কামনাহীন জাতক

কামনাহীন জাতক

পুরাকালে যখন ব্রম্মদত্ত বারণসী রাজা ছিলেন তখন বোধিসত্ত্ব কাশীরাজ্যে এক ব্রাম্মণবংশে জন্মগ্রহন করেন। বয়ঃপ্রাপ্তির পর তিনি বিষয় কামনা ত্যাগ করে ঋষিপ্রবজ্যা গ্রহন করেন এবং হিমালয় প্রদেশে অবস্থান করতে থাকেন।

কিছুকাল পর তিনি পরবত হতে নেমে এসে রক গ্রামের নিকট গঙ্গার রক বাঁকের মাথায় এক পর্ণশালা নির্মাণ করে বাস করতে লাগলেন।
এইসময় এক পরিব্রাজক তাঁর সঙ্গে বিচার করতে সক্ষম এমন কোন লোক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একদিন সেয় পরিব্রাজক সেই গ্রামে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি গ্রামবাসী থেকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সঙ্গে বিচার করতে পারে এমন লোক এখানে আছে কি?
গ্রামবাসীরা বলল, আছের বৈকি।

এই বলে তারা বোধিসত্ত্বের বিচার ক্ষমতা বর্ণনা করতে শুরু করল। তখন সেই পরিব্রাজক অনেক লোক জনের সাথে বোধিসত্ত্বের নিকট বনে গেলেন। তারপর তাঁকে সম্ভাষণ করে আসন গ্রহন করলেন।

বোধিসত্ত্ব তার অভিপ্রায় বুজতে পেরে জিজ্ঞাসা করলেন। আপনি বনগন্ধজুক্ত জল পান করবেন কি??

পরিব্রাজক তাঁকে মায়াজালে আবদ্ধ করার জন্য বললেন, গঙ্গা জল কি? গঙ্গা কি বালুকা না জল? গঙ্গা বলতে এপার বুঝায় না ওপার বুঝায়?
বোধিসত্ত্ব উত্তর করলেন, যদি আপনি বালুকা, জল, এপারওপার বাদ দেন, তাহলে গঙ্গা পাবেন কোথা?

এই প্রশ্নে পরিব্রাজক নিরুত্তর হয়ে উঠলেন। তারপর সেখান থেকে উঠে পালিয়ে গেলেন।

বোধিসত্ত্ব তখন উপস্থিত ব্যক্তিদের উপদেশ দেবার জন্য একটি গাথার মাদ্যমে বললেন, এরা যা দেখে টা পেতে ইচ্ছা করে না, যা দেখেনা তাই পেতে ইচ্ছা করে। ফলে এই সব মতিহীন লোকেরা তাদের ঈপ্সিত বস্তু কখনই লাভ করতে পারে না। এরা যা লাভ করে প্রার্থী হয়ে ঘুরে বেরায় চিরদিন।

এদের ইচ্ছা কোনদিনই পূরণ হয় না। তাই বীতরাগ বা কামনাহীন্দেহ গুণকীর্তন করি।

#লেখাটি   Barua  কর্তৃক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে

 

রাজকুমার সিদ্ধার্থের বংশ পরিচয়

রাজকুমার সিদ্ধার্থের বংশ পরিচয়

 

            রাজকুমার সিদ্ধার্থের বংশ পরিচয়

           ————————————————–

              পিতৃকুল —-শাক্য বংশ

             ——————————

     ১। জয়সেন – সন্তান- পুত্র -১ জন ও কন্যা -১ জন।

        পুত্র – সিংহহনু, কন্যা – যশােধরা ( অঞ্জনের স্ত্রী)।

     ২। সিংহহনু স্ত্রী – কচ্চায়না (দেবদহের কন্যা)।

         সন্তান – পুত্র – ৪ জন ও কন্যা – ২ জন।

            পুত্র – ৪ জন ( সিংহহনু)

