বুদ্ধের সময় অঙ্গরাজ্যের ভদ্দিয় নগরে উচ্চবংশজাত ধনবান এক উপাসক ছিলেন।তাঁর নাম ছিল মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী। ধনঞ্জয় নামে তাঁর এক পুত্র ছিলেন।তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল সুমনাদেবী।তাঁরা অত্যন্ত ধার্মিক এবং দান ও সেবাপরায়ণ ছিলেন।তাঁদেরই কোন আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশাখা।ছোটকাল থেকে বিশাখা অত্যন্ত উদার প্রকৃতির ছিলেন।দান ও বিবিধ কল্যাণকর্মের জন্য তাঁর খুবই সুখ্যাতি ছিল।দানকর্ম ও ভিক্ষুসঙ্ঘকে সেবা করার জন্য বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
এক সময় সেল নামক এক ব্রাহ্মণ ও তাঁর অনুগামী প্রায় তিন শতাধিক শিষ্যকে দীক্ষা প্রদানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বুদ্ধ সশিষ্য ভদ্দিয় নগরে এসেছিলেন।বুদ্ধের আগমন উপলক্ষে বিশাখার পিতামহ মেন্ডক শ্রেষ্ঠী বিশাখাকে নিয়ে বুদ্ধ দর্শনে গিয়েছিলেন।তখন বিশাখার বয়স ছিল সাত বছর।বিশাখার সাথে ছিল পাঁচশত সখী, পাঁচশত পরিচারিকা এবং পাঁচশত সুসজ্জিত রথ।বিশাখার সুযোগ হয় বুদ্ধকে কাছে গিয়ে বন্দনা করার।বুদ্ধ বিশাখার জন্মান্তরে অর্জিত পুণ্যরাশি অবগত হয়ে তাঁকে ধর্ম দেশনা করেন।উপস্থিত সকলে গভীর শ্রদ্ধাচিত্তে বুদ্ধের ধর্মোপদেশ শ্রবণ করেন।মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী শ্রদ্ধাবণত হয়ে ভিক্ষুসঙ্ঘসহ বুদ্ধকে পরদিন তাঁর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন গ্রহণের জন্য নিমন্ত্রণ করেন।বুদ্ধ নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং পরদিন যথাসময়ে তিনি সশিষ্য মেণ্ডক শ্রেষ্ঠীর গৃহে উপস্থিত হন।মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী ভিক্ষুসঙ্ঘসহ বুদ্ধকে উৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্য দ্বারা আপ্যায়ন করেন।বুদ্ধ তাঁদের ধর্ম দেশনা করেন।এতে বিশাখাসহ মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী পরিবারের সদস্যরা অপার আনন্দ মেণ্ডক শ্রেষ্ঠীর গৃহে উপস্থিত হন।মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী ভিক্ষুসঙ্ঘসহ বুদ্ধকে উৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্য দ্বারা আপ্যায়ন করেন।বুদ্ধ তাঁদের ধর্ম দেশনা করেন।এতে বিশাখাসহ মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী পরিবারের সদস্যরা অপার আনন্দ অনুভব করেন।তাঁরা ভিক্ষুসঙ্ঘসহ বুদ্ধকে আরও পনেরো দিনের জন্য নিমন্ত্রন করলেন।বুদ্ধ তাঁদের শ্রদ্ধা বক্তি দেখে সম্মতি প্রদান করেন।ফলে শৈশব কালেই বিশাখা বুদ্ধের ধর্ম দেশনা শ্রবণ এবং বুদ্ধকে সেবা করার এক অপূর্ব সুযোগ লাভ করেন।
