by admin | Nov 1, 2018 | blog
২৯শে সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ ইংরেজী রবিবার। ভোরবেলায় শ্রদ্ধেয় বনভান্তে তাঁর শিষ্যদের প্রতি ধর্মদেশনা দিচ্ছিলেন। তিনি প্রথমেই বলেন- প্রতীত্য সমুৎপাদ নীতি জানলে মিথ্যার দিকে না চলে সত্যের দিকে অগ্রসর হতে পারবে। অবিদ্যার কারণে নানাবিধ দুঃখের সৃষ্টি হয়। সে দুঃখ গুলি যতদিন পর্যন্ত ধ্বংস করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত দুঃখ ভোগ করতে হবে। বিদ্যা উৎপত্তি হলে সুখ ও উৎপত্তি হয়। সে সুখ হল আসল সুখ। তিনি কবিতার ছন্দে বলেন-
কোথায় যে কতভাবে জন্ম নিয়েছি।
জন্ম মৃত্যু শোকতাপ কত যে সহেছি।।
নিদারুন দুঃখ তাপে জর্জরিত এপ্রাণ।
মুক্ত তবে আজি বাঁধিতে পারিবে না-
এ দুঃখ কারাগার।।
যে প্রতীত্য সমুৎপাদ নীতি বুঝতে পারে, জানতে পারে ও পরিচয় হতে পারে সে মার ভুবনে থাকে না। মার ভুবন অধীন, ভয়ংকর ও দুঃখ।
তিনি উপমায় বলেন- তোমরা মাছের ফাঁদ (চাঁই) চেনো? মাছ যেমন ফাঁদ চিনে না। অনায়াসে ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারায়। ঠিক সেরকম পুরুষের (নারীর) ফাঁদ হল নারী (পুরুষ)। যারা অজ্ঞানী তারা এ ফাঁদে পড়ে অনন্তকাল পর্যন্ত দুঃখ ভোগ করতে থাকে। অন্যটা হল মারের ফাঁদ। যারা কামলোক, রূপলোক ও অরূপলোকে থাকবে তারা মারের ফাঁদে পতিত হবে। মার এ ত্রিলোক থেকে মুক্ত হতে দেয় না। মাছ যেমন চাঁই চেনে না, অন্ধজনও ভব কারাগার চিনে না। তারা ভব কারাগারে পড়ে সহজে মুক্ত হতে পারে না। যাঁরা জ্ঞানী তাঁরা নারী-পুরুষের চাঁই ও মারের চাঁই এ প্রবেশ করে না। তাহলে তোমরা বল- ওহে মনচিত্ত, চাঁই এর ভিতর যেয়ো না। সাবধান, সেদিকে মনচিত্ত দিও না। নির্বাণ হল চাঁই এর বাইরে ও মুক্ত। তোমরা নির্বাণের মন ও নির্বাণের চিত্ত কর। বিদর্শন ভাবনা করলে জ্ঞান চক্ষু উদয় হয় এবং চাঁই এর ভিতরে ঢুকতে হয় না।
শ্রদ্ধেয় বনভান্তে বলেন- বিড়াল বাঘের মত হলেও বাঘ হতে পারে না। শুকর ভালুকের মত ঘু ঘু করলেও ভালুক হতে পারে না। সকল পন্ডিত এক সমান হতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ কেউ সামান্য কিছু জেনেও বড় পন্ডিতের মত নিজকে প্রমাণিত করতে চায়। পন্ডিত কাকে বলে?- যাঁরা সহনশীল, জীবের প্রতি দয়া, ক্ষমা, মৈত্রী ও পূণ্য কর্মে নির্ভীক এবং সর্বদা অক্ষুন্নমনা ব্যক্তিকে পন্ডিত বলে।
