বাংলাদেশ বৌদ্ধ মহাবিহারে পাঁচদিন ব্যাপী ‘পটঠান’ পাঠ

বাংলাদেশ বৌদ্ধ মহাবিহারে পাঁচদিন ব্যাপী ‘পটঠান’ পাঠ

           

                                                             

                                                                                বুদ্ধ শাসনের জয় হােক

ভদন্ত/সুধী,

মহাকারুণিক বুদ্ধ দাঘ ৪৫ বছর ধরে যে ধর্ম-বিনয় প্রচার করেছিলেন তা  ত্রিপিটক নামে সংগৃহীত হয়। বিনয়পিটক, সুত্রপিটক, অভিধর্মপিটক এই তিন পিটক নিয়েই ত্রিপিটক। অভিধর্মপিটকের সপ্তম খন্ডের বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে ‘পটঠান’। যা তথাগত বুদ্ধ চিত্ত, চৈতসিক, রূপ, নিবাণ  সম্পর্কে সবিশেষ দেশনা করেছেন। বুদ্ধের ধর্ম দর্শনে দেখা যায়, বুন্ধরা ধর্ম প্রচারের শেষান্তে ‘পটঠান দেশনা করেন এবং ধর্ম বিলুপ্তির সময় সবার আগে পৃথিবী থেকে পটঠান বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেজন্য পটঠান গ্রন্থটি প্রত্যেকটি মানব সত্তের জন্য  অত্যন্ত গুরুত্তপূর্ন। যাহ প্রতিনিয়ত পাঠ/শ্রবণ/ধারণ করলে অনেক সুফল লাভ করা যায়।

‘পটঠান’ পাঠের সুফল ঃ

 ১।  বিভিন্ন প্রকার ভয় অন্তরায় উদ্ভব ও বিপদ হতে রক্ষা পাওয়া যায় ।

  ২। দেবগণের প্রশংসা প্রাপ্ত হয়। ।

  ৩। যশ-খ্যাতির অধিকারী হয়।

  ৪। দেব ও মনুষ্যের প্রিয়তা লাভ করা যায়।

  ৫।  মনের মধ্যে সবসময় ভয়হীনতা থাকে। 

  ৬। ব্যবসা-বাণিজ্যের আয় উন্নতি বর্ধিত হয়। 

  ৭। শ্রদ্ধাসহকারে “পটঠান” পাঠ করলে মৃর্ত্যর ভয়ও প্রকম্পিত করতে পারে না।

৮ । শান্ত ও স্থির চিত্তে “পটঠান” পাঠ করলে অনায়াসেই সমাধি লাভ করতে পারেন।

তাই আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আগামী ২২ মার্চ শুক্রবার থেকে ২৬ মার্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচদিন ব্যাপী দিন রাত নিরবচ্ছিন্নভাবে পটঠান পাঠের আয়ােজন করতে যাচ্ছি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার-বিকাল ৩.০১মি, দুর্লভ মহান গণ প্রব্রজ্যা, ২২ মার্চ শুক্রবার – সকাল ৮.০১মি. দায়ক-দায়িকা ও পুন্যার্থীদের উপস্থিতিতে আসনে বুদ্ধমূর্তিসহ ধর্ম পূজা স্থাপন ও মঙ্গল প্রদীপ প্রচলনের মাধ্যমে পটঠান” পাঠ শুরু, ২৩, ২৪, ২৫ মার্চ সকাল ৯ঃ৩০ মি । পুজনীয় ভিক্ষুসংঘের বিহার সম্মুখে পিন্ডাচারণ,২৬ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ১০ঃ০১ মি। সমাপনী অষ্টউপকরণসহ সংঘদান ।

পুজনীয় ভিক্ষুসংঘের বিহার সম্মুখে পিচারণ, ২৬ মাচ মঙ্গলবার সকাল ১০.০১মি. সমাপনী অষ্টউপকরণসহ সংঘদান। আপনারা নেন মল শহর থেকে কিছুটা সরে হলেও বাংলাদেশদ্ধে মহাবিহারে পুণ্যার্থীদের উপস্থিতিতে সময় শন এর সম্পাদন হয়। তারই প্রেক্ষিতে বিহারে বিভিন্ন প্রতি সময় শরণংকর থের মহােদয়ের আগমনসহ বছরে দুইবার ব্যান অনুশীলন, গণপ্রব্রজ্যা বিহারে অবস্থানরত ভিক্ষুসংঘ অবস্থা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ অবধি। এবং দায়ক-দায়িকাৰন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিটি অনুষ্ঠান সুচারুরূপে সম্পাদিত হয় মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিটি অনুষ্ঠান সুচারুরূপে সম্পাদিত হয়। তাই আপনাদের অংশগ্রহণে এ। আয়ােজনও সফলভাবে সমাপ্ত হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে সকলের অংশগ্রহণ কামনা করছি।