কালক্রমে বিশাখা বিবাহযোগ্যা হয়ে ওঠেন।পিতামাতার তার বিয়ের জন্য তৎপর হলেন।সে সময় শ্রাবস্তীতে মিগার নামে এক শ্রেষ্ঠী ছিলেন।তাঁর পূণ্যবর্ধন নামে এক পুত্র ছিল।পারিবারিক উদ্যোগে পুণ্যবর্ধনের সঙ্গে বিশাখার বিয়ে হয়্। বিশাখার বাবা বিশাখাকে বহু দাসদাসী, রথ ও মহামূল্য মণিমুক্তা উপহার উপহার দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পাঠান।শ্বশুরালয়ে পরস্পর শান্তি ও সম্প্রীতিতে বাসবাসের জন্য বিশাখার পিতা বিশাখাকে দশটি উপদেশ প্রদান করেন।এই দশটি উপদেশ সর্বজনীন উপদেশ হিসেবে উপদেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়।এ দশটি উপদেশ হলো :
১. ঘরের আগুন বাহিরে নিয়ো না।অর্থাৎ শ্বশুরবাড়ির কারো দোষ দেখলে তা বাইরের কাউকে বলবে না।
২. বাইরের আগুন ঘরে এনো না।অর্থাৎ প্রতি্বেশী কেউ শ্বশুরবাড়ির কারো দোষের কথা বললে তা তোমার শ্বশুরবাড়ির কারো কাছে প্রকাশ করো না।
৩. যে দেয় তাকে দেবে।অর্থাৎ কেউ কিছু ধার নিয়ে ফেরত দিলে তাকে ধার দেবে।
৪. যে দেয় না তাকে দিয়ো না।অর্থাৎ যে-ব্যক্তি কোনকিছু ধার নিয়ে ফেরত দেয় না তাকে ধার দিয়ো না।
৫. যে দেয় অথবা না দেয় তাঁকে দেবে।অর্থাৎ কোনো আত্মীয় গরিব হলে, ধার নিয়ে ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে তাকেও ধার দিয়ো।
৬. সুখে আহার করবে।অর্থাৎ শ্বশুরবাড়ির গুরুজনদের খাওয়া শেষ হলে এবং অন্যান্যদের খাওয়া সম্পর্কে খবর নিয়ে তারপর নিজের আহার গ্রহন করবে।
৭. সুখে উপবেশন করবে।অর্থাৎ এমন স্থানে বসবে যে স্থান থেকে গুরুজনদের দেখে উঠতে না হয়।
৮. সুখে শয়ন করবে।অর্থাৎ যাবতীয় গৃহকর্ম সমাধা করে গুরুজনদের শয়নের পর শয়ন কর।
৯. অগ্নির পরিচর্যা করবে।অর্থাৎ গুরুজন ও ছোটদের সচেতনার সাথে প্রয়োজনীয় সেবা শুশ্রূষা করবে।
১০. শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী প্রভৃতি গুরুজনদের দেবতাজ্ঞানে ভক্তি করবে।
বিবাহ অনুষ্ঠানসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে আজও এই উপদেশসমূহ প্রদান করা হয়।পারিবারিক সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে এ উপদেশগুলোর ভূমিকা অপরিসীম।
বিশাখার শ্বশুর মিগার শ্রেষ্ঠী এ বিয়েতে সাত দিনব্যাপী উৎসব পালন করেন।কোশলরাজ প্রজেনজিতসহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ বিয়েতে যোগদান করেছিলেন।