তিনি বলেন- বর্তমান যুগে জড়বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সাধারণ মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েছে। এ বিজ্ঞান গুলিও এক প্রকার যাদুর মত। চারি আর্য্যসত্য ও প্রতীত্য সমুৎপাদ নীতি জ্ঞান উদয় হলে বর্তমান যুগের বিজ্ঞানের কর্মকান্ড কিছুই নেই। জড় বিজ্ঞানের বহু দোষ আছে। যেমন- মানুষ মারার কলা-কৌশলাদি। নির্বাণে আজে বাজে গন্ডগোল ও ভেজাল নেই।
তিনি একটি উপমা দিয়ে বলেন- শংখ মার্কা খাঁটি সরিষার তৈলের টিনে লেখা থাকে- ভেজাল প্রমাণে এক হাজার টাকা পুরষ্কার। তেমনি খাঁটি বৌদ্ধ ধর্ম বা নির্বাণ ধর্ম যে পালন করে তার জন্যেও পুরষ্কার আছে। সে পুরষ্কার হল পরম বিমুক্তি সুখ নির্বাণ। নির্বাণ হল ভেজাল বর্জিত।
শ্রদ্ধেয় বনভান্তে কায়গতানু স্মৃতি ভাবনার উপর জোর দিয়ে বলেন- তোমরা নারীদের প্রলোভনে পড়না। যারা ৩২ প্রকার অসূচী ভাবনা করবে তারা কখনো নারীর (পুরুষের) প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এদেহ অনিত্য, এদেহ দুঃখ পূর্ণ, এদেহ অনাত্ম, এদেহ দোষ পূর্ণ, এদেহ মুক্তির বিঘ্নকারক বলে সাধু পুরুষেরা সর্ব দুঃখের আধার এদেহকে ত্যাগ করে পরম সুখ নির্বাণ লাভ করে থাকেন।
গলিত অসূচী দেহ পচনেই সার।
রক্ত মাংস মল মূত্র পুঁজের ভান্ডার।।
ক্ষয় লয় দুঃখ শুধু অনাত্ম লক্ষণ।
অহরহ কর কায়ে কায়ানু দর্শন।।
অসূচী লক্ষণ দেখে স্মৃতির সাধনে।
প্রজ্ঞার আলোক জ্বালাও অনিত্য দর্শনে।।
স্মৃতি প্রজ্ঞা বলে দেখ চিত্ত ক্ষয় ক্ষন।
ক্ষয় ব্যয় দেখে কর আসক্তি বর্জন।।
বিদর্শন জ্ঞান চক্ষু কর উম্মিলন।
রূপ স্কন্ধ দেখ ঘৃণ্য অশুভ লক্ষণ।।
বেদনার অনুভূতি দুঃখ হাহাকার।
ক্ষনেতে ভোজবাজি অনিত্য সংসার।।
তিনি বলেন- পঞ্চস্কন্ধ অনিত্য, দুঃখ ও অনাত্ম। পঞ্চস্কন্ধ নিত্য, সুখ ও আত্মা বললে বিপরীত বলা হবে। ওহে মন, তুমি সেদিকে যেয়োনা। জ্ঞানীরা অসূচীর ফাঁদে পড়ে না। তারা পঞ্চস্কন্ধ যে অনিত্য, দুঃখ ও অনাত্ম তা ভাল ভাবে দেখে তাতে আসক্ত হয় না। একবার ভগবান বুদ্ধ জনৈক নারীর প্রতি উৎকন্ঠিত যুবক ভিক্ষুকে এ উপদেশ দিয়ে মুক্ত বা অর্হত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তিনি কবিতার ছন্দে বলেন-
কে বা কাহার তুমি, অনিত্য রঙ্গভূমি।
কর্মশেষে তুমি আমি সব হবে বিসর্জন।।
দুনিয়ার ব্যাপার বড়ই চমৎকার।
আপন কর্মে ঘুরছে মানুষ ভাবে নাকো একবার।।
আমি বুঝি আমি শুধু পাকা।
আর বুঝি অন্য কেউ সবাই বোকা।।