আয়ােজনেঃ

পুজনীয় ভিক্ষুসংঘ/দায়ক-দায়িকাবৃন্দ ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি-ঢাকা অঞ্চল ।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ মহাবিহার, ১৬নং সেক্টর, উত্তরা ।

প্রয়োজনে। ০১৭১৭৪৪১০০১ ০১৮২৫১২৭২৯২, ০১৭১১৫৩১৪৭৪, ০১৭১১১১৯৫৯২ ।

 

নিভৃতচারী ধুতাঙ্গ সাধক ভাবনানন্দ মহাস্থবিরের কথা

নিভৃতচারী ধুতাঙ্গ সাধক ভাবনানন্দ মহাস্থবিরের কথা

নিভৃতচারী ধুতাঙ্গ সাধক ভাবনানন্দ মহাস্থবিরের কথা

লিখেছেন- উজ্জ্বল বড়ুয়া বাসু

কলেজে অধ্যয়নকালীন সময়েই ভান্তের ভক্ত হয়ে পড়েছিলাম। ঠিক কী কারণে ভান্তের কাছে প্রথমবার গিয়েছিলাম মনে পড়ে না…. তবে যে কারণেই যাই না কেনো ভান্তের সৌম্য দেহ, সুন্দর বাচনভঙ্গী থেকে শুরু করে বিভিন্ন কিছু এত বেশি আকর্ষণ করতো যে যখনই একটু ফ্রি সময় পেতাম, কিংবা মনটা বিষন্নতায় ভরে যেত তখনি ভান্তের কাছে ছুটে যেতাম। অন্যরকম এক প্রশান্তিতে ভরে যেত জোয়ারা খানখানাবাদের ভাবনানন্দ বিদর্শন আরামে গেলে। যেতে কিন্তু খুব কষ্টই পেতে হতো। কাঞ্চননগর বাদামতলের আগের স্টেশনে নেমে ফতেনগর মহাবোধি পর্যন্ত কোনো রকমে রিক্সায় যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারপর হাঁটা শুরু। দুরত্ব যত না বেশি তার চেয়ে বেশি বিপদজনক ছিল রাস্তার কাঁদাগুলো। তারপরও কিসের টানে এই কাঁদা অতিক্রম করে ভান্তের জন্য অল্প ছোয়াইং নিয়ে চলে যেতাম বুঝতাম না। তবে হ্যাঁ তৎকালীন সময়ের প্রচলিত একটি কথাও বেশ নাড়া দিত। জোয়ারারই আশে পাশের কিছু লোকজন একসময পূজ্য বনভান্তের কাছে গিয়েছিলেন। আর সেসময় পূজ্য বনভান্তে নাকি বলেছিলেন আমার কাছে এত কষ্ট করে আসার দরকার কি তোমাদের পাশের গুণীভান্তে ভাবনানন্দ এর সেবা করো। সেই থেকে পূজ্য ভাবনানন্দ ভান্তের কিছুটা প্রচার বেড়ে যায়। ভান্তের ওখানে একটি বিষয় আমাকে বেশ নাড়া দিত। সেটা হচ্ছে ভান্তের ছোয়াইং খাওয়া। ভান্তের শিষ্য পরমানন্দ ভান্তে এবং তিলোকানন্দ ভান্তের কথা মনে আছে উনারা ভান্তের জন্য পাত্র তে করে ছোয়াইং নিয়ে আসতেন। পাত্রের ভিতরে কি আছে তা দূর থেকে দেখা যায়। সেখানে কিছু খাবারের মিশ্রণ। সেগুলো কি ভাত, নাকি তরকারী তা বুঝা যেত না। বলা যায় এই মিশ্রণটা দেখলেই কেমন জানি লাগতো। মনে মনে ভাবতাম যে খাদ্যগুলো দেখতেই ঘৃণা লাগে সেগুলো ভান্তে খায় কিভাবে? ছাবাইকে সবধরণের খাবারগুলো কে একত্রে এমনভাবে মিশ্রিত করতেন যে, কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তির ওই খাবারের প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষণ জন্মাবে না, খেতে দিলেও মনে হয় ওগুলো কেউ খাবেনা। ভাত এবং তরকারী একত্রে মিশানোর ফলে মিশ্রণটার রংটা কেমন জানি বিদগুটে হয়ে যেত। কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করতাম ভান্তে কেনো এভাবে খায়? আবার নিজে নিজেকে উত্তর দিতাম মনে হয় কোন তরকারীর কি মজা তা না বুঝার জন্য এমনটা করেন। তখন বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি না বুঝলেও এখন পিটকীয় নানা বই পড়ে মিলিয়ে দেখলে বুঝতে পারি ভান্তে মূলত পাত্রপিণ্ডিক ধুতাঙ্গ পালন করতেন। আর তাই তো সবকিছু একবারে নিয়ে মিশ্রণ তৈরী করেই তিনি পিণ্ড গ্রহণ করতেন। বিভূষণের জন্য নয়, ক্রীড়ার জন্য নয়, শক্তিপ্রদর্শনের জন্য নয়…….. ক্ষুধারোগ নিবারণের জন্য, ব্রহ্মচর্য অনুগ্রহের জন্য যেভাবে পিটকে পিন্ডগ্রহণের কথা আছে ঠিক যেন তিনি তেমনটাই পালন করতে চাইতেন। পূজ্য ভাবনানন্দ মহাস্থবিরের গৃহী নাম ছিল ঈশ্বর চন্দ্র বড়ুয়া। পিতা ঊমা কিশোর তালুকদার এবং মাতা ধীরমনি তালুকদার এর কোল আলোকিত করে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেন ১৯০৬ইং সনের ২৫জুন । মা-বাবার দশ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ঈশ্বর চন্দ্র বড়ুয়া যৌবনে চাকুরীর সন্ধানে প্রথমে কলকাতায় যান পরবর্তীতে সেখান থেকে বার্মায়(বর্তমান মায়ানমার) যান। বার্মায় চাকুরীর ফাঁকে ফাঁকে ভিক্ষুসংঘের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। আর এই সেবার ব্রতই তাকে ষষ্ঠ সঙ্গায়নে অংশগ্রহণকারীদের ভিক্ষুদের সেবার সুযোগ করে দেয়। সেই সঙ্গায়নেই তিনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন ১৯৫৬ইং তে প্রখ্যাত বিদর্শন সাধক ঊনু উত্তরা ছেয়াদ এর নিকট। পরবর্তীতে ১৯৬০ইং তে রেঙ্গুনের খ্যাতিমান সাধক কামাইউট মেধাবী ছেয়াদ এর অধীনে তিনি বিদর্শন ধ্যান অনুশীলন করেন। ১৯৬৩ইং তে তিনি বার্মা থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর ১৯৬৬ইং তে তিনি বিদর্শন সাধক ভদন্ত ধর্মবিহারী মহাথের (প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া) এর অধীনে উপসম্পদা লাভ করেন। উপসম্পদা লাভের পর তিনি জোয়ারা খানখানাবাদ পঞ্চরত্ন বিহার ও মধ্যম জোয়ারা সুখরঞ্জন বিহারে বর্ষাবাস যাপন করেন। এসময় তিনি মুকুটনাইট বৌদ্ধ সেবাসদনে তিন কক্ষবিশিষ্ট পাকা বিহার নির্মাণ, ফতেনগর বেনুবন বিহারের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, নিজ গ্রামে শ্মশানে ধ্বংস প্রাপ্ত স্মৃতি মন্দির গুলোর পুনঃনির্মাণ করেন। “গৃহীদের মুক্তির সন্ধান’ নামে একটি বইও লিখেন তিনি। পরবর্তীতে নিজের পৈত্রিক ভিটায় “ভাবনানন্দ আরাম’ প্রতিষ্ঠা করেন। পুজ্যভান্তের নিভৃতে বিনয়োচিত জীবন চলা যখন প্রচার পেয়ে যায় তখন দূরদুরান্ত থেকে অনেক মানুষ যেতেন তাকে দর্শনের উদ্দেশ্যে। ভান্তে ছাবাইক হাতে নিয়েই শিষ্যদের প্রথমে জিজ্ঞেস করতেন যে, উপাসক-উপাসিকাদের জন্য খাবার আছে কিনা। শিষ্য হ্যাঁ বোধক উত্তর দেওয়ার পরই তিনি ছোয়াইং খাওয়া শুরু করতেন। ভান্তের সান্নিধ্যে যাওয়ার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যতজন ব্যক্তিই সেখানে আসুক না কেন কেউই না খেয়ে ফিরতেন না। মনে হত যেন সেখানকার খাদ্যগুলো বেড়েই যেত। আর অল্পতেই খুব তৃপ্তি ভরে খাওয়া যেত সেখানে। ভান্তে গতানুগতিক দেশনা খুব কমই দিতেন, বেশীরভাগ সময় ধর্মালোচনার মত করেই দেশনা দিতেন। যাই হোক, আমার মতো অধমের পরম সৌভাগ্য হয়েছিল যে, এই নিরব সাধকের সান্নিধ্যে প্রায় পনের বারের মত যাওয়া, সেবা করা এমনকি ভান্তের শিষ্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার সুবাদে আমি এবং আমার কয়েক বন্ধুর ভান্তের মরদেহ কে যেই মঞ্চে রাখা হয়েছিল সেই মঞ্চ পুষ্প দিয়ে সাজানোর দায়িত্ব পাওয়া,ভান্তেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় বিউগলে যে করুণ সুর বাজানো হয়েছিল তার নির্দেশনারও দায়িত্ব পাওয়ার। আলোকিত এই সংঘমনীষা ২০০৬ইং সনের ১১এপ্রিল, মঙ্গলবার ৭.৪৫মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন।