বিশাখা শ্বশুরালয়ে সমস্ত কাজ নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করার চেষ্টা করতেন।এতে শ্বশুর-শ্বাশুড়িও তাঁর প্রতি খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন।কিন্তু মিগার শ্রেষ্ঠী ছিলেন কিছু ভ্রান্তধারার অনুসারী সন্ন্যাসীর ভক্ত।এ সন্ন্যাসীরা বিবস্ত্র থাকতেন।মিগার শ্রেষ্ঠীর গৃহে তারা প্রায় আসতেন।একদিন গুরুপূজা উপলক্ষে মিগার শ্রেষ্ঠী বিশাখাকে তাঁদের সামনে নিয়ে যান।বিশাখা দেখলেন গুরু সম্পূর্ণ বিবস্ত্র।বিশাখা এতে বিরক্তি প্রকাশ করেন।সন্ন্যাসীরা বিশাখার ভাব বুঝতে পারেন।তাঁরা শ্রেষ্ঠীকে বললেন, এই রমণী গৌতমের শিষ্যা, এক ঘর থেকে বের করে দাও।তা না হলে তোমার সর্বনাশ হবে।এতে শ্রেষ্ঠী খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন।
একদিন মিগার শ্রেষ্ঠী মহাপালঙ্কে বসে মধুপায়েস খাচ্ছিলেন।এমন সময় এক পিণ্ডাচারী বৌদ্ধভিক্ষু মিগার শ্রেষ্ঠীর বাড়িতে ভিক্ষার জন্য আসেন।শ্রেষ্ঠী তাঁকে দেখেও কোনোকিছু দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন না।শ্বশুরের অনুমতি ছাড়া বিশাখার পক্ষেও কোনোকিছু দেওয়া সম্ভব না।তখন বিশাখা আগন্তুক ভিক্ষুকে বললেন, ভন্তে, আপনি অন্যত্র যান।আমার শ্বশুর বাসি খাবার খাচ্ছেন।মিগার শ্রেষ্ঠী একথা শুনে অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হলেন।বিশাখাকে বললেন, তুমি এ বাড়ি থেকে চলে যাও।তিনি বিশাখাকে বের করে দিতে দাসদাসীদের আদেশ দিলেন।কিন্তু বাড়ির অন্তঃপুরের সকলেই ছিল বিশাখার ভক্ত।একথা শুনে বিশাখা বললেন, আমি ক্রীতদাসী নই, আমাকে ইচ্ছা করলে তাড়িয়ে দেয়া যায় না।আমার পিতা আটজন সম্ভ্রান্ত নীতিজ্ঞলোককে সাক্ষী করেই আমাকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়েছেন।তাঁদের আহ্বান করুন।তাদের বিচারে দোষী হলে আমি চলে যাব।অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে আমি শ্বশুরালয় ত্যাগ করব না।ক্রোধগ্রস্ত মিগার শ্রেষ্ঠী সাক্ষীদের আহ্বান করলেন।তাঁরা বিশাখাকে কেন ঐরূপ ব্যবহার করলেন তা জানতে চান।উত্তরে বিশাখা বললেন, আমার শ্বশুর ‘বাসি’ খাবার খাচ্ছেন বলার অর্থ এই যে, তিনি পূর্বজন্মের পুণ্যফলের প্রভাবে অর্জন করা খাবার খাচ্ছেন।নীতিজ্ঞলোকদের বিচারে বিশাখার জয় হয়।
আর একদিন রাতে বিশাখা ঘরের বাতি হাতে নিয়ে বাইরে গিয়েছিলেন।শ্রেষ্ঠী এর কারণ জানতে চাইলেন।বিশাখা বললেন, ঘোড়ার বাচ্চা প্রসবের খবর পেয়ে দাসীদের নিয়ে আলো হাতে তিনি অশ্বশালায় গিয়েছিলেন।তখন শ্রেষ্ঠী বললেন, তোমার পিতা তোমাকে ঘরের আগুন বাইরে নিতে নিষেধ করেছিলেন না?তাঁর উপদেশ তুমি অমান্য করলে কেন?বিশাখা বললেন, হ্যাঁ, নিষেধ করেছিলেন।কিন্তু তাঁর উপদেশ আমি অমান্য করিনি।সেই উপদেশ অনুসারেই আমি চলছি।ঘরের আগুন বাইরে না নেয়া বলতে তিনি বুছিয়েছেন, শ্বশুরবাড়ির কোনো কথা বাইরের লোকের কাছে প্রকাশ না করা।আমি নিজ গৃহের নিন্দা ও কুৎসা বাইরে প্রকাশ করি না।এসময় বিশাখা তাঁর বাবার অমান্য উপদেশগুলোও শ্বশুরকে ব্যাখ্যা করেন।মিগার শ্রেষ্ঠী তখন নিজের ভুল বুঝতে পানে।
এদিকে বিশাখা বারবার অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ায়া পিত্রালয়ে চলে যাবার জন্য মনস্থির করলেন।বিশাখা শ্বশুরকে বললেন, এখন আমি পিতৃগৃহে চলে যেতে প্রস্তুত।তখন মিগার শ্রেষ্ঠী নিজের দোষ স্বীকার করেন এবং বিশাখাকে পিত্রালয়ে চলে যাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার অনুরোধ করতে থকেন।শ্বশুরের এ বিনীতভাব দেখে বিশাখা বললেন, আপনি বিবস্ত্র সন্ন্যাসীদের ভক্ত।আমি ত্রিরত্নের উপাসিকা।বুদ্ধশাসনে গভীর শ্রদ্ধাসন্পন্ন কুলের কন্যা আমি।ভিক্ষুসঙ্ঘের সেবা না করে আমি থাকতে পারি না।যদি আমাকে নিজের অভিরুচি অনুযায়ী দান করতে এবং ধর্মকথা শুনতে অনুমিত দেন তাহলে আমি থাকতে পারি।মিগার শ্রেষ্ঠী তাঁর কথায় রাজি হলেন।
এর অল্পদিন পরে বিশাখা ভিক্ষুসঙ্ঘসহ বুদ্ধকে তাঁর গৃহে নিমন্ত্রণ করেন।বুদ্ধ সশিষ্য মিগার শ্রেষ্ঠীর বাড়িতে যাচ্ছেন এ খবর পেয়ে বিবস্ত্র সন্ন্যাসীরও এসে বাড়ির বাইরে অবস্থান নেন।তাঁদের শঙ্কা মিগার শ্রেষ্ঠী বুদ্ধের দীক্ষা নিলে তাঁরা দান-দক্ষিণা থেকে বঞ্চিত হবেন।এ ভয়ে তাঁরা মিগার শ্রেষ্ঠীকে ভিক্ষুদের সাথে দেখা করতে নিষেধ করেন।তাঁদের উপদেশ মতো মিগার শ্রেষ্ঠী ভিক্ষুদের দেখে নিজের কক্ষে বসে রইলেন।বিশাখা যাবতীয় দান সাজিয়ে শ্বশুরকে ডাকলেন।কিন্তু শ্রেষ্ঠী বিবস্ত্র সন্ন্যাসীদের কথামতো দানকাজ শেষ করতে বলেন।বিশাখা সশ্রদ্ধ চিত্তে বুদ্ধসহ ভিক্ষুসঙ্ঘকে দান করেন।দানকর্ম সম্পন্ন হলে বিশাখা ধর্মকথা শুনতে শ্বশুরকে আহ্বান করেন।শ্রেষ্ঠী তখন ভাবলেন, এখন না হলে খুব অভদ্রতা হবে।এরূপ চিন্তা করে তিনি যেতে উদ্যত হলেন।এ সময় বিবস্ত্র সন্ন্যাসীরা বললেন, শ্রমন গৌতমের ধর্ম শুনলে পর্দার আড়াল থেকে শুনবে।কারণ এই সন্ন্যাসীরা মনে করতেন বুদ্ধের মায়াবী ক্ষমতা আছে।সেই মায়ার বলে মিগার শ্রেষ্ঠীকে মুগ্ধ করে তাঁর শিষ্য করে নেবেন।
সন্ন্যাসীদের নির্দেশমতো মিগার শ্রেষ্ঠী পর্দার আড়ালে গিয়ে বসলেন।বুদ্ধ বললেন, শ্রেষ্ঠী আপনি পর্দার অন্তরালে, প্রাচীরের অন্তরালে, পাহাড়ের অন্তরালে অথবা দিকচক্রবালের অন্তরালে যেখানেই বসুন না কেন, আমার শব্দ সর্বত্র ঘোষিত হবে।এই বলে মহাকারুণিক বুদ্ধ ধর্মদেশনা শুরু করলেন।প্রথমে শ্রেষ্ঠীর আগ্রহ না থাকলেও ক্রমে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েন।বুদ্ধের দেশনা শেষ হলে শ্রেষ্ঠী স্রোতাপত্তি ফলে প্রতিষ্ঠিত হন।তারপর তিনি বুদ্ধের সামনেই পুত্রবধূ বিশাখাকে জ্ঞানদায়িনী মাতা বলে সম্বোধন করে বললেন, মাতা তুমি এতদিনে এই সন্তানকে উদ্ধার করলে।সেই থেকে বিশাখাকে ‘মিগারমাতা’ নামে অভিহিত করা হয়।
এরপর হতে মিগার শ্রেষ্ঠীর গৃহে বিশাখার উদ্যোগে ভিক্ষুসঙ্ঘের নিত্য মধ্যাহ্ন আহারের ব্যবস্থা করা হয়।শ্রেষ্ঠী নিজেও বুদ্ধ ও তাঁর শিষ্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন।বিশাখা আঠারো কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয়ে শ্রাবস্তীতে একটি বিশাল বিহার নির্মাণ করে বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুসঙ্ঘকে দান করেছিলেন।এটিকে পূর্বারাম বিহার বলা হয়।এ বিহার নির্মাণ কাজে তদারকি করার জন্য বিশাখা বুদ্ধের অগ্রশ্রাবক মৌদগল্যায়নের সহযোগিতা প্রার্থনা করেছিলেন।মৌদগল্যায়ন পাঁচশত শিষ্যসহ বিহার নির্মাণে সহায়তা করেন।কথিত আছে যে, মৌদগল্যায়ন নিজের ঋদ্ধিশক্তির প্রভাবে মাত্র নয় মাসে বিহার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করান।দ্বিতলবিশিষ্ট এ বিহারের কক্ষের সংখ্যা ছিল এক হাজার।প্রত্যেকটি কক্ষ বিশাখা নিজের মনের মতো করে সাজিয়ে দিয়েছেলেন।এ বিহার দান উপলক্ষে চারমাস ব্যাপী উৎসব হয়েছিল।এর জন্য বিশাখাকে আরও নয় কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যায় করতে হয়েছিল।বুদ্ধ পূর্বারাম বিহারে বিভিন্ন সময়ে ছয় বর্সাবাসব্রত পালন করেছিলেন।সে সময় বিশাখা নিত্যকর্মের মতো প্রতিদিন তিনবার খাদ্যভোজ্য, প্রয়োজনীয় নানা দ্রব্য ও ধূপ ইত্যাদি নিয়ে বিহারে যেতেন।এক সময় বিশাখা বুদ্ধের কাছে আটটি বর প্রার্থনা করেন।বুদ্ধ তা অনুমোদন করেছিলেন, এ বর গুলো বিশাখার ত্যাগ মহিমার নুতন দিক উন্মাচিত করেছে।বরগুলো হলো :
১. বিশাখা আজীবন বুদ্ধের কাছে আগত যে কোনো অতিথি ভিক্ষুর আহার্য দান করবেন।
২. বিশাখা আজীবন ভিক্ষুসঙ্ঘকে স্নানবস্ত্র প্রদান করবেন।
৪.বিশাখা আজীবন অসুস্থ ভিক্ষুর যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
৫.বিশাখা আজীবন অসুস্থ ভিক্ষুদের পরিচর্যাকারীদেরও আহার্য দান করবেন।
৬.বিশাখা আজীবন বিহারের অসুস্থ ভিক্ষুকদের জন্য প্রয়োজনীয় পথ্য সরবরাহ করবেন।
৭. বিশাখা আজীবন ভিক্ষুদের যাগু-অন্ন দান করবেন।
৮. বিশাখা আজীবন ভিক্ষুদের স্নানবস্ত্র প্রদান করবেন।
বিশাখার এ বরপ্রার্থনার মধ্যে তাঁর গভীর দানচেতনা ও উদারতার প্রকাশ ঘটেছে।এভাবে বিশাখা সানন্দে বুদ্ধ ও ভিক্ষুসঙ্ঘের সেবায় নিয়োজিত হয়ে অপরিসীম পুণ্য সঞ্চয় করেন।বিশাখার বাড়িতে প্রত্যহ পাঁচশত ভিক্ষু আহার গ্রহণ করতেন।বিশাখার দশ পুত্র ও দশ কন্যা ছিল।তাঁদের প্রত্যেকেরও দশটি করে সন্তান ছিল।এভাবে তাঁরা সবাই বলশালী ও সম্পদশালী হয়ে সুখে বাস করতেন।বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে বিশাখা ‘মহা উপাসিকা’ নামে খ্যাত হন।এই মহাউপাসিকার জীবনী হতে আমরা এ শিক্ষা পাই যে, ভোগ নয়, ত্যাগেই মানুষকে মহৎ ও মহান করে। তাই সকলের দান ও ত্যাগের আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া উচিত।
সুত্রঃ ধর্ম বিশুদ্ধির ফেইসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত ।