ঘন সবুজ এবং চমৎকার বুনােফুল দ্বারা আচ্ছাদিত নদীর পাশে একটি ছােট্ট ঘর। মা তার ছেলেকে নিয়ে কুড়ে ঘরে বসবাস করেন। সেদিন আকাশে চমৎকার সূর্য উঠেছে। হঠাৎ একটি শিংওয়ালা হরিণ তাদের বাড়ীর আঙ্গিনায় ঢুকে পড়ে। ছােট ছেলেটি বাড়ী সংলগ্ন উঠানে খেলা করছিল। হরিণ ছেলেটির একেবারে কাছে গিয়ে আংটার মতাে করে ছেলেটির গায়ে জড়ানাে কাপড়ে তার শিং দিয়ে জড়িয়ে নেয়। এটি করতে দেখে ছেলেটি ভয়ে চীৎকার দেয়। ছেলের চীৎকার শুনে তার মা ঘর থেকে ছুটে এসে দেখেন, একটি হরিণ দৌড়ে পালাচ্ছে এবং হরিণটির শিঙ্গের সঙ্গে শাট আটকানাে অবস্থায় তার ছেলেও হরিণের সঙ্গে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ছেলের এরকম পরিণতিতে মা অত্যন্ত আতংকিত হয়ে পড়েন। ছেলেকে রক্ষার জন্য তিনি হরিণের পিছু পিছু দৌড় দেন। কিছুদূর যাওয়ার পর মা দেখেন তার ছেলে মাঠের এক জায়গায় পড়ে আছে এবং হরিণের শিংয়ের সঙ্গে আটকানাে শার্ট খুলে গেছে। মাকে আসতে দেখে ছেলে মায়ের বুকে মুখ লুকায়। ছেলেকে পেয়ে আনন্দে মা কেঁদে ফেলেন।
মা ছেলেকে নিয়ে দ্রুত বাড়ীর দিকে রওনা দেন। বাড়ী ফিরে আশ্চর্য হয়ে দেখেন পাশের বড় গাছটি ভেঙ্গে তার বাড়ীর উপর পড়ে আছে। অতবড় গাছের নীচে পড়ে বাড়ীটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। মােরগ এবং কুকুরটি ও গাছের নীচে পড়ে মরে আছে। এ দৃশ্য দেখে মা শিউরিয়ে উঠেন। সে সময় হরিণটির শিংগে তার ছেলের শাট আটকানাে অবস্থায় বাইরে টেনে না নিলে, আজ গাছের নীচে পড়ে তাদের সবাইর মৃত্যু ঘটত।
এসময় ছেলেটির মায়ের এক বছর পূর্বের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। একটি হরিণ শিকারির তাড়া খেয়ে তার ঘরে ঢুকে পড়েছিল। মা তখন রান্নার কাজেই ব্যস্ত। হঠাৎ হরিণটিকে তার ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেখে ছেলেটির মা ভয় পান। এসময় ঘরের বাইরে তীর ধনুক হাতে একজন লােক দেখেন। সেই লােকটিকে দেখে মার মনে সন্দেহ জাগে, তবে লােকটি কি হরিণকে খুঁজছে। এই কথা ভেবে মা হরিণটিকে শিকারির চোখ থেকে আড়াল করার জন্য তার পরনের কাপড় দিয়ে হরিণের শরীর ঢেকে রাখেন।
শিকারি বাড়ীর এদিক ওদিক তাকিয়ে হরিণটির কোন চিহ্ন দেখতে না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। শিকারিকে চলে যেতে দেখে, ছেলেটির মা হরিণের গা থেকে কাপড়টি সরিয়ে নেয়। হরিণ সম্ভাব্য মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায়। হরিণ বুঝতে পারে ছেলেটির মা শিকারীর হাত থেকে তার প্রাণ বাঁচিয়েছে। চলে যাওয়ার সময় হরিণ মাথা নত করে ছেলেটির মাকে কৃতজ্ঞতা জানায়।
মা এখন বুঝতে পারে হরিণ কেমন করে যেন বুঝতে পেরেছিল বাড়ীর পাশের গাছটি পড়ে । গিয়ে মা এবং ছেলের ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতিদানে হরিণ নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে। মা ও ছেলেকে রক্ষা করেছে।
মা একটি প্রবাদ বাক্য স্মরণ করেন,
“কারও বিপদে যদি কেউ তার জীবন রক্ষা করে,
নিজের বিপদে ও দেবতারা তাকে রক্ষা করেন।”
সুত্রঃ সজল কান্তি বড়ুয়ার লিখা প্রানির প্রতি দয়া বই থেকে সংগৃহীত