কালভক্ষন জাতক

কালভক্ষন জাতক

পুরাকালে ব্রম্মদত্ত যখন বারাণসীর রাজা ছিলেন তখন বোধিসত্ত্ব এক ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বয়ঃপ্রাপ্তির পর তিনি তিন বেদে পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন। তারপর তিনি আচার্য হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। পাঁচশত শিষ্য তাঁর কাছে বিদ্যা শিক্ষা করত। এই পাঁচশত শিষ্যও মনোযোগের সঙ্গে অধ্যায়ন করে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেছিল।

কিন্তু এইসব শিষ্যদের গর্ব জন্মায়। তারা ভাবলেন, আচার্য যা জানেন আমরাও তা জানি। বিদ্যা সবন্ধে আচার্যের সঙ্গে আমাদের কোন পার্থক্য নেই।

এই গর্বের বশবর্তী হয়ে তারা আর আচার্যের কাছে বিদ্যাভ্যাস করতে গেল না। আচার্যের প্রতি শিষ্যদের কি করনীয় তাও করল না।

একদিন বোধিসত্ত্ব এক বাদরীবৃক্ষের তলায় বসেছিলেন। এমন সময় তাঁর শিষ্যগন তাকে উপহাস করার জন্য সেখানে গিয়ে নখ দিয়ে বৃক্ষে আঘাত করে বলল, এই বৃক্ষটি নিঃসার অর্থাৎ এতে কোন সার নেই।

বোধিসত্ত্ব বুঝতে পারলেন, শিষ্যগণ তাকে লক্ষ্য করেই উপহাস করছে। তিনি বললেন, শিষ্যগণ আমি তোমাদের একটি প্রশ্ন করব।
শিষ্যেরা বলল, বলুন, আমরা উত্তর দিচ্ছি।

বোধিসত্ত্ব তখন একটি গাথার মাধ্যমে বললেন, কালের হাতে সবকিছুর লয় হয়। কাল সবকিছুকেই গ্রাস করে নিজেকেও ভক্ষন করে। অর্থাৎ কাল প্রতি মুহূর্তে লয়প্রাপ্ত হয়। কাল অতিবাহিত হয়। কিন্তু কে কালকে গ্রাস করে বলতে পার?

এই প্রশ্ন শূনে শিষ্যদের কেউ উত্তর দিতে পারল না। বোধিসত্ত্ব তখন তাদের বললেন, মনে ভেব না, এই উত্তর বেদের মধ্যে আছে। তোমরা ভাব যে, আমি যা জানি, তা তোমরাও জান। এই গর্বে তোমাদের বাদরীবৃক্ষের দশা হয়েছে। অর্থাৎ বাইরে সুন্দর হলেও বাদরীবৃক্ষ ভিতরে সারবান নয়, তেমনি তোমরাও বাইরে জ্ঞানের বড়াই করলেও ভিতরে অন্তঃসারশূন্য। প্রকৃত জ্ঞান এখন লাভ হয়নি। যাই হোক, তোমরা এখন যাও, আমি তোমাদের সাতদিন সময় দিলাম। চিন্তা করে দেখ।

শিষ্যগণ আপন আপন স্থানে চলে গেল। সপ্তাহকাল চেষ্টা করেও আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারল না। তাঁরা বোধিসত্ত্বের কাছে গিয়ে প্রণাম করে বসল। বোধিসত্ত্ব বললেন, কিহে উত্তর পেলে?

