by admin | Dec 13, 2019 | blog
উত্তর-পূর্ব ভারতের কপিলাবাস্তু নগরীর রাজা শুদ্ধোধন এর পুত্র ছিলেন সিদ্ধার্থ(গৌতম বুদ্ধ)। খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে লুম্বিনি কাননে (নেপাল) জন্ম নেন সিদ্ধার্থ(গৌতম বুদ্ধ)। তাঁর জন্মের ৭ দিন পর তাঁর মা, রানি মহামায়া মারা যান। তাঁর জন্মের অব্যাবহিতকাল পর জনৈক কপিল নামক সন্ন্যাসী কপিলাবাস্তু নগরীতে আসেন। তিনি সিদ্ধার্থকে দেখে ভবিষ্যৎবানী করেন যে, সিদ্ধার্থ ভবিষ্যতে হয় চারদিকজয়ী রাজা হবেন, নয়ত একজন মহান মানব হবেন। মা মারা যাবার পর সৎ মা মহাপ্রজাপতি গৌতমী তাকে লালন পালন করেন, তাই তার অপর নাম গৌতম। ছোটোবেলা থেকেই সিদ্ধার্থ সব বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু সিদ্ধার্থ সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন বলে তাঁকে সংসারী করানোর লক্ষ্যে ১৬ বছর বয়সে রাজা শুদ্ধোধন যশোধরা মতান্তরে যশোধা বা গোপা দেবী নামক এক সুন্দরী রাজকন্যার সাথে তার বিয়ে দেন। রাহুল নামে তাদের একটি ছেলে হয়। ছেলের সুখের জন্য রাজা শুদ্ধোধন চার ঋতুর জন্য চারটি প্রাসাদ তৈরি করে দেন। কিন্তু উচুঁ দেয়ালের বাইরের জীবন কেমন তা জানতে তিনি খুবই ইচ্ছুক ছিলেন। একদিন রথে চড়ে নগরী ঘোরার অনুমতি দেন তার পিতা। নগরীর সকল অংশে আনন্দ করার নির্দেশ দেন তিনি, কিন্তু সিদ্ধার্থের মন ভরল না। প্রথম দিন নগরী ঘুরতে গিয়ে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি, দ্বিতীয় দিন একজন অসুস্থ মানুষ, তৃতীয় দিন একজন মৃত ব্যক্তি এবং চতুর্থ দিন একজন সন্ন্যাসী দেখে তিনি সারথি ছন্দককে প্রশ্ন করে জানতে পারেন জগত দুঃখময়। তিনি বুঝতে পারেন সংসারের মায়া, রাজ্য, ধন-সম্পদ কিছুই স্থায়ী নয়। তাই দুঃখের কারণ খুঁজতে গিয়ে ২৯ বছর বয়সে গৃহ্ত্যাগ করেন। দীর্ঘ ৬ বছর কঠোর সাধনার পর তিনি বুদ্ধগয়া নামক স্থানে একটি বোধিবৃক্ষের নিচে বোধিজ্ঞান লাভ করেন। সবার আগে বুদ্ধ তাঁর ধর্ম প্রচার করেন পঞ্চ বর্গীয় শিষ্যের কাছে; তাঁরা হলেন কৌন্ডিন্য, বপ্প, ভদ্দিয়, মহানাম এবং অশ্বজিত। এরপর দীর্ঘ ৪৫ বছর বুদ্ধ ভারতের বিভিন্ন স্থানে তার বৌদ্ধ ধর্মের বানী প্রচার করেন। এবং তাঁর প্রচারিত বানী ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশে ও দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৩ অব্দে তিনি কুশীনগর নামক স্থানে ৮০ বছর বয়সে মহা-পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন । গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত বানীর মূল অর্থ হল অহিংসা।
