পুরাকালে বারাণসীরাজ ব্ৰহ্মদত্তের সময় বােধিসত্ত্ব উদীচ্য ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণপূর্বক তক্ষশিলা নগরে সর্বশাস্ত্রে সুপণ্ডিত হইয়াছিলেন। তিনি বিষয়বাসনা পরিহার করিয়া প্রব্রজ্যা গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং পঞ্চ অভিজ্ঞা ও অষ্ট সমাপত্তি লাভপূর্বক হিমালয়ে অবস্থিতি করিতেন। সেখানে পঞ্চশত তপস্বী তাহার শিষ্য হইয়াছিল। | একবার বর্ষাকালে তাহার প্রধান শিষ্য সার্ধদ্বিশত তপস্বিসহ লবণ ও অম্ন সংগ্ৰহাৰ্থ লােকালয়ে অবতরণ করিয়াছেন, এমন সময়ে বােধিসত্বের দেহত্যাগকাল সমাগত হইল। তখন উপস্থিত শিষ্যগণ, তিনি কি আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করিয়াছেন তাহা জানিবার অভিপ্রায়ে প্রশ্ন করিলেন, “আপনি কি গুণ লাভ করিয়াছেন?” বােধিসত্ত্ব বলিলেন, “নাস্তি কিঞ্চিৎ” এবং ক্ষণকাল পরেই তমুত্যাগ করিয়া আভাস্বর ব্রহ্মলােকে * জন্মগ্রহণ করিলেন। তাঁহার উত্তর শুনিয়া তপস্বিগণ স্থির করিলেন, ‘আচাৰ্য্য কিঞ্চিত্র জ্ঞান লাভ করিতে পারেন নাই। অতএব তাহারা তাহার শ্মশান-সৎকার করিলেন না। | কিয়দিন পরে প্রধান শিষ্য আশ্রমে প্রত্যাগমন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আচাৰ্য্য কোথায় ?” তাহারা বলিলেন, “আচাৰ্য্য উপরত হইয়াছেন।” “তােমর আচাৰ্য্যকে অধিগমসম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে কি?” “জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম।” তিনি কি উত্তর দিয়াছিলেন ?” “তিনি বলিয়াছিলেন, ‘নাস্তি কিঞ্চিৎ। এইজন্যই আমরা তাহার শ্মশান-সৎকার করি নাই।” “তােমর। আচার্যের কথার অর্থ বুঝিতে পার নাই। নাস্তি কিঞ্চিৎ’ বলায় তাহার এই অভিপ্রায় