by admin | Jan 1, 2019 | jatok
( শান্তা জেতবনে অবস্থিতিকালে স্থবির লালুদায়ীর সম্বন্ধে এই কথা বলিয়াছিলেন। এই সময়ে মল্লজাতীয় স্থবির হবে। ভিক্ষুসংদের ভত্তোন্দেশক ছিলেন। তিনি প্রাতঃকালে যে শলাকা দিতেন । তাহা দেখাইয়া স্থবির উদায়ী কোন দিন উৎকৃষ্ট, কোন দিন বা নিকৃষ্ট ততুল পাইতেন। উদায়ী যে যে দিন নিকৃষ্ট ততুল পাইতেন, সেই সেই দিন শলাকাগারে ১ গণ্ডগােল করিতেন। তিনি বলিলেন, “দব্বো ভিন্ন কি আর কেহ শলাকা বিতরণ করিতে জানে না ? আমরা কি এ কাজ করিতে পারি না ?” এক দিন তাহাকে এইরূপ গণ্ডগােল করিতে দেখিয়া, অন্য সকলে তাহার সম্মুখে শলাকার ঝুড়ি রাখিয়া বলিল, “বেশ কথা, আজ আপনিই শলাকা বিতরণ করুন।” তদবধি উদায়ীই সংঘের মধ্যে শলাকা বিতরণ করিতে লাগিলেন। কিন্তু বণ্টন করিবার। সময় তিনি কোন্ তণ্ডুল উৎকৃষ্ট, কোন্ তণ্ডুল নিকৃষ্ট তাহা বুঝিতে পারিতেন না; কত দিনের ভিক্ষু হইলে উৎকৃষ্ট তণ্ডুল পায়, কত দিনের ভিক্ষুকে নিকৃষ্ট তণ্ডুল দিতে হয়, তাহাও তাহার জানা ছিল না। শলাকাগৃহে ভিক্ষুদিগের নাম ডাকিবার সময়েও কাহাকে অগ্রে ডাকিতে হইবে, কাহাকে পশ্চাতে ডাকিতে হইবে, তাহা তিনি জানিতেন না। কাজেই ভিক্ষুরা যখন শলাকাগৃহে উপবেশন করিতেন, তখন উদায়ী ভুমিতে বা ভিত্তিতে দাগ দিয়া স্থির করিয়া লইতেন এখানে অমুক দল ছিল, এখানে অমুক দল ছিল ইত্যাদি। কিন্তু পর দিন হয়ত এক বিহারস্থ ভিক্ষুদিগকে প্রতিদিন ভােজ্য বণ্টন করিয়া দেওয়া ভভেদ্দেশকের কাৰ্য। ভিক্ষু কোন কোন দিন উপাসকদিগের গৃহে নিমন্ত্রিত হইতেন; সে দিন বিহার হইতে কোন ভােজ্য দিবার প্রয়ােজন হইত না। অন্যান্য দিন বিহারের ভাণ্ডার হইতে তণ্ডুলাদি বিতরণ করিতে হইত। ভিক্ষুরা প্রাতঃকালে এক একটী শলাকা পাইতেন। এই শলাকা বর্তমান কালের টিকেটস্থানীয়। ইহা দেখাইয়া তাহারা স্ব স্ব প্রাপ্য খাদ্য লইতেন। : যাহারা বণ্টন কাৰ্য্যে অভিজ্ঞ, ন্যায়পরায়ণ, বুদ্ধিমান, নির্ভীক এবং ধীরপ্রকৃতি, ঈদৃশ প্রবীণ ভিক্ষুরাই ভত্তো দেশকের পদে বৃত হইতেন। | যে গৃহে শলাকা বিতরণ করা হইত। দলের অল্প লােক ও অন্য দলের অধিক লােক উপস্থিত হইত। এরূপ ঘটিলে দাগ অল্প দলের জন্য নিয়ে এবং অধিক দলের জন্য উপরে পড়িবার কথা। কিন্তু উদায়ী তাহা গ্রাহ করিতেন না। তিনি পূর্বদিনের দাগ দেখিয়াই শলাকা বণ্টন করিতেন। অপিচ কোন্ দলকে কি দিতে হইবে তাহাও তিনি বুঝিতেন না।