প্রবারণা পূর্ণিমার তাৎপর্য

প্রবারণা পূর্ণিমার তাৎপর্য

প্রবারণা বৌদ্ধদের কাছে এক অবিস্মরণীয় দিন। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিন মাস অবধি সময়কে বৌদ্ধ পরিভাষায় বর্ষাবাস বলা হয়। এই সময়টাকে বর্ষা যাপনও বলা যায়। প্রবারণা বৌদ্ধদের কাছে এক অবিস্মরণীয় দিন। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিন মাস অবধি সময়কে বৌদ্ধ পরিভাষায় বর্ষাবাস বলা হয়। এই সময়টাকে বর্ষা যাপনও বলা যায়। কিন্তু বৌদ্ধদের কাছে বর্ষা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সুখ, দুঃখ, ভালো-মন্দে, দান, শীল (নীতি), ভাবনা তথা ত্রিপিটক সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে বর্ষা বৌদ্ধদের কাছে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। কর্মই জীবন। মানুষ সংসারে জন্ম নিলে আমরণ তার কর্ম ব্যস্ততা থাকে। প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে ব্যস্ত জীবন কাটায়। হতে পারে ভালো কাজ আর মন্দ কাজ। হতে পারে মূল্যবান কিংবা মূল্যহীন কাজ। মানুষ ঐ সময়ে একটা গতিশীল জীবন যাপন করে। কিন্তু বর্ষায় জীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। সার্বক্ষণিক ঘোরাফেরা কাজকর্ম করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বুদ্ধের সময়ে ভিক্ষু সংঘ দেব মানবের কল্যাণে ধর্ম প্রচারের জন্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তেন বিচরণ করতেন। তাঁদের এই অভিযান কোনো পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ছিল না। পরহিত বা কল্যাণ সাধনই ছিল মূল লক্ষ্য। বর্ষা ঋতুতে চতুর্দিকে বিচরণ করা দুঃসাধ্য ছিল। এই সময়ের মতো তখনও প্রকৃতির তাণ্ডব লীলা চলতো সময়ে সময়ে। এই সমস্ত কারণে ভিক্ষু সংঘকে কোনো এক জায়গায় স্থির থেকে বুদ্ধ বর্ষাঋতু পালনের জন্য বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে কিছু নিয়ম নীতিও বেঁধে দেন। তিন মাস ব্যাপী বর্ষাঋতু উদ্যাপনের বিধি বিধান এবং বিনয় সমৃদ্ধ এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে বর্ষাবাস বা বর্ষাব্রত।

প্রবারণা কি:
বুদ্ধের সময়ে শত শত এমনকি হাজার হাজার ভিক্ষুসংঘ একই স্থানে একসাথে অবস্থান করে ধর্ম বিনয় শিক্ষা করতেন। যেখানে দু’জন একসাথে কিছুক্ষণ বা কিছু দিন অবস্থান করলে বিভিন্ন ধরনের মতবিরোধ এবং মনোমালিন্য হয় সেখানে একত্রে এত সংখ্যক ভিক্ষুসংঘ অবস্থান করলে মনের জান্তে বা অজান্তে অনেক ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে। এবং হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছে সেটা কখনো কাম্য নয়। একে অপরের প্রতি সদা মৈত্রীভাব পোষণ করাই তাঁদের নিত্যদিনের ব্রত। বলা যায় প্রবারণা মানে ভুল ত্রুটির নির্দেশ। আশার তৃপ্তি, অভিলাষ পূরণ ও ধ্যান শিক্ষা সমাপ্তি। সকল প্রকার ভেদাভেদ গ্লানি ভুলে গিয়ে কলুষমুক্ত হওয়ার জন্য ভিক্ষুসংঘ পবিত্র সীমা ঘরে সম্মিলিত হয়ে একে অপরের নিকট দোষ স্বীকার করেন। নিজের দোষ স্বীকারের মধ্যে মহত্ত্বতা আছে তা বৌদ্ধ ভিক্ষুরা দেখাতে সমর্থ হন। মানুষ মাত্রেই চেতন কিংবা অবচেতন মনে ভুল করতে পারে। সেই ভুলকে দৃঢ়তার সাথে স্বীকার করে সংশোধনের প্রচেষ্টায় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াইতো জীবনের স্বার্থকতা। কিন্তু ভুল স্বীকার করার মতো সৎ সাহস সবার থাকে না।

প্রবারণার বিধান প্রজ্ঞপ্তি:
মহাকারুণিক বুদ্ধ তখন শ্রাবস্তীর জেতবন বিহারে অবস্থান করছিলেন। কোশলরাজ্য হতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিক্ষুসংঘ বর্ষাবাস শেষে বুদ্ধ দর্শনে আসলেন। বুদ্ধের সাথে তাঁদের কুশলাদি বিনিময় হলো। বুদ্ধ তাঁদের কাছ থেকে কিভাবে তাঁরা বর্ষাবাস উদ্যাপন করেছেন তা জানতে চাইলেন। তাঁরা উত্তর দিলেন পরস্পরের সাথে বাদ-বিসংবাদ এড়াবার জন্য তাঁরা প্রত্যেকে মৌনভাবে বর্ষাবাস অতিবাহিত করেছেন। বর্ষাব্রতের সমাপ্তিতে তাঁরা কেউ কারো সাথে কোনো ধরনের বাক্যালাপ না করে মৌনভাব বজায় রেখে বুদ্ধ দর্শনে এসেছেন। তাঁদের কথা শুনে শাস্তা বুদ্ধ মৃদু হাসলেন। বুদ্ধের মৃদু হাসিতে যেন মুক্তা ঝরে পড়ছে। এতটা সময় ধরে একসাথে থাকার পরেও কোন ভাব বিনিময় না করে থাকাতে পারাটাও কম কিসের ! কতটা সংযমী হলে তা সম্ভব হয় তা বুঝতে না পারার কোনো কারণ নেই। করুণাময় বুদ্ধ তাঁদের উপদেশ দিলেন, “ভিক্ষুসংঘ একসাথে অবস্থান করলে মৌনব্রত পালন বিধেয় নয়। তোমাদের এরূপ আচরণ প্রশংসাযোগ্য নয়। বর্ষাবাস শেষে তোমরা প্রবারণা উদযাপন করবে। একে অপরের প্রতি ভুল স্বীকার করে অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা করবে। একস্থানে থাকাকালীন একজন অপর জনকে অনুশাসন করলে উভয়েরই কল্যাণ হয়। শাসন পরিশুদ্ধ হয়। এতে সমগ্র ভিক্ষু সংঘের শ্রীবৃদ্ধি সাধিত হয়।” অতঃপর তথাগত বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘকে আহবান করে বাধ্যতা মূলকভাবে প্রবারণা উদ্যাপনের বিধান প্রবর্তন করেন। বিনয় বিধান অনুসারে প্রবারণা ২ প্রকার। ১) পূর্বকার্তিক প্রবারণা ২) পশ্চিম কার্তিক প্রবারণা।

পূর্ব কার্তিক প্রবারণা: আষাঢ়ী পূর্ণিমায় বর্ষাব্রত অধিষ্ঠান করে আশ্বিনী পুর্ণিমায় যে বর্ষাবাস সমাপ্ত হয় তাকে পূর্বকার্তিকী প্রবারণা বলে।

পশ্চিম কার্তিক প্রবারণা: আষাঢ়ী পূর্ণিমার পরবর্তী এক মাসের মধ্যে বর্ষাবাস আরম্ভ করেও মাস পর যে প্রবারণা অনুষ্ঠিত হয় তাকে পশ্চিম কার্তিকী প্রবারণা বলে। এই দ্বিবিধ বর্ষাবাসকে যথাক্রমে ১ম বর্ষাবাস ও ২য় বর্ষাবাস বলে।

ভিক্ষু সংঘের পাশাপাশি বৌদ্ধ উপাসক উপাসিকাদের জন্যও প্রবারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবারণা উদ্যাপনের পর পর তারা মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসবে মেতে উঠেন। এছাড়াও আরো কিছু কালজয়ী ঘটনা প্রবারণাকে সমৃদ্ধ করেছে।

তাবতিংস স্বর্গ থেকে  মর্ত্যলোকে বুদ্ধ:
বুদ্ধের মতে প্রত্যেক বদ্ধুমাতা প্রথম সন্তান জন্মের এক সপ্তাহ পরে মৃত্যবরণ করেন। এবং মৃত্যু পরবর্তী তাবতিংস স্বর্গে অবস্থান করেন। একইভাবে গৌতম বুদ্ধের মাতা মহামায়া ও সিদ্ধার্থের (পরবর্তীতে গৌতম বুদ্ধ) জন্মের এক সপ্তাহ পরে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাবতিংস স্বর্গে উৎপন্ন হন। কারণ বুদ্ধমাতার গর্ভে দ্বিতীয় সন্তান আসতে পারেন না। এছাড়াও জগতে এক সাথে দু’জন সম্যক সম্বুদ্ধ উৎপন্ন হন না। একজন মাত্র সম্যক সম্বুদ্ধ উৎপন্ন হন। ভদ্রকল্পের পঞ্চবুদ্ধের মধ্যে বর্তমান চলছে চতুর্থতম বুদ্ধ গৌতম বুদ্ধের শাসন। গৌতম বুদ্ধের শাসন বিলুপ্তির পরে ভদ্রকল্পের শেষ বুদ্ধ আর্যমৈত্রীয় বুদ্ধ পৃথিবীতে আবির্ভূত হবেন। এই সম্পর্কে গৌতম সম্যক সম্বুদ্ধ সবিস্থারে বর্ণনা করেছেন। তিনি বিমাতা গৌতমীর কাছে লালিত পালিত হলেন। এইজন্য তাঁকে গৌতম বুদ্ধ বলা হয়। ক্রমান্বয়ে তিনি ৩৫ বছর বয়সে সম্যক সম্বুদ্ধত্ব ফল লাভ করলেন। তিনি দিব্যজ্ঞানে মাতৃদেবীর অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত হলেন। মাতাকে দুঃখমুক্তি দানের মানসে বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে গমন করলেন শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে। সেখানে তিনমাস অবধি অভিধর্ম পিটক (চিত্ত চৈতসিক সম্পর্কে বিশদ ব্যাখা) দেশনা করে মাতাকে মুক্তিমার্গ দান করেছিলেন। সাথে অসংখ্য দেব ব্রহ্মা ও ধর্মচক্ষু লাভ করেছিলেন। অতঃপর বর্ষাবাসের পরে তথাগত বুদ্ধ স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোকে অবতরণ করেছিলেন। সেদিন ছিল শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। আর সেটি ছিল বুদ্ধের জীবনের সপ্তম বর্ষাবাস। মর্ত্যলোকে অবতরণের সময় ও এক অবিনাশী স্মৃতি সমৃদ্ধ ঘটনা ঘটে যায়। বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে বর্ষাবাস যাপনকালীন মাতৃদেবীকে উদ্দেশ্য করে ধর্মদেশনা করলেও পর সেই দেশনাবলি ছিল দেব উপযোগী। আগেই বলা গেছে যে, সেই দেশনায় অসংখ্য দেব ব্রহ্মা ধর্মজ্ঞান লাভ করেছিলেন। তখন দেব পরিষদ চিন্তা করলেন তারা কিভাবে বুদ্ধের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারেন। বিশ্বকর্মা দেবপুত্র বুদ্ধের সম্মানে দৈব শক্তিতে তাবতিংস স্বর্গ থেকে ভারতের সাংকাশ্য নগর পর্যন্ত তিনটি স্বর্গীয় সিঁড়ি রচনা করলেন। মধ্যখানের সিঁড়ি ছিল মণিমুক্তা খচিত, বামপাশের সিঁড়ি ছিল রোপ্য খচিত এবং ডানপাশের সিঁড়ি ছিল স্বর্ণ খচিত। বুদ্ধ মাঝখানের সিড়ি দিয়ে দেবলোক হতে মর্ত্যলোকে অবতরণ করেছিলেন। ডানপাশের সিঁড়ি বেয়ে মহাব্রহ্মাসহ ব্রহ্মাগণ শ্বেতচ্ছত্র ধারণ করেছিলেন। বামপাশের সিঁড়ি বেয়ে দেবগন বুদ্ধের প্রতি দিব্যপুষ্প বর্ষণ করতে করতে সাধু সাধু ধ্বনিতে আকাশ বাতাশ প্রকম্পিত করে বুদ্ধের গুণকীর্তন করেছিলেন। সেদিন স্বর্গ-মর্ত্য একাকার হয়ে গিয়েছিল। সেদিন ছিল এমন এক বিরল এবং দুর্লভ সময় সন্ধিক্ষণ যেই ক্ষণে দেবতা এবং মানুষ সরাসরি পরস্পরকে দর্শন করার সুযোগ লাভ করেছিলেন। ভারতের সেই সাংকাশ্য নগরী এখনো পর্যন্ত বৌদ্ধদের জন্য পবিত্র তীর্থধাম হয়ে আছে। এবং ত্রিপিটকে উল্লেখ আছে যে, প্রত্যেক সম্যক সম্বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গ থেকে উক্ত সাংকাশ্য নগরে অবতরণ করবেন। এটাকে অপরিবর্তনীয় স্থানও বলা হয়।