সংগৃহীত buddhismbd.blogspot.com
by admin | Dec 11, 2019 | blog
শ্বশুরালয়ে গমনযোগ্য কুমারীগণকে বুদ্ধের উপদেশ
by Ven. Jnanasree Bhikkhu
আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কলেজ, Songkhla, থাইল্যান্ড
একসময় ভগবান বুদ্ধ ভদ্রিয় নগরের নিকটবর্তী জাতীয় বনে অবস্থান করার সময় উগ্রহ মেণ্ডকনত্তা শ্রেষ্ঠী কর্তৃক নিমন্ত্রিত হয়ে তাঁর গৃহে গমণ করেছিলেন। পিণ্ড গ্রহণের পর বুদ্ধ তাহার বিবাহযোগ্য কুমারীগণকে নিম্নোক্ত উপদেশ প্রদান করেছিলেন।
১) প্রত্যূষে স্বামীর পূর্বে ঘুম থেকে জাগ্রত হবে।
২) পিতামাতা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী ও স্বামীসহ গুরুজন ও অতিথিদের সেবা ও শ্রমণ ভিক্ষুগণের সতকার, পূজা ও সম্মান করবে।
৩) সূচীশিল্প থেকে আরম্ভ করে গৃহের যাবতীয় কর্ম দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করবে।
৪) স্বামীর গৃহে দাসদাসী ও কর্মচারীদের প্রতি সমভাব ও সুদৃষ্টি বজায় রাখবে।
৫) স্বামীর সম্পত্তি সংরক্ষণ করা ও অপচয় না করা, পর পুরুষের প্রতি আসক্ত না হওয়া, সুরাপানে আসক্ত না হওয়া, সম্পত্তি নষ্ট হয় মত কোন কাজ করবেনা।
৬) বিবাহের পর স্বামীর বাড়ীতে ভিক্ষুসংকে পিণ্ডদান ও ভোজনান্তে পঞ্চশীল গ্রহণ করবে ও তাঁদের থেকে উপদেশ শ্রবণ করবে।
সর্বদর্শী ভগবান বুদ্ধ সুর্দীঘ পয়তাল্লিশ (৪৫) বছর ব্যাপি মানব সহ সকল প্্রাণীর মঙ্গলের জন্য অমৃতময় বাণী প্্রচার করেছেন।সেসব বাণী গুলি যারা পালন করে জীবন যাপন করেন তারা বর্তমান জীবনে সুখ শান্তি লাভ করতে পারে এবং মৃত্যুর পর সুগতি প্রাপ্ত হয় । ভগবান বুদ্ধের অন্যতম বাণী হল অহিংসা পরম ধর্ম অর্থাৎ সকল জীব তথা সকল মানবের প্রতি সমভাবে মৈত্রী প্রদর্শন করা। হিংসা পরিহার করে অহিংসাময় জীবন যাপন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মা যেমন সন্তানের প্রতি অবিরত ভাবে অহিংসা পরায়ন থাকেন ঠিক সেরুপ ভাবে সকল জীব তথা মানবের প্রতি সকল মানব অহিংসা পরায়ন হলে সুন্দর পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে মানবগন সুখে জীবন যাপন করতে পারবে। আজ আধুনিক বিশ্বে বুদ্ধের বাণী আহিংসা না থাকার কারণে মারা-মারি,যুদ্ধ,রক্তপাত সহ বিভিন্ন ভাবে মানুষের জীবন যাপন হয়ে উঠছে বিষাদময়।