উপসংহারে তিনি বলেন- কেউ কেউ মনে করে আমি একমাত্র বৌদ্ধ শাস্ত্রে সুপন্ডিত। অন্যকেউ কিছু জানেনা। এ কুৎসিৎ ধারণা বলতে গিয়ে সদ্ধর্মের প্রতি গ্লানি করা হয় মাত্র। তাহলে পন্ডিত কাকে বলে? পূর্বেও বলা হয়েছে তবুও পুনঃর্বার বলা হচ্ছে। যার সহনশীলতা আছে, জীবের প্রতি দয়া আছে, ক্ষমা আছে, মৈত্রী আছে ও পূণ্য কর্মে নির্ভীক এবং সর্বদা অক্ষুন্ন মনা ব্যক্তিরা পন্ডিত নামে অভিহিত হন। সুতরাং তোমার পন্ডিত হওয়ার জন্যে দৃঢ় প্রচেষ্টায় এগিয়ে চল। যেন আসল পন্ডিত হতে পার।
#লেখাটি Subrata Barua কর্তৃক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ।
by admin | Oct 26, 2018 | blog
১১-৩-৯৩ ইং রোজ বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটির শিক্ষিত চাকমা অধ্যুষিত স্থান ট্রাইবেল অফিসার্স কলোনী। তথায় আয়োজন করা হয় অষ্ট পরিষ্কার ও সংঘদান। উক্ত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন শ্রদ্ধেয় বনভান্তে এবং তাঁর শিষ্যমন্ডলী। রাঙ্গামাটির প্রায় গন্যমান্য ব্যক্তি ও এ মহতী পূণ্যময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শীল গ্রহণ করে প্রথমে অষ্ট পরিষ্কার দান ও সংঘদান সম্পন্ন হয়। ভিক্ষু সংঘের ভোজনের পূর্বে শ্রদ্ধেয় বনভান্তে এক নাতিদীর্ঘ তাৎপর্যপূর্ণ দেশনা প্রদান করেন। দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন- আজ তোমাদের নিকট এক ব্রিটিশ আমলের ঘটনা শোনাব। জনৈক ইউরোপিয়ান সাহেব শুনতে পেলেন কুকীরা কাপড় পরিধান করে না। অথবা কেউ কেউ লেংটি পরিধান করে। তিনি তাদের প্রতি দয়ার্দ্র হয়ে কতকগুলি প্যান্ট-শার্ট নিয়ে যান। তিনি প্রথমে কুকীদেরকে দেখেই লজ্বাবোধ করলেন। কেননা, সবাই উলঙ্গ। শুধু তিনিই কাপড় পরিধান করা ব্যক্তি। সাহেবের লজ্বা লাগলে কি হবে? তাদের কোন লজ্বা-শরম নেই। তিনি তাদের প্রতি প্যান্ট-শার্ট বিতরন করলেন। কেউ কেউ অসুবিধা বোধ করে খুলে ফেললো। কেউ কেউ মধ্যে মধ্যে পরিধান করে। উক্ত সাহেব তাদের প্রতি ধর্ম প্রচার ও কাপড় পরিধান করতে শিখাতে লাগলেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে সে এলাকায় একজন লোকও কাপড় পরিধান করে না। এমনকি তাদের রাজাও সে অবস্থায় দিন কাটায়।