বৈশালী থেকে রাজগৃহের পথে বুদ্ধ:
বুদ্ধের সময় বৈশালী ছিল এক সমৃদ্ধ নগরী। এক প্রতাপশালী রাজবংশ বৈশালীকে শাসন করতেন। কথিত আছে যে, ক্ষত্রিয় বংশের সাত হাজার সাতশত সাত জন রাজা বৈশালীকে ক্রমান্বয়ে শাসন করেছিলেন। ধন ধান্যে পরিপূর্ণ বৈশালীতে হিংসাত্মক তাণ্ডব, বাদ-বিসংবাদ বলতে কিছুই ছিল না। রাজা, প্রজা, রাজ্য রাজত্ব যেন একই সুতোয় গাঁথা। হঠাৎ উক্ত রাজ্যে ত্রিবিদ উপদ্রব দেখা দিল। দুর্ভিক্ষ, মহামারি ও অমনুষ্যের উপদ্রবে রাজ্যের মানুষ দুর্বিসহ জীবনের ভার টানতে শুরু করলেন। রাজ্যের অশান্তি এবং প্রজাদের ভোগান্তি রাজাকে ভীষণভাবে ব্যথিত করলো। কিন্তু এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী। তরবারি দিয়ে কিংবা চতুরঙ্গিনী সেনাদল দ্বারা তো এর সমাধান হবে না। প্রজাবৎসল রাজার মনের প্রতিটি কোণে কষ্ট জমাট বাঁধতে শুরু করলো। রাজা এবং অমাত্যবর্গ পরিত্রাতা বুদ্ধের শরণে যাওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন। বুদ্ধ তখন রাজা বিম্বিসার কর্তৃক দানকৃত পূর্বারাম বিহারে অবস্থান করছিলেন। বৈশালীবাসীর পক্ষে মহালি লিচ্ছবির রাজা পুরোহিত পুত্রকে নৃপতি বিম্বিরারের কাছে পাঠানো হলো। তারা প্রেরিত সংবাদটি রাজকীয় শিষ্ঠাচার বজায় রেখে রাজার সামনে নিবেদন করলেন। বৈশালীর কল্যাণে রাজা প্রমূখ প্রেরিত প্রতিনিধিগন বুদ্ধকে সবিনয়ে ফাং (নিমন্ত্রণ) করলেন। বুদ্ধ পাঁচশত ষড়াবিজ্ঞ অর্হৎ সহ বৈশালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। বুদ্ধ অন্তপ্রাণ রাজা বিম্বিসার বুদ্ধের যাতে কষ্ট না হয়  গমনা গমনের সকল রাস্তা সুসজ্জিত করে দিলেন।

রাজগৃহ এবং গঙ্গার মধ্যখানে পাঁচযোজন ভূমি স্থান করে প্রতিযোজন অন্তর অন্তর জানুপ্রমাণ গভীর পঞ্চবর্ণের পুষ্পরাজি ছিটিয়ে দিলেন। ধ্বজা পতাকা ও কদলী বৃক্ষাদি প্রোথিত করলেন। ছোট এবং বড় দুইটি শ্বেতচ্ছত্র ভগবানের মস্তকোপরি ধারণ করে সপরিবারে পুষ্পগন্ধাদির দ্বারা পূজা করতে করতে বুদ্ধকে এক একটি বিহারে বিশ্রাম করিয়ে মহাদানাদি কর্ম সম্পাদন করে পাঁচ দিন পর গঙ্গাতীরে উপনীত হয়ে সেখানে নৌকা সজ্জিত করে বৈশালী বাসীদের সংবাদ পাঠালেন। তাঁরাও দ্বিগুন পূজা করবে বলে বৈশালী এবং গঙ্গার মাঝখানে ত্রিযোজন ভূমি সমান করে  বুদ্ধের উপর চারটি শ্বেতচ্ছত্র এবং অন্যান্য ভিক্ষুদের প্রত্যেকের মাথার উপর দুইট করে শ্বেতচ্ছত্র ধারণ করে এইগুলো দ্বারা বুদ্ধকে পূজা করার মানসে গঙ্গাঁতীরে উপস্থিত হলেন। রাজা বিম্বিসার দুইটি নৌকা একত্রে বেঁধে তার উপরে মণ্ডপ সজ্জিত করে সর্বরত্নময় বুদ্ধাসন প্রস্তুত করলেন। বুদ্ধ উক্ত আসনে উপবেশন করলেন। অপরাপর ভিক্ষুগণ বুদ্ধকে ঘিরে উপবেশন করলেন।