ভিক্ষুরা বলিতেন, “ভাই উদায়ী, দাগটা বড় উপরে উঠিয়াছে অপচ ভিক্ষুর সংখ্যা কম”, কিংবা “দাগটা বড় নীচে আছে, অথচ ভিক্ষুর সংখ্যা বেশী” কিংবা “এত বৎসরের ভিক্ষুদিগকে ভাল চাউল দিতে হইবে; এত বৎসরের ভিক্ষুদিগকে মন্দ চাউল দিতে হইবে” ইত্যাদি। কিন্তু উদায়ী তাহাদের কথায় কান দিতেন না। তিনি বলিতেন, “যেখানকার দাগ সেখানেই আছে। আমি তােমাদের কথা বিশ্বাস করিব, না আমার দাগ বিশ্বাস কৰিব ?” . . | এইরূপে জ্বালাতন হইয়া একদিন বালক ভিক্ষু * ও শ্রমণেরগণ উদায়ীকে শলাকাগার হইতে বাহির করিয়া দিল। তাহারা বলিল, “ভাই লালুদায়ী, তুমি শলাকা বিতরণ করিলে ভিক্ষুরা স্ব স্ব প্রাপ্য হইতে বঞ্চিত হয়। তুমি এ কাজের অনুপযুক্ত; অতএব এখান হইতে চলিয়া যাও।” ইহাতে শলাকাগারে মহা কোলাহল উপস্থিত হইল। শান্তা স্থবির আনন্দকে । জিজ্ঞাসা করিলেন, “শলাকাগারে কোলাহল হইতেছে কেন?” • আনন্দ তথাগতকে সমস্ত বৃত্তান্ত জানাইলেন। তাহা শুনিয়া তথাগত বলিলেন, “উদায়ী নিৰ্ব্বদ্ধিতা বশতঃ এখনই যে কেবল অপরের প্রাপ্যহানি করিতেছে তাহা নহে; পুৰ্বেও সে ঠিক এইরূপ করিয়াছিল।” … আনন্দ বলিলেন “প্রভু, দয়া করিয়া ইহার অর্থ বুঝাইয়া দিন।” তখন ভগবান ভাবান্তর-প্রতিচ্ছন্ন সেই অতীত কথা প্রকট করিলেন 🙂 ।
পুরাকালে বারাণসী নগরে ব্রহ্মদত্ত নামে এক রাজা ছিলেন। বােধিসত্ত্ব তাঁহার, অর্থকারকের কাজ করিতেন। তিনি হস্তী, অশ্ব, মণি, মুক্তা প্রভৃতির মূল্য নির্ধারণ করিয়া বিক্রেতাদিগের, যাহার যাহা প্রাপ্য, তাহা চুকাইয়া দিতেন। রাজা ব্ৰহ্মদত্ত অতি অর্থলােলুপ ছিলেন। এক দিন তাহার মনে হইল এই অর্ঘকারক যে ভাবে মূল্য নিরূপণ করিতেছে, তাহাতে অচিরে আমার ভাণ্ডার শূন্য হইবে। আমি ইহাকে পদচ্যুত করিয়া অপর কোন ব্যক্তিকে অর্ঘকারকের কাজ দিব। অনন্তর তিনি জানালা ৪ খুলিয়া দেখিলেন একটা পাড়াগেঁয়ে লােক উঠান দিয়া হাঁটিয়া যাইতেছে। ঐ ব্যক্তি নিতান্ত নির্বোধ অথচ লােভী ছিল। কিন্তু ব্ৰহ্মদত্ত তাহা জানিতেন না; তিনি ভাবিলেন এইরূপ লােককেই অকারক করা উচিত। তিনি তাহাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি আমার অর্ঘকারকের কাজ করিতে পারিবে কি ?” সে বলিল, “হ মহারাজ, আমি এ কাজ করিতে পারিব।” ব্রহ্মদত্ত তদ্দণ্ডেই সেই লােকটাকে নিযুক্ত করিয়া ভাণ্ডাররক্ষা সম্বন্ধে •নিশ্চিন্ত হইলেন। অতঃপর সে, যখন যেমন খেয়াল হইত, হস্তী, অশ্ব প্রভৃতির মূল্য নির্ধারণ করিত, কোন্ দ্রব্যের প্রকৃত মূল্য কত হইতে পারে তাহা একবারও ভাবিত না। কিন্তু রাজার অর্ঘকারক বলিয়া কেহই তাহার প্রতিবাদ করিতে সাহসী হইত না; সে যে মূল্য। অবধারণ করিয়া দিত, বিক্রেতাদিগকে তাহাই লইতে হইত।