শিষ্যগণ লজ্জিত হয়ে বললেন, না মহাশয়, আমরা এই প্রস্নের কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না।

বোধিসত্ত্ব তখন বললেন, অনেক মানুষ দেখেছি, তাদের গলা আছে, মাথা আছে, চখ আছে কিন্তু কিন্তু দুটি কান আছে কিনা সন্দেহ। তোমরা বর অপদার্থ। তোমাদের কানে ছিদ্র আছে, কিন্তু অন্তরে প্রজ্ঞা নেই।

এরপর বোধিসত্ত্ব নিজে সে প্রশ্নের উত্তর দিলেন। যারা কামনার বশীভূত, তারাই কালের অধীন। সকল বস্তু ও জীব স্থান কাল, কার্যকারণের বন্ধনে আবদ্ধ কিন্তু যাঁরা সব কামনা বাসনা জয় করে নির্বাণ লাভ করেছেন, তাঁরা কালের অধীন নন, কাল তাদের গ্রাস বা ভক্ষন করতে পারেন না। এইভাবে জন্ম জরা মৃত্যুকে জয় করে তাঁরা কালকেও জয় করেন।

বধিসত্তের কথা শূনে তারা স্বীকার করল, ওহো আচার্যের কি জ্ঞান কি আশ্চর্য ক্ষমাতা!

এই বলে তারা আচার্যকে প্রণাম করে ক্ষমা প্রার্থনা করল। তাদের দর্প চূর্ণ হল। তারা যথারীতি আচার্য থেকে বিদ্যাভ্যাস ও তাঁকে সেবা করে যেতে লাগল।

সুত্র ঃ জাতকসমগ্র

ভদন্ত শাসনমিত্র মহাস্থবিরের ৬৯তম সুবর্ণ জন্ম জয়ন্তী

ভদন্ত শাসনমিত্র মহাস্থবিরের ৬৯তম সুবর্ণ জন্ম জয়ন্তী

ঐতিহ্যবাহী পুণ্যতীর্থ আনােয়ারা উপজেলার অন্তর্গত তালসরা মুসুদ্দিপাড়া বিবেকারাম বিহারের নবরূপকারক ও অধ্যক্ষ, সপ্তগ্রাম শাসন কল্যাণ ভিক্ষু সমিতির প্রাক্তন সভাপতি, বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা, তালসরা গ্রামের জন্মজাত কীর্তিমান সু-সন্তান, সপ্তগ্রামের গৌরবদীপ্ত পুণ্যপুরুষ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক সৌম্য সারথী উপাধি প্রাপ্ত, তালসরা আনন্দারাম বিহারের প্রয়াত অধ্যক্ষ কর্মবীর বুদ্ধদত্ত মহাস্থবিরের দ্বিতীয় প্রিয়শিষ্য, মহামান্য একাদশ সংঘরাজ পণ্ডিত শাসনশ্রী মহাস্থবিরের স্নেহধন্য, নীরব সাধক ভদন্ত শাসনমিত্র মহাস্থবিরের। ৬৯তম সুবর্ণ জন্ম জয়ন্তী আগামী ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ খৃষ্টাব্দ, ২৫৬২ বুদ্ধাব্দ, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তালসরা মুৎসুদ্দিপাড়া বিবেকারাম বিহারে ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত পুণ্যময় সন্ধিক্ষণে আপনাদের আর্থিক, কায়িক, মানসিক ও আন্তরিক সহযােগিতা এবং স্বশিষ্য-স্ববান্ধব উপস্থিতি সবিনয়ে প্রত্যাশা করছি।

                                                                                        বিনীত

ধর্মমিত্র মহাথেরাে                 প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরাে                অনােমদর্শী মহাথেরাে           বােধিরতন থেরাে                জিনরতন থেরাে

সভাপতি,                                    মহাসচিব                            যুগ্মসচিব                             প্রধান সমন্বয়কারী,                অর্থ সচিব

০১৮১৫-৭২৫৯২১                  ০১৮১৭-৭১৫৬০২                    ০১৮১৫-৩৭৫৯৬৯               ০১৮১৯-০২৫৪৬৪          ০১৭১৫-৪৬২৩৫৬

 

পরসহস্র জাতক

পরসহস্র জাতক

পুরাকালে বারাণসীরাজ ব্ৰহ্মদত্তের সময় বােধিসত্ত্ব উদীচ্য ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণপূর্বক তক্ষশিলা নগরে সর্বশাস্ত্রে সুপণ্ডিত হইয়াছিলেন। তিনি বিষয়বাসনা পরিহার করিয়া প্রব্রজ্যা গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং পঞ্চ অভিজ্ঞা ও অষ্ট সমাপত্তি লাভপূর্বক হিমালয়ে অবস্থিতি করিতেন। সেখানে পঞ্চশত তপস্বী তাহার শিষ্য হইয়াছিল। | একবার বর্ষাকালে তাহার প্রধান শিষ্য সার্ধদ্বিশত তপস্বিসহ লবণ ও অম্ন সংগ্ৰহাৰ্থ লােকালয়ে অবতরণ করিয়াছেন, এমন সময়ে বােধিসত্বের দেহত্যাগকাল সমাগত হইল। তখন উপস্থিত শিষ্যগণ, তিনি কি আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করিয়াছেন তাহা জানিবার অভিপ্রায়ে প্রশ্ন করিলেন, “আপনি কি গুণ লাভ করিয়াছেন?” বােধিসত্ত্ব বলিলেন, “নাস্তি কিঞ্চিৎ”  এবং ক্ষণকাল পরেই তমুত্যাগ করিয়া আভাস্বর ব্রহ্মলােকে * জন্মগ্রহণ করিলেন। তাঁহার উত্তর শুনিয়া তপস্বিগণ স্থির করিলেন, ‘আচাৰ্য্য কিঞ্চিত্র জ্ঞান লাভ করিতে পারেন নাই। অতএব তাহারা তাহার শ্মশান-সৎকার করিলেন না। | কিয়দিন পরে প্রধান শিষ্য আশ্রমে প্রত্যাগমন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আচাৰ্য্য কোথায় ?” তাহারা বলিলেন, “আচাৰ্য্য উপরত হইয়াছেন।” “তােমর আচাৰ্য্যকে অধিগমসম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে কি?” “জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম।” তিনি কি উত্তর দিয়াছিলেন ?” “তিনি বলিয়াছিলেন, ‘নাস্তি কিঞ্চিৎ। এইজন্যই আমরা তাহার শ্মশান-সৎকার করি নাই।” “তােমর। আচার্যের কথার অর্থ বুঝিতে পার নাই। নাস্তি কিঞ্চিৎ’ বলায় তাহার এই অভিপ্রায় ছিল যে, তিনি অকিঞ্চায়তন-সমাপত্তি। লাভ করিয়াছেন। প্রধান শিষ্য সতীর্থদিগকে এই কথা বুঝাইবার জন্য পুনঃ পুনঃ চেষ্টা করিলেন; কিন্তু তাহারা তাহা বিশ্বাস করিলেন না । তপস্বীদিগকে সংশয়মান দেখিয়া বােধিসত্ত্ব ভাবিলেন, ‘ইহারা কি মূখ ; আমার প্রধান শিষের কথাতেও শ্রদ্ধা স্থাপন করিতেছে না। আমাকেই দেখিতেছি, প্রকৃত ব্যাপার প্রকট করিতে হইল। অনন্তর তিনি ব্রহ্মলােক হইতে আগমন করিয়া মহানুভব-বলে আশ্রমপাদের উপরিভাগে আকাশে অধিষ্ঠান করিয়া প্রধান শিষ্যের প্রজ্ঞাবল প্রশংসা করিতে করিতে এই গাথা পাঠ করিলেন ;

মুর্থ শিষ্য আচায্যের ক্লেশমাত্র হয় সার,

শ্রুতিমাত্র অর্থগ্রহ না হয় কখন তার।

হউক সহস্রাধিক হেন শিষ্য সমাগম,

কাঁদুক শতেক বর্ষ সেই সব শিষ্যাধম ;

তার চেয়ে প্রজ্ঞাবান এক শিষ্য প্রিয়তর,

বুঝিতে শ্রবণমাত্ৰ হয় যদি শক্তিধর। এইরূপে মহাসত্ব মধ্যাকাশে থাকিয়া সত্য ব্যাখ্যা করিলেন এবং তাহাদিগকে ভৎসনা করিতে লাগিলেন। অনন্তর তিনি ব্রহ্মলােকে প্রতিগমন করিলেন এবং ঐ সকল তপস্বীও ব্ৰহ্মলােক-প্রাপ্তির উপযােগী উৎকর্ষ লাভ করিলেন।

সুত্র ঃ জাতকসমগ্র ।

error: Content is protected !!