অন্য ধর্মের অনুসারিদের কথা বাদ দিয়ে শুধু বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারিদের কথায় আসা যাক,যেহেতু আমরা নিজেরা নিজেদেরকে বৌদ্ধ বলে দাবি করি সেহেতু বুদ্ধের বাণী মেনে চলা আমাদের কর্তব্য । আসলে আমরা কি বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম বাণীটি মেনে চলি বা আমরা বিশ্বাস করি, যদি বিশ্বাস করি তবে আমাদেরকে হিংসা পরিহার করতে হবে। আমরা যারা বৌদ্ধ আমরা কি যথাযথ ভাবে বুদ্ধের বাণী অনুসরণ করছি। আমার মনে হয় আমি করছিনা, যদি আমিসহ আমরা সবাই বুদ্ধের বাণী অহিংসা পরম ধর্ম পালনে রত থাকতাম তবে আজ দেশে, সমাজে,বিহারে, সংগঠনে, নিকায়ে এত ভেদাভেদ কথা কাঁটা-কাটি, মাম লামোর্কাদ্দমা হত না।
by admin | Dec 11, 2019 | blog
মঙ্গল সূত্রে ৩৮ প্রকার মঙ্গলের কথা
লিখেছেন – Ven. Jnanasree Bhikkhu
মহামানব গৌতম বুদ্ধ গৃহী জীবনের ইহকাল পরকালের সুখ শান্তি এবং সমাজের সুন্দর পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে মঙ্গল সূত্রে ৩৮ প্রকার মঙ্গলের কথা ব্যক্ত করেছেন । এই মহামানব তথাগত বুদ্ধ দেব মনুষ্যের হিতসুখ… মঙ্গলার্থে ৩৮ টি মঙ্গলোপদেশ দেশনা করেন। অনেকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভান্তের দেশনায় শুনে থাকেন। শুধু শুনেছেন আসলে ৩৮ প্রকার মঙ্গলের কথাকি তা ভালো করে জানেন না। তবুও যাঁরা জানেননা তাদের এবং সকলের উদ্দেশ্যে প্রচার করছি। সেগুলো নিম্মরুপ:
১। অজ্ঞানীর সেবা না করা
২। জ্ঞানী বা সত্ ব্যক্তির সেবা করা
৩। পূজনীয় ব্যক্তির পূজা করা
৪। প্রতিরুপ দেশে বাস করা
৫। পূর্বকূত পূণ্য স্বরণ করা
৬। নিজেকে সঠিক পথে পরাচালিত করা
৭। বহু বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা
৮। বিবিধ শিল্পে শিক্ষার জ্ঞান লাভ করা
৯। বিনয়ী হওয়া
১০। সুভাষিত (সুন্দর) বাক্য বলা
১১। মাতা পিতার সেবা করা
১২। স্ত্রীর পূত্রের ভরণ পোষণ করা
১৩। সত্ কর্মের দ্বারা জীবিকার্জন করা
১৪। দান দেওয়া
১৫। কায় বাক্য মনে ধর্ম চর্চা করা
১৬। জ্ঞাতি বর্গের উপকার করা
১৭। পূণ্যকর্ম সম্পাদন করা
১৮। পাপকর্মে রত না হওয়া
১৯। পাপকার্য হতে দূরে থাকা
২০। মদ বা মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকা
২১। অপ্রমত্তভাবে ধর্ম জীবন যাপন করা
২২। গুণী ব্যক্তিরগৌরব করা
২৩। তাদের নিকট নম্র থাকা
২৪। প্রাপ্ত বিষয়ে সন্তুষ্ট থাক
২৫। উপকারীর উপকার স্বীকার করা
২৬। যথাকালে ধর্মশ্রবণ করা
২৭। ক্ষমাশীল হওয়া
২৮। গুরুজনের আদেশ উপদেশ পালন করা
২৯। ধর্মগুরুর (ভিক্ষু-শ্রমন) দর্শন করা
৩০। যথাসময়ে ধর্মালোচনা করা
৩১। ধ্যান করা
৩২। ব্রম্ম চর্য পালন করা
৩৩। চার আর্যসত্য দর্শন করা
৩৪। নির্বাণ সাক্ষাত্ করা
৩৫। অষ্ট লোকধর্মে অবিচলিত না থাকা
৩৬। শোকহীন হওয়া
৩৭। লোভ দ্বেষ মোহরুপ কলুষহীন হওয়া
৩৮। ভয়হীন হওয়া। এই সমস্থ মঙ্গল কর্ম সম্পাদনে গৃহীগণ সুখে শান্তিতে ও নিরাপদে জীবন যাপন করা যায়।
by admin | Dec 7, 2019 | blog
অশোক লিপি
ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু
সম্রাট অশোকের রাজত্ব ছিল অখন্ড ভারতবর্ষের সর্বত্র। অখন্ড ভারত বলতে বর্তমানের ভারত ছাড়াও আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ ও মধ্য এশিয়ার অনেক বিস্তৃত অণ্চল পর্যন্ত ছিল। সর্বত্র তিনি পাথরে, পর্বতে বুদ্ধের মানব তথা সর্ব জনকল্যাণকর শিক্ষা ও উপদেশ সমূহ সকলের জ্ঞাতার্থে লিখে প্রচার করেছিলেন। যা অশোক শিলালিপি বা অভিলেখ নামে বর্তমানে পরিচিত।
কলিঙ্গ যুদ্ধের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর শান্তির অন্বেষায় মহান সম্রাট অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজেকে বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে উৎসর্গ করেন। তিনি বৌদ্ধধর্মকে সার্বজনীন ও বিশ্বধর্মে পরিণত করেন। তাঁর রাজত্বকালে বৌদ্ধধর্ম ভারত ভূখণ্ড ছাডিয়ে এশিয়ার বিশাল আয়তন ও ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। তিনি বৌদ্ধধর্মকে কেন আপন করে নিলেন এজন্য ব্রাহ্মণেরা তাঁকে শত্রুরূপে মনে করতেন। ব্রাহ্মণদের রোষানলের শিকার হয়েছিল সম্রাট অশোক এ একটি মাত্র কারণে। বৌদ্ধধর্মের অপব্যখ্যার সাথে সাথে ব্রাহ্মণেরা সম্রাট অশোককেও করেছিলেন বিকৃত। সংস্কৃত শব্দকোষে অশোকের সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি গর্দভনন্দন, মহামুর্খ। ধ্বংস করেছিল তাঁর শিলালিপি। এমনকি ভারতবর্ষের ইতিহাস হতেও তাঁকে মুছে ফেলা হয়েছিল। চণ্ডাশোকরূপেও ব্রাহ্মণেরা আখ্যায়িত করেছেন তাঁকে।
বৃটিশ শাসনের আগে পর্যন্ত সম্রাট অশেককে ভারতবাসী জানতে পারেনি। বৃটিশেরাই সম্রাট অশোককে ভারতবর্ষে পুর্নবাসন করে ইতিহাসে স্থান দেন।
মধ্যকালে সর্বপ্রথম সম্রাট অশোকের শিলালিপি আবিস্কৃত হয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে বাদশাহ ফিরোজ শাহ তুগলগ দু’টি বিশাল অশোক স্তম্ভ উত্তর প্রদেশের টোপরাও মেরট হতে অনেক পরিশ্রম করে লোক মারফত দিল্লিতে আনিয়েছিলেন। তিনি যখন স্তম্ভদ্বয়ে কিছু লেখা দেখেন তাঁর মনে কৌতুহল জাগে তাতে কি লেখা হয়েছে তা জানার জন্য। কিন্তু কেহ সেগুলো পড়ে তখন পাঠোদ্ধার করতে পারেননি। তৎকালীন অনেক বিদ্বানকে তিনি আহ্বান করেছিলেন তা পড়ার জন্য। কিন্তু কেহ সফলকাম হননি। বাদশাহ্ আকবরও লেখাগুলোর পাঠোদ্ধার করতে চেষ্টা করেছিলেন। তিনিও ব্যর্থ হন। পড়ার মত কোন বিদ্বান তিনি সে সময় খুঁজে পাননি।