এক দিন উত্তরাঞ্চল হইতে এক অশ্ববণি পাঁচশত অশ্ব লইয়া বারাণসীতে উপনীত হইল। রাজা নুতন অর্ঘকারককে সেই সকল অশ্বের মূল্য নির্ধারণ করিতে বলিলেন। সে গিয়া স্থির করিল পাঁচশ ঘােড়ার দাম এক পালি চাউল, এবং অশ্ব-বণিকে ঐ মূল্য দিয়াই ঘােড়গুলিকে রাজার আস্তাবলে লইয়া যাইতে হুকুম দিল। অশ্ববণিক হতবুদ্ধি হইয়া বােধিসত্ত্বের নিকট গেল এবং যেরূপ ঘটিয়াছিল সমস্ত বলিয়া এখন কি কৰ্তব্য জিজ্ঞাসা করিল। বােধিসত্ত্ব বলিলেন, “যাও, উহাকে কিছু ঘুষ দাও এবং বল যে, মহাশয়, পাঁচশ ঘােড়র দাম যে এক পালি চাউল তাহা ত আপনি স্থির করিয়া দিলেন । কিন্তু এক পালি চাউলের কত দাম, তাহা বুঝিতে পারিলাম না। দয়া করিয়া রাজার সাক্ষাতে এই কথাটা বুঝাইয়া দিবেন কি ? যদি ইহার উত্তরে সে বলে “হাঁ, বুঝাইয়া দিব, তবে তাহাকে সঙ্গে লইয়া রাজসভায় যাইবে। আমিও সেখানে উপস্থিত থাকিব।” | অশ্ববণিক কিছুমাত্র দ্বিধাবােধ না করিয়া এই পরামর্শ মত কাজ করিল। লােভী অর্ঘকারক ঘুষ পাইয়া বড় খুসী হইল এবং এক পালি চাউলের দাম কত তাহা রাজার নিকট বলিতে অঙ্গীকার করিল। অশ্ববণিক তখনই তাহাকে রাজসভায় লইয়া গেল। সেখানে বােধিসত্ত্ব এবং অমাত্যগণ উপস্থিত ছিলেন। অশ্ববণিক প্রণাম করিয়া বলিল, “মহারাজ, পাঁচ শত ঘােড়র দাম যে এক পালি চাউল এ সম্বন্ধে আমি আপত্তি করিতেছি না; কিন্তু দয়া করিয়া আপনার অর্ঘকারক মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করুন যে এক পালি চাউলের দাম কত।” বণিকের অভিসন্ধি বুঝিতে না পারিয়া রাজা বলিলেন, “বলত অর্ঘকারক, পাঁচ শ ঘােড়ার দাম কত ?” সে উত্তর দিল, “মহারাজ, পাঁচ শ ঘােড়ার দাম এক পালি চাউল।” রাজা আবার জিজ্ঞাসিলেন, “বেশ কথা ; এখন দেখ ত পাঁচ শ ঘােড়ার দাম এক পালি চাউল হইলে এক পালি চাউলের দাম কত হয়।” সে উত্তর দিল, “মহারাজ, এক পালি চাউলের দাম সমস্ত বারাণসী সহর ও সহরতলি।” এই কথা শুনিয়া অমাত্যগণ অট্টহাস্য করিয়া করতালি দিতে দিতে বলিলেন, “আমরা এত কাল জানিতাম পৃথিবী ও রাজ্যের কোন মূল্য অবধারণ করা যায় না; এখন শিখিলাম বারাণসীরাজ্য ও বারাণসীর রাজা উভয়ের মূল্য এক পালি চাউল মাত্র। আহা! অকারকের কি অদ্ভুত বুদ্ধি! কি কৌশলে যে এ অপদার্থ এতকাল এই পদ ভােগ করিয়া