বুদ্ধের সময়ে শ্রাবস্তী নগরে এক ব্যাক্তি পিতার মৃত্যুর পর সংসারের যাবতীয় কার্য ভার বহন করে তার মায়ের সেবা করতে লাগলো। তার মা একটি বড় পরিবার থেকে তার ছেলেকে বিয়ে করাল। বেশ ধুমদাম করে ছেলের বিয়ে করাল মা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাদের সংসারে কোন সন্তনাদি না হওয়ায় মা তার ছেলেকে আরেকটি বিবাহ করাল। কিন্তু ছেলেটির প্রথমা স্ত্রী এ বিয়েতে রাজি ছিল না। এদিকে নতুন ছেলেটির নতুন বউ অন্তঃসত্বা হল। ফলে তাদের পরিবারে আনন্দের মাখামাখি হতে লাগলো। কিন্তু প্রথমা স্ত্রী সেটা সহ্য করতে পারছিল না, তখন প্রথমা স্ত্রী কৌশলে ঔষধ প্রয়োগ করে গর্ভপাত ঘটালো। এভাবে দ্বিতীয় বারও এরূপ ভাবে গর্ভপাত ঘটালো। তৃতীয় বার গর্ভপাত ঘটানোর সময় দ্বিতীয় স্ত্রী মারা গেল। আর মারা যাবার সময় সে সতিনীর প্রতি প্রতিশোধ পরায়ণা হয়ে মারা গেল। এবং সেই গৃহে বিড়ালী হয়ে জন্ম গ্রহন করল। তখন ঐ বাড়িতে মুরগী ডিম পারলেই বিড়ালী এসে খেয়ে ফেলত। এভাবে কয়েকবার ডিম খেয়ে ফেলাতে মুরগী মরবার সময় ঐ বিড়ালীকে তার সন্তানাদি সহ খাওয়ার সংকল্প নিয়ে প্রাণ ত্যাগ করে পরের জন্মে এক চিতা বাঘিনী হয়ে জন্মগ্রহন করল। এদিকে বিড়ালী যতাসময়ে মরার পর হরিণী হয়ে জন্মলাভ করে। তারা দুইজনে একি বনে বাস করতে লাগলো।
হরিণী হয়ে জন্মলাভ করে। তারা দুইজনে একি বনে বাস করতে লাগলো।
অতঃপর হরিণী বাচ্চা প্রসব করলেই বাঘিনী এসে খেয়ে ফেলে। এভাবে বাচ্চা দুইয়েকবার খাওয়াতে হরিণী মৃত্যুর সময় একি সংকল্প বদ্ধ হয়ে মারা গেলে এক যক্ষিণী রূপে জন্মগ্রহন করল। এবং একি সাথে বাঘিনী মারা গিয়ে শ্রাবস্তীর একই গ্রামে জন্মগ্রহন করে। বাঘিনী এ জন্মে একটি পরিবারে কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহন করে। যথাসময়ে কন্যার বিবাহ হল। বিবাহের পর তার ঘরে সন্তান জন্মগ্রহন করলে, যক্ষিণী প্রিয় সখীরূপে এসে শিশুকে খেয়ে ফেলে। দ্বিতীয় বারও ঠিক এরূপ ঘটনা। তৃতীয়বার অন্তসত্বা হবার পর তার স্বামীকে যক্ষিনীর ভয়ে বলতে লাগলো- এবার আমি চাই আমার নতুন সন্তান আমার বাপের বাড়ীতে জন্মহোক। এখানে থাকলে ঐ যক্ষিণী আামার ছেলেকে খেয়ে ফেলবে। স্ত্রী ও সন্তানের কথা চিন্তা করে তার স্বামী যথাসময়ে তার স্ত্রীকে বাপের বাড়ীতে যাওয়ার ব্যাবস্তা করল।
বাপের বাড়ীতে গিয়ে যথাসময়ে নিরাপদে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। নিরাপদে সন্তান প্রসব হওয়াতে খুব ধুমদাম ভাবে ছেলে শিশুর নামকরন সম্পাদন করল। অতঃপর একদিন স্বামী স্ত্রী সন্তান নিয়ে তাদের বাড়ীতে ফিলতে ছিল। এই দিকে যক্ষিণী পূর্বস্থানে স্ত্রীলোককে দেখতে না পেয়ে তার সন্ধানে পাগলের মত খুঁজতে লাগল। হঠাৎ পথের মাঝখানে তাদের সাথে দেখা হয়ে গেল। যক্ষিণীকে দেখে স্ত্রী লোকটি ভয়ে চীৎকার করে উঠল এবং পুত্রের প্রাণ রক্ষাত্বে বক্ষে ধারণ করে দৌড়াতে লাগলো। দৌড়াতে দৌড়াতে নিকটবর্তী শ্রাবস্তীর জেতবন বিহারে প্রবেশ করল। ভগবান তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ তখন ধর্ম সভায় মানুষকে ধর্ম দেশনা করতে ছিলেন। স্ত্রী লোকটি দেরি না করে তার কোলের অবুজ সন্তানটিকে বুদ্ধের চরণ তলে স্থাপন করে যক্ষিণীর হাত থেকে পুত্রের প্রাণ ভিক্ষা চাইলেন যক্ষিণীও পিছনে পিছনে এসে জেতবনে উপস্থিত হল। ভগবান বুদ্ধকে দেখে কিছুটা সংযত পুর্বক দাড়িয়ে রইলো। যক্ষিণীর মনোভাব বুঝতে পেরে ভগবান বুদ্ধ দুইজনকে তাদের অতীত জন্মের শক্রতার কথা বর্ণনা করতে লাগলেন। এবং দেশনার এক পর্যায়ে উভয়ের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন-

” নহি বেরেন বেরানি সম্মন্তী’ধ কুদাচনং,
অবেরেণ চ সম্মন্তি, এস ধম্মো সনন্তনো”। ৫ (ধম্মপদ)

” এ জগতে শক্রতার দ্বারা কখনো শক্রতার উপশন হয় না, মিত্রতার দ্বারাই শক্রতার উপশম হয় “

বুদ্ধের এই চিত্ত বিধারিত বাণী শুনার পর যক্ষিনী ও স্ত্রীলোকটি সৎ জ্ঞান লাভ করে। এবং চিরতরে পরস্পর পরস্পরের শক্রতার উপশম ঘটাল।

সুত্রঃ সংগৃহীত

error: Content is protected !!