শ্রদ্ধেয় বনভান্তে ব্রিটিশ আমলের ঘটনা বলার পর বললেন- আজ এখানে আমিও কুকী পাড়ায় ইউরোপিয়ান সাহেব এসেছি। একথা বলার সাথে সাথেই আমরা (সংকলক) সমস্বরে হেসে উঠলাম। আমরা হাসতে দেখেই তিনি বললেন- এটা কতটুকু সত্য কথা তোমরা বল? কেউ কেউ বললেন- ভান্তে এটা সম্পূর্ণ সত্য। বনভান্তের দেশনা চলাকালে কাহারো কাহারো হাসির ঢেউ বন্ধ হচ্ছে না। অন্যদিকে লক্ষ্য করা গেল- মানুষ যত বলবান হোক না কেন ফোড়ায় চাপ পড়লে চেহারায় বিষাদের ছবি নেমে আসে। ঠিক তেমনি কাহারো কাহারো চেহারায় ঘনকালো মেঘ নেমে এল। তিনি দেশনায় বলেন- গরু বা পশু পক্ষী মদ খায়? উপাসকেরা বললেন- না। ভান্তে বললেন- মানুষ মদ খায় ঠিকই। কিন্তু মানুষ মরে পশু পক্ষী হয়ে আসলে আর খেতে পারবে না। ইহজীবনে যত পারে তত খেয়ে নেয়। জনৈক মদ্যপায়ী উপাসকের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন- তুমি বৃদ্ধ হয়েছ। এখনও সময় আছে। মানুষ ভুল করে। কিন্তু সংশোধন করা যায়। শীলরূপ কাপড় পরিধান কর। আজকে শীল গ্রহণ করেছ তা কুকীদের মত ফেলে দিও না। উক্ত সাহেব খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার ও কাপড় বিতরণ করেছিলেন। আর আমি নির্বাণ ধর্ম প্রচার ও শীলরূপ কাপড় বিতরণ করতেছি। লজ্বা-শরম কি জান? তাহল পাপের প্রতি লজ্বা। কাপড়ের লজ্বায় তেমন কিছু যায় আসে না। কাপড় পরিধানে লজ্বাটা নিবারন করা যায়। কিন্তু পাপের প্রতি যদি লজ্বা না থাকে তাহলে কেউ মুক্ত হতে পারে না। তাই তোমরা শীলরূপ কাপড় পরিধান কর। মুক্ত হওয়ার জন্য সচেষ্ট হও।
শ্রদ্ধেয় বনভান্তে পুনরায় দেশনা প্রসঙ্গে বলেন- পূর্বেকারদিনে বা ভগবান বুদ্ধের সময়ে উপাসক-উপাসিকারা শীল গ্রহণ করে নির্বাণ ধর্ম পালন করত এবং মার্গফল লাভ করে পরম বিমুক্তি সুখ প্রত্যক্ষ করত। কিন্তু বর্তমানে কোন ফল লাভ হচ্ছে না কেন? একমাত্র কারণ হচ্ছে শীলরূপ কাপড় পরিধান করছেনা।
শীলরূপ বস্ত্র পড় অন্যথায় নয়।
ধ্যান, প্রজ্ঞা পূর্ণ হলে তম তৃষ্ণা ক্ষয়।
#লেখাটি Subrata Barua কর্তৃক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ।
by admin | Oct 26, 2018 | blog
এক সময় পূজ্য বনভান্তে নিজ আবাসিক ভবনে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় শ্রদ্ধেয় বনভান্তের জনৈক বিশিষ্ট উপাসক এক প্রশ্নের সমাধানের জন্য বন বিহারে উপস্থিত হয়েছেন। শ্রদ্ধা জ্ঞাপনান্তে তিনি বলেন, ভান্তে, স্বর্গ-নরক আছে কি নেই? অনুগ্রহ পূর্বক আমাকে বুঝিয়ে বললে খুবই সন্তুষ্ট হব। বনভান্তে বললেন, তুমি কি জ্ঞান চক্ষুতে দেখতে চাও, নাকি শুধু চর্ম চক্ষুতে দেখতে চাও?
স্বর্গ-নরক আছে। যদি তুমি জ্ঞান চক্ষুতে দেখতে চাও, তবে জ্ঞান চক্ষু উৎপন্ন কর। নিজে নিজেই দেখতে পাবে।
শাস্ত্রে উল্লেখ আছে চক্ষু পাঁচ প্রকার। যথা-
(১) চর্ম চক্ষু (২) দিব্য চক্ষু (৩) জ্ঞান চক্ষু (৪) সামন্ত চক্ষু (৫) বুদ্ধ চক্ষু
(১) চর্ম চক্ষুতে যাহা সম্মুখে প্রত্যক্ষ হয় তাহা মাত্র দর্শন করা যাই কিন্তু কোন কিছুতে আবৃত থাকলে যথার্থ দর্শন করতে অসমর্থ হই। কিন্তু অদেখা বস্তু কত কিছু যে রয়েছে তা আমরা চর্ম চক্ষুতে দেখতে পারি না। যেমন, ধরুন আপনি আমেরিকা, চীন, জাপানে কি হচ্ছে তা দেখতে অসমর্থ।
(২) দিব্য চক্ষু লাভ করতে হলে ধ্যান সাধনা করতে হয়। দিব্য চক্ষু দৃষ্টিতে আপনি শতযোজন দূরে কি হচ্ছে তা দেখতে সমর্থ।
(৩) জ্ঞান চক্ষুতে যেখানে দেখতে ইচ্ছা হয় সেখানে দেখা যায়। স্বর্গ নরক এমনকি একত্রিশ লোকভূমি পর্যন্ত দেখা যাই। এইগুলো ধ্যান-সাধনার মাধ্যমে আয়ত্ব করতে হবে।
(৪) সামন্ত চক্ষুতে সম্যক সম্বুদ্ধের ধ্যান-চিত্ত সম্বন্ধে জানা যায়। যেমন, অনুরুদ্ধ স্থবির সামন্ত চক্ষু বিশিষ্ট ছিলেন। ভগবান বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের সময় শত সহস্র অর্হৎ মার্গফল লাভী ভিক্ষু ছিলেন। সবাই দিব্য চক্ষু, জ্ঞান চক্ষু প্রাপ্ত কিন্তু কেউ তথাগত বুদ্ধের ধ্যান চিত্তের গতিবিধি অবগত নয় অর্থাৎ তাদের সেই সামন্ত চক্ষুর দৃষ্টি জ্ঞানটুকু নেই।(বিস্তারিত দীর্য় নিকায় ২য় খন্ড,মহাপরিনির্বাণ সূত্রে উল্লেখ আছে)
(৫) বুদ্ধ চক্ষুতে দশ সহস্র চক্রবাল(একত্রিশ লোক ভূমিতে এক চক্রবাল) সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে অবগত হওয়া যায়।
সুতরাং, তোমার জ্ঞান চক্ষু উৎপন্ন করার প্রয়োজন।আপনি জ্ঞান চক্ষু উৎপন্ন করুন, নিজেই আপনি সমাধান পেয়ে যাবেন। জ্ঞান-চক্ষুতে অবিদ্যা,তৃষ্ণা ধ্বংস হয় এবং যাবতীয় দুঃখ হতে মুক্তি হওয়া যায়। শ্রদ্ধেয় বন ভান্তের ধর্ম দেশনা শ্রবণ করে উক্ত বিশিষ্ট উপাসক অত্যান্ত সন্তুষ্টচিত্তে চলে যান।
উল্লেখ্য যে, শ্রদ্ধেয় বনভান্তে একদিন আমাকেও বলেছিলেন-চোখখোলা অবস্থায় তেমন কিছু দৃষ্টিগোচর হয় না। বরঞ্চ চোখ বন্ধ অবস্থায় সবকিছু দেখা যাই। তাতে বুঝলাম জ্ঞান চক্ষুর দৃষ্টির পরিধি ব্যক্ত করা মহা কঠিণ ব্যাপার।
অর্থাৎ, বনভান্তে জ্ঞান চক্ষুর কথা বলেছেন।
তাই বনভান্তে বলতেন,,
“জ্ঞান চক্ষু সৃষ্টি কর যদি চাও মুক্তি,
একাগ্র ধ্যান চিত্তে কর শ্রদ্ধা, স্মুতি ভক্তি”।
আমি বলতে চাই, যারা স্বর্গ-নরক অবিশ্বাসী তারা সূত্র পিটকের দীর্ঘ নিকায়ের অন্তর্গত “পায়াসী সূত্র” পড়ুন। এবং অন্ধের মতন প্রলাব না করে জ্ঞান চক্ষু উন্মেলন করুন।
সাধু সাধু সাধু
সকলের সত্যধর্ম ও সত্যজ্ঞান উৎপন্ন হোক,,,
# লেখাটি Rony Barua কর্তৃক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ।
by admin | Oct 26, 2018 | blog
রবিবার ১৪ই জুলাই ১৯৯৬ ইংরেজী। বর্ষাবাসের দ্বিতীয় উপোসথ অমবস্যার রাত। বন্দনার পর সমবেত উপাসক-উপাসিকারা সহ আমি (সংকলক) শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে বন্দনা করার জন্য তাঁর ধ্যান কুঠিরের উপরের তলাই যাই।
প্রথমেই শ্রদ্ধেয় বনভান্তে আমাদের প্রতি লক্ষ্য করে বলেন- তোমরা শীলবান, প্রজ্ঞাবান ও ধার্মিক হও। উদাহরণ দিয়ে বলেন- জনৈক হিন্দু ভদ্রলোক আমার নিকট এসে প্রশ্ন করলেন- দুঃখ মোচন হবে কবে? আমি বললাম-
চক্ষু মুদি অবিরাম জপে শুধু হরিনাম
কাম্যসুখ ভোগ মত্ত মন,
সত্যভাব যতদিনে না উদিবে তব মনে
ভব দুঃখ হবেনা মোচন।
নাই জীবে ভাই ভাই হিংসা, দ্বেষ শুধু তাই
ত্রিলক্ষণে নাই যার জ্ঞান,
অন্তরেতে অহংকার মুখে শুধু হরিনাম সার
কিছুতেই নাই তার ত্রান।
এ আট লাইন কবিতা বলার পর তিনি পরমার্থ ভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন- তোমরা পরধর্ম কর না। পরধর্ম পাপ, দুঃখ ও মুক্ত নয়। মিথ্যা ধর্ম পাপ, দুঃখ ও মুক্ত নয়। তোমরা নিজ ধর্ম কর। নিজ ধর্মে পূণ্য, সুখ ও মুক্ত হয়। নিজ ধর্ম, সত্য ধর্ম ও খাঁটি ধর্ম হল লোভ, দ্বেষ ও মোহ শূণ্য। লোভ, দ্বেষ ও মোহ মুক্ত হতে হলে আর্য্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ পথে চলতে হবে। তাতেই তোমাদের পূণ্য অর্জন, নানাবিধ দুঃখ হতে পরিত্রান ও চিত্তে অনাবিল সুখ বয়ে আনবে। তোমরা নকল হতে সাবধান থাক। ভেজালে যেয়ো না। খাঁটি বৌদ্ধ ধর্মে গন্ডগোল, ভেজাল, আবোল-তাবোল নেই।
তিনি বলেন- চারি প্রত্যয় পেলে ভিক্ষুদের সুখ হয়। তারা কাম ত্যাগ, রূপ ত্যাগ ও বেদনা ত্যাগ করতে পারলে অনন্ত সুখের অধিকারী হয়ে বিমুক্তি সুখে অবস্থান করে। যারা কামের আস্বাদ গ্রহণ করে, রূপের আস্বাদ গ্রহণ করে ও বেদনার আস্বাদ গ্রহণ করে তারা কখনো সুখী হতে পারে না। সুখী হতে হলে অতীতের পূণ্য পারমী, ইহ জন্মের প্রচেষ্ঠা ও সৎ গুরুর উপদেশ দরকার। বর্তমানে আচরণ নেই বলে প্রায় লোকেরা ব্যর্থ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন- আমার যথেষ্ঠ হয়েছে, চারি প্রত্যয়, সুযোগ-সুবিধা, ধ্যান কুঠির, সৌচাগার, স্নানাগার এবং ধর্ম প্রচারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সদ্ধর্ম থাকলে সকলে দান দিবে। পরধর্ম করলে কেউ দেবে না। ডঃ শরনাংকর ভিক্ষু বলেছেন বনভান্তে না থাকলে অথবা মরে গেলে তাঁর শিষ্যদেরকে কিছু দেবে না। শ্রদ্ধেয় বনভান্তে বলেন- এটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। যদি তারা ত্যাগ করে সদ্ধর্ম হারা না হয় নিশ্চয়ই সকল সুযোগ-সুবিধা পাবে।
শ্রদ্ধেয় বনভান্তে বলেন- লেখাপড়াও এক প্রকার শত্রু। এম. এ. পাশ করলে শুধু ভাত খেতে পারে। কেননা, তারা সারা জীবন চাকুরী বা ব্যবসা বাণিজ্য করে সময় অতিবাহিত করে। আবার অন্যদিকে দেখা যায় এম. এ. ডিগ্রী নিয়ে অর্হত্বফল লাভ করতে পারলে তাঁর ডিগ্রী ধ্বংস হবে না। আমি যেভাবে অভিজ্ঞা দ্বারা ব্যক্ত করতে পারি সেরকম সবাই যদি সচেষ্ঠ হয় নিশ্চয়ই ফলপ্রসূ হতে পারবে। ভিক্ষু শীলবান, প্রজ্ঞাবান ও ধার্মিক হলে স্বর্গের দেবতারাও সাহায্য করে। পৃথিবীতে যেমন তোমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম ও খ্রিষ্টান আছ তেমন স্বর্গেও হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম ও খ্রিষ্টান দেবতারা আছেন। তাঁরা সৎকর্ম ও শীল পালন করে স্বর্গে গিয়েছেন। হিন্দু দেবতারা হিন্দুদেরকে, বৌদ্ধ দেবতারা বৌদ্ধদেরকে, মুসলিম দেবতারা মুসলিমদেরকে ও খ্রিষ্টান দেবতারা খ্রিষ্টানদেরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকেন। কিন্তু বৌদ্ধ দেবতারা অন্যদের তুলনায় উজ্জ্বল ও শান্ত। তাদের নিকট অন্যান্যদের চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ আছে। দেবতাদের ধন সম্পদ গুলির তুলনায় মনুষ্যের ধন সম্পদ অতি নগণ্য। তারা অনেক সময় শীলবানদেরকে আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা করেন। মনুষ্য লোকে, স্বর্গে ও ব্রহ্মলোকে যা ধন সম্পদ আছে তদ্ অপেক্ষা ভগবান বুদ্ধের ধন সম্পদ অনেক অনেক বেশী। তা তুলনা করা যায় না। বনভান্তে প্রমাণ করতে চান বৌদ্ধ ধর্মে কি আছে? কতটুকু গুণ আছে? কতটুকু সম্পদ আছে? কিন্তু বনভান্তে কাহারো নিকট কিছু খোঁজেন না। মধ্যে মধ্যে শুধু ইট, সিমেন্ট, লোহা ও বালির কথা বলেন।
শ্রদ্ধেয় বনভান্তে আরো বলেন- তোমরা শীল পালন কর, ইন্দ্রিয় সংযম কর, ভোজনে মাত্রা জ্ঞান হও এবং সর্বদা জাগ্রত থাক। তাতে তোমাদের লোকোত্তর সুখ, মার্গসুখ ও ফলসুখ লাভ হবে এবং দুঃখ হতে মুক্তি পাবে। তাতে তোমাদের নিচে পড়ার বা দুঃখে পড়ার আশংকা থাকবে না। অবশ্য এতে তোমাদের উৎসাহ ও অধ্যবসায় থাকা চাই।
পরিশেষে তিনি বলেন- শাস্ত্রে আছে গাধার ৩টি গুণ। তারা অতিরিক্ত শীত সহ্য করে, অতিরিক্ত গরমও সহ্য করে এবং নিরলসভাবে ভার বহন করতে পারে। তোমরাও গাধার ৩টি গুণ সংগ্রহ করে তোমাদের অগ্রগতির দিকে অগ্রসর হও।
#লেখাটি Subrata Barua কর্তৃক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ।