গৃহী সমাজে বুদ্ধের অহিংসা নীতি

গৃহী সমাজে বুদ্ধের অহিংসা নীতি

গৃহী সমাজে বুদ্ধের অহিংসা নীতি

by Ven. Jnanasree Bhikkhu
আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কলেজ, Songkhla, থাইল্যান্ড

সর্বদর্শী ভগবান বুদ্ধ সুর্দীঘ পয়তাল্লিশ (৪৫) বছর ব্যাপি মানব সহ সকল প্রাণীর মঙ্গলের জন্য অমৃতময় বাণী প্্রচার করেছেন।সেসব বাণী গুলি যারা পালন করে জীবন যাপন করেন তারা বর্তমান জীবনে সুখ শান্তি লাভ করতে পারে এবং মৃত্যুর পর সুগতি প্রাপ্ত হয় । ভগবান বুদ্ধের অন্যতম বাণী হল অহিংসা পরম ধর্ম অর্থাৎ সকল জীব তথা সকল মানবের প্রতি সমভাবে মৈত্রী প্রদর্শন করা। হিংসা পরিহার করে অহিংসাময় জীবন যাপন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মা যেমন সন্তানের প্রতি অবিরত ভাবে অহিংসা পরায়ন থাকেন ঠিক সেরুপ ভাবে সকল জীব তথা মানবের প্রতি সকল মানব অহিংসা পরায়ন হলে সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে মানবগন সুখে জীবন যাপন করতে পারবে। আজ আধুনিক বিশ্বে বুদ্ধের বাণী আহিংসা না থাকার কারণে মারা-মারি,যুদ্ধ,রক্তপাত সহ বিভিন্ন ভাবে মানুষের জীবন যাপন হয়ে উঠছে বিষাদময়।

অন্য ধর্মের অনুসারিদের কথা বাদ দিয়ে শুধু বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারিদের কথায় আসা যাক,যেহেতু আমরা নিজেরা নিজেদেরকে বৌদ্ধ বলে দাবি করি সেহেতু বুদ্ধের বাণী মেনে চলা আমাদের কর্তব্য । আসলে আমরা কি বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম বাণীটি মেনে চলি বা আমরা বিশ্বাস করি, যদি বিশ্বাস করি তবে আমাদেরকে হিংসা পরিহার করতে হবে। আমরা যারা বৌদ্ধ আমরা কি যথাযথ ভাবে বুদ্ধের বাণী অনুসরণ করছি। আমার মনে হয় আমি করছিনা, যদি আমিসহ আমরা সবাই বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম পালনে রত থাকতাম তবে আজ দেশে, সমাজে,বিহারে, সংগঠনে, নিকায়ে এত ভেদাভেদ কথা কাঁটা-কাটি, মাম লামোর্কাদ্দমা হত না।

গৃহী সমাজে বুদ্ধের অহিংসা নীতির প্রতিপালন:

গৃহীরা সংসার ধর্ম পালন করেন,সংসারে আনন্দ-উল্লাস,হাসি-কান্না,মান-অভিমান,সুখ-দুঃখের মধ্যে দিয়ে মানুষ জীবন যাপন করেন। বুদ্ধের ভাষায় মানব জীবন অতি দুর্লভ,অতীতের অনন্ত অনন্ত পূর্ণ রাশির প্রভাবে মানব জীবন লাভ করা যায়। অনেক বিজ্ঞ ব্যাক্তি বলেন মানব হল সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজে জীবন যাপন কালে সমাজকে উন্নত করার জন্য এবং একতা বদ্ধ ভাবে সুখে জীবন যাপনের জন্য সামাজিক সংগঠন বা সমিতি স্থাপন করা হয়। নিজ ধর্ম আচরনের জন্য বিহার ও ভাবনাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সংগঠন মানে আমি যা বুঝি তা হল সকলে একত্রিত হয়ে সমাজের, দেশের ও সর্বসাধারনের মঙ্গল বা হিত সাধন করা। এখন আমাদের বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমাজে বৌদ্ধ সংগঠনের সংখ্যা বাংলাদেশের যত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে প্রায় তার সমান। যদি সকল সংগঠন নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ি উন্নয়নমুলক কর্ম সম্পাদন করতেন তবে বাংলাদেশের বৌদ্ধরা আজ অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ আসনে সমাসিন হতে পারতেন। অহিংসা নীতি যথাযথ ভাবে পালন না করায় আজ আমরা বৌদ্ধরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলিত । বিশেষ করে বৌদ্ধরা, বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে অহিংসা পরায়ন হয় না । যারা সমাজের কান্ডারি বলে সমাজে কান্ডারির আসন দখল করে আছে তাদের অনেকের কারণে সমাজ উন্নতির চেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্ত। আমরা যারা সমাজের উন্নতির কথা ভাবি আবার দেখা যায় তারা নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে সমাজের ক্ষতি সাধন করে থাকি। আজ সে সকল সমাজ সেবকদের কারণে বৌদ্ধ পাড়ায়, বৌদ্ধ বিহারের পাশে, অন্য ধর্মের অনুসারিরা বসত-বাড়ী নির্মাণ করে বিভিন্ন ভাবে আমাদের ধর্মের ক্ষতি সাধন ও ক্ষতি কারক হিসাবে রুপ নিচ্ছে। তারা কি একটু ও চিন্তা করেন না। আমার সামান্য স্বার্থের জন্য আমার ধমের্র-সমাজের-পরিবারের অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। যদি চিন্তায় আসতো তবে ভাই-ভাই এর সাথে বিবাদ করে, অহিংসা নীতি ভুলে গিয়ে অন্য ধর্মের অনুসারিদের হাতে পূর্ব পূরুষের বাড়ী, পুকুর, শশ্মন তুলে দিতো না। এই সকল সমস্যায় চোখ-কান না দিয়ে মৃত বাসরে স্মৃতিচারণ করে –অপরের সমালোচনা করে-সংগঠন করে-বিহার ভিত্তিক রাজনীতি করে কি সমাজের উন্নতি সাধন করা যাবে। আমাদের মাঝে বুদ্ধের অহিংসা নীতি যথাযথ ভাবে  আচরণের অভাবে উন্নতির স্তানে অবনতির আলামত দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু আমরা সরল অন্য ধর্মের অনুসারিদের ক্ষেত্রে,বৌদ্ধরা বৌদ্ধেদের জন্য সরল না, ভাই-ভাই এর ক্ষেত্রে অনেক কঠিন, পিতা-পুত্রের ক্ষেত্রে অনেক কঠিন, আত্মীয়-আত্মীয় ক্ষেত্রে স্বার্থের জন্য অনেক কঠিন রুপধারণ করেন। একে অন্যের প্রতি হিংসা পরায়ন হয়ে অশোভনীয় কার্য্য, অসহনীয় আঘাত অপ্রতাশিত দুঃখ দিচ্ছে এবং দুঃখ পাচ্ছে।