আসিতেছে তাহা আমাদের বুদ্ধির অগােচর। অথবা রাজা যেমন, তঁহার অর্ঘকারকও তেমন—যােগ্যং যােগেন যােজয়েৎ। তখন বােধিসত্ত্ব এই গাথা পাঠ করিলেন : উপকণ্ঠসহ বারাণসীধাম, মূল্য তার কত হয়? নালীকা পুরিতে যে তণ্ডুল চাই; তার বেশী কভু নয়। আশ্চর্য ব্যাপার শুন আর বার, পঞ্চশত অখ-মুল্য তাও নাকি ঠিক সেই মত এক তলনালিকা তুল্য! সর্বসমক্ষে এইরূপ অপদস্থ হইয়া রাজা তমুহূর্তেই সেই পাড়াগেঁয়ে লােকটীকে তল্পীতাড়া লইয়া প্রস্থান করিতে বলিলেন এবং বােধিসত্ত্বকে পুনর্বার অকারকের পদে প্রতিষ্ঠাপিত করিলেন। অনন্তর বােধিসত্ত্ব জীবনাবসানে কৰ্ম্মানুরূপ ফলভােগার্থ লােকান্তর গমন করিলেন।
সুত্র ঃ জাতকসমগ্র
by admin | Jan 1, 2019 | jatok
পুরাকালে, বর্তমান সময়ের চাৰিকল্প পূর্বে বােধিসত্ব, সেরিব নামক রাজ্যে ফেরিওয়ালার কাজ করিতেন। তখন তাহার নাম ছিল সেরিবান। সেরিবরাজ্যে সেরিব নামে আরও এক ব্যক্তি ঐ কারবার করিত। উহার বড় অর্থলালসা ছিল। একদা বােধিসত্ত্ব তাহাকে সঙ্গে লইয়া তেলবাহনদের অপরপারে অন্ধপুরনগরে বাণিজ্য করিতে গিয়াছিলেন। সেখানে তাঁহারা কে কোন রাস্তায় ফেরি করিয়া বেড়াইবেন তাহা ভাগ করিয়া লইলেন; কথা হইল এক জন যে রাস্তায় এক বার ফেরি করিয়া গিয়াছেন, অপর জন তাহার পরে সেখানেও ফেরি করিতে পারিবেন। | অন্ধপুরে পূর্বে এক অতুলসম্পত্তিশালী শ্রেষ্ঠিপরিবার বাস করিত। কালে কমলার কোপে পড়িয়া তাহারা নিধন হয়, একে একে পুরুষেরাও মারা যায়। যে সময়ের কথা হইতেছে, তখন ঐ বংশে কেবল একটী বালিকা ও তাহার বৃদ্ধা পিতামহী জীবিত ছিলেন। তাহারা অতিকষ্টে প্রতিবেশীদিগের বাড়ীতে কাজকর্ম করিয়া দিনপাত করিতেন। বাড়ীর কৰ্ত্ত সৌভাগ্যের সময় যে সুবর্ণপাত্রে ভােজন করিতেন, সেটী তখনও ছিল; কিন্তু দীর্ঘকাল ব্যবহৃত না হওয়ায় এবং ভগ্নপত্রাদির মধ্যে পড়িয়া থাকায় উহার উপর এত ময়লা জমিয়াছিল, যে সহসা উহা সােণার বাসন বলিয়া বােধ হইত না। একদিন লােভী ফেরিওয়ালা কলসী কিনিবে”, “কলসী কিনিবে” বলিতে বলিতে | ঐ শ্ৰেষ্ঠীদিগের বাড়ীর পাশ দিয়া যাইতেছিল। তাহা শুনিয়া বালিকাটা বলিল, আমায় একখানা গহনা কিনিয়া দাওনা, দিদিমা।” দিদিমা বলিলেন, “বাছা, আমরা গরিব লােক, পয়সা পাইব কোথায় ?” তখন বালিকা সেই সােণার বাসনখানি আনিয়া বলিল, “এইখানা বদল দিলে হয় না কি? ইহা ত আমাদের কোন কাজে লাগে না।” বৃদ্ধা ইহাতে আপত্তি করিয়া ফেরিওয়ালাকে ডাকিলেন