        ক। শুদ্ধোদন – স্ত্রী – ২ জন।

         ১। মহামায়া — অঞ্জনের কন্যা।

          ২। মহাপ্রজাপতি গৌতমী – অঞ্জনের কন্যা। প্রব্রজিত।

               সন্তান – ২ পুত্র ও ১ কন্যা।

               পুত্র – ২ জন ( শুদ্ধোদন)

            ১। সিদ্ধার্থ – মহামায়ার সন্তান।

              স্ত্রী – যশােধরা – সুপ্রবুদ্ধের কন্যা। প্রব্রজিত।

               সন্তান – পুত্র -১ জন।

               পুত্র – রাহুল। প্রব্রজিত।

                 ২। নন্দ – মহাপ্রজাপতি গৌতমীর সন্তান। প্রব্রজিত।

                   কন্যা -১ জন ( শুদ্ধোদন)

                  ১। সুন্দরী নন্দা – মহাপ্রজাপতি গৌতমীর সন্তান। প্রব্রজিত।

     খ। ধােতদন – নিঃসন্তান।

     গ। শুক্লোদন – সন্তান – পুত্র – ২ জন।

           ১| অনুরুদ্ধ – প্রব্রজিত।

          ২| মহানাম।

     ঘ। অমিতােদন – সন্তান – পুত্র -১ জন।

        ১। আনন্দ – প্রব্রজিত

      কন্যা – ২ জন (সিংহহনু)

       ক। অমিতা – সন্তান – পুত্র -১ জন।

          ১। তিসস – প্রব্রজিত।

          খ। প্রমিতা – সুপ্রবুদ্ধের স্ত্রী।

             মাতৃকুল – কোলিয় বংশ

           ————————————

   ১। দেবদহ – সন্তান – পুত্র –১ জন ও কন্যা – ১ জন।

      পুত্র – অঞ্জন, কন্যা – কচ্চায়না ( সিংহহনুর স্ত্রী)।

    ২। অঞ্জন – স্ত্রী – যশােধরা (জয়সেনের কন্যা)।

       সন্তান – পুত্র – ২ জন ও কন্যা – ২ জন।।

       পুত্র – ২ জন (অঞ্জন)

        ক। সুপ্রবুদ্ধ – স্ত্রী – প্রমিতা (সিংহহনু কন্যা)।

         সন্তান – পুত্র -১ জন ও কন্যা -১ জন।

     পুত্র -১জন (সুপ্রবুদ্ধ)

       ১। দেবদত্ত – প্রব্রজিত।

        কন্যা – ১ জন (সুপ্রবুদ্ধ)

      ১। যশােধরা – সিদ্ধার্থের স্ত্রী। প্রব্রজিত।

        খ। দনগুপানি – নিঃসন্তান।

         কন্যা -২ জন (অঞ্জন)

          ক। মহামায়া – শুদ্ধোদনের স্ত্রী।

          খ। মহাপ্রজাপতি গৌতমী – শুদ্ধোদনের স্ত্রী।

# তথ্যসূত্র ঃ-  মহামুনি সম্যক সম্বুদ্ধ (  http://ms-sambuddha.com )

ক্ষমাগুণ জাতক

ক্ষমাগুণ জাতক

পুরাকালে ব্রম্মদত্ত যখন বারাণসি রাজা ছিলেন, তখন বোধিসত্ত্ব রাজার অমাত্যকুলে জন্ম গ্রহন করেছিলেন। তিনি বয়ঃপ্রাপ্তির পর উপযুক্ত বিদ্যা শিক্ষা ও শাস্ত্রজ্ঞান লাভ করে রাজাকে ধর্ম ও অর্থ বিষয়ে উপদেশ দান করতেন।

একাবার রাজার এক অমাত্য অন্তঃপুরের এর রমণীর প্রেমে আসক্ত হয়ে রাজ অন্তঃপুরের বিশুদ্ধতা নস্ত করেছিলেন।

রাজা তার প্রমাণ পেয়ে ভাবতে লাগলেন, এয় অমাত্য আমার অতি উপকারী বন্ধু। এই রমণীও আমার প্রীয় পাত্রী। এদের আমি কি করে প্রাণ নাশ করব? একবার পণ্ডিত অমাত্যকে জিজ্ঞাস করে দেখি। তারপর সহ্য হয় সহ্য করব, যদি সহ্য করতে না পারি তো করব না
রাজা এবার বোধিসত্ত্বকে ডাকিয়ে বললেন, পণ্ডিত একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাস করব।

বোধিসত্ত্ব বললেন, জিজ্ঞাস করুন মহারাজ, উত্তর দিচ্ছি।

রাজা তখন একটি গাথার মাধ্যমে বললেন এক মনহর সরোবর আছে। সিংহ সেই সরোবর পাহারা দেয়। কিন্তু অধর্ম শৃগাল তার জল দূষণ করল।

বোধিসত্ত্ব বুঝতে পারলেন নিশ্চয়ই কোন অমাত্য অন্তঃপুরে কোন অবৈধ কাজ করেছে। তিনি তখন একটি গাথার মাধ্যমে বললেন, নদীর জলে মৎস্য মানুষ জীব জন্তু সকলেই পিপাসা মেটায়। তাতে নদীর জল নষ্ট হয় না ।

সেই অমাত্য ও রমণীকে ক্ষমা করুন।

এই কথা শূনে রাজা সেই অমাত্য ও রমণীকে সতর্ক করে দিলেন, এম পাপকর্ম আর করো না।
এই বলে তাদের সাবধান করে দিয়ে রাজা তাদের ক্ষমা করলেন। তিনি দানাদি পুণ্যকর্ম করে দেহান্তে স্বর্গলাভ করলেন।

সুত্র ঃ জাতকসমগ্র

মাতৃপোষক জাতক

মাতৃপোষক জাতক

পুরাকালে বারণসী রাজা ব্রম্মদত্তের সময় বোধিসত্ত্ব হস্তীকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর দেহটি শ্বেতবর্ণ ও অতি সুব্দর ছিল। তিনি আশীহাজার হাতির অধিপতি ছিলেন। বোধিসত্ত্বের মাতা অন্ধ ছিলেন। বোধিসত্ত্ব তাঁর অন্ধ মাতার জন্য নানা রকমের মিষ্টি ফল অন্য হাতিদের দিয়ে তাঁর মার কাছে পাথিয়ে দিতেন। কিন্তু তারা সেই ফল তাঁর মাকে না দিয়ে নিজেরাই খেয়ে ফেলত। তখন বোধিসত্ত্ব স্থির করলেন, তিই এবার হতে দলের আদিপত্য ত্যাগ করে অন্যকোথাও গিয়ে মার সেবা করবেন।

এই স্থির করে তিনি একদিন রাত্রিকালে অন্যান্য হাতিদের কাউকে কিছু না বলে, মাকে নিয়ে চণ্ডোরণ পর্বতের পাদদেশে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে এক সরোবরের নিকটে এক পরবত গুহায় মাকে রেখে পোষধব্রত করতে লাগলেন।

একদিন এক ধূর্ত বারাণসী বাসী সেই বনের মধ্যে এসে পথ হারিয়ে বন থেকে বার হতে না পেরে আর্তনাদ করছিল। শীলবান বোধিসত্ত্ব সেই আর্তনাদ শূনে অনুকম্পাবশতঃ লক্তির কাছে এসে বললেন, ভয় নেই, আমি তোমাকে পথ দেখিয়ে দেব। এই বলে তিনি লোকটিকে তাঁর পিঠের উপর তুলে বন হতে বের করে লোকালয়ে রেখে এলেন। ধূর্ত লোকটি পথের দুপাশের সব পর্বত ও গাছপালা চিনে রাখল।

সেই সময় বারাণসীরাজের মঙ্গল হস্তিটি মারা গিয়েছিল। রাজা নগরে ভেরী বাজিয়ে ঘোষণা করলেন, যদি কেউ আমাকে বহন করার উপযুক্ত কোন ভাল হাতি কোথাও দেখে থাকে তাহলে সে যেন আমাকে বলে যায়।

সেই ধূর্ত লোকটি এই ঘোষণার কোথা শূনে তখনি রাজার কাছে গিয়ে বলল, মহারাজ আমি এক বনে আপনাকে বহন করার উপযুক্ত সর্বাঙ্গ সুন্দর, শীলবান ও শ্বেতবর্ণের একটি হাতি দেখেছি। আপনি তাঁকে ধরে আনার জন্য গজাচার্জদের পাঠান। আমি পথ দেখিয়ে নিয়ে যাব।
রাজ এই কোথা শূনে তৎক্ষণাৎ বহু অনুচরসহ একজন গজাচার্জকে সেই লোকটির সঙ্গে পাথিয়ে দিলেন।

গজাচার্জ অনুচরবর্গ সেখানে গিয়ে দেখলেন, বোধিসত্ত্ব সেই সরোবরে নেমে আহার করছেন। বোধিসত্ত্ব গজাচার্জ ও তার অনুচরদের দেখে বুজতে পারলেন, সেই ধূর্ত লোকটি আমাকে ধরার জন্য এদের এখানে এনেছে। তিনি ভাবলেন আমি মহাবল। আমি ক্রুদ্ধ হলে সমস্ত সেনাবাহিনী সহ গোটা রাজ্য ধংস করে দিতে পারি। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে কেউ নিয়ে যেতে পারবেনা। কিন্তু আমি ক্রুদ্ধ হয়ে বল প্রয়োগ করলে আমার শীলভঙ্গ হবে।

এইভেবে তিনি নিশ্চলভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। গজাচার্জ দেখলেন, হাতিটি সর্বসুলক্ষণযুক্ত এবং রাজার মঙ্গলহস্তী হবার উপযুক্ত। তিনি বোধিসত্ত্বের এর কাছে গিয়ে বললেন, এস পুত্র।

এই বলে তিনি তাঁর শুঁড় ধরে তাঁকে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি তাঁর সঙ্গে গেলেন। গজাচার্জ তাঁকে নিয়ে বারাণসী রাজার কাছে গেলেন।
এদিকে বোধিসত্ত্বের অন্ধ মাতা পুত্রকে ফিরে আসতে না দেখে বুজতে পারলেন, রাজার লোকেরা নিশ্চয় আমার বাছাকে কোন দূর দেশে নিয়ে গেছে। এখন আমি অসহায়। আমাকে কে পোষণ করবে??

এই বলে তিনি শোকে বিলাপ করতে লাগলেন।

গজাচার্জ পথ হতে রাজাকে খবর পাঠালেন, তিনি রাজার মঙ্গলহস্তী পেয়েছেন এবং তাঁকে নিয়ে জাচ্ছেন।।

রাজা এই খবর পেয়ে সমস্ত নগর সুসজ্জিত করেছিলেন। গজাচার্জ বোধিসত্ত্বকে সুসজ্জিত ও সুবাসিত হস্তীশালায় নিয়ে গেলেন। রাজা নিজের অনেক উৎকৃষ্ট ও মধুরসযুক্ত খাদ্য এনে বোধিসত্ত্বকে খেতে দিলেন। কিন্তু বোধিসত্ত্ব মাকে ফেলে কোন খাদ্য খাবেন না বলে সঙ্কল্প করে কোন খাদ্য গ্রহন করলেন না। রাজা তাঁকে খাদ্য গ্রহন করার জন্য বারবার অনুরোধ করলে বোধিসত্ত্ব একটি গাঁথার মাধ্যমে বললেন, আমাকে না পেয়ে সেই বৃদ্ধা হস্তিনী চণ্ডোরণ পর্বতে ইতস্ততঃ ছোটাছুটি করছে।

রাজা তখন জিজ্ঞাসা করলেন, কে সেই অনাথা বৃদ্ধা হস্তিনী?

বোধিসত্ত্ব বললেন, তিনি আমার জননী।, অন্ধ অসহায়।আই ছাড়া তাকে পোষণ করার কেউ নেই।

রাজা এ কথা শূনে বললেন, এই শীলবান হস্তীবড় মাতার পোষণে রত। একে মুক্ত করে দাও। এ মাতার কাছে গিয়ে তাঁর সেবা করুক।
শৃংখল্মুক্ত হয়ে তিনি রাজা কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তখনি চণ্ডোরণ পর্বতে মার কাছে চলে গেলেন। তাঁর মার তখন অনাহারে চলবার শক্তি ছিল না। তিনি গুহায় শুয়ে ছিলেন। বোধিসত্ত্ব মার কাছে গিয়ে বললেন, ওঠ মা, আর তোমার চিন্তা নেই। তোমার পুত্র ফিরে এসেছে। সুবিজ্ঞ ধার্মিক কাশীরাজ আমাকে মুক্তি দিয়েছেন তোমাকে পোষণ করার জন্য।

বোধিসত্ত্বের মাতা কাশীরাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, চিরজীবী হোক সেই রাজা। উত্তরুত্তর তাঁর শ্রী বৃদ্ধি হোক। তাঁর কৃপায় পুত্র আমার মুক্ত হয়ে ফিরে এসেছে আমার কাছে।

মাতৃপোষক, মাতৃভক্ত বোধিসত্ত্বের গুনে রাজা প্রসন্ন হয়ে চণ্ডোরণ পর্বত ও সরোবরের নিকট এক গ্রাম বসালেন। সেখান হতে বোধিসত্ত্ব ও তাঁর মার জন্য খাবার পাঠাবার ব্যবস্থা করলেন।

কালক্রমে মাতার মৃত্যু হলে বোধিসত্ত্ব করণ্ডুক আশ্রমে গিয়ে বাস করতে লাগলেন। সেখানে পাঁচশত তাপস বাস করতেন। রাজা বোধিসত্ত্বের মত তাঁদের জন্যও খাদ্য পাঠাতেন। পরে রাজা বোধিসত্ত্বের একটি শীলামূর্তি স্থাপন করে তাঁর পুঁজা করতেন প্রতিদিন।

সমস্ত জম্বুদ্বীপবাসী প্রতি বছর সেখানে সমবেত হয়ে গজোৎসব পালন করত।

সুত্র ঃ জাতকসমগ্র

বালুকা পথ জাতক

বালুকা পথ জাতক

বোধিসত্ত্ব একবার বণিকের ঘরে জন্ম গ্রহন করেছিলেন। সেখানে তিনি বাণিজ্য করতে প্রবৃত্ত হন। তাঁর পাঁচশ গরুর গাড়ি ছিল। সেই সব গাড়িতে পণ্য বোঝাই করে নানা স্থানে বানিজ্য করে বেরাতেন তিনি।

একবার তিনি বাণিজ্যে বের হয়ে এক মরুভুমিতে প্রবেশ করেন। সেই মরুভুমির বালি এত সূক্ষ্ম ছিল যে তা হাতের মুঠোই ধরা জেত না, ধরলেই আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে পড়ে যেত। সুজ্র ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেই বালি আগুনের মত গরম হয়ে উঠত। তার উপর ৡদিয়ে আর পথ চলা যেত না।

তাই অনন্যা পথিকের মত দিনের বেলায় এক জায়গায় শিবির খাটিয়ে বিশ্রাম করে, রাত্রিকালে পথ চলতেন। সেখানে নাবিকদের মত মরুপথিকদের রাত্রিকালে নক্ষত্র দেখে পথ চলতে হত। নক্ষত্রঙ্ক দেখে যারা পথ চিনতে পারত তাদের বলা স্থান-নিয়ামক। সব মরুযাত্রিদের দলে একজন করে স্থান-নিয়ামক থাকত।

বোধিসত্ত্বের দলেও একজন স্থান-নিয়ামক ছিলেন। সে রাত্রত্তিবেলা কোন পথে যেতে হবে তা বলে দিতেন। সেদিন বোধিসত্ত্ব ভাবলেন, আজ রাতেই আমরা মরু অঞ্চল পার হয়ে যেতে পারব।

কিন্তু সেই রাত্রেই তাঁর স্থান-নিয়ামক সাম্নের গাড়িতে বসে থেকে গুমিয়ে পড়ার ফলে পথ দেখাতে পারেনি। ফলে সব গাড়িগুলো উল্টো পথ চলতে থাকে।

এদিকে সেই রাত্রিতেই মরুভুমি পার হয়ে যাবে ভেবে বোধিসত্ত্ব সন্ধার আহারের পর জল কাঠ প্রভৃতি অনেক দ্রব্য অনাবশ্যক ভেবে ফেলে দেবার আদেশ দেন।

গাড়িগুলো উল্টো পথ ধরে সারারাত চলে। ভোঁর বেলায় স্থান-নিয়ামকের ঘুম ভাঙলেই তিনি গাড়ি ঘুরাও, গাড়ি ঘুরাও বলে চিৎকার করে উঠলেন। কিন্তু তখন কোনও উপায় নেই। সূর্য উঠে পড়েছে। দেখা গেল যেখান থেকে তারা যাত্রা করেছিল সেইখানেই এসে পোঁছেছে।

তখন আনুচরেরা বলতে লাগল, আমরা জল, কাঠ সব ফেলে দিয়েছি। এখন আমরা কি খেয়ে বাঁচব? এই বলে বিলাপ করতে করতে আনুচরগণ গাড়ি থামিয়ে গরুগুলিকে খুলে দিয়ে হতাশ হয়ে গারিগুলর তলায় শুয়ে পড়ল।

কিন্তু চরম বিপদে ধৈ্র্য্য ধারণের অসীম ক্ষমতা ছিল বোধিসত্ত্বের। তিনি ভাবলেন, তিনি এখন নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকলে এতগুলি প্রানী অকালে মারা যাবে। এই ভেবে তিনি জলের সন্ধানে ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। কিছুদূর গিয়ে এক জাইয়গায় এক গুচ্ছ কুশ ডেকতে পেলেন। তখন তিনি বুজতে পারলেন নিশ্চয়ই এর তলায় জল আছে। তা না হলে মরুভুমিতে কুশ জন্মাতে পারে না।

এই ভেবে তিনি তাঁর অনুচরদের কোদাল দিয়ে কুয়ো খনন করতে বলেন। কিন্তু অনেক মাটি কেটে ষাট হাত নীচেও জল পাওয়া গেল না। উল্টো দেখা গেল সেইখানে মাটি নেই, শুধু পাথর। পাথরে কোদালে কোনও চোট লাগল না। বোধিসত্ত্ব তখন নীচে নেমে গিয়ে সেই পাথরের উপর কান পেতে ভিতরে জল প্রবাহ শুনতে পেলেন। বুঝতে পারলেন সেই পাথরের নীচে জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে।

তখন তিনি উঠে এসে তাঁর এক যুবক ভৃত্যকে বললেন, তুমি একটা বড় হাতুড়ী নিয়ে নীচে নেমে গিয়ে পাথরের উপর ক্রমাগত ঘা মারতে থাকে। ওর তলায় জলের ধারা বয়ে যাছে। তুমি এ বিষয়ে উদ্যমহীন হলে সকলেই মারা যাবে।

যুবকটি বলিষ্ঠ ও উদ্যমশীল ছিল । অন্য সকলে হতাশ হয়ে বসে পরলে সে একা বিশেষ উৎসাহের সাথে প্রভুর আদেশ পালন করল । তখনি সেই পাথর ফেটে স্বচ্ছ জলের এক ফোয়ারা বেগে উঠে এল । তখন সকলের আনন্দ আর ধরে না । সবাই সেই জলে স্নান করল, পানের জল তুলে রাখল প্রচুর পরিমাণে । তারপর রান্নার ব্যবস্থা করল । সঙ্গে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু কাঠের দ্রব্য ছিল । সেগুলি চিরে জালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হল ।

খাওয়া দাওয়ার পর সন্ধার সময় তারা গন্তব্য স্থানের পথে রওনা হয়ে পড়ল । এরপর তারা যথাসময়ে বাণিজ্যস্থানে পোঁছে গেল । সেখানে বোধিসত্ত্ব তাঁর সমস্ত পণ্য দ্বিগুণ লাভে বিক্রি করে প্রচুর লাভ করলেন। এইভাবে কাজ সেরে স্বদেশে ফিরে এলেন ।
কোন কাজে ব্যর্থ হয়ে জ্ঞানীজন চুপ করে বসে থাকেন না, অধ্যাবসায়ের সঙ্গে কাজ করে সাফল্য লাভ করেন ।

সুত্র ঃ জাতকসমগ্র

মদমত্ত জাতক

মদমত্ত জাতক

বারাণসীর রাজা ব্রম্মদত্তের সময়ে বোধিসত্ত্ব একবার বাজিকরকুলে জন্মগ্রহন করেছিলেন। বড় হয়ে তিনি জ্ঞানবান ও উপায় কুশল হয়েছিলেন। সেই বাজিকরেরা গাড়ীর উপর দাঁড়িয়ে নাচত ও খেলা দেখাত।

বোধিসত্ত্ব এক বাজিকরেরকাছে শক্তিলঙ্ঘন বিদ্যা শিক্ষা করেছিলেন। পরপর কয়েকটি সাজানো ধারালো অস্ত্র লাফ দিয়ে পার হবার কৌশল আয়ত্ত করে সেই খেলা দেখিয়ে জীবিকা অর্জন করতেন বোধিসত্ত্ব । তাঁর বাজিকর শিক্ষক চারটি অস্ত্র লঙ্ঘনের কৌশল জানতেন।

একদিন ঐ আচার্য বাজিকর বোধিসত্তকে সঙ্গে নিয়ে কোন এক গ্রামে খেলা দেখাতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি মদের নেশায় মত্ত ছিলেন। তিনি সবাইকে বললেন, তিনি পাঁচটি অস্ত্র লঙ্ঘন করবেন। তাই তিনি পর পর পাঁচটি অস্ত্র সাজিয়ে রাখলেন।

তা দেখে বোধিসত্ত্ব আচার্যকে বললেন, আপনি পাঁচটি অস্ত্র লঙ্ঘন কৌশল জানেন না। এক্তি অস্ত্র তুলে নিন। না হলে পঞ্চম অস্ত্রের দ্বারা আপনি বিদ্ধ হবেন। তাতে আপনার মৃত্যু ঘটবে।

কিন্তু বোধিসত্ত্ব নেশার ঝোঁকে বোধিসত্ত্বের কথা সুনলেন না। তিনি বললেন তুমি আমার ক্ষমতা জান না।

এই বলে তিনি খেলা দেখাতে শুরু করলেন। তিনি চারটি অস্ত্র ভালভাবে লঙ্ঘন করলেন, কিন্তু পঞ্চম অস্ত্রটি লঙ্ঘন করতে গিয়ে তার উপর পরে গেলেন তিনি। ধারল অস্ত্রের অগ্র ভাগে তাঁর দেহটি বিদ্ধ হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু ঘটল।

বোধিসত্ত্ব তাঁর আচার্যের দেহটি তুলে সৎকার করলেন। তারপর এক্তি গাথার মাধ্যমে বললেন, আমার নিষেধ না শুনে মদ্মত্ত হয়ে পঞ্চম চেষ্টা করতে গিয়ে পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হলো।

সুত্র ঃ জাতকসমগ্র

error: Content is protected !!