জ্ঞান বুদ্ধি কৌশলের সহিত চললে শ্রীবৃদ্ধি হবে

জ্ঞান বুদ্ধি কৌশলের সহিত চললে শ্রীবৃদ্ধি হবে

সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ ১৪০৭ বঙ্গাব্দ, ১৪ ই এপ্রিল ২০০০ সাল। রোজ শুক্রবার। নববর্ষ বিশ্বের সকল প্রাণীর হিতসুখ মঙ্গলের বার্তা বয়ে আনার জন্য রাজবন বিহার প্রাঙ্গনে আয়োজন করা বিরাট ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বিহারের দক্ষিণ দিকে খোলা মাঠে প্রস্তুত করা হয় অনুষ্ঠান মঞ্চ। যতই সময় গড়াতে থাকে ততই হাজার হাজার পুণ্যার্থী আগমনে মাঠ ভরে উঠে জন সমুদ্রে পরিণত হয়। হাজার হাজার পুণ্যার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বাবু কল্প রঞ্জন চাকমা, তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণানার্থী বিষয়ক টাস্কর্ফোস এর চেয়্যারম্যান ও রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য বাবু দীপঙ্কর তালুকদার, জেলা পরিষদ চেয়্যারম্যান বাবু চিং কিউ রোয়াজা, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। যথাসময়ে শ্রদ্ধেয় বনভান্তে মঞ্চে আগমন করলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুরু হয়।দানোৎসর্গ পরিত্রাণ পাঠ পর্ব শেষে সকল প্রাণীর হিতসুখ মঙ্গলার্থে শ্রদ্ধেয় বনভান্তে ধর্মদেশনা শুরু করেন। শ্রদ্ধেয় বনভান্তে ধর্মদেশনায় বলেন—শ্রোতামণ্ডলী যদি অন্তর্দৃষ্টিভাব সম্পন্ন হন, তাহলে তারা শ্রোতব্য বিষয় বুঝতে সক্ষম হন। আর তখনই উপদেশকের উপদেশ প্রদান এবং শ্রোতাদের শ্রবণ উভয় সার্থক হয় তথা ফলপ্রসু রূপদান করে থাকে। সেই অন্তর্দৃষ্টি ভাব শব্দের অর্থ হল নিজকে বুঝবার ক্ষমতা এবং নিজকে দর্শন। বলা যায়, যে পুদ্গলের নিকট অন্তর্দৃষ্টিভাব বিদ্যমান থাকবে সেই পুদ্গলই একমাত্র বৌদ্ধধর্মের মূলতত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। যার কাছে অন্তর্দৃষ্টি ভাব নেই সে কিছুতেই বৌদ্ধধর্ম বুঝতে পারবে না। ভগবান বুদ্ধ ধর্মদেশনার পূর্বে শ্রোতাদের অন্তর্দৃষ্টি ভাব উৎপন্ন হয়েছে কিনা তা’ জ্ঞান যোগে দর্শন করতেন। যখন জ্ঞাননেত্রে দেখতেন যে,শ্রোতাদের চিত্তে অন্তর্দৃষ্টিভাব উৎপন্ন হয়েছে তখনই ধর্মদেশনা প্রদান করতেন। আর সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাম-লীরা স্রোতাপত্তি, সকৃদাগামী, অনাগামী, অরহত মার্গ ফলে প্রতিষ্ঠিত হতো। তাই বৌদ্ধধর্মের উপদেশ হল প্রথমে নিজকে পাপ, অকুশলকর্ম সম্পাদন করা হতে বিরত রাখা। নিজকে বুঝতে চেষ্টা করা, নিজকে দর্শন করে অবস্থান করা। যাতে নিজের মধ্যে অকুশল চেতনা, ভুল ধারণা বিদ্যমান থাকলে সেসব সংশোধন করতঃ অকুশল, ভুলের ঊর্ধ্বে উঠতে সমর্থ হওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে ঘটতেছে তার সম্পূর্ণ উল্টো।নিজকে বুঝতে চেষ্টা না করে অপরের দিকে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ, নিজেকে সংযত না করে তার পরিবর্তে অপরের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা। পরের দোষ প্রকাশে পঞ্চমুখ আর নিজের দোষে বিমুখ এ নীতি চালিত হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। সবাই যেন পরছিদ্র অন্বেষণে বা পরচর্চায় ব্যস্ত। নিজের দিকে দৃষ্টি ফেরানোর সময় কোথায়? তাই বুদ্ধ বলেছেন, অপরের দোষ ধরা সহজসাধ্য ব্যাপার হলেও নিজের দোষ-ক্রটি সম্পর্কে সচেতন থাকা বা দোষ ধরা সত্যিই সুকঠিন কাজ। অপরের ভুল সহজে প্রমাণিত হয়, দৃষ্ট হয় বটে, কিন্তু নিজের ভুলসমূহ প্রমাণ করা ও দর্শন করা দুরুহ ব্যাপার। বলা যায় পরচর্চা মানসিকতা থেকেই একে অপরের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি, বিদ্বেষ ভাব সৃষ্টি হয়। পরচর্চায় রত হলে একদিকে যেমন নিজের মধ্যে বিদ্যমান ভুল সংশোধন করা যায় না অর্থাৎ ভুলসমূহ রয়েই যায়; অন্যদিকে অন্যজনেরাও তাকে ভালো চোখে দেখে না। ফলে কলহ, বিবাদ, অজ্ঞানতা বেড়েই চলে।

মানুষ যদি ধর্মীয় রীতি-নীতিসমূহ সঠিকভাবে বুঝতে, পালন করতে অক্ষম হয় তাহলে তারা বিপদগামী হতেই বাধ্য। বিপদগামী হলে অকুশল, দুর্নীতি, দুষ্কৃতিমূলক কর্ম সম্পাদন করতঃ বিবিধ দুঃখের ভাগী হয়। পক্ষান্তরে ধর্মীয় রীতি-নীতি সঠিকভাবে পালন করলে কোন দুঃখের কারণ হতে পারে না। সেই সঠিক রীতি-নীতি হল দুঃখ সত্য, সমুদয় সত্য, নিরোধ সত্য, মার্গসত্য সম্বন্ধে সম্যক ধারণা বা জ্ঞানার্জন করা। এই চতুরার্য সত্যে জ্ঞানার্জন হলে সকল প্রকার ভ্রান্ত মত, ভ্রান্ত পথ বন্ধ হয়ে যায়। ভগবান বুদ্ধ অনেক ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী মিথ্যাদৃষ্টি সম্পন্ন পুদ্গলকে সম্যকদৃষ্টির আলোক সন্ধান দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে মিথ্যাদৃষ্টি, ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী পুদ্গলের সংখ্যা অত্যাধিক। কে তাদেরকে সম্যকদৃষ্টির আলোক সন্ধান দিতে সমর্থ হবে? বনভান্তে ধর্ম সভায় উপস্থিত মন্ত্রী কল্পরঞ্জন চাকমা, তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সংসদ সদস্য দীপঙ্কর তালুকদারের উদ্দেশ্যে বলেন, কোন দেশের রাষ্ট্র প্রধান বা বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তি কি সম্যকদৃষ্টি আলোক সন্ধান দেখাতে পারবে? কখনো না। আমি জ্ঞানের দ্বারা দেখতে পাচ্ছি যে বর্তমানে মারের অশুভ শক্তি প্রবল আকারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত পাচ্ছে। কারণ বর্তমানে প্রকৃত জ্ঞানী লোকের বড়োই অভাব। তাই অতি সহজে মারের ফাঁদে পা দিচ্ছে এবং কুপথে পরিচালিত হবার সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলছে আর চলছে। তাই বলি সৎপথে চালিত হতে হলে, কুশলকর্ম সম্পাদন করতে হলে, মারের সৃষ্ট সকল প্রকার ঘাত-প্রতিঘাত, প্রলোভন, হুমকির মধ্যেও অবিচলিত হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যিনি এম্ববিধ কঠিন কার্যে সফলকাম হয়ে সদ্ধর্ম আচরণের পথে বাধা-বিঘ্নসমূহ ছিন্ন-ভিন্ন, পদদলিত করতে সমর্থ হন তিনিই পরম সুখ, শান্তি লাভ করেন।