পরবর্তীতে ইংরেজরা যখন ভারতে আসেন তাঁরাও এগুলি দেখে পাঠোদ্ধারে সবিশেষ মনযোগী হয়েছিলেন। প্রথম দিকে তাঁরা অনেক প্রচেষ্টা করেছিলেন। পরে স্যার উইলিয়ম জোন্স শিলালিপি সমূহের ছাপ পাঠিয়েছিলেন বারাণসীর তৎকালীন এক হাকিমের কাছে পাঠোদ্ধারের জন্য। তিনি বার্তা প্রেরণ করেছিলেন যে, আপনি নিজে না পারলেও বারাণসীর অন্য কোন বিদ্বানের দ্বারা এগুলি পড়ার ব্যবস্থা করুন। তিনি মনে করেছিলেন, বিদ্বানের শহররূপে যেহেতু বারাণসীর খ্যাতি রয়েছে, সেহেতু কেহ না কেহ এগুলির পাঠোদ্বারে সমর্থ হবেন।
অবশেষে বারাণসীর এক বিদ্বান পণ্ডিত দাবী করেছিলেন তিনি পড়তে পারবেন। তবে তিনি পড়ে যা বলেছিলেন তা জেনে আমাদের হতচকিত করার সাথে সাথে হাঁসিরও উদ্রেক করবে। মানুষ কত মুর্খ ও ষঢযন্ত্রকারী হলে এ রকম মিথ্যা, বানোয়াট ও ভ্রান্তি প্রচার করতে পারে। সে শঠ ও ধূর্ত ব্রাহ্মণ পণ্ডিত বলেছিলেন, স্তম্ভে লিখা হয়েছে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের গুপ্ত বনবাসের বিবরণ। কেবল এটুকু বলে তিনি ক্ষান্ত হননি, তিনি অশোক লিপি পড়ার এক নকল বইও রচনা করে দাবী করেছিলেন, তাঁর পড়া শতভাগ সঠিক।
অনেক দিন পর্যন্ত সে শঠ, ধূর্ত ও প্রতারক ব্রাহ্মণের পাঠ শুদ্ধ বলে গণ্য করা হয়েছিল।
১৮৩৪ সালে বৃটিশ কেপ্টেইন ট্রায়র প্রয়াগের অশোক স্তম্ভে খোদাই করা সমুদ্র গুপ্তের লেখার কিছু অংশ পড়েছিলেন। সে বছরে আবার ড. মিল সাহেব পুরা পড়েছিলেন। গাজীপুর জিলার সৈদপুর-ভীতরী নামক গ্রামের পাশে এক স্তম্ভ আছে। যাতে স্কন্ধগুপ্তের লিখা রয়েছে। ১৮৩৭ সালে ড. মল সাহেব কর্তৃক সব পাঠোদ্বার হয়। এ প্রকারে গুপ্তলিপি পড়া হয়েছিল। কিন্তু ব্রাহ্মী লিপি দুর্বোধ্য মনে করা হত।
আমাদের ধন্যবাদ দিতে হবে প্রিন্সেপ জোন্সকে। তিনি সঠিকরূপে অশোকে লিপি বা ব্রাহ্মী লিপি পড়তে সক্ষম হন। তাতে জানা যায়, সম্রাট অশোক স্তম্ভগাত্রে বুদ্ধবাণী লোককল্যাণে প্রচার করেছেন। নাহলে এখনও পর্যন্ত বারাণসীর সে ধূর্ত পণ্ডিতের নকল বই অবলম্বনে অশোক স্তম্ভের অভিলেখাকে মহাভারত এবং রামায়নের বানানো কাহিনীরূপেই চালু থাকত।
সুত্র ঃ ধম্মকথা
by admin | Dec 4, 2019 | blog
পূজ্য বনভান্তেকে নিয়ে অলৌকিক ঘটনা
============================
বন্দুকভাঙা মৌজায় কুকি উদান্যা (কামিনী কার্বারী পাড়া) নিবাসী জনৈক পুষ্পকান্ত চাকমা (গাপাল্যা) শ্রদ্ধেয় বনভান্তে প্রতি বীতশ্রদ্ধ ও বিশ্বাস কেরতো না। প্রায় সময় বনভান্তের বিরুদ্ধে কুৎসা কথা বলতো এবং নানারূপ সমালোচনাও করতো। কিন্তু তার বাড়ীর অন্যান্য ব্যক্তিরা শ্রদ্ধেয় বনভান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রায় সময় বনবিহারে দানাদি করতো। পুষ্পকান্ত(৭৫) শ্রদ্ধেয় বনভান্তেকে শ্রদ্ধা ও দান করা দূরের কথা কেউ তার সামনে বনভান্তের নাম বললেও রাগ করতো। ১৯৯১ সালে একদিন পুষ্পকান্ত চাকমা মদ খেয়ে ভীষণ নেশাগ্রস্থ হয় এবং আবোল-তাবোল বলে মাতলামী করতে করতে বাড়ীতে টাঙানো শ্রদ্ধেয় বনভান্তের ছবি নিয়ে সুপারী গাছের নীচে ছবিটা ধরে বলতে থাকে, “প্রায় লোকেরা বলে থাকে বনভান্তে অর্হৎ। সত্যিই যদি অর্হৎ হয়ে থাকে, ছবিটা অবশ্যই গাছ থেকে সুপারী পেরে দিতে পারবে।” এভাবে যে দুই-তিনবার ছবিটি উপরে ছুঁড়ে মারতে থাকে। সে আরো বলল, “সুপারী পেরে দিতে পারেনি কি রকম অর্হৎ?” অতঃপর সে উক্ত ছবিটি ঘাটে নিয়ে বলল, “দেখি, পানিতে ডুবালে বুঝা যায় কিনা কি রকম অর্হৎ?” পরিশেষে ঢেকিতে ছবিটি পিষতে থাকে। তখন বাড়ীর সকলেই তাকে অনেক বাঁধা দেয়। কিন্তু সকলের বাঁধা উপেক্ষা করে পা দিয়ে চাপা দিতে থাকে। তবে পায়ে চাপা দেয়ার সাথে সাথেই অনেকটা দৃষ্ট ধর্মের বেদনীয় কর্মস্বরূপ তার পা ব্যাথা করতে আরম্ভ হয়। আরো আশ্চর্যের বিষয় সঙ্গে সঙ্গে তার পা ফুলে যায় ও অবশ হয়ে যায়। এমন কি নাড়াচাড়া করার শক্তিও লোপ পায়।
অতঃপর পুষ্পকান্ত চাকমা গ্রামে নানা ধরণের চিকিৎসা করতে থাকে, কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। উপায়ান্ত না দেখে অবশেষে তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা মিলে পুষ্পকান্ত চাকমার আরোগ্য মানসে শ্রদ্ধেয় বনভান্তের নিকট সবিনয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, এবং সংঘদান করে দেয়। আর আশীর্বাদ প্রার্থনা করে বলল, “শ্রদ্ধেয় বনভান্তে, সে মদ পান করে মাতাল হয়ে এ অঘটন ঘটিয়েছে। অনুগ্রহ পূর্বক তাকে ক্ষমা করে দিন।” শ্রদ্ধেয় বনভান্তে বললেন, “সে আমাকে কিছু করেনি শুধু ছবিটা ভেঙে পায়ে চাপা দিয়েছে।” শ্রদ্ধেয় বনভান্তে তাদেরকে বিভিন্ন ধর্মদেশনা প্রদান করেন। কিছুদিন পর পুষ্পকান্ত চাকমা একটু আরোগ্য লাভ করে। কিন্তু বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় লাঠির সাহায্যে একটু একটু হাঁটতে পারে।
এ ঘটনাটি সংগ্রহ করে দিয়েছেন বন্দুকভাঙা মৌজার ভারবুয়াচাপ বনবিহারের শ্রদ্ধেয় শ্রীমৎ প্রজ্ঞাপাল ভিক্ষু।
(সূত্র: বনভান্তের দেশনা-৩; পৃষ্টা নং ১০৬; লেখক: অরবিন্দু বড়ুয়া)