এবং তাহাকে বসিতে বলিয়া বাসনখানি দিয়া বলিলেন, “মহাশয়, ইহার বদলে আপনার এই বােটীকে যাহা হয় একটা জিনিস দিন।” | বাসনখানি দুই একবার উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিয়া ফেরিওয়ালার সন্দেহ হইল, সম্ভবত উহা স্বর্ণনির্মিত। এই অনুমান প্রকৃত কি না তাহা পরীক্ষা করিবার নিমিত্ত সে সূচী দিয়া উহার পিঠে দাগ কাটিল এবং উহা যে সােণার বাসন সে সম্বন্ধে তখন আর তাহার কিছুমাত্র সংশয় রহিল না। কিন্তু মেয়েমানুষ দুইটাকে ঠকাইয়া ইহা বিনামূল্যে লইব, এই দুরভিসন্ধি করিয়া সে বলিল, “ইহার আবার দাম কি ? ইহা সিকি পয়সায় । কিনিলেও ঠকা হয় * অনস্তর সে নিতান্ত অবজ্ঞার ভাণ করিয়া বাসনখানি ভূমিতে ফেলিয়া সে স্থান হইতে চলিয়া গেল। ইহার ক্ষণকাল পরেই বােধিসত্ত্ব সেই পথে ফেরি করিতে আসিলেন এবং “কলসী কিনিবে”, “কলসী কিনিবে” বলিতে বলিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরিতে লাগিলেন। তাহা শুনিয়া বালিকাটী তাহার পিতামহীকে আবার সেই প্রার্থনা জানাইল। বৃদ্ধা কহিলেন, “যে বাসন বদল দিতে গিয়াছিলে তাহার ত কোন দামই নাই শুনিলে। আমাদের আর কি আছে, বােন, যাহা দিয়া তােমার সাধ পুরাইতে পারি ? ”বালিকা কহিল, “সে ফেরিওয়ালা বড় খারাপ লােক, দিদিমা। তাহার কথা শুনিলে গা জ্বালা করে। কিন্তু এ লােকটী দেখত কত ভাল, ইহার কথাও কেমন মিষ্ট। এ বােধ হয় ঐ ভাঙ্গা বাসন লইতে আপত্তি করিবে না।” তখন বৃদ্ধা বােধিসত্ত্বকে ডাকাইয়া বসিতে বলিলেন এবং বাসনখানি তাঁহার হাতে দিলেন। বােধিসত্ত্ব দেখিবামাত্রই বুঝিলেন উহা সুবর্ণনির্মিত। | তিনি বৃদ্ধাকে সম্বােধন করিয়া বলিলেন, “মা, এ বাসনের দাম লক্ষমুদ্রা। আমার নিকট এত অর্থ নাই।” | বৃদ্ধা কহিলেন, “মহাশয়, এই মাত্র আর একজন ফেরিওয়ালা আসিয়াছিল। সে বলিল ইহার মূল্য সিকি পয়সাও নহে। বােধ হয় আপনার পুণ্যবলেই বাসনখানি এখন সােণা হইয়াছে। আমরা ইহা আপনাকেই দিব; ইহার বিনিময়ে আপনি যাহা ইচ্ছা দিয়া যান।” বােধিসত্বের নিকট তখন নগদ পাঁচ শ কাহণ * এবং ঐ মূল্যের পণ্যদ্রব্য ছিল। তিনি ইহা হইতে কেবল নগদ আট কাহণ এবং দাঁড়িপাল্লাও থলিটা লইয়া অবশিষ্ট সমস্ত বৃদ্ধার হস্তে অর্পণ করিলেন এবং তাহার অনুমতি লইয়া বাসন খানি গ্রহণ করিয়া যত শী পারিলেন নদীতীরে উপস্থিত হইলেন। সেখানে একখানি নৌকা ছিল। তিনি ইহাতে আরােহণ করিয়া মাঝির | হাতে আট কাহণ দিয়া বলিলেন, “আমাকে শীঘ্র পার করিয়া দাও।”এদিকে লােভী বণিক শ্ৰেষ্ঠীদিগের গৃহে ফিরিয়া বাসনখানি আবার দেখিতে চাহিল। সে বলিল, “ভাবিয়া দেখিলাম তােমাদিগকে ইহার বদলে একেবারে কিছু না দিলে ভাল দেখায় না।” তাহা শুনিয়া বৃদ্ধা কহিলেন, “সে কি কথা, বাপু? তুমি না বলিলে উহার দাম সিকি পয়সাও নয়! এই মাত্র একজন সাধু বণিক আসিয়াছিলেন। বােধ হয় তিনি তােমার মনিব হইবেন। তিনি আমাদিগকে হাজার কাহণ দিয়া উহা কিনিয়া লইয়া গিয়াছেন।” এই কথা শুনিবামাত্র সেই লােভী বণিকের মাথা ঘুরিয়া গেল। সে পাগলের মত ছুটাছুটি করিতে লাগিল; সঙ্গে যে সকল মুদ্রা ও পণ্যদ্রব্য ছিল তাহা চারিদিকে ছড়াইয়া ফেলিল। অনন্তর উলঙ্গ হইয়া, “হায়, সর্বনাশ হইয়াছে, দুরাত্মা ছল করিয়া আমার লক্ষ মুদ্রার সুবর্ণ পাত্র লইয়া গিয়াছে,” এইরূপ প্রলাপ করিতে করিতে এবং তুলাদণ্ডটী মুদগরের ন্যায় ঘুরাইতে ঘুরাইতে সে বােধিসত্বের অনুসন্ধানে নদীতীরে ছুটিল। সেখানে গিয়া দেখে নৌকা তখন নদীর মধ্যভাগ পর্যন্ত গিয়াছে। সে “নৌকা ফিরাও” “নৌকা ফিরাও” বলিয়া চীৎকার করিতে লাগিল; কিন্তু বােধিসত্ত্ব নিষেধ করায় মাঝি নৌকা ফিরাইল না। বােধিসত্ত্ব অপর পারাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিলেন ; দুষ্টবুদ্ধি বণিক একদৃষ্টিতে তাহার দিকে চাহিয়া।রহিল ; অনন্ত, সূর্যের তাপে জলহীন তড়াগের তলদেশস্থ কর্দম যেমন শতধা বিদীর্ণ হয়, দারুণ যন্ত্রণায় তাহার হৃৎপিণ্ডও সেইরূপ বিদীর্ণ হইল; তাহার মুখ দিয়া রক্ত উঠিতে লাগিল এবং সেই মুহূর্তেই সে প্রাণত্যাগ করিল। ইহার পর বােধিসত্ত্ব দানাদি সৎকার্যে জীবন | যাপন করিয়া কৰ্ম্মফলভােগের জন্য লােকান্তর গমন করিলেন।এইরূপে অহৰ লাভের উপায় প্রদর্শন করিয়া শান্তা সত্যচতুষ্টয় ব্যাখ্যা করিলেন; তাহা শুনিয়া সেই হীনৰীৰ্য্য ভিক্ষু অহরূপ সর্বোত্তম ফল প্রাপ্ত হইলেন। সমবধান তখন দেবদত্ত * ছিল সেই ধূর্ত বণিক, এবং আমি ছিলাম সেই সুবুদ্ধি ও ধর্মপরায়ণ বণিক।
সুত্র ঃ জাতকসমগ্র
by admin | Dec 29, 2018 | Event
“মেশ্রী ভাবনা অনুশীলনে মানব মনে জেগে উঠে অনাবিল প্রশান্তি ও পবিত্র আনন্দ”
ভদন্ত/সৌম্য,
কর্মময় জীবন থেকে আরও একটি বছর বিদায়ক্ষণে দু’শতাব্দীর সু-প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কদলপুর সুধর্মানন্দ বিহার, বাংলাদেশ ভিক্ষু প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্রে ইংরেজী ২০১৮ বর্ষ বিদায় এবং জীবনের আরও একটি নতুন বছর ২০১৯ বর্ষবরণ মুহুর্তটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে স্মরণীয়, বরণীয়, অর্থবহ ও তাৎপর্যময় করার লক্ষেই ৫ম বারের মতাে বাংলাদেশ ভিক্ষু প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্রের আওতাধীন শ্রীমহাবােধি মেত্তা ভাবনা কমপ্লেক্সের উদ্যোগে ১০০ জনকে বৌদ্ধ আচার-নীতি শিক্ষার আলােকে সুখ-শান্তিকামীদের জন্যে ৫ দিনের মেত্তা ভাবনা অনুশীলন, শ্রীমহাবােধি মেত্তা ভাবনা কমপ্লেক্সের ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, অমলেন্দু-মালতী ফাউন্ডেশনের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, অষ্টপরিস্কারসহ সংঘদান’র আয়ােজন করা হয়েছে। উক্ত মহাপুণ্যানুষ্ঠানকে সার্বিকভাবে সাফল্যমন্ডিত করার লক্ষ্যে আপনাদের সাহায্য সহযােগিতা ও অংশগ্রহণের জন্য সাদর আমন্ত্রণসহ সবান্ধব উপস্থিতি আন্তরিকভাবে কামনা করছি।
নিবেদকভদন্ত শাসনরক্ষিত ভিক্ষু
প্রধান সমন্বয়কারী
পরিচালক- বাংলাদেশ ভিক্ষু প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্র, কদলপুর, রাউজান।
by admin | Dec 11, 2018 | content
সীবলী পরিত্তং
১। পূরেন্তং পারমী সব্বা সব্বে পচ্চেক নাযকা,
সীবলী গুণতেজেন পরিত্তং তং ভণাম হে।
(নজালিতীতি জালীতাবী আ ঈ উ আম ইস্বাহা বুদ্ধসামি বুদ্ধ সত্যম্)
২। পদুমুত্তরো নাম জিনো সব্বধম্মেসু চক্ খুমা ,
ইতো সতসহ্সস্মহি কপ্পে উপ্পজি নাযকো।
৩। সীবলী চ মহাথেরো সো’রহো পচ্চযাদিনং,
পিযো দেবম্নুস্সানং পিযো ব্রহ্মণমুত্তমং,
পিযো নাগ সুপণ্ণানং পীণিন্দ্রিযং নমামহং।
৪। “নাসং সীসো চ মোসীসং, নানজালীতি সংজলিং,
সদেব-মনুস্স পূজিতং সব্বলাভা ভবন্তু মে।
৫। সত্তাহং দ্বারমূলেহাহং মহাদুক্খ সমপ্পিতো,
মাতা মে ছন্দ দানেন এবমাসি সুদুদুক্খিতা।
৬। কেসেসু ছিজ্জমানেসু অরহত্তমপাপুণিং,
দেব-নাগ-মনুস্সা চ পস্সযানূপানেন্তি মে।
৭। পদুমুত্তর নামঞ্চ বিপস্সিং চ বিনাযকং,
সংপূজযিং পমূদিতো পচ্চযেহি বিসেসতো।
৮। ততো তেসং বিসেসেন কম্মানং বিপুলুত্তমং,
লাভং লভামি সব্বত্থ বনে গামে জলে থলে।
৯। তদা দেবো পণীতেহি,মমত্থায় মহামতি,
পচ্চযেহি মহাবীরো,সসংযো লোকনাযকো।
১০। উপট্ ঠিতো মহাবুদ্ধো গন্তা রেবতমদ্দস,
ততো জেতবনং গন্তা এতদগ্ গে ঠপেসি মং।
১১। রেবতং দস্সনত্থায যদা যাতি বিনাযকে,
তিঠং ভিক্খু সহস্সেহি,সহ লোকগ্গ নাযকো।
১২। লাভীনং সীবলী অগ্ গো,মম সিস্ সেসু ভিক্খবো
সব্বলোকহিতো সত্থা কিত্তযী পরিসাসু মং।
১৩। কিলেসা ঝাপিতা ময্হং ভবা সব্বে সমূহতা,
নাগো’ব বন্ধনং ছেত্বা ,বিহরামি অনাসবো।
১৪। সাগতং বতমে আসি বুদ্ধসেট্ঠস্স সন্তিকং,
তিস্সো বিজ্জা অনুপ্পত্তো কতং বুদ্ধস্স সাসনং ।
১৫। পটিসম্ভিদা চতস্সো চ বিমোক্খাপি চ অট্ঠীমে ,
ছলভিঞ্ঞা সচ্ছিকতা,কতং বুদ্ধস্স সাসনং ।
১৬। বুদ্ধপুত্তো মহাথেরো সীবলী জিনসাবকো
উগ্গতেজো মহাবীরো তেজসা জিনসাসনং।
১৭। রক্খন্তু সীলতেজেন ধরবন্তো যস্সিনো,
এবং তেজানুভাবেন সদা রক্খন্তু সীবলী।
১৮। কপ্পট্ঠাযীতি বুদ্ধস্স বোধিমূলে নিসীদযী,
মারসেনপ্পমদ্দন্তো,সদা রক্খন্তু সীবলী।
১৯। দস্পারমিতপ্পত্তো পব্বজী জিনসাসনে,
গোতমং সাক্যপুত্তোসি থেরেন মম সীবলী।
২০। মহাসাবকা অসীতীসু পূণ্ণত্থেরো যস্সিনো,
ভবভোগে অগ্গলাভীসু উত্তমঙ্গেন সীবলী।
২১। এবং অচিন্তিযা বুদ্ধা বুদ্ধধম্মা অচিন্তিযা,
অচিন্তিযেসু পসন্নানং বিপাকো হোতি অচিন্তিযো।
২২। তেসং সচ্চেন সীলেন খন্তিমেত্তবলেন চ,
তেপি মং অনুরক্খুন্ত সব্বদুক্খ বিনাসনং ।
২৩। তেসং সচ্চেন সীলেন খন্তিমেত্তবলেন চ,
তেপি মং অনুরক্খুন্ত সব্বভয বিনাসনং ।
২৪। তেসং সচ্চেন সীলেন খন্তিমেত্তবলেন চ,
তেপি মং অনুরক্খুন্ত সব্বরোগ বিনাসনং ।
by admin | Dec 10, 2018 | Event
আগামী তারিখ ০২ মাঘ ১৪২৫ বাংলা ( ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ খ্রিঃ) গােবিন্দ ঠাকুর স্মৃতি মন্দির প্রাঙ্গণে , পরম পূজনীয় সিদ্ধি পুরুষ গােবিন্দ ঠাকুর ও উপ-সংঘরাজ শ্রীমৎ গুণালংকার মহাথের স্মরণেঅষ্টপরিষ্কারসহ সংঘদান, আটাশ বুদ্ধের পূজা ও সদ্ধর্মানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে । উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ত করবেন মাননীয় উপ-সংঘরাজ ভদন্ত ডঃ জ্ঞানশ্রী মহাথের , অধ্যক্ষ চট্রগ্রাম বৌদ্ধ বিহার । উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় উপ-সংঘরাজ ভদন্ত ডঃ শীলানন্দ মহাথের , অধ্যক্ষ রাউজান বিমলানন্দ বিহার । প্রধান ধর্মদেশক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় উপ-সংঘরাজ ধর্মকথিক হিসেবে খ্যাত ভদন্ত ধর্মপ্রিয় মহাথের । প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভদন্ত এস। লোকজিৎ থের ।
উক্ত-পুণ্যানুষ্ঠানে আপনার/আপনাদের সহৃদয় উপস্থিতি আতরিকভাবে প্রত্যাশা করছি ।
আয়ােজনেঃ শুরু গােবিন্দ ঠাকুর স্মৃতি মন্দির পরিচালনা পরিষদ।