ভগবান বুদ্ধ বলেছেন—মনুষ্যত্ব লাভ করা দুর্লভ। সহজেই মনুষ্যকুলে জন্ম লাভ হয় না। অনেক প্রচেষ্টা ও বহুজন্মের অর্জিত পুণ্যের প্রভাবে একবার মনুষ্য জন্ম লাভ হয়ে থাকে। বর্তমানে দুষ্কৃতি কর্ম সম্পাদনের ফলে এহেন দুর্লভ মানব জীবন হতে স্খলিত হয়ে চারি অপায়ে পতিত হলে তা’ অতিশয় বিপর্যয় বলে জানবে। কারণ বহু কল্পকাল ব্যাপী অনন্ত দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করেও আবার, কখন যে মানব জনম লাভ হবে তার হিসাব নিকাশ নেই। তাই মনুষ্য জনম লাভ করে তা’ রক্ষা করা সুকঠিন একটি কাজ। আবার, বুদ্ধের দর্শন, সদ্ধর্ম লাভ করাও অতিশয় দুর্লভ। কেননা বুদ্ধ বা জ্ঞান দর্শন করা খুব বিরল। বহু কাল ধরে জ্ঞানের সাধনা করতে করতে তবেই জ্ঞানের দর্শন মিলে। অন্যদিকে, সদ্ধর্ম লাভ করতে চায় দৃঢ় বীর্যের সহিত আর্য মার্গ অনুশীলন, উপলব্ধি করণের মাধ্যমে সত্য জ্ঞানের সন্ধান লাভ হয়। সেই জ্ঞানের সন্ধান লাভ সকলের পক্ষে সম্ভবপর নহে। বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা, সংযম আচরণের ফলে অতি অল্প সংখ্যক পুদ্গলেরা এই জ্ঞানের সন্ধান পায়। ধর্মদেশনা শ্রবণ করে যদি বুদ্ধের সাক্ষাৎ, সদ্ধর্ম লাভের সুযোগ পাওয়া যায় তা’ অতি সৌভাগ্যের বিষয়। তখন দেশনা শ্রবণকারীর অন্তর পরম তৃপ্তিতে ভরে উঠে, নির্মল সুখ লাভ হয় এবং অপায় দ্বার চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। তবে বুদ্ধের সাক্ষাৎ, সদ্ধর্ম লাভ করার পথে মার নামক অলৌকিক শক্তিশালী এক দেবতা কঠোর প্রতিরোধ সৃষ্টি করতঃ হুমকি, প্রলোভন প্রদর্শন দ্বারা নানা প্রকার বাঁধা-বিপত্তি ঘটায়ে থাকে। সত্ত্বদিগকে বিবিধরূপে দুঃখ প্রদান করা, লাঞ্ছিত, অপমানিত করা এবং স্বাধীনভাবে গমনাগমন করতে বঞ্চিত করা অর্থাৎ সর্বদা তার অধীনে মাথা নত করে অবস্থান করতে বাধ্য করা মারের কাজ।

শ্রদ্ধেয় বনভান্তে (ধর্ম সভায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্য করে) বলেন—বুদ্ধ বলেছেন যে দেশের নেতার সংখ্যা বেশি, সকলের চেয়ে বড় হতে চাই, তাদের কার্য বিনষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশের অবস্থাও ঠিক সে রকমই হচ্ছে। আমি ধর্মীয় সফরে বের হলে দেখতে পায় রাস্তাঘাটসমূহ প্রায়ই ভাঙ্গাচুরা, দেশের উন্নতি ছোয়া এতো পিছনে পড়ে আছে কেন? একদলের উন্নতি, ভালোর দিকটা অন্যদলের নেতারা সহ্য করতে চায় না। একদল অন্যদলের হিংসা, বিদ্বেষের রোষানলের শিকারে পতিত হয়ে কোন ভালো কাজ করতে পারছে না। বর্তমানে শুধুমাত্র ক্ষমতার মোহে, গদির লোভে জ্বালাও পোড়াও এ নীতিতে প্রায় সবাই ব্যস্ত।দেশ উন্নতি, অবনতি যেদিকে যাক না কেন। এমনিতে গরিব দেশ, তার উপর নানামত ও নানাপথ ফলে উন্নতি হবে কিভাবে? বুদ্ধ বলেছেন দেশ শাসন করতে হলে প্রয়োজন জ্ঞান, বুদ্ধি, কৌশল। জ্ঞান, বুদ্ধি, কৌশলের সহিত দেশ শাসন করতে পারলে দেশের উন্নতি, শ্রীবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।সাথে সাথে জন সাধারণের কাছে নিজের গ্রহণ যোগ্যতাও বৃদ্ধি পায়।জ্ঞান, বুদ্ধি, কৌশলের দ্বারা পরিচালিত হতে পারলে নিজকে যেমন ঊর্ধ্বদিকে নিয়ে যেতে পারে, অন্যদিকে দেশের জন্যও অনেক মঙ্গলময় কার্য সম্পাদন করা সম্ভব হয়। কাজেই তোমরা জ্ঞান, বুদ্ধি, কৌশল অবলম্বনে এগিয়ে যেতে চেষ্টা কর। আবার ভালো, খারাপ ভেদে বুদ্ধি দুই প্রকার। খারাপ বুদ্ধির সহিত কাজ করলে কোন রকমে একদিন স্বাচ্ছন্দে চলা যায় মাত্র। তারপর পতন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। পক্ষান্তরে ভালো বুদ্ধির সহিত কর্ম সম্পাদন করলে সারা জীবন সুখ স্বাচ্ছন্দে অতিবাহিত করা সম্ভব। সেখানে পতনের কোন আশঙ্কা নেই। কাজেই এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, সৎভাবে পরিচালিত হলে নিজের যেমন মঙ্গলময় ভবিষ্যতের আশা করা যায়, তেমনি অসৎভাবে পরিচালিত হলে নিজের সর্বনাশটুকু ডেকে আনা ছাড়া কোন কিছু হয় না।

যারা চিত্তের মধ্যে জ্ঞান বিদ্যমান থাকবে সে খারাপ কর্ম ত্যাগ করে ভালো কর্মই সম্পাদন করবে। আর যার চিত্তের মধ্যে জ্ঞান নেই সে খারাপ কর্ম সম্পাদন করতে বাধ্য। তাই কর্মের দ্বারা প্রমাণিত হয় সে জ্ঞানী নাকি অজ্ঞানী। জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো খারাপ কর্ম সম্পাদন করতে পারে না। বলা যায়, কর্মেই জ্ঞানীর লক্ষণ, কর্মেই অজ্ঞানীর লক্ষণ প্রকাশ পায়। কারণ জ্ঞানী ব্যক্তিরা যেমন সর্বদা ভালো কর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখে, তেমনি অজ্ঞানী ব্যক্তিরা মন্দ কর্ম সম্পাদনে কিছুতেই পিছ পা হয় না। তোমরা সকলে জ্ঞানী হয়ে যাও; ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা যাচাই কর। তারপর ভালো, ন্যায়, সত্যকে গ্রহণ করতঃ মন্দ, অন্যায়, মিথ্যাকে বর্জন কর। মনে রাখবে, ভালো-মন্দ বিচার করা, ন্যায়-অন্যায় যাচাই করা, সত্যা-মিথ্যা পরীক্ষা করা প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ। এসব বিচার, যাচাই, পরীক্ষা করার মধ্যে দিয়েই প্রকৃত সার, সত্য নিরুপিত হয়ে থাকে। আর তখন অসার, মিথ্যাকে পরিত্যাগ করে সার, সত্যকে গ্রহণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া যায়। যারা জ্ঞানী তারা ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যাকে যাছাই করতে সক্ষম। কিন্তু অজ্ঞানীরা এসব যাছাই বাছাই কিছু করতে পারে না। তাই তারা দিকভ্রান্ত পথিকের ন্যায় বিপরীত দিকে ধাবিত হতে থাকে। বুদ্ধ বলেছেন, অজ্ঞানীর মূর্খ ব্যক্তি ছয়টি দোষ বিদ্যমান থাকে। কি কি? তারা ভালোকে মন্দ বলে, মন্দকে ভালো বলে, ন্যায়কে অন্যায় বলে, অন্যায়কে ন্যায় বলে, সত্যকে মিথ্যা বলে, মিথ্যাকে সত্য বলে থাকে। একথায় তারা সারকে অসার, অসারকে সাররূপে গ্রহণ করে থাকে। তজ্জন্য তারা কখনো সারবস্তু লাভ করতে পারে না। সর্বদা মিথ্যার মধ্যে নিজেকে আঁকড়ে রেখে খারাপ কর্মসমূহ সম্পাদন করতেই থাকে। কাজেই সে কর্ম হতে ফিরে আসা তাদের পক্ষে আর সম্ভবপর হয়ে উঠে না। আমার অনেক বছরের সাধনায় এই অভিজ্ঞা হয়েছে যে, মূর্খের কাছ হতে কোন ভালো কর্ম আশা করা সম্ভব নয়। ভালো কর্ম সাধন করতে হলে পণ্ডিত ব্যক্তির প্রয়োজন।সুতরাং তোমরা সবাই পাণ্ডিত্য অর্জন কর। অনেক বেশি কথা বললে, কথায় বার্তায় চতুরতা প্রদর্শন করলে, নানা যুক্তি উপমা সহকারে অনেক বক্তৃতা প্রদান করলে, সুমধুর স্বরে গাথা পাঠ করলে পাণ্ডিত্য অর্জিত হয় না। পণ্ডিত কাকে বলে জান? একদিন আমি জনৈক অফিসারকে পণ্ডিতের লক্ষণ সম্বন্ধে উপদেশ প্রদান করলে সে খুব সন্তুষ্ট হয়েছিল। বৌদ্ধধর্ম মতে, যিনি সহনশীলত, সর্বজীবের প্রতি দয়ালু, কুশলকর্মে নির্ভীক, ক্ষমাশীল, মৈত্রীপরায়ণ, সর্বদা অক্ষুণ্ণভাব বজায় রাখতে যিনি সক্ষম তিনিই পণ্ডিত। একমাত্র এসব গুণের দ্বারাই পাণ্ডিত্য অর্জিত হয়। কেহ যদি পণ্ডিত হয় সে আর অন্যায়মূলক কর্ম সম্পাদন করবে না, খারাপ, দোষপূর্ণ কর্মে নিয়োজিত থাকবে না। কিন্তু যদি মূর্খ হয়ে থাকে তবে সে অন্যায়, অপরাধ, মন্দ কর্মসমূহ সম্পাদন করতে থাকবে। তাই আমার অনুরোধ, তোমরা সকলে অতিসত্বর পণ্ডিত হয়ে যাও। এখানে উপস্থিত নর-নারী যদি সবাই পণ্ডিত হয়ে যেতে পার তাহলে অবশ্যই তোমাদের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বয়ে আসবে। এটা কোন কথার কথা নয়; তোমরা পরীক্ষা করে দেখতে পার।

বনভান্তে আরো বলেন—মূর্খ ব্যক্তিরা সব সময় আন্দোলন, মিছিল, দল, হরতালের মধ্যে নিজেকে যুক্ত রাখে। এসব কর্মের দ্বারা তারা অরাজকতা সৃষ্টি করে থাকে, দুঃখ সৃষ্টি করে থাকে, সকলের দুর্দশা ডেকে আনে মাত্র। আর সবাইকে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়। ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা মতে দল, আন্দোলন, মিছিল, হরতাল করা অনুচিত। কারণ এ সবের দ্বারা দুঃখ সৃষ্টি হয়, পাপ সৃষ্টি হয়, একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ ভাব সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি দেশ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। তাই যারা মূর্খ, হিতাহিত জ্ঞান শূন্য এবং সাধারণ একমাত্র তারাই দল, আন্দোলন, মিছিল, হরতালের মাধ্যমে দুঃখ যাতনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে থাকে। জ্ঞানী, অসাধারণ ব্যক্তিদের কোন দল গঠন করতে হয় না। আন্দোলন, মিছিল, হরতাল পালন করারও কোন প্রয়োজন হয়ে পড়ে না। তারা সেসব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকেন।

