অশোক লিপি

অশোক লিপি

অশোক লিপি

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

সম্রাট অশোকের রাজত্ব ছিল অখন্ড ভারতবর্ষের সর্বত্র। অখন্ড ভারত বলতে বর্তমানের ভারত ছাড়াও আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ ও মধ্য এশিয়ার অনেক বিস্তৃত অণ্চল পর্যন্ত ছিল। সর্বত্র তিনি পাথরে, পর্বতে বুদ্ধের মানব তথা সর্ব জনকল্যাণকর শিক্ষা ও উপদেশ সমূহ সকলের জ্ঞাতার্থে লিখে প্রচার করেছিলেন। যা অশোক শিলালিপি বা অভিলেখ নামে বর্তমানে পরিচিত।

কলিঙ্গ যুদ্ধের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর শান্তির অন্বেষায় মহান সম্রাট অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজেকে বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে উৎসর্গ করেন। তিনি বৌদ্ধধর্মকে সার্বজনীন ও বিশ্বধর্মে পরিণত করেন। তাঁর রাজত্বকালে বৌদ্ধধর্ম ভারত ভূখণ্ড ছাডিয়ে এশিয়ার বিশাল আয়তন ও ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। তিনি বৌদ্ধধর্মকে কেন আপন করে নিলেন এজন্য ব্রাহ্মণেরা তাঁকে শত্রুরূপে মনে করতেন। ব্রাহ্মণদের রোষানলের শিকার হয়েছিল সম্রাট অশোক এ একটি মাত্র কারণে। বৌদ্ধধর্মের অপব্যখ্যার সাথে সাথে ব্রাহ্মণেরা সম্রাট অশোককেও করেছিলেন বিকৃত। সংস্কৃত শব্দকোষে অশোকের সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি গর্দভনন্দন, মহামুর্খ। ধ্বংস করেছিল তাঁর শিলালিপি। এমনকি ভারতবর্ষের ইতিহাস হতেও তাঁকে মুছে ফেলা হয়েছিল। চণ্ডাশোকরূপেও ব্রাহ্মণেরা আখ্যায়িত করেছেন তাঁকে।

বৃটিশ শাসনের আগে পর্যন্ত সম্রাট অশেককে ভারতবাসী জানতে পারেনি। বৃটিশেরাই সম্রাট অশোককে ভারতবর্ষে পুর্নবাসন করে ইতিহাসে স্থান দেন।

মধ্যকালে সর্বপ্রথম সম্রাট অশোকের শিলালিপি আবিস্কৃত হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে বাদশাহ ফিরোজ শাহ তুগলগ দু’টি বিশাল অশোক স্তম্ভ উত্তর প্রদেশের টোপরাও মেরট হতে অনেক পরিশ্রম করে লোক মারফত দিল্লিতে আনিয়েছিলেন। তিনি যখন স্তম্ভদ্বয়ে কিছু লেখা দেখেন তাঁর মনে কৌতুহল জাগে তাতে কি লেখা হয়েছে তা জানার জন্য। কিন্তু কেহ সেগুলো পড়ে তখন পাঠোদ্ধার করতে পারেননি। তৎকালীন অনেক বিদ্বানকে তিনি আহ্বান করেছিলেন তা পড়ার জন্য। কিন্তু কেহ সফলকাম হননি। বাদশাহ্ আকবরও লেখাগুলোর পাঠোদ্ধার করতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনিও ব্যর্থ হন। পড়ার মত কোন বিদ্বান তিনি সে সময় খুঁজে পাননি।

পরবর্তীতে ইংরেজরা যখন ভারতে আসেন তাঁরাও এগুলি দেখে পাঠোদ্ধারে সবিশেষ মনযোগী হয়েছিলেন। প্রথম দিকে তাঁরা অনেক প্রচেষ্টা করেছিলেন। পরে স্যার উইলিয়ম জোন্স শিলালিপি সমূহের ছাপ পাঠিয়েছিলেন বারাণসীর তৎকালীন এক হাকিমের কাছে পাঠোদ্ধারের জন্য। তিনি বার্তা প্রেরণ করেছিলেন যে, আপনি নিজে না পারলেও বারাণসীর অন্য কোন বিদ্বানের দ্বারা এগুলি পড়ার ব্যবস্থা করুন। তিনি মনে করেছিলেন, বিদ্বানের শহররূপে যেহেতু বারাণসীর খ্যাতি রয়েছে, সেহেতু কেহ না কেহ এগুলির পাঠোদ্বারে সমর্থ হবেন।

অবশেষে বারাণসীর এক বিদ্বান পণ্ডিত দাবী করেছিলেন তিনি পড়তে পারবেন। তবে তিনি পড়ে যা বলেছিলেন তা জেনে আমাদের হতচকিত করার সাথে সাথে হাঁসিরও উদ্রেক করবে। মানুষ কত মুর্খ ও ষঢযন্ত্রকারী হলে এ রকম মিথ্যা, বানোয়াট ও ভ্রান্তি প্রচার করতে পারে। সে শঠ ও ধূর্ত ব্রাহ্মণ পণ্ডিত বলেছিলেন, স্তম্ভে লিখা হয়েছে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের গুপ্ত বনবাসের বিবরণ। কেবল এটুকু বলে তিনি ক্ষান্ত হননি, তিনি অশোক লিপি পড়ার এক নকল বইও রচনা করে দাবী করেছিলেন, তাঁর পড়া শতভাগ সঠিক।

অনেক দিন পর্যন্ত সে শঠ, ধূর্ত ও প্রতারক ব্রাহ্মণের পাঠ শুদ্ধ বলে গণ্য করা হয়েছিল।

১৮৩৪ সালে বৃটিশ কেপ্টেইন ট্রায়র প্রয়াগের অশোক স্তম্ভে খোদাই করা সমুদ্র গুপ্তের লেখার কিছু অংশ পড়েছিলেন। সে বছরে আবার ড. মিল সাহেব পুরা পড়েছিলেন। গাজীপুর জিলার সৈদপুর-ভীতরী নামক গ্রামের পাশে এক স্তম্ভ আছে। যাতে স্কন্ধগুপ্তের লিখা রয়েছে। ১৮৩৭ সালে ড. মল সাহেব কর্তৃক সব পাঠোদ্বার হয়। এ প্রকারে গুপ্তলিপি পড়া হয়েছিল। কিন্তু ব্রাহ্মী লিপি দুর্বোধ্য মনে করা হত।

আমাদের ধন্যবাদ দিতে হবে প্রিন্সেপ জোন্সকে। তিনি সঠিকরূপে অশোকে লিপি বা ব্রাহ্মী লিপি পড়তে সক্ষম হন। তাতে জানা যায়, সম্রাট অশোক স্তম্ভগাত্রে বুদ্ধবাণী লোককল্যাণে প্রচার করেছেন। নাহলে এখনও পর্যন্ত বারাণসীর সে ধূর্ত পণ্ডিতের নকল বই অবলম্বনে অশোক স্তম্ভের অভিলেখাকে মহাভারত এবং রামায়নের বানানো কাহিনীরূপেই চালু থাকত।

সুত্র ঃ ধম্মকথা

অবশ্যই গাছ থেকে সুপারী পেরে দিতে পারবে

অবশ্যই গাছ থেকে সুপারী পেরে দিতে পারবে

পূজ্য বনভান্তেকে নিয়ে অলৌকিক ঘটনা
 ============================

বন্দুকভাঙা মৌজায় কুকি উদান্যা (কামিনী কার্বারী পাড়া) নিবাসী জনৈক পুষ্পকান্ত চাকমা (গাপাল্যা) শ্রদ্ধেয় বনভান্তে প্রতি বীতশ্রদ্ধ ও বিশ্বাস কেরতো না। প্রায় সময় বনভান্তের বিরুদ্ধে কুৎসা কথা বলতো এবং নানারূপ সমালোচনাও করতো। কিন্তু তার বাড়ীর অন্যান্য ব্যক্তিরা শ্রদ্ধেয় বনভান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রায় সময় বনবিহারে দানাদি করতো। পুষ্পকান্ত(৭৫) শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে শ্রদ্ধা ও দান করা দূরের কথা কেউ তার সামনে বনভান্তের নাম বললেও রাগ করতো। ১৯৯১ সালে একদিন পুষ্পকান্ত চাকমা মদ খেয়ে ভীষণ নেশাগ্রস্থ হয় এবং আবোল-তাবোল বলে মাতলামী করতে করতে বাড়ীতে টাঙানো শ্রদ্ধেয় বনভান্তের ছবি নিয়ে সুপারী গাছের নীচে ছবিটা ধরে বলতে থাকে, “প্রায় লোকেরা বলে থাকে বনভান্তে অর্হৎ। সত্যিই যদি অর্হৎ হয়ে থাকে, ছবিটা অবশ্যই গাছ থেকে সুপারী পেরে দিতে পারবে।” এভাবে যে দুই-তিনবার ছবিটি উপরে ছুঁড়ে মারতে থাকে। সে আরো বলল, “সুপারী পেরে দিতে পারেনি কি রকম অর্হৎ?” অতঃপর সে উক্ত ছবিটি ঘাটে নিয়ে বলল, “দেখি, পানিতে ডুবালে বুঝা যায় কিনা কি রকম অর্হৎ?” পরিশেষে ঢেকিতে ছবিটি পিষতে থাকে। তখন বাড়ীর সকলেই তাকে অনেক বাঁধা দেয়। কিন্তু সকলের বাঁধা উপেক্ষা করে পা দিয়ে চাপা দিতে থাকে। তবে পায়ে চাপা দেয়ার সাথে সাথেই অনেকটা দৃষ্ট ধর্মের বেদনীয় কর্মস্বরূপ তার পা ব্যাথা করতে আরম্ভ হয়। আরো আশ্চর্যের বিষয় সঙ্গে সঙ্গে তার পা ফুলে যায় ও অবশ হয়ে যায়। এমন কি নাড়াচাড়া করার শক্তিও লোপ পায়।
 
           অতঃপর পুষ্পকান্ত চাকমা গ্রামে নানা ধরণের চিকিৎসা করতে থাকে, কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। উপায়ান্ত না দেখে অবশেষে তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা মিলে পুষ্পকান্ত চাকমার আরোগ্য মানসে শ্রদ্ধেয় বনভান্তের নিকট সবিনয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, এবং সংঘদান করে দেয়। আর আশীর্বাদ প্রার্থনা করে বলল, “শ্রদ্ধেয় বনভান্তে, সে মদ পান করে মাতাল হয়ে এ অঘটন ঘটিয়েছে। অনুগ্রহ পূর্বক তাকে ক্ষমা করে দিন।” শ্রদ্ধেয় বনভান্তে বললেন, “সে আমাকে কিছু করেনি শুধু ছবিটা ভেঙে পায়ে চাপা দিয়েছে।” শ্রদ্ধেয় বনভান্তে তাদেরকে বিভিন্ন ধর্মদেশনা প্রদান করেন। কিছুদিন পর পুষ্পকান্ত চাকমা একটু আরোগ্য লাভ করে। কিন্তু বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় লাঠির সাহায্যে একটু একটু হাঁটতে পারে।
এ ঘটনাটি সংগ্রহ করে দিয়েছেন বন্দুকভাঙা মৌজার ভারবুয়াচাপ বনবিহারের শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ প্রজ্ঞাপাল ভিক্ষু।

(সূত্র: বনভান্তের দেশনা-৩; পৃষ্টা নং ১০৬; লেখক: অরবিন্দু বড়ুয়া)
স্বপ্নে কুকুর কামড়াতে চায়

স্বপ্নে কুকুর কামড়াতে চায়

পূজ্য বনভান্তেকে নিয়ে অলৌকিক ঘটনা
(স্বপ্নে কুকুর কামড়াতে চায়)
সময় বিকাল সাড়ে পাঁচটা শ্রদ্ধেয় বনভান্তে দেশনালয়ে বই পড়ায় রত আছেন। উপাসক-উপাসিকাসহ আমি অরবিন্দু বড়ুয়া তাঁর সামনে নীরবে বসে আছি। আমার চোখে পড়ল বিহারের দক্ষিণ পাশে কয়েকজন লোক জড়ো হয়ে কি যেন বলাবলি করছে। হাঁটতে হাঁটতে তারা দেশনালয়ের দিকে চলে আসল। দেবাশীষনগরের জৈনক লোক কতগুলো থালা ও বাটি বনভান্তের সামনে রেখে বলল, “ভান্তে,এগুলি আমি চুরি করিনি। আমাদের পাড়ার লোক থেকে অল্পদামে কিনে নিয়েছি। সে লোকটি প্রতিদিন বনবিহারে এসে কাজ করে।”তারপর বনবিহারের কুকুরের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, “ভান্তে, এ কুকুরগুলি স্বপ্নে আমাকে কামড়াতে চায়। দুই-তিন রাত স্বপ্ন দেখে অনন্যোপায় হয়ে আপনার নিকট চলে এসেছি। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন। আমরা (স্বামী-স্ত্রী) যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারি মত আশীর্বাদ করুন।”
       বনভান্তে তাকে অভয় দিয়ে বললেন, “যাও, আর কামড়াবে না।” এ ঘটনা দেখে আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, এ রকম চুরি অনেক বিহারে হয়ে থাকে কিন্তু এরকম অলৌকিক প্রমাণ কোনোদিন আর দেখিনি। তাহলে তাদের পরকালে কি অবস্থা হবে?

লোকে যাহা বিষ বলে বিষ তাহা নয়।
সংঘের সম্পত্তি বিষ সম উক্ত হয়।
বারেক পানেতে বিষ বারেক মরণ।
সদা মৃত্যু সংঘদ্রব্য করিলে হরণ।

 
(তথ্যসূত্র: বনভান্তের দেশনা-১; পৃষ্টা নং ৮৬; লেখক: অরবিন্দু বড়ুয়া)
লাভীশ্রেষ্ঠ অর্হৎ সীবলী স্থবির

লাভীশ্রেষ্ঠ অর্হৎ সীবলী স্থবির

দরিদ্র এক পুণ্যবান ব্যক্তি। গুড়, দধি বিক্রয় করে যিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। একদিন বাজারে যাওয়ার সময় মধুপূর্ণ মৌচাক দেখতে পেয়ে তা সংগ্রহ করে সুকৌশলে মধু সংগ্রহ করে বিক্রয় প্রত্যাশায় বাজারের দিকে অগ্রসর হলেন। পথিমধ্যে কিছু লোক উনার মধুসমেত পাত্রটি চড়া দামে ক্রয়ের জন্য সম্মত হলেন। সেই পুণ্যবান ব্যক্তি ভাবলেন কি ব্যাপার- উনারা এত দামে মধু কিনে কি করবেন? জিজ্ঞেস করলে ক্রেতারা- “বিপস্সী বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্খুসংঘকে দান করবেন বলে ব্যক্ত করলেন”।
নিজের সব খাবার নিজ হাতেই “বিপস্সী’’ বুদ্ধকে দান করে দিলেন। চিন্তা করেনি নিজে কি খাবেন! সেই দানের মহাফল আর পদুমুত্তর বুদ্ধ হতে বর প্রাপ্ত হয়ে তিনি হলেন গৌতম বুদ্ধের সময়ে “লাভীশ্রেষ্ঠ সীবলী স্থবির”।
শুন শুন সর্বজন অপূর্ব কাহিনী, যাহা প্রচারিল মুখে প্রভু মহামুনি।
সীবলী চরিতকথা অমৃত সমান, যাহার শ্রবণে নর লাভে দিব্যজ্ঞান।
সীবলীর গুণগাথা যে করে পঠন, হবে গ্রহদোষ শান্তি অন্যথা না হন।
ধুপ-দীপ-আদিবহু উপাচারে, ভক্তি চিতে যেই জন পূজে সীবলীরে।
অরহত শ্রী সীবলী মহাতেজবান, মহাজ্ঞানী, মহালাভী মহাপূণ্যবান।
তাঁহার প্রভাবে দুঃখ রবে না কখন, সীবলীর ব্রত সদা যে করে পালন।
ব্যবসা-বাণিজ্যে বৃদ্ধি নিশ্চয় হইবে, সীবলীর গুণগাথা যে জন স্মরিবে।
খাদ্য বস্ত্র অভাবেতে আছ যত নর, সীবলী চরিত কথা অহরহ স্মর।
দরিদ্র লভিবে বিত্ত, ধনী, মহাধন সীবলীর ব্রত যেবা করে পালন
ধনের কামনা করি ভবে নরগণ, কাল্পনিক দেবদেবী করিয়া সৃজন।
করে নিত্য পূজা তারা ধনলাভ তরে; কিন্তু সীবলীর পূজা বহুগন ধরে।
লঙ্কা, ব্রম্মা, শ্যাম, চীন, তিব্বত, জাপান, সীবলী পূজাতে তাঁরা অতি নিষ্ঠাবান।
সীবলীর পরিচয় এবং নামকরণ:
ভারতের সমৃদ্ধ নগরী ‘বৈশালী’র লিচ্ছবি রাজ্যের রাজপুত্র মহালী কুমার। অন্যদিকে কোলীয় রাজকন্যা পরমা সুন্দরী সুপ্রবাসা। অতীতের কর্মসূত্রে এ দুই রাজপুত্র-কন্যা মণি-কাঞ্চনের মত পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। যেদিন সুপ্রবাসা গর্ভবতী হল সেদিন হতেই তার গর্ভজাত সন্তান মহাপূণ্যবান তা উপলব্ধি করল। কেননা সেদিন হতে তিনি নানা উপঢৌকন, রাশি রাশি অর্থ, বস্ত্রালংকার এবং নানা প্রকার ঈস্পিত-মনোজ্ঞ বস্তুসামগ্রী তিনি লাভ করতে লাগলেন। রাজা-রাণীর রাজপরিবার ধন-দৌলতলতে পরিপূর্ণ হতে লাগল। এমনকি সুপ্রবাসাকে স্পর্শ করে কৃষক বীজ বপন করতঃ একবীজ হতে নাল জন্মে শত শত। সুপ্রবাসার হস্তস্পর্শে চাষীরা গোলাতে শস্য উঠালে, শস্য খরচ করার পরও গোলা পূর্ণ থাকত। অভূতপূর্ব-অকল্প
নীয় এ দৃশ্যে সবাই জ্ঞাত হল যে, সুপ্রবাসার গর্ভপুত্র যেন স্পর্শমনি!
রাজ্যের চতুর্দিকে আনন্দের সাড়া আর রাজা-রাণী পুত্র প্রেমে হলো মাতোয়ারা। সবাই অধির আগ্রহে রাজার নন্দনের জন্মক্ষণ গণনায় ব্যাকুল। ক্রমে ক্রমে দশমাস দশদিন গত হবার পরও রাজপুত্রের জন্ম হল না! সবাই বিষ্ময়ে হতবাক! এরূপে সাত বছর গত হবার পর রাণী সুপ্রবাসা প্রসব বেদনা অনুভূত করতে লাগলেন। অতঃপর সুপ্রবাসা মহাকারুণিক বুদ্ধের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানে রাজপুরীতে আনন্দের বন্যা বয়ে সাত বছর সাতদিনে রাজপুত্র জন্মগ্রহণ করেন। পুত্রমুখ দর্শনে রাণীর সমস্ত যন্ত্রণা দূর হল। অন্তর অপার পুত্রপ্রেমে প্রফুল্ল হল। রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ল আনন্দোল্লাস।
চারদিক সুশোভিত হল রাজপুরী। নৃত্য-গীত ধ্বনিতে রাজ্য যেন স্বর্গপুরী। আয়োজন করা হল দাল শালা। অকাতরে দানধর্ম চলছিল। ইষ্ট-মিত্র, জ্ঞাতিগণ সকলে সমবেত হলেন। সকলেই রাজকুমারকে এক নয়ন দেখার জন্য সানন্দে অধির অপেক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে রাজকুমারের দর্শন মিলল। রাজকুমারের এমন সুবর্ণ ন্যায় মুখ দেখে সকলের মনপ্রাণ যেন সুশীতল। এ হেতু নাম রাখা হয়- সীবলী কুমার।
প্রব্রজ্যাধর্মে দীক্ষা এবং অর্হত্বলাভ:
রাজা-রাণীর আরাধনায় মহাকারুণিক বুদ্ধ, সারিপুত্র স্থবিরসহ সশিষ্যে রাজপ্রসাদে এসে উপস্থিত হলেন। তথায় বুদ্ধকে বন্দনা-পূজা সমাপন করে মাতা-পুত্রে সারিপুত্র স্থবিরকে বন্দনা করার প্রত্যয়ে স্থবিরের নিকটে উপস্থিত হলেন। সারিপুত্র স্থবির সীবলী কুমারকে উপলক্ষ করে জিজ্ঞাসা করলেন- কুমার, তোমার সপ্তবর্ষ গর্ভবাস যন্ত্রণার কথা মনে আছে কী? কুমার প্রতুত্তরে বললেন- ভন্তে, অসহ্য অনন্ত দুঃখ গর্ভ কারাগার, লৌহকুম্ভী নরকের চেয়ে মাতৃগর্ভ কম কিছু নয়। তারপর সারিপুত্র স্থবির প্রকাশ করলেন- সজ্ঞানে তুমি জন্ম দুঃখ অবগত হয়েছ! নিরোধ নির্বাণ ব্যতীত সুখ নেই। তোমার প্রব্রজ্যা ইচ্ছা আছে কী? কুমার সবিনয়ে বললেন- ভন্তে, আমি প্রব্রজ্যাই গ্রহণ করব। ইহা ব্যতীত দুঃখ মুক্তি আর দেখি না। সপ্তম বর্ষীয় কুমারের এরূপ পরিপক্ষ জ্ঞান-ধর্মালাপে সুপ্রবাসা আনন্দিত হয়ে সারিপুত্র স্থবিরকে জিজ্ঞাসা করলেন- ভন্তে, আপনাদের আলাপচারিতা কী নিয়ে? তখন সারিপুত্র স্থবির ব্যক্ত করলেন- দুঃখ সত্য প্রসঙ্গে আমাদের এ আলাপচারিতা। এবং কুমার ইচ্ছা পোষণ করছে প্রব্যজ্যা গ্রহণে! কিন্তু অনুমতি ব্যতীত কেমন করে প্রব্রজ্যা প্রদান করব!
ইহা শুনে সুপ্রবাসা সারিপুত্র স্থবিরকে বন্দনা নিবেদন করতঃ কুমারকে প্রব্রজ্যা প্রদান করার অনুমতি প্রদান করলেন। তখন বুদ্ধ সশিষ্যে সীবলী কুমারকে সাথে নিয়ে বৈশালী বিহারে উপস্থিত হয়ে প্রব্রজ্যা প্রদানের ব্যবস্থা করলেন। সারিপুত্র স্থবির আদি কর্মস্থান দিতে গিয়ে কুমারকে উপলক্ষ করে বললেন- হে কুমার, তুমি সপ্তবর্ষ গর্ভবাস যন্ত্রণা ভোগের কথা স্মরণ কর! সীবলী কুমার গর্ভবাস যন্ত্রণার নরকসম দুঃখের কথা স্মরণ করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় মস্তক মুণ্ডনকালে চুলের প্রথম গোছা কর্তন করার সময় কেশ কেশ ভাবনাতে কুমার স্রোতাপন্ন হন, চুলের দ্বিতীয় গোছা কর্তন শেষে মার্গফল লাভ করলেন, তৃতীয় গোছাতে কুমার অনাগামী ফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন এবং সর্ব কেশ ছেদন শেষে কোন প্রকার ক্লেশ আর অবশিষ্ট রইল না। তিনি অর্হত্ব ফল লাভের মধ্যদিয়ে দুঃখ জয়ে সমর্থ হলেন।
তদবধি ভিক্খুদের অভাব ঘুচিল, ভৈষজ্য-চীবর আদি চতুর্প্রত্যয়,
অজস্র করিছে দান দেবনরচয়।
রাশি রাশি খাদ্যভোজ্য সংখ্যা নাহি তার, দেখিয়া বিষ্ময় লাগে মনে সবাকার।
যেদিকে সীবলী থের করেন গমন, বৃষ্টিধারা সম দান হয় বরিষণ।
সপ্তবর্ষ গর্ভবাসের কর্মফল বর্ণনা:
অতীতের কর্ম্মশক্তি থাকে সুপ্তাকারে, সকলেই কর্ম্মতত্ত্ব বুঝিতে না পারে।
আম্র হতে আম্র জন্মে, কাঠাঁলে কাঠাঁল, নিম হতে জন্মে নিম, মাকালে মাকাল*।
তাই বলি কর্ম্মফলে হও সাবধান, কর সুচরিত কর্ম্ম হয়ে মতিমান।
ভাল কর্ম্মে ভাল ফল, মন্দে মন্দ হয়, কর্ম্মের প্রকৃতি ইহা জানিবে নিশ্চয়।
সুদূর অতীতে বারাণসীতে ব্রহ্মদত্ত নামে এক অধিপতি ছিলেন। তিনি উত্তমরূপে রাজধর্ম পালন করতেন। রাজ্যে তার সুখ্যাতি প্রত্যেক প্রজামুখে। কিন্তু অতর্কিতভাবে একদিন শত্রুরাজ দ্বারা বারাণসীতে আক্রমণ হল। শত্রুরাজ রাজা ব্রহ্মদত্তকে হত্যা করে বারাণসীর সিংহাসন দখল করে নিলেন। এবং পূর্ব রাজরাণীকে অগ্র মহিষীরূপে ভূষিত করলেন।
এদিকে রাজা ব্রহ্মদত্তের পুত্র গুপ্তদ্বার দিয়ে পলায়ন করে প্রাণ রক্ষা করলেন। তিনি দূরদেশী জ্ঞাতিকুলে আশ্রয় নিয়ে ধীরে ধীরে সৈন্য সংগ্রহ এবং নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলেন। অতঃপর, সৈন্যসহ পিতৃরাজ্য পুনরুদ্বারে যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে বারাণসীর দিকে রওনা হলেন। গোপন সংবাদে মা পুত্রের আগমন বার্তা পেয়ে গোপন সংবাদ প্রেরণ করেন-
“আগে বন্ধ কর নগরের বহির্দ্বার, খাদ্যের অভাবে কষ্ট হোক সবার।
নগরবাসীরা যবে অতিষ্ঠ হইবে, ক্রোধে তারা শত্রুরাজে মারিয়া ফেলিবে।
তাহা হলে বিনাযুদ্ধে লভিবে বিজয়, ইহাই উত্তম যুক্তি জানিও নিশ্চয়”।
মায়ের বার্তা পেয়ে নগরের বাইরের দরজা সৈন্যদল দিয়ে সাত বছর অবরুদ্ধ করা রাখা হয়। তবুও রাজ্যের মধ্যে খাদ্যের অভাব, হাহাকার উঠেনি। কারণ নগরবাসীরা গুপ্তদ্বার দিয়ে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করে আনত। তখন পুনরায় মায়ের সংবাদে গুপ্তদ্বার অবরোধ করা হলে নগর মাঝে খাদ্যদ্রব্যের হাহাকারে প্রজাসাধারণ অতিষ্ঠ হয়ে রাজাকে হত্যা করে। অতপরঃ রাজা ব্রহ্মদত্তের পুত্র পিতৃরাজ্য নিজের করে নিলেন। (রাজা ব্রহ্মদত্তের সেই রাজপুত্র ছিলেন ‘সীবলী কুমার’)।
সপ্তবর্ষ সপ্তদিন দ্বার রুদ্ধ করি, সেই পাপে লৌহকুম্ভী নরকেতে পড়ি।
ভুগিয়াছি, বহু দুঃখ না যায় বর্ণন, অবশেষে লভিয়াছি মানব জনম।
ভুগিয়াছি পাপের ফল কিছু বাকী ছিল, সে কারণে মাতৃগর্ভে এত কষ্ট হল।
সীবলী পরিত্রাণ (বাংলা):
০১) মহাজ্ঞানী বুদ্ধশিষ্যগণ সকলেই শ্রাবক পারমী পুর্ণ করিয়াছেন। সীবলীর এ পারমী গুণতেজ সম্বলিত সেই পরিত্রাণ পাঠ করিতেছি। (বন্ধনী স্থিত বিষয়গুলীর অর্থ সুবোধ্য নহে) সম্ববতঃ সীবলী গুণ প্রকাশক সাংকেতিক শব্দ।
০২) সমস্ত স্বভাব ধর্মে চক্ষুষ্মান পদুমুত্তর নামক বুদ্ধ এই হইতে লক্ষকল্প পূর্বে জগতে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
০৩) সীবলী মহাস্থবির চতুর্ব্বিধ প্রত্যয়াদি পাইবার যোগ্য মহাপুরুষ। তিনি দেব-মানবগনের, উত্তম ব্রহ্মাগণের ও নাগসুপর্ণগণের প্রিয়পাত্র ছিলেন। সেই পীণেন্দ্রীয় মহাপুরুষকে আমি নমস্কার করিতেছি।
০৪) তিনি দেব-মানবগনের পূজিত, তাহার গুণ প্রকাশক “নাসং সীসো চ মোসীসং, নানজালীতি সংজলিং” এই বাক্যের প্রভাবে আমার সকল বিষয় লাভ হোক।
০৫) আমি ভূমিষ্ট হইবার সময় সপ্তাহকাল মাতৃযোনিতে মহাদুঃখ পাইয়াছি। আমার মাতাও এইরূপ মহাদুঃখ ভোগ করিয়াছেন।
০৬) আমি প্রব্রজ্যার জন্য কেশচ্ছেদনের সময় অর্হত্ব প্রাপ্ত হইয়াছি। দেব-নাগ-মনুষ্যগণ আমার জন্য উপকরণ করিয়া থাকেন।
০৭) আমি পদুমুত্তর ও বিপস্সী নামক বিনায়ক বুদ্ধকে বিশেষ বিশেষ বস্তুর দ্বারা সন্তুষ্ট চিত্তে পূজা করিয়াছি।
০৮) তাঁহাদের বিশিষ্টতা ও বিপুল উত্তম কর্মের প্রভাবে, বনে-গ্রামে-জলে ও স্থলে এই মহাপৃথিবীর সর্বত্র আমি প্রয়োজনীয় বস্তু লাভ করিয়া থাকি।
০৯-১০) তখন দেবতা আমার জন্য উত্তম বস্তু আনিয়াছিলেন। আমি সেই উপকরণের দ্বারা সঙ্ঘসহ লোকনায়ক বুদ্ধকে পুজা করিলাম। ভগবান বুদ্ধ রেবত স্থবিরকে দর্শন করিতে গেলেন। সেইখান হইতে জেতবনে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া আমাকে লাভীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠস্থান প্রদান করিলেন।
১১-১২) জগতের অগ্রনায়ক বুদ্ধ ত্রিশহাজার ভিক্ষুসহ যখন রেবত স্থবিরকে দেখিতে গিয়াছিলেন, তখন সর্ব্বলোক হিতৈষী শাস্ত্রা ভিক্ষুদিগকে ডাকিয়া কহিলেন- হে ভিক্ষুগণ, আমার লাভী শিষ্যদের মধ্যে ‘সীবলী অগ্র’। এই বলিয়া পরিষদের মধ্যে আমার প্রশংসা করিয়াছিলেন।
১৩) আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হইয়া গিয়াছে। সমস্ত ভব (অর্থাৎ উৎপত্তির কারণ) বিহত হইয়াছে। আমি বন্ধন ছিন্ন হস্তীতুল্য সংসার-বন্ধন শুন্য হইয়া বিহরণ করিতেছি।
১৪) ভগবান বুদ্ধের চরণ তলে আগমন আমার পক্ষে “স্বাগতম” অর্থাৎ সুন্দর আগমন হইয়াছে। আমি ত্রিবিদ্যা লাভ করিয়া বুদ্ধের শাসন প্রতিপালন করিয়াছি।
১৫) আমি চারি প্রতিসম্ভিদা, অষ্টবিমোক্ষ ও ষড় অভিজ্ঞা প্রত্যক্ষ করিয়া বুদ্ধশাসন রক্ষা করিয়াছি।
১৬-১৭) বুদ্ধপুত্র, জিনশ্রাবক, মহাতেজীয়ান, মহাবীর, মহাস্থবির সীবলী নিজের শীলতেজে জিন-শাসন রক্ষা করিয়া যশস্বী-ধনবান সদৃশ ছিলেন।
১৮) বুদ্ধ মার সৈন্য পরাজয় করিবার জন্য কল্পকাল স্থায়ী বোধিদ্রুম মূলে উপবেশন করিয়াছিলেন। (সেই সত্য বাক্যের প্রভাবে ) সীবলী আমাকে সর্বদা রক্ষা করুন।
১৯) আমার (একান্ত পুজনীয়) সীবলী স্থবির অগ্রলাভী দশবিধ পারমিতা পূর্ণ করিয়া গৌতম জিন-শাসনে প্রব্রজ্যা গ্রহণ পূর্বক শাক্যপুত্র নামে পরিচিত হইয়াছেন।
২০) ভগবান বুদ্ধের অশীতিজন মহাশ্রাবকের মধ্যে পূণ্ণস্থবির যশস্বী আর ভোগ্য বস্তু লাভী মধ্যে সীবলী অগ্রলাভী। তাহাদিগকে আমি অবনত শিরে বন্দনা করিতেছি।
২১) বুদ্ধগুণ অচিন্তনীয়, ধর্ম্মগুণ অচিন্তনীয় এ প্রকার অচিন্তনীয় বিষয়ে যাঁহারা প্রসন্ন হন, তাহাদের প্রসন্নতার ফলও অচিন্তনীয়।
২২-২৩-২৪) [২২-২৩-২৪ নং গাথার অর্থ হল “তাঁহাদের সত্য, শীল, ক্ষান্তি ও মৈত্রী বলের দ্বারা তাঁহারা আমাকে রক্ষা করুন, আমার সকল দুঃখ বিনাশ হউক। আমার সকল ভয় ও সকল রোগ বিনাশ প্রাপ্ত হোক”]।
সীবলী বন্দনা ও পূজা উৎসর্গ:
বন্দনা: সীবলীযং মহাথের লাভীনং সেট্ঠতং গতো মহন্তং পুঞ্ঞাবন্তং তং অভিবন্দামি সব্বদা। (তিন বার)
পূজা উৎসর্গ: ইতিপি সো সব্ব লাভীনং সীবলী অরহং তম্হং ভগবন্তং সধম্মং সসঙ্ঘং ইমেহি আহারেহি, ইমেহি নানা বিধেহি, ফলমূলেহি, ইমেহি পূপ্ফেহি, ইমেহি পদীপেহি, উদকেহি, সুগন্ধেহি, মধুহি, লাজেহি, তাম্বুলেহি, নানাবিধেহি, অগ্গরসেহি, পূজোপচারেহি। তম্হং ভগবন্তং সধম্মং সসঙ্ঘং সীবলী নাম অরহং মহাথেরস্স পূজেমি, পূজেমি, পূজেমি।
ইমিনা পূজা সাক্খার অনুভাবেন যাব নিব্বাণস্স পত্তিতাব জাতি জাতিযং সুখ-সম্পত্তি সমঙ্গীভূতেন সংসরিত্বা নিব্বাণং পাপুনিতুং পত্থনং করোমি। তেজানুভাবেন সব্ব লাভং ভবন্তু মে।
ইদং নানা বিধেহি পূজাপচারেহি পূজানুভাবেন বুদ্ধ, পচ্চেক বুদ্ধ, অগ্গসাবক, মহাসাবক, অরহন্তানং সদ্ধিং সীবলী মহালাভী স্বভাবসীলং।
অহম্পি তেসং অনুবত্তকো হোমি, ইদং পূজোপচারং দানি বণ্ণেনপি সুবণ্ণং, গন্ধেননপি সুগন্ধং, সণ্ঠানেনপি সুসণ্ঠানং, খিপ্পমেব দুব্বন্নং, দুগ্গন্ধং, দুস্সণ্ঠানং, অনিচ্চতং পাপুনিস্সতি। এবমেব সব্বে সংখার অনিচ্চা, সব্বে সংখার দুক্খা, সব্বে ধম্মা অনত্তা’তি।
ইমিনা বন্দনা মানন পূজা পটিপত্তি অনুভাবেন আসবক্খায বহং হোতু সব্বদুক্খা পমুঞ্চন্তু। ইমায ধম্মানুধম্মা পটিপত্তিযা বুদ্ধো ধম্ম সঙ্ঘস্স সদ্ধিং সীবলীযং পূজেমি।
অদ্ধা ইমায ধম্মানুধম্মা পটিপত্তিযা জাতি, জরা, ব্যাধি, মরণম্হা ধম্মো পরিমুচ্চিস্সামি।
পরিশিষ্ট:
‘সীবলী পরিত্রাণ’ পালি ও বাংলায় পাঠ করা কর্তব্য। সীমাহীন দুঃখের এ জীবনে ঈস্পিত বস্তু না পাওয়ায় দুঃখে আমরা যেখানে সদা জর্জরিত কিন্তু সেখানে লাভীশ্রেষ্ঠ অর্হৎ সীবলী স্থবির ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তিনি ছিলেন লাভীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তিনি যখন যা প্রত্যাশা করতেন তখন তা পেতেন। তিনি মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করার পর হতেই তার পিতা-মাতা/পরিবারের লাভ-সৎকারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই বৌদ্ধগণও ঈস্পিত বস্তু এবং লাভ-সৎকার বৃদ্ধি মানসে সীবলী পূজা এবং সীবলী পরিত্রাণ পাঠ করে/শ্রবণ করে থাকে। অন্তরে প্রবল শ্রদ্ধা-ভক্তি-বিশ্বাস নিয়ে সীবলী বন্দনা, পূজা, পরিত্রাণ পাঠ/শ্রবণ করতঃ লাভ-সৎকার বৃদ্ধি, পারিবারিক সৌভাগ্য-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি, নানাবিধ বিপদাপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। তাছাড়া এহেন পূজ্য অরতহের পূজার ফল কখনো বৃথা যায় না এতে প্রভূত পূণ্য ব্যতীত অপূণ্য সাধিত হয়না।
সীবলীর ব্রতকথা যে করে পঠন, তাহার দুঃখ রবে না কখন।
পাপগ্রস্থ দোষে দুঃখ যখন পাইবে, যতনে সীবলী পূজা তখনি করিবে।
হবে গ্রহদোষ-শান্তি নিশ্চয় নিশ্চয়, সর্বজ্ঞ বুদ্ধের বাণী কভু মিথ্যা নয়।
“সাধু, সাধু, সাধু, জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক”
*মাকাল = লতা জাতীয় উদ্ভিদ, বাইরে সুন্দর অথচ ভিতরে দূর্গন্ধ ও খাদ্য শাসযুক্ত ফলবিশেষ, সুদর্শন অথচ গুণহীন ব্যক্তি।

তথ্যসূত্র: সীবলী ব্রতকথা- বিশুদ্ধাচার স্থবির।

রাজকুমার সিদ্ধার্থের বংশ পরিচয়

রাজকুমার সিদ্ধার্থের বংশ পরিচয়

 

            রাজকুমার সিদ্ধার্থের বংশ পরিচয়

           ————————————————–

              পিতৃকুল —-শাক্য বংশ

             ——————————

     ১। জয়সেন – সন্তান- পুত্র -১ জন ও কন্যা -১ জন।

        পুত্র – সিংহহনু, কন্যা – যশােধরা ( অঞ্জনের স্ত্রী)।

     ২। সিংহহনু স্ত্রী – কচ্চায়না (দেবদহের কন্যা)।

         সন্তান – পুত্র – ৪ জন ও কন্যা – ২ জন।

            পুত্র – ৪ জন ( সিংহহনু)

        ক। শুদ্ধোদন – স্ত্রী – ২ জন।

         ১। মহামায়া — অঞ্জনের কন্যা।

          ২। মহাপ্রজাপতি গৌতমী – অঞ্জনের কন্যা। প্রব্রজিত।

               সন্তান – ২ পুত্র ও ১ কন্যা।

               পুত্র – ২ জন ( শুদ্ধোদন)

            ১। সিদ্ধার্থ – মহামায়ার সন্তান।

              স্ত্রী – যশােধরা – সুপ্রবুদ্ধের কন্যা। প্রব্রজিত।

               সন্তান – পুত্র -১ জন।

               পুত্র – রাহুল। প্রব্রজিত।

                 ২। নন্দ – মহাপ্রজাপতি গৌতমীর সন্তান। প্রব্রজিত।

                   কন্যা -১ জন ( শুদ্ধোদন)

                  ১। সুন্দরী নন্দা – মহাপ্রজাপতি গৌতমীর সন্তান। প্রব্রজিত।

     খ। ধােতদন – নিঃসন্তান।

     গ। শুক্লোদন – সন্তান – পুত্র – ২ জন।

           ১| অনুরুদ্ধ – প্রব্রজিত।

          ২| মহানাম।

     ঘ। অমিতােদন – সন্তান – পুত্র -১ জন।

        ১। আনন্দ – প্রব্রজিত

      কন্যা – ২ জন (সিংহহনু)

       ক। অমিতা – সন্তান – পুত্র -১ জন।

          ১। তিসস – প্রব্রজিত।

          খ। প্রমিতা – সুপ্রবুদ্ধের স্ত্রী।

             মাতৃকুল – কোলিয় বংশ

           ————————————

   ১। দেবদহ – সন্তান – পুত্র –১ জন ও কন্যা – ১ জন।

      পুত্র – অঞ্জন, কন্যা – কচ্চায়না ( সিংহহনুর স্ত্রী)।

    ২। অঞ্জন – স্ত্রী – যশােধরা (জয়সেনের কন্যা)।

       সন্তান – পুত্র – ২ জন ও কন্যা – ২ জন।।

       পুত্র – ২ জন (অঞ্জন)

        ক। সুপ্রবুদ্ধ – স্ত্রী – প্রমিতা (সিংহহনু কন্যা)।

         সন্তান – পুত্র -১ জন ও কন্যা -১ জন।

     পুত্র -১জন (সুপ্রবুদ্ধ)

       ১। দেবদত্ত – প্রব্রজিত।

        কন্যা – ১ জন (সুপ্রবুদ্ধ)

      ১। যশােধরা – সিদ্ধার্থের স্ত্রী। প্রব্রজিত।

        খ। দনগুপানি – নিঃসন্তান।

         কন্যা -২ জন (অঞ্জন)

          ক। মহামায়া – শুদ্ধোদনের স্ত্রী।

          খ। মহাপ্রজাপতি গৌতমী – শুদ্ধোদনের স্ত্রী।

# তথ্যসূত্র ঃ-  মহামুনি সম্যক সম্বুদ্ধ (  http://ms-sambuddha.com )

বুদ্ধের এই ৩১ বাণী মনে রাখলে জীবন হবে সফল, শান্তিময়

বুদ্ধের এই ৩১ বাণী মনে রাখলে জীবন হবে সফল, শান্তিময়

মানুষের জীবন মাত্রই সুখ-দুঃখের মিলিত রূপ। সুখের পাশাপাশি দুঃখের হাত থেকেও নিস্তার নেই কারও। জরা, রোগ, মৃত্যু- এ সবই দুঃখ। বুদ্ধের মতে  মানুষের কামনা-বাসনাই দুঃখের মূল। মাঝে মাঝে যে সুখ আসে তাও দুঃখের মিশেলে এবং অস্থায়ী। অবিমিশ্র সুখ বলে কিছু নেই।

গৌতম বুদ্ধ বলেন, নির্বাণ লাভ কিংবা কামনা-বাসনা থেকে মুক্তি লাভে দুঃখের অবসান ঘটে। এর মধ্য দিয়ে দূর হয় অজ্ঞানতা। মেলে পূর্ণ শান্তি। সত্যজ্ঞান, আনন্দ এবং ইতিবাচকতার জন্য আমরা তাই বুদ্ধের কাছে যাই। সুখের সন্ধানে অনুসরণ করি তাঁর বাণী।

নিচে গৌতম বুদ্ধে ৩১টি বাণী তুলে ধরা হলো। এগুলোই হয়তো পাল্টে দেবে আপনার জীবনকে, এর মধ্যে হয়তো পেয়ে যাবেন সুখের ঠিকানা :

১। অতীতকে প্রাধান্য দিও না, ভবিষ্যত নিয়ে দিবাস্বপ্নও দেখবে না। তার চেয়ে বরং বর্তমান মুহূর্ত নিয়ে ভাবো।

২। সবকিছুর জন্য মনই আসল। সবার আগে মনকে উপযুক্ত করো, চিন্তাশীল হও। আগে ভাবো তুমি কী হতে চাও।

৩। আনন্দ হলো বিশুদ্ধ মনের সহচর। বিশুদ্ধ চিন্তাগুলো খুঁজে খুঁজে আলাদা করতে হবে। তাহলে সুখের দিশা তুমি পাবেই।

৪। তুমিই কেবল তোমার রক্ষাকর্তা, অন্য কেউ নয়।

৫। জীবনের প্রথমেই ভুল হওয়া মানেই এই নয় এটিই সবচেয়ে বড় ভুল। এর থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যাও।

৬। অনিয়ন্ত্রিত মন মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে। মনকে প্রশিক্ষিত করতে পারলে চিন্তাগুলোও তোমার দাসত্ব মেনে নেবে।

৭। তোমাদের সবাইকে সদয়, জ্ঞানী ও সঠিক মনের অধিকারী হতে হবে। যতই বিশুদ্ধ জীবনযাপন করবে, ততাই উপভোগ করতে পারবে জীবনকে।

৮। আমরা অনেকেই একটা কিছুর সন্ধানে পুরো জীবন কাটিয়ে দেই। কিন্তু তুমি যা চাও তা হয়তো এরইমধ্যে পেয়েছ। সুতরাং, এবার থামো।

৯। সুখের জন্ম হয় মনের গভীরে। এটি কখনও  বাইরের কোনো উৎস থেকে আসে না।

১০। অন্যের জন্য ভালো কিছু করতে পারাটাও তোমার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

১১। জীবনের খুব কম মানুষের জীবনে পরিপক্কতা আসে। সঙ্গী হিসেবে এই পরিপক্কতাকে তোমার অর্জন করতে হবে। তবে তা ভুল মানুষকে অনুসরণ করে নয়। এই পরিপক্কতা অর্জনে বরং একলা চলো নীতি অনুসরণ করো।

১২। করুণাই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি।

১৩। সুখ কখনও আবিষ্কার করা যায় না। এটি সবসময় তোমার কাছে আছে এবং থাকবে। তোমাকে কেবল দেখার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

১৪। রেগে যাওয়া মানে নিজেকেই শাস্তি দেওয়া।

১৫। সত্যিকারভাবে ক্ষমতা নিয়ে বাঁচতে হলে নির্ভয়ে বাঁচো।

১৬। জীবনে ব্যাথা থাকবেই, কিন্তু কষ্টকেই ভালোবাসতে শেখো।

১৭। অনেক মোমবাতি জ্বালাতে আমরা কেবল একটি মোমবাতিই ব্যবহার করি। এর জন্য ওই মোমবাতিটির আলো মোটেও কমে না। সুখের বিষয়টিও এমনই।

১৮। যখন আমরা মনের রূপান্তর ঘটাই, আর চিন্তাগুলো বিশুদ্ধ করি, তখন আমরা অন্যায় কাজ থেকে জীবনকে পরিশুদ্ধ করি। এর মাধ্যমে খারাপ কাজের চিহ্নও মুঁছে যায়।

১৯। অন্যকে কখনও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করো না, নিয়ন্ত্রণ করো কেবল নিজেকে।

২০। আলোকিত হতে চাইলে প্রথমে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করো।

২১। জ্ঞানগর্ভ জীবনের জন্য মুহূর্তের ইতিবাচক  ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এই জন্য ভয়কে তুচ্ছ করতে হবে, এমনকি মৃত্যুকেও।

২২। এই তিনটি সর্বদা দেখা দেবেই: চাঁদ, সূর্য এবং সত্য।

২৩। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তের সমন্বয়ই জীবন। কেবল একটি সঠিক মুহূর্ত পাল্টে দেয় একটি দিন। একটি সঠিক দিন পাল্টে দেয় একটি জীবন। আর একটি জীবন পাল্টে দেয় গোটা বিশ্ব।

২৪। নিজের কথার মূল্য দিতে হবে নিজেকেই। কেননা, তোমার নিজের কথার ওপর নির্ভর করবে অন্যের ভালো কাজ কিংবা মন্দ কাজ।

২৫। ঘৃণায় কখনও ঘৃণা দূর হয় না। অন্ধকারে আলো আনতে তোমাকে কোনো কিছুতে আগুন জ্বালতেই  হবে।

২৬। শুভর সূচনা করতে প্রত্যেক নতুন সকালই তোমার জন্য এক একটি সুযোগ।

২৭। আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। একজন আরেকজনের পরিপূরক। অর্থাৎ সমাজে আমরা কেউ একা নই।

২৮। খারাপটি সর্বদা তুমি নিজেই পছন্দ করছো। সুতরাং, তোমার খারাপ কাজের জন্য তুমি নিজেই দায়ী। এর দায়ভার অন্য কারো নয়।

২৯। তোমার চিন্তাই তোমার শক্তির উৎস। নেতিবাচক চিন্তা তোমাকে অনেক বেশি আঘাত করে যা তোমার ধারণায় নেই।

৩০। নির্বোধ বন্ধু আদৌ কোনো বন্ধু নয়। নির্বোধ বন্ধু থাকার চেয়ে একা হওয়া অনেক ভালো।

৩১। তুমি মুখে কী বলছো সেটি কোনো বিষয় নয়, বিষয় হলো তোমার কাজ।

সুত্র ঃ কালেরকন্ঠ

error: Content is protected !!