেন ?
তুমি কনিষ্ঠ বলিইয়াই,তোমার কন্যা মার্গফল হিসাবে তোমার হইতে বড় । তুমি নাকি স্রোতাপন্ন , তোমার মেয়ে হইল সকৃদাগামিনী,সে মার্গফলের দ্বারা তোমার বড় বলিয়াই এইরূপ কহিয়াছে ।
তাই নাকি ভন্তে ?
হ্যাঁ গৃহপতি ! তাই আর কি ।
ভন্তে, এখন সে কোথাই উৎপন্ন হইয়াছে ?
তুষিত ভবনে গৃহপতি ।
ভন্তে আমার মেয়ে এখানে জ্ঞ্যাতগণের মধ্যে আনন্দ মনে বিচরণ করিয়া পুনঃ এখান হইতে যাইয়াও আনন্দময় স্থানেই উৎপন্ন হইল ?
অতঃপর বুদ্ধ বলিলেন – হ্যাঁ গৃহপতি, যাহারা অপ্রমত্ত হইয়া বাস করে তাহারা গৃহী হউক, অথবা প্রব্রজিত হউক, তাহারা ইহলোকেও আনন্দিত হয় । এই বলিয়া ভগবান এই গাথাটি কহিলেন ঃ-
কৃতপূণ্য ব্যাক্তি ইহলোক ও পরলোক উভয়ত্রই আনন্দিত হন । আমার দ্বারা পুন্য কর্ম করা হইয়াছে , ইহা স্বরণ করিয়া তিনি আনন্দিত হন এবং সুগতি প্রাপ্ত হইয়া তিনি আরও পরমানন্দ লাভ করেন ।
তথায় “ইহলোকে ”- ইহলোকে আনন্দিত হয় ।
“পরলোকে ” – পরলোকে বিপাক আনন্দে আনন্দিত হয়।
“ কৃতপুণ্যব্যক্তি ” নানা প্রকার পুন্যকর্মের কর্তা ।
“ উভয় লোক ”- ইহলোকে কুশল করিয়াছি, অকুশল করি নাই, এই মনে করিয়া আনন্দিত হয়, পরলোকে কুশল কম্মের ফল অনুভব করিয়া আনন্দিত হয় ।
“ অধিক “বিপাক নন্দন হইল – দেবলোকে যাইয়া সাতপঞ্চাশ কোটি ষাট লক্ষ বৎসর যাবৎ দিব্য সম্পত্তি অনুভব করত তুষিত পুরে অধিকতর আনন্দ পায় ।
গাথা শেষ হইলে বহুজন স্রোতাপন্নাদি ফল প্রাপ্ত হইলেন । সমবেত মনুষ্যগণের পক্ষে ধম্মদেশনা সার্থক হইয়াছিল ।
Founder and Editor : Engr. Anik Barua
ka-95/5,Noddha,Gulsan,Dhaka1212. Mobile : +8801845839031 / +8801407666587