আমি জ্ঞান নেত্রে দেখতেছি, বর্তমানে সবাই অকৃতজ্ঞ, মিথ্যাদৃষ্টি, খল ও নরাধম। অকৃতজ্ঞ মানুষ, মিথ্যাদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ, নরাধম মানুষ, খল মানুষ কিভাবেই শান্তি লাভ করবে? তারা তো মন্দ কর্ম ব্যতীত ভালো কিছু সম্পাদন করতে পারে না। বলা বাহুল্য, সাধু সঙ্গ লাভে যেমন সুখ, শান্তি নেমে আসে তেমনি অকৃতজ্ঞ, নরাধম, খলের সংসর্গে জীবনের সর্বনাশ নেমে আসে। ভগবান বুদ্ধ বলেছেন কণ্টকময় স্থানে বাস করা কি দুঃখজনক, তদপেক্ষা অকৃতজ্ঞ লোকের সহিত বাস করা দুঃখজনক। শ্রদ্ধেয় বনভান্তে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য বাবু দীপঙ্কর তালুকদারকে বলেন—হে দীপঙ্কর, মনে রাখবে অকৃতজ্ঞ লোকের সঙ্গে বাস করা খুবই দুঃখজনক।অকৃতজ্ঞ মহৎ পাপী, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির কখনো সুখ লাভ হয় না। কারণ হঠাৎ যদি কোন কণ্টক শরীরে গেথে যায় তা’ বাহির করলে দুঃখ আর থাকে না। কিন্তু অকৃতজ্ঞ লোক যেই দুঃখ দেয় সেই দুঃখ সহজে ভুলে যাবার নয়। তাই আমি বারবার বলছি, তোমরা সবাই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে। কেহ বিন্দুমাত্র উপকার করলেও তা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করা উচিত। কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে সবাই ভালোবাসে, সম্মান করে, স্নেহ মমতা প্রকাশ করে থাকে। কখনো অকৃতজ্ঞ হয়ো না। কৃতজ্ঞতা নিজের যেমন সুখ, মঙ্গল বয়ে আনে ঠিক তেমনি প্রত্যুপকারীকেও এনে দেয় পরমানন্দের তৃপ্তি। আবার নরাধম, খল ব্যক্তিরা কারোর উপকার করতে পারে না। তারা শুধু অপরের অপকার করে থাকে। উপকারের পরিবর্তে অপকার করতেই যেন তারা খুব পারদর্শী। তাই বলা হয়েছে—

ধরাতলে নরাধম, খল আছে যত,

ঠিক তারা উঁই আর ইঁদুরের মতন।

উঁই ইদুর যেমন গৃহস্থের কোন উপকার মূলক কাজে আসে না, কেবল ক্ষতিই করে, ঠিক তদ্রূপ নরাধম ও খল মানুষের দ্বারা কোন ব্যক্তি, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র উপকৃত হতে পারে না। কারণ তারা মঙ্গলজনক কোন কর্ম সম্পাদন করতে পারে না। বরঞ্চ অজ্ঞানতামূলক, অকুশল কর্মসমূহ সম্পাদন করে থাকে সার। সর্বদা কলহ, বিদ্বেষ, হিংসাহিংসি, রেষারেষি, শত্রুতা ভাব দ্বারা তারা নিজের ও অপরের শান্তি, সুখ ভঙ্গ করে থাকে। তাই তাদেরকে দুঃখ সৃষ্টিকারী, অমঙ্গল সৃষ্টিকারী, বিপদ আনয়নকারীদের মধ্যে অগ্রগণ্য বলা হয়।

পরিশেষে তিনি বলেন—আজ হতে আর দুঃশীলতা আচরণ করবো না বলে তোমরা সবাই এরূপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও। প্রাণীহত্যা, চুরি, ব্যভিচার, মিথ্যা-কটু-ভেদ-বৃথা বাক্যালাপ, মদ-গাঁজা-আফিং-হেরোহিন যাবতীয় নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা হতে দূরে থাকবে।পরিশুদ্ধভাবে পঞ্চশীল আচরণ কর, সর্বদা মনচিত্তকে দান-শীল-ভাবনা দিকে নিয়োজিত রাখ। সকলে দিনে দিনে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে চেষ্টা কর। পাণ্ডিত্য অর্জন করতঃ দুষ্কৃতিমূলক কর্ম, বাক্য, মনন ত্যাগ করে ভালো, উত্তম, উৎকৃষ্ট কর্মে আত্মনিয়োগ কর।উপকারীর উপকার স্বীকার কর। সকল প্রাণীর প্রতি অহিংসক হয়ে অবস্থান করতঃ মৈত্রী ভাবনায় রত থাক। এসব সৎগুণের অধিকারী হতে পারলে আমি বলছি তোমাদের অবশ্যই সুখ, শান্তি, উন্নতি, সমৃদ্ধি বয়ে আসবে। মনে রাখবে আপন দুষ্কৃতি কর্মের দ্বারা মানুষ দিন দিন অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়। তখন দুঃখ-কষ্ট, বিপদ হাজির হয়ে তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। নিজের সৎকর্মের দ্বারা যেমন সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি আসে তেমনি নিজের কৃত দুষ্কর্মের ফলে নিজেকে দুঃখ কষ্টের ভাগী হতে হয়। জ্ঞানের অভাব ও কুশলকর্মের সীমাবদ্ধতা হলে বিবিধ দুঃখ ভোগ করতে হয়। আমার অনুরোধ তোমরা অকৃতজ্ঞ হয়ো না, মূর্খ হবে না। সাধু হয়ে যাও, পণ্ডিত হয়ে যাও। সাধু, পণ্ডিত ব্যক্তির স্বর্গ লাভ হয় আর অসাধু ব্যক্তি নিরয়গামী হয়ে বিবিধ দুঃখ ভোগ করে। পণ্ডিত ব্যক্তি ইহলোকে যেমন সুখে অবস্থান করতে সক্ষম হয়, মৃত্যুর পরও স্বর্গ লাভ করে পরম সুখে থাকে। মূর্খ ব্যক্তিরা অনর্থকারী, অহিতকারী, দুঃখ সৃষ্টিকারী, বিপদ আনয়নকারী। জগতে যা কিছু দুঃখ সৃষ্টি হয় একমাত্র মূর্খতার দরুন। পক্ষান্তরে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ সকলের উপকারী, সুখ আনয়নকারী। তাই আবারো বলছি, তোমরা সকলেই পণ্ডিত হয়ে যাও। যদি সবাই পণ্ডিত হতে পারো তাহলে গ্যারান্টির সহিত বলল তোমাদের কখনো পরিহারী হবে না। বরঞ্চ উন্নতি শ্রীবৃদ্ধি হয়ে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি মঙ্গলময় ভবিষ্যত রচিত হবে।

সুত্র ঃ বনভান্তের দেশনা

 