মহারাজা বিম্বিসার গলঃপ্রমাণ জলে নেমে করজোড়ে বুদ্ধকে বিদায় জানালেন। বুদ্ধ যে কয়দিন রাজগৃহের বাইরে ছিলেন সে কয়দিন বুদ্ধ ফিরে না আসা পর্যন্ত রাজা গঙ্গাঁতীরে অবস্থান করেছিলেন। বুদ্ধ সশিষ্যে বৈশালীতে পদধূলি দিলেন। বুদ্ধ বৈশালীতে পা রাখার সাথে সাথে প্রবল বর্ষণ শুরু হলো। রাজা, প্রজা, এবং অমাত্যবর্গ বুদ্ধকে মহাসমারোহে পূজা করলেন। বুদ্ধ প্রধান সেবক ধর্মভান্ডাগারিক আনন্দ স্থবিরকে নগরের চতুর্দিকে রতনসূত্র পাঠ করতে বললেন। আনন্দ স্থবির নগরীতে পদচারণ পূর্বক রতন সূত্র পাঠের সাথে সাথে জল ছিটালে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। রাজ্যের সর্বপ্রকার উপদ্রব মুহূর্তের মধ্যে বিদূরীত হলো এবং বৈশালীবাসীর অন্তহীন দুর্দশা নিবারণ হলো। সমগ্র বৈশালীবাসী আনন্দে উদ্বেলিত হলো। যেন তাদের পুনর্জন্ম হলো। বুদ্ধ বৈশালী থেকে বিদায় নিলেন। বৈশালীবাসী যথাযোগ্য পূজার মাধ্যমে বুদ্ধকে বিদায় জানালেন। এদিকে নাগলোকের মহাঋদ্ধিমান (অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন) নাগেরা চিন্তা করলেন বুদ্ধপূজার এই দুর্লভ সুযোগ তারা হাত ছাড়া করবে না। সাথে সাথে নাগলোকের পাঁচশত নাগরাজ বিমানের (জাহাজের) মত পাঁচশত ঋদ্ধিময় ফণা বুদ্ধপ্রমুখ পাঁচশত ভিক্ষুসংঘের মাথার উপর বিস্তার করলো। এইভাবে নাগদের পূজা করতে দেখে দেবলোকের দেবতারা,  ব্রহ্মলোকের ব্রহ্মরা বুদ্ধকে পূজা করতে এসেছিলেন।সেই দিন মানুষ, দেবতা, ব্রহ্মা, নাগ সবাই শ্বেতছত্র ধারণ করে ধর্মীয় ধবজা উড্ডয়ন করে বুদ্ধকে পূজা করেছিলেন। বুদ্ধ সেই পূজা লাভ করে পুনরায় রাজগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। সেই শুভ সন্ধিক্ষণ ছিল শুভ প্রবারণা দিবস। মূলত এই হৃদয়ছোঁয়া চিরভাস্বর স্মৃতিসম্ভারকে অম্লান করে রাখার জন্য বাংলাদেশের বৌদ্ধরা বিশেষ করে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রবারণা দিবসে নিকটবর্তী র্বাঁকখালী নদীতে দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত কাগজী জাহাজ ভাসিয়ে প্রবারণা উদযাপন করেন। তবে সেইদিন নাগ, দেব, ব্রহ্মা যেভাবে পেরেছিলেন বর্তমান সময়ের মানুষ তা অবিকল পারার কথা নয়। ক্ষেত্র বিশেষে এর বিকৃতি অবস্থাও হয়েছে। তবে এইক্ষেত্রে একটি কথা প্রণিধানযোগ্য যে, বৌদ্ধ ধর্মে বিনাকারণে কিংবা মনের হরষে আদর্শ উদ্দেশ্য বিনা কোনো উৎসব পালনের বালাই নেই।

কর্মসূচী :
এদিন সকালে বৌদ্ধ নরনারী শুচি শুভ্র হবে, পরিস্কার পোশাকে বৌদ্ধ বিহার সমবেত হয়, বুদ্ধকে পূজা দেয়, ভিক্ষুদের আহার্য দেয়, দান দেয়, অষ্টশীল ও পঞ্চশীল গ্রহণ করে, দুপুরে বিহারে বিহারে ভাবনা হয়, বিকেলে আয়োজিত হয় ধর্মসভা। এতে পন্ডিতজন অংশ নেয়, বৌদ্ধধর্মের মূল বাণীগুলি আলোচিত হয়, রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এদিন ঘরে ঘরে ভাল রান্না হয়, অতিথিদের পায়েস পরিবেশন করা হয়। দিনের সর্বশ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হলো- সন্ধ্যায় ফানুস উড়ানো উৎসব। দেশের বিহারে বিহারে অনেক ফানুস উড়ানো হয়। ফানুস উড়ানোর উদ্দেশ্য হলো আকাশে ভাসমান গৌতমের পবিত্র কেশধাতুকে প্রদীপ দিয়ে বন্দনা করা। এসময় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নরনারী সমবেত হয় এবং ফানুস উড়ানো উপভোগ করেন। এই তিথিতে বিহার গৃহশীর্ষে আকাশ প্রদীপ জ্বালানো হয়।লক্ষণীয় যে, এদিন সন্ধ্যায় বৌদ্ধেরা পঞ্চশীল গ্রহণ করে এবং বুদ্ধমূর্তির সামনে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালায়, নবীনেরা প্রবীণদের প্রনাম করে, প্রবীণেরা ছোটদের আশীর্বাদ করে। সমবয়সীরা কোলাকুলি করে, প্রবাসীরা ঘরে ফিরে, বধুরা নাইয়র যায়।এই উৎসব মিলনের উৎসব, দূরকে নিকট এবং পরকে আপন করার উৎসব।

“জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক”

তথ্যসুত্র ঃ www.banglanews24.com & প্রজ্ঞামিত্র বৌদ্ধ ভিক্ষু-শ্রামণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ।

পবিত্র শুভ মধু পূর্ণিমার তাৎপর্য

পবিত্র শুভ মধু পূর্ণিমার তাৎপর্য

পবিত্র শুভ মধু পূর্ণিমার তাৎপর্য
এস.জ্ঞানমিত্র ভিক্ষু

মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে এক বিশেষ তাৎপর্যময় ঘটনা। এটি ভাদ্র মাসে উদ্যাপিত হয় বলে এটিকে ভাদ্র পূর্ণিমাও বলা হয়। এ পূর্ণিমার বিশেষ দিক হল বানর এবং হস্তীরাজ কর্তৃক বুদ্ধকে সেবা ও পূজা করার ঘটনা। কেননা, ত্রিপিটকে পশু কর্তৃক বুদ্ধকে পূজা ও সেবা দান করার দৃষ্টান্ত খুব বেশী নয়। বানর এবং হস্তীরাজের এরকম বিরল দৃষ্টান্ত আমরা যাঁরা সুদুর্লভ মানব জীবন লাভ করেছি আমাদের অনুকরণীয় তথা শিক্ষণীয় উদাহরণ বৈ কি!

ভগবান তথাগত বুদ্ধ গৌতমের সময়ে বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশস্থ এলাহাবাদ হতে প্রায় ১২ মাইল উত্তর পশ্চিমে কৌশাম্বী নামে এক সুসমৃদ্ধশালী নগরে তথাগত খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮০ অব্দে তাঁর জীবনের নবম বর্ষাবাস অতিবাহিত করেন। তখন সেখানে একটি বিহারে দুইজন ভিক্ষুর মধ্যে শৌচাগারে জল রাখা সম্পর্কিত বিনয় বিধান নিয়ে কলহ সৃষ্টি হয়। মহামুনি বুদ্ধ ভিক্ষুদের কলহ নিবারণার্থে ‘লটুকিকা’ জাতক, ‘বত্তক’ জাতক দেশনা করলেন। তাতেও ভিক্ষুদের কলহ নিবারিত না হলে রাজা দীঘীতির কাহিনী অর্থাৎ রাজা দীঘীতির উপদেশে কিভাবে রাজপুত্র দীর্ঘায়ু কুমার ও রাজা-রাজার স্ত্রীকে হত্যাকারী অপর রাজার মধ্যে মিত্রতা স্থাপন হয়েছিল সে বিষয় দেশনা করলেন। দেশনার পর মহামুনি সম্বুদ্ধ কলহরত ভিক্ষুদের উপলক্ষ করে বললেন, “হে ভিক্ষুগণ, এরূপ অস্ত্রশস্ত্র ধারী রাজাদের যদি প্রচন্ড শত্র“তা হতে মিলন হতে পারে তবে এমনতরো সু-আখ্যাত ধর্ম বিনয়ে প্রব্রজ্যিত হয়েও তোমরা কেন বিবাদ বিসম্বাদে লিপ্ত। তোমরা কলহ করোনা।” বুদ্ধের কথায় কলহপ্রিয় এক ভিক্ষু যিনি উলি­খিত জাতকদ্বয় বর্ণনাকালেও বুদ্ধকে এ বিষয়ে মাথা না ঘামাতে বলেছিলেন তিনি এবারও তদ্রুপ বললে “মোঘপুরুষগণ অত্যন্ত কলহরত হয়ে গেছে, এদের চৈতন্যোদয় সহজ নয়”, এ ভেবে বুদ্ধ সেখান হতে চলে গেলেন। তদনন্তর তথাগত শাক্যসিংহ কৌশাম্বী থেকে বালক লোণকার গ্রাম এবং সেখান হতে প্রাচীন বংশদাব নামক স্থানে স্থবির অনুরুদ্ধ, স্থবির নন্দিয় এবং স্থবির কিম্বিলের সাথে সাক্ষাৎপূর্বক পারিল্যেয়ক নামক বনে প্রবেশ করলেন।

বর্ষাবাসের সময় ভগবান পারল্যেয় নামক সেই বনে বর্ষাবাস অধিষ্ঠান করলেন। যেটি ছিল বুদ্ধ জীবনের ১০ম বর্ষাবাস। সে সময় বুদ্ধ চিন্তা করলেন, “আমি পূর্বে সেই ভন্ডনকারী, কলহ লিপ্ত, বিবাদ-বিসম্বাদ প্রযুক্ত, বহুবৃথাবাক্য ব্যয়কারী ও নিত্য সংঘের নিকট অভিযোক্তা কৌশাম্বীবাসী ভিক্ষুগণ কর্তৃক উপদ্রুত হয়ে অনুকুলভাবে অবস্থান করতে পারি নি। এখন আমি তাদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে স্বচ্ছন্দে বিহার করতে সমর্থ হচ্ছি।” সে সময় একটি বয়োবৃদ্ধ হস্তীরাজও অপরাপর হস্তী, হস্তীনী, তরুণ হস্তী ও হস্তীশাবক কর্তৃক নিগৃহীত হয়ে, অপুুষ্টিকর ও অখাদ্য খেয়ে অবস্থান করছিল। অপরাপর হস্তীরা তার গাঁ ঘেষে গমন করত। হস্তীরাজ কর্তৃক যোগাড়কৃত শাখা,পত্র-পল­ব খেয়ে ফেলত, পানীয় জল ঘোলা করে দিত। হস্তীরাজও এরকম হস্তীদের উপদ্রব হতে বাঁচার নিমিত্তে একাকী চলে আসল। অনন্তর হস্তীরাজও চিন্তা করল, “পূর্বে আমি হস্তীদের দ্বারা বিভিন্নভাবে নিপীড়িত নিগৃহীত হতাম, আর এখন তাদের ত্যাগ করে এসে মনানন্দে নির্বিঘ্নে অবস্থান করতে পারছি।”

ভগবান যে স্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন সে স্থানটি কৌশাম্বী হতে সাত যোজন(এক যোজন = সাত মাইল দুরত্ব) দূরে এবং সেই বনটি ছিল তিন যোজন প্রমাণ। এই বনের রক্ষিতবনাঞ্চলে ভদ্রশাল বৃক্ষমূলে ভগবান অবস্থান করছিলেন। পারল্যেয় বনে অবস্থানের দরুণ বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে পারল্যেয় হস্তী নামে সমধিক পরিচিত সেই পূর্বোক্ত হস্তীরাজও বনমধ্যে বিচরণ সময় একাকী বুদ্ধকে দেখলেন। বুদ্ধকে দেখেই হস্তীরাজ স্বীয় নির্জনতার উপরোক্ত প্রীতিবাক্য বলেছিলেন। স্বয়ম্ভু শাক্যমুনি নিজের চিত্ত বিতর্ক এবং স্বচিত্তে হস্তীর চিত্ত বিতর্ক অবগত হয়ে উদানগাথা অর্থাৎ আনন্দ গাথা ভাষণ করলেন এভাবে-

“এতং নাগস্স নাগেন ঈসাদন্তস্স হত্থিনো
সমেতি চিত্তং চিত্তেন য়দেকো রমতী বনেতি।”
অনুবাদ:-
ঈষাদন্ত দীর্ঘদন্ত হস্তীনাগ সনে
( ঈষাদন্ত অর্থাৎ রথদন্ডের মত দীর্ঘ দন্ড বিশিষ্ট)
সম্বুদ্ধে মিলায় চিত্ত আপন জীবনে
যেহেতু উভয়ে রমে একা এই বনে।

হস্তী বুদ্ধের নিকট গিয়ে বুদ্ধকে বন্দনা করল। সেখানে অন্য কিছু দেখতে না পেয়ে ভদ্রশাল বৃক্ষের পাদদেশ পায়ের দ্বারা আঘাত করে সমান করে দিল। শুণ্ডের দ্বারা শাখা নিয়ে বৃক্ষতল পরিষ্কার করে দিল। এতদৃশ্য দর্শনে বুদ্ধ হস্তীকে বললেন, “হস্তীরাজ, তুমি একাকী অবস্থান করছ, আমিও একাকী অবস্থান করছি।” সে সময় হতে হস্তী ভগবানকে বিবিধ ভাবে সেবা পরিচর্য্যা করত। বুদ্ধ ভিক্ষান্ন সংগ্রহে যাবার সময় পাত্র নিয়ে আগু বাড়িয়ে দিত, আগমন কালেও আগু বাড়িয়ে নিয়ে আসত। বুদ্ধের মুখ ধোবার ও পান করার জল এনে দিত, বন হতে বিবিধ ফলমূল সংগ্রহ করে ভগবানকে দান দিত সশ্রদ্ধ চিত্তে।

এভাবে বুদ্ধ এবং হস্তীরাজ যখন অবস্থান করছিল সে সময় এক বানর হস্তী কর্তৃক বুদ্ধ পূজা দর্শন করল। বানর চিন্তা করল, “হস্তীও পশু আমিও পশু, হস্তী যদি বুদ্ধের সেবা করতে পারে, দান করতে পারে তবে আমি কেন পারব না? হস্তীর দান যেহেতু বুদ্ধ গ্রহণ করেন, অনুমোদন করেন, ভোজন করেন। আমার দানও নিশ্চয় মহাপুরুষ বুদ্ধ গ্রহণ করবেন, অনুমোদন করবেন, ভোজন করবেন।” তৎপর বানর বুদ্ধকে কি দান করবে তা ভেবে বনে বিচরণ পূর্বক কোন একদিন কোন এক বৃক্ষ দন্ডে মধু মক্ষিকা বিহীন এক মৌচাক দেখতে পেল। বানর অত্যন্ত আহ্লাদিত চিত্তে সেই দন্ডটি ভেংগে দন্ডসমেত মৌচাকটি তথাগতের নিকট নিয়ে আসল এবং একটি কদলীপত্র ছিঁড়ে মৌচাকটি দন্ডসমেত তথাগতকে প্রদান করলে তথাগত তা গ্রহণ করলেন। বুদ্ধ তা পরিভোগ করেন কিনা দেখার নিমিত্তে বানর সে স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকল। বানর দেখল বুদ্ধ তা পরিভোগ করছেন না, শুধু হাতে নিয়েই বসে আছেন। এর কারণ কি তা জানার জন্য বানর মৌচাক দন্ডের প্রান্তভাগ নিয়ে মৌচাকটি উল্টালে দেখা গেল সেখানে কিছু মাছির ডিম। বানর শশব্যস্ত হয়ে ডিম গুলি বিদূরণ করে আবার বুদ্ধকে দিলে বুদ্ধ তা হতে মধু পান করলেন। মধুপান করতে দেখে বানর খুশিতে, আনন্দে আতœহারা হয়ে বৃক্ষ শাখা হতে বৃক্ষশাখায় লাফাতে লাগল। হঠাৎ অসাবধানতাবশতঃ বৃক্ষের শাখা ভেঙ্গে বানর মাটিতে পড়ে গাছের গোড়ায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করল। বুদ্ধকে মধুদান এবং বুদ্ধের প্রতি প্রসন্নচিত্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার পর বানর তাবতিংস স্বর্গে ত্রিশ যোজন বি¯তৃত কনক বিমান ও সহস্র অপ্সরা লাভ করল।

এদিকে ভিক্ষুরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে বর্ষাবাস শেষে তাঁরা বুদ্ধ সেবক ধর্মভান্ডাগারিক আনন্দকে নিয়ে বুদ্ধকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। বুদ্ধ চলে যাবার পর হস্তীরাজও করুণাসিন্ধু বুদ্ধের বিরহ ব্যাথা সইতে না পেরে হৃৎপিন্ড বিদীর্ণ হয়ে মারা গিয়েছিল। কিন্তু শাস্তার প্রতি চিত্ত প্রসন্নতার দরুণ পারল্যেয় হস্তীও তাবতিংস স্বর্গে ত্রিশ যোজন বি¯তৃত সহস্র দেবকন্যার মধ্যে উৎপন্ন হয়েছিল। তার নাম হয়েছিল পারলেয়্য দেবপুত্র। বুদ্ধ পরশে এসে বুদ্ধ পূজা করে তির্যক যোনিজাত হস্তীরাজ ও বানর লাভ করেছিল উন্নত গতি। অহো! বুদ্ধ পূজার কি অপূর্ব ফল। কি অত্যাশ্চর্য মহিমা। তদ্বেতু সকলের উচিত শ্রদ্ধা চিত্তে বুদ্ধ তথা ত্রিরতেœর পূজা করা, অনুশীলন করা তথাগতের বিমুক্তি প্রদায়ী মহান সদ্ধর্মের। যাতে প্রাণে আসে শান্তি, নির্বাপিত হয় সমুদয় দুঃখ সন্তাপ, বন্ধ হয়ে যায় বারংবার আসা যাওয়ার দুঃখময় খেলা।

বৌদ্ধরা হস্তীর সেবা ও বানরের এই মধুদানকে কেন্দ্র করে ভাদ্র পূর্ণিমায় মধু পূর্ণিমা উদ্যাপন করে। এ দিনে বৌদ্ধগণ সকালে বিহারে গিয়ে বুদ্ধ পূজা, প্রদীপ পূজা, অষ্টশীল গ্রহণ, সংঘদান, সংঘসেবা ইত্যাদি বিবিধ পুণ্যকর্ম সম্পাদন করে। মধু পূর্ণিমার দিন বিকালে সকলে সমবেত হয়ে ছন্দবদ্ধ গাথায় বুদ্ধ প্রণতি জানায়, তৎপর সকলে শ্রদ্ধা ভরে বিভিন্ন ঔষধি বস্তু, যেমন পরীপাতা, বাসক পাতা, মধু, হরীতকী, বহেরা, আমলকী, বিবিধ উপাদেয় যুক্ত খাদ্য, আধুনিক কালের বিবিধ ঔষধ, বিভিন্ন দানীয় সামগ্রী ইত্যাদি দিয়ে বুদ্ধপূজা দেন এবং মাননীয় ভিক্ষুগণকে দান করেন। অষ্টশীলাদি গ্রহণ ও যথাসাধ্য প্রতিপালন করেন, ভৈষজ্য সংঘদানসমেত বিভিন্ন দানাদি পুণ্যকর্ম সম্পাদন করেন, যেগুলো অতীব কুশলময় কর্ম। মধু পূর্ণিমার পবিত্র প্রেক্ষাপটের মত সবার জীবন দান-শীল-ভাবনার অনূশীলনে পবিত্রতায় ভরে উঠুক, সবার মাঝে উৎপন্ন হোক সদ্ধর্মের বাতাবরণ, সকলেই হোক নির্বাণ রুপ পরম বিমুক্তির পথিক এই শুভেচ্ছায়,
মানবতা উথলে উঠুক সকল মানব অন্তরে
সব অকুশল দূর হয়ে যাক্ মৈত্রী-প্রেমের মন্তরে।

তথ্যঋণ:
মহাবর্গ- পণ্ডিত প্রজ্ঞানন্দ স্থবির
পালি-বাংলা অভিধান- মহাপণ্ডিত শান্তরক্ষিত মহাস্থবির
মহাপরিনিব্বান সুত্তং- রাজগুরু ধর্মরত্ন মহাস্থবির

Bhasu Vihara

Bhasu Vihara

Bhasu Vihara

written by – Labanaya Barua

Bhasu Vihara is known locally as Narapatir Dhap. It’s an important part of the Buddhist heritage of Bangladesh and there are remains here from several significant monastery buildings.  is a complex of two rectangular monasteries and a semi-cruciform shrine of the Post-Gupta period. It is located at about 6 km west of Mahasthangarh on the northern part of village Bihar, under Bihar union of Shibganj upazila in Bogra district, about 500m west of the Nagar river.

During Cunningham’s tour, he identified this site six kilometers north-west of Mahasthangarh. Excavations have exposed two large Buddhist monasteries and a medium-sized Buddhist shrine. In 1970-80s further excavations revealed a small monastery consisting of 37 small rooms. Three of the five mounds of the site have been fully excavated. They have revealed two monasteries and a shrine from either the pre-Pala period or the post-Gupta period. The large monastery has an open space in the centre and rooms for the monks surrounding it. The smaller monastery has a similar layout, with a veranda at the front.

Reference

  • Bogra: Vasu Bihar. (2019). Retrieved from https://www.alonelytraveler.com/2010/06/bogra-vasu-bihar.html
  • (2019). Retrieved from http://en.banglapedia.org/index.php?title=Main_Page
  • World Heritage Journeys Buddha. (2019). Retrieved from https://visitworldheritage.com/en/buddha
  • Buddhist archaeological sites in Bangladesh | daily sun. (2019). Retrieved from https://www.daily-sun.com/printversion/details/307344/2018/05/08/Buddhist-archaeological-sites-in-Bangladesh

 

 Mahasthangarh ( মহাস্থানগড় )

 Mahasthangarh ( মহাস্থানগড় )

Mahasthangarh ( মহাস্থানগড় )

written by – Labanaya Barua

Mahasthangarh (মহাস্থানগড়) is one of the oldest and the most important buddhist archaeological attractions in Bangladesh. It is called the “oldest known city” of Bangladesh. Each of its bricks represents the history of ancient and medieval Bengal.

‘Mahasthan’ means ‘great sanctity’ and ‘garh’ means fort. So Mahasthangarh was named for its sacred fort. Mahasthan was first mentioned in a Sanskrit text of the 13th century entitled ‘Vallalcharita’. It was also mentioned in another book ‘Korotoa Mahatta’, circumstantially written in 12th–13th century.

Mahasthangarh is the remains of the ancient city of Pundranagar. It was the capital of the Maurya, Gupta and Sen kingdoms. This earliest and largest city, fortified by mud and red bricks, measures 1,525 metres long to north-south, 1,370 metres to east-west and 5 meters high from the soil level. Mahasthangarh is located in the Mahasthan village in Shibganj upazilla, 13 kilo metres north to Bogra town.

Mahasthangarh was declared as the cultural capital of the South Asian Association of Regional Cooperation (SAARC) on November 24, 2016, by a SAARC Cultural Centre team, led by its director Wasantha Kotuwella from Sri Lanka.

Reference

  • (2019). Retrieved from http://en.banglapedia.org/index.php?title=Main_Page
  • World Heritage Journeys Buddha. (2019). Retrieved from https://visitworldheritage.com/en/buddha
  • Buddhist archaeological sites in Bangladesh | daily sun. (2019). Retrieved from https://www.daily-sun.com/printversion/details/307344/2018/05/08/Buddhist-archaeological-sites-in-Bangladesh
Mainamati Shalban Vihara ( ময়নামতি শালবন বিহার )

Mainamati Shalban Vihara ( ময়নামতি শালবন বিহার )

Mainamati Shalban Vihara ( ময়নামতি শালবন বিহার )

written by – Labanaya Barua

Shalban Vihara (শালবন বিহার) in Mainamati is one of the most important buddhist archaeological sites in Bangladesh. Shalban name which comes from a grove of shal (Shorea robusta) trees. The archaeological site is located about 10 km from Comilla city. It was built by King Bhava Deva in the 7th Century. In past, the monastery had the name as per the king of the locality. In that time, it was named Bhavadev Bihar.

In Shalban Vihara, it has the ground plan of a Buddhist monastery, there are four walls surrounding of Shalban Vihara with 115 monastic cells, in which the Buddhist monks studied and observed religious practices.  Previously it was known as Shalban Rajar Bari. But after excavation ground plan of a Buddhist monastery measuring 550’x500′ with 115 monastic cells, it was exposed. Hence it is now popularly known as shalban vihara.

There was only one door in north side. There are many ancient ruins like- Charpatra Mura, Boiragir Mura, Kotila Mura, etc. Beside of the Moinamoti of which all are Buddhist Viharas or temples. Archaeologists have unearthed many things such as silver coins, copper-plates, jewelry etc. in Shalbon vihara. Many ancient artifacts like- ancient armors, copper-plates, coins, jewelries, bronze statues, burned clay-plates etc., found in Shalban Vihara. In Shalbon vihar a widest part, the ridge is about 4.5 km across and its highest peaks attain a height of about 45 meters.  where the Northern part is called Moinamoti and the Southern part is called Lalmai; and Shalbon Bihar is in the Middle of Lalmai and Moinamoti, there are a series of hills.

The largest number of stone sculptures and terra-cotta plaques where been found in Comilla’s archaeological sites, representing Bengal and the sub-continent. Many items can be seen in the Mainamati site museum, which is the richest in artefacts amongst other museums in Bangladesh.

Reference

  • Centre, U. (2019). UNESCO World Heritage Centre. Retrieved from https://whc.unesco.org/
  • Visit Mainamati, B. (2019). Visit Mainamati, Lalmai and Shalbon Bihar, Comilla, Bangladesh. Retrieved from http://bdtourvisit.blogspot.com/2016/01/visit-mainamati-lalmai-and-shalbon.html
  • (2019). Retrieved from http://en.banglapedia.org/index.php?title=Main_Page
  • World Heritage Journeys Buddha. (2019). Retrieved from https://visitworldheritage.com/en/buddha
  • Buddhist archaeological sites in Bangladesh | daily sun. (2019). Retrieved from https://www.daily-sun.com/printversion/details/307344/2018/05/08/Buddhist-archaeological-sites-in-Bangladesh
error: Content is protected !!