থেরবাদ ও মহাযানে বুদ্ধ

থেরবাদ ও মহাযানে বুদ্ধ

থেরবাদ ও মহাযানে বুদ্ধ

 লিখেছেনঃ সাধনাজ্যোতি ভিক্ষু
 বি, এ (অনার্স) এম, এ. এম, এড
বুদ্ধের পরিনির্বাণে একশত বছর পর বৌদ্ধ ধর্মে স্থাবিরবাদ ও মহাসাংঘিক এই দুই প্রধান নিকায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই মহাসাংঘিক বাদীরা পরবর্তীকালে কতগুলো সুত্র গ্রস্থ রচনা করেন। তাদের নিজস্ব কোন ত্রিপিঠক গ্রন্থ ছিলনা। এই মহাসাংঘিক নিকায় হতে মহাযান মতের উৎপত্তি হয়। স্থবিরবাদীরা বুদ্ধের প্রচরিত ধর্ম ও বিনয় নিয়ে পরিচালিত হন। পরবর্তীতে তাঁরা থেরবাদ বা হীনযান রুপে পরিচিত হন। নিম্নে হীনযান ও মহাযানে বুদ্ধের যেরুপ চিত্রায়ণ হয়েছে তা আলোচনা করা গেল –
বৌদ্ধ ধর্মে সাধকদের রুচি ভেদে যান বা সাধনা মার্গ ত্রিবিধ যান প্রচলিত আছে। যথা- শ্রাবক যান, প্রত্যেক বুদ্ধযান ও বোধিসত্ত্ব যান। শ্রাবক যানের সাধক স্বীয় দুঃখ মুক্তির জন্য গুরুর নিকট ধ্যান সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহন করে অহর্ত্ব লাভে সচেষ্ঠ হন। যে সাধক গুরুর উপদেশ ছাড়া নিজস্ব জ্ঞান বলে সাধনা করে বোধি লাভের সমর্থ হন। তিনি প্রত্যেক বুদ্ধ নামে অভিহিত হন। তার নাম প্রত্যেক বুদ্ধ যান। কিন্তু তাঁরা জীবগণকে বোধিমার্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রবৃত্ত হন না। বোধিসত্ত্ব যানে সাধক শুধু নিজের মুক্তির  নয়, সর্বজীবের দুঃখ মুক্তির জন্য বুদ্বত্ব লাভের ইচ্ছুক। অতএব শ্রাবকবান ও প্রত্যেক বুদ্ধ যান দুটো হীনযান নামে এবং বোধিসত্ত্ব যানকে মহাযান নামে আখ্যায়িত করা হয়।
অহর্ত্ব ও প্রত্যেক বুদ্ধত্বের উর্ধে পূর্ণ বুদ্ধত্ব। একমাত্রই পূর্ণ বুদ্ধই সম্যক সম্বুদ্ধের অধিকারী। তাঁর মধ্যে অর্হৎ ও প্রত্যেক বুদ্ধের সবগুনই বর্তমান। অধিকন্ত আর্ত মানবের কাছে তিনি ধর্মের বার্তাবাহক। বহু যুগ পরপর তমসাচ্ছন্ন অধিক্লিষ্ঠ মানবের হিতার্থে তাঁর অর্বিভাব ঘটে। শাক্যবংশীয় সিদ্ধার্থের জন্ম ও এমনি এক বুদ্ধ যুগের প্রারম্ভে। বৌদ্ধ ধর্মের এই সনাতনী রুপের সমর্থক হীনযানী সম্প্রদায় বুদ্ধের মানবত্ব এখানে স্বীকৃত। তবে সাধারণ মানষের থেকে মহান বুদ্ধের পাথর্ক্য যে শিষ্য-প্রশিষ্য পরিবৃত হয়ে তিনি বহু জনের হীতার্থে ধর্ম শিক্ষা দানে একাগ্র চিত্ত।
পরবর্তীকালে, মহাযনী বৌদ্ধরা বৌদ্ধ ধর্মের সনাতন রুপের অনেক পরিমার্জন ও পরির্বধন ঘটালেন, তৈরী হলো মহাযান সুত্র, বুদ্ধ উন্নীত হলেন, দেবতার আসনে এবং এই দেবতার ভক্তি পূর্ণ অর্চনার মধ্যেই আছে মুক্তি মার্গ। এই সঙ্গে পূর্ন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হলো বোধিসত্ত্ব সম্পর্কীয় ধারনা। যে ধারণার বিশেষ গুরুত্ব হীনযানী মতবাদে নেই।
হীনযানরা মনে করেন যে, সংসার দুঃখময়, তৃষ্ণা একমাত্র দুঃখের মূল। এই তৃষ্ণাকে ধ্বংস করতে হলে ধ্যান বা সাধনা দ্বারা করতে হয়। তবে সমস্ত দুঃখ ধ্বংস করে নির্বাণলাভ করা সম্ভব। এরা মনে করেন, ধ্যান হচ্ছে প্রধান স্বয়ং বুদ্ধ এই ধ্যানে নিবিষ্ঠ হয়ে নির্বাণ বা দুঃখ মুক্তি লাভ করেছেন। ধ্যান বা সাধনা করলে তির্যক, প্রেত, অসুর যোনিতে জম্ম গ্রহন করার সম্ভাবনা থাকে না।
হীনযানীরা আরও মনে করেন, ইহ লোকে মানুষের এক রকম নির্বাণ লাভ করার অধিকার আছে। গৌতম বুদ্ধ নিজে সেই নির্বাণ লাভ করে ছিলেন। কেবল ধ্যান বা সাধনা দ্বারা। তাঁরা তাদের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বিশ্বাস করতেন নির্বাণ লাভের উপর। সে নির্বাণ বুদ্ধ নিদের্শিত পথে আসবে, কিন্তু সে পথটি হচ্ছে, শীল পালনের মাধ্যমে নিষ্ঠাপূর্ণ সাধনার পথ। এরা শুধু দুঃখ মক্তির জন্য সচেষ্ঠ তাই তাঁদেরকে শুষ্ক অর্হৎ বলা হত।
মহাযানীরা মনে করেন, হীনযানীদের নির্বাণ সাধনা এ উদ্দেশ্যটা সঠিক নয়। নির্বাণ লাভ করার চেয়ে বদ্ধত্ব লাভ করাটা বড়। বুদ্ধত্ব লাভ বলতে তাঁরা মনে করতেন বোধি চিত্তের অধিকার লাভ। তাঁদের কাছে বুদ্ধত্ব লাভ মানে শ্রেষ্ঠ লাভ। তাঁরা মনে করতেন হীনযানীদের নিষ্ঠাপূর্ণ সাধনা সঠিক নয়। বুদ্ধত্ব লাভের জন্য বোধি সত্ত্বকে সংকল্প গ্রহন করতে হয় যে, আমি বুদ্ধ হয়ে অন্যকেও বোধি লাভের সাহায্যে করব। নিজে মুক্ত হয়ে অন্যকেও মুক্ত করব, নিজে সংসার সাগর উত্তীর্ণ হয়ে অন্যকেও উত্তীর্ণ করব।
তাঁরা মনে করতেন হীনযানীদের নিষ্ঠাপূর্ণ আচার-পরায়ণতা সঠিক ধর্ম সাধনা নয়। ধর্ম সাধনাকে এই পর্যায়ে রাখলে শেষে সেটা একটা শুষ্ক আচার-পরায়নতায় পর্যবসিত হবে। তাকে করতে হবে ব্যক্তি জগত উপলদ্বি সাধনার সিদ্ধির বস্তু। তাই সেখানে গন্ডীবদ্ধ নৈতিকতায় আবদ্ধ থাকলে চলবে না। প্রতিষ্ঠা করতে হবে মনোময় ব্যক্তি সাপেক্ষতা এবং বর্জন করতে হবে আচার নৈতিকতাকে, তাই মহাযানী ধর্ম সাধনায় সাধকের আছে নিয়ম নিষ্ঠা বস্তুতান্ত্রিক কঠোর অচার-পরায়নতা থেকে মুক্তি পাওয়ার অবকাশ। এই মুক্তি অবকাশ আছে বলেই মহাযানী সাধন পদ্ধিতে সমসাময়িক অবৌদ্ধ ধমের্র নানা ধারার অনুপ্রবেশ করার সুযোগ বেশি হয়েছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশে খ্রীষ্ঠীয় অষ্ঠম-নবম শতকে মহাযান বেশি পন্থী বৌদ্ধধর্মের নানা রকম তান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া এসে পড়ে। চর্যাপদের সমসাময়িক কালে বা তার সামান্য কিছু আগে গুহ্য সাধনতত্ত্ব, পুজা আচার ও নীতি পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায়।
পরিশেষে বলাযায় এই মহাযানী ভাবধারা চীন, জাপান, কোরিয়া ইত্যাদি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আর হীন যানী ভাব ধারা বার্মা, থাইল্যান্ড, কম্বোভিয়া ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে বৌদ্ধ ধর্মের পরবর্তী দ্বারা দুটি ধারায় বর্তমানে পরিচিতি লাভ করেছে। মহাযানী মতাদর্শে বুদ্ধ হয়ে উঠেন দেবতা রূপে।
গৌতম বুদ্ধের জীবনী

গৌতম বুদ্ধের জীবনী

উত্তর-পূর্ব ভারতের কপিলাবাস্তু নগরীর রাজা শুদ্ধোধন এর পুত্র ছিলেন সিদ্ধার্থ(গৌতম বুদ্ধ)। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনি কাননে (নেপাল) জন্ম নেন সিদ্ধার্থ(গৌতম বুদ্ধ)। তাঁর জন্মের ৭ দিন পর তাঁর মা, রানি মহামায়া মারা যান। তাঁর জন্মের অব্যাবহিতকাল পর জনৈক কপিল নামক সন্ন্যাসী কপিলাবাস্তু নগরীতে আসেন। তিনি সিদ্ধার্থকে দেখে ভবিষ্যৎবানী করেন যে, সিদ্ধার্থ ভবিষ্যতে হয় চারদিকজয়ী রাজা হবেন, নয়ত একজন মহান মানব হবেন। মা মারা যাবার পর সৎ মা মহাপ্রজাপতি গৌতমী তাকে লালন পালন করেন, তাই তার অপর নাম গৌতম। ছোটোবেলা থেকেই সিদ্ধার্থ সব বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু সিদ্ধার্থ সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন বলে তাঁকে সংসারী করানোর লক্ষ্যে ১৬ বছর বয়সে রাজা শুদ্ধোধন যশোধরা মতান্তরে যশোধা বা গোপা দেবী নামক এক সুন্দরী রাজকন্যার সাথে তার বিয়ে দেন। রাহুল নামে তাদের একটি ছেলে হয়। ছেলের সুখের জন্য রাজা শুদ্ধোধন চার ঋতুর জন্য চারটি প্রাসাদ তৈরি করে দেন। কিন্তু উচুঁ দেয়ালের বাইরের জীবন কেমন তা জানতে তিনি খুবই ইচ্ছুক ছিলেন। একদিন রথে চড়ে নগরী ঘোরার অনুমতি দেন তার পিতা। নগরীর সকল অংশে আনন্দ করার নির্দেশ দেন তিনি, কিন্তু সিদ্ধার্থের মন ভরল না। প্রথম দিন নগরী ঘুরতে গিয়ে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি, দ্বিতীয় দিন একজন অসুস্থ মানুষ, তৃতীয় দিন একজন মৃত ব্যক্তি এবং চতুর্থ দিন একজন সন্ন্যাসী দেখে তিনি সারথি ছন্দককে প্রশ্ন করে জানতে পারেন জগত দুঃখময়। তিনি বুঝতে পারেন সংসারের মায়া, রাজ্য, ধন-সম্পদ কিছুই স্থায়ী নয়। তাই দুঃখের কারণ খুঁজতে গিয়ে ২৯ বছর বয়সে গৃহ্ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ৬ বছর কঠোর সাধনার পর তিনি বুদ্ধগয়া নামক স্থানে একটি বোধিবৃক্ষের নিচে বোধিজ্ঞান লাভ করেন। সবার আগে বুদ্ধ তাঁর ধর্ম প্রচার করেন পঞ্চ বর্গীয় শিষ্যের কাছে; তাঁরা হলেন কৌন্ডিন্য, বপ্প, ভদ্দিয়, মহানাম এবং অশ্বজিত। এরপর দীর্ঘ ৪৫ বছর বুদ্ধ ভারতের বিভিন্ন স্থানে তার বৌদ্ধ ধর্মের বানী প্রচার করেন। এবং তাঁর প্রচারিত বানী ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশে ও দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৩ অব্দে তিনি কুশীনগর নামক স্থানে ৮০ বছর বয়সে মহা-পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন । গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত বানীর মূল অর্থ হল অহিংসা।

সংগৃহীত buddhismbd.blogspot.com

শ্বশুরালয়ে গমনযোগ্য কুমারীগণকে বুদ্ধের উপদেশ

শ্বশুরালয়ে গমনযোগ্য কুমারীগণকে বুদ্ধের উপদেশ

শ্বশুরালয়ে গমনযোগ্য কুমারীগণকে বুদ্ধের উপদেশ
by Ven. Jnanasree Bhikkhu
 আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কলেজ, Songkhla, থাইল্যান্ড

একসময় ভগবান বুদ্ধ ভদ্রিয় নগরের নিকটবর্তী জাতীয় বনে অবস্থান করার সময় উগ্রহ মেণ্ডকনত্তা শ্রেষ্ঠী কর্তৃক নিমন্ত্রিত হয়ে তাঁর গৃহে গমণ করেছিলেন। পিণ্ড গ্রহণের পর বুদ্ধ তাহার বিবাহযোগ্য কুমারীগণকে নিম্নোক্ত উপদেশ প্রদান করেছিলেন।

১) প্রত্যূষে স্বামীর পূর্বে ঘুম থেকে জাগ্রত হবে।
২) পিতামাতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী ও স্বামীসহ গুরুজন ও অতিথিদের সেবা ও শ্রমণ ভিক্ষুগণের সতকার, পূজা ও সম্মান করবে।
৩) সূচীশিল্প থেকে আরম্ভ করে গৃহের যাবতীয় কর্ম দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করবে।
৪) স্বামীর গৃহে দাসদাসী ও কর্মচারীদের প্রতি সমভাব ও সুদৃষ্টি বজায় রাখবে।
৫) স্বামীর সম্পত্তি সংরক্ষণ করা ও অপচয় না করা, পর পুরুষের প্রতি আসক্ত না হওয়া, সুরাপানে আসক্ত না হওয়া, সম্পত্তি নষ্ট হয় মত কোন কাজ করবেনা।
৬) বিবাহের পর স্বামীর বাড়ীতে ভিক্ষুসংকে পিণ্ডদান ও ভোজনান্তে পঞ্চশীল গ্রহণ করবে ও তাঁদের থেকে উপদেশ শ্রবণ করবে।

সর্বদর্শী ভগবান বুদ্ধ সুর্দীঘ পয়তাল্লিশ (৪৫) বছর ব্যাপি মানব সহ সকল প্্রাণীর মঙ্গলের জন্য অমৃতময় বাণী প্্রচার করেছেন।সেসব বাণী গুলি যারা পালন করে জীবন যাপন করেন তারা বর্তমান জীবনে সুখ শান্তি লাভ করতে পারে এবং মৃত্যুর পর সুগতি প্রাপ্ত হয় । ভগবান বুদ্ধের অন্যতম বাণী হল অহিংসা পরম ধর্ম অর্থাৎ সকল জীব তথা সকল মানবের প্রতি সমভাবে মৈত্রী প্রদর্শন করা। হিংসা পরিহার করে অহিংসাময় জীবন যাপন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মা যেমন সন্তানের প্রতি অবিরত ভাবে অহিংসা পরায়ন থাকেন ঠিক সেরুপ ভাবে সকল জীব তথা মানবের প্রতি সকল মানব অহিংসা পরায়ন হলে সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে মানবগন সুখে জীবন যাপন করতে পারবে। আজ আধুনিক বিশ্বে বুদ্ধের বাণী আহিংসা না থাকার কারণে মারা-মারি,যুদ্ধ,রক্তপাত সহ বিভিন্ন ভাবে মানুষের জীবন যাপন হয়ে উঠছে বিষাদময়।

অন্য ধর্মের অনুসারিদের কথা বাদ দিয়ে শুধু বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারিদের কথায় আসা যাক,যেহেতু আমরা নিজেরা নিজেদেরকে বৌদ্ধ বলে দাবি করি সেহেতু বুদ্ধের বাণী মেনে চলা আমাদের কর্তব্য । আসলে আমরা কি বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম বাণীটি মেনে চলি বা আমরা বিশ্বাস করি, যদি বিশ্বাস করি তবে আমাদেরকে হিংসা পরিহার করতে হবে। আমরা যারা বৌদ্ধ আমরা কি যথাযথ ভাবে বুদ্ধের বাণী অনুসরণ করছি। আমার মনে হয় আমি করছিনা, যদি আমিসহ আমরা সবাই বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম পালনে রত থাকতাম তবে আজ দেশে, সমাজে,বিহারে, সংগঠনে, নিকায়ে এত ভেদাভেদ কথা কাঁটা-কাটি, মাম লামোর্কাদ্দমা হত না।

মঙ্গল সূত্রে ৩৮ প্রকার মঙ্গলের কথা

মঙ্গল সূত্রে ৩৮ প্রকার মঙ্গলের কথা

মঙ্গল সূত্রে ৩৮ প্রকার মঙ্গলের কথা

লিখেছেন – Ven. Jnanasree Bhikkhu

মহামানব গৌতম বুদ্ধ গৃহী জীবনের ইহকাল পরকালের সুখ শান্তি এবং সমাজের সুন্দর পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে মঙ্গল সূত্রে ৩৮ প্রকার মঙ্গলের কথা ব্যক্ত করেছেন । এই মহামানব তথাগত বুদ্ধ দেব মনুষ্যের হিতসুখ… মঙ্গলার্থে ৩৮ টি মঙ্গলোপদেশ দেশনা করেন। অনেকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভান্তের দেশনায় শুনে থাকেন। শুধু শুনেছেন আসলে ৩৮ প্রকার মঙ্গলের কথাকি তা ভালো করে জানেন না। তবুও যাঁরা জানেননা  তাদের এবং সকলের উদ্দেশ্যে প্রচার করছি। সেগুলো নিম্মরুপ:

১। অজ্ঞানীর সেবা না করা
 ২। জ্ঞানী বা সত্ ব্যক্তির সেবা করা
৩। পূজনীয় ব্যক্তির পূজা করা
৪। প্রতিরুপ দেশে বাস করা
৫। পূর্বকূত পূণ্য স্বরণ করা
৬। নিজেকে সঠিক পথে পরাচালিত করা
৭। বহু বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা
৮। বিবিধ শিল্পে শিক্ষার জ্ঞান লাভ করা
৯। বিনয়ী হওয়া
১০। সুভাষিত (সুন্দর) বাক্য বলা
১১। মাতা পিতার সেবা করা
১২। স্ত্রীর পূত্রের ভরণ পোষণ করা
১৩। সত্ কর্মের দ্বারা জীবিকার্জন করা
১৪। দান দেওয়া
১৫। কায় বাক্য মনে ধর্ম চর্চা করা
১৬। জ্ঞাতি বর্গের উপকার করা
১৭। পূণ্যকর্ম সম্পাদন করা
১৮। পাপকর্মে রত না হওয়া
১৯। পাপকার্য হতে দূরে থাকা
২০। মদ বা মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকা
২১। অপ্রমত্তভাবে ধর্ম জীবন যাপন করা
২২। গুণী ব্যক্তিরগৌরব করা
২৩। তাদের নিকট নম্র থাকা
২৪। প্রাপ্ত বিষয়ে সন্তুষ্ট থাক
২৫। উপকারীর উপকার স্বীকার করা
২৬। যথাকালে ধর্মশ্রবণ করা
২৭। ক্ষমাশীল হওয়া
২৮। গুরুজনের আদেশ উপদেশ পালন করা
২৯। ধর্মগুরুর (ভিক্ষু-শ্রমন) দর্শন করা
৩০। যথাসময়ে ধর্মালোচনা করা
৩১। ধ্যান করা
৩২। ব্রম্ম চর্য পালন করা
৩৩। চার আর্যসত্য দর্শন করা
৩৪। নির্বাণ সাক্ষাত্ করা
৩৫। অষ্ট লোকধর্মে অবিচলিত না থাকা
৩৬। শোকহীন হওয়া
৩৭। লোভ দ্বেষ মোহরুপ কলুষহীন হওয়া
৩৮। ভয়হীন হওয়া। এই সমস্থ মঙ্গল কর্ম সম্পাদনে গৃহীগণ সুখে শান্তিতে ও নিরাপদে জীবন যাপন করা যায়।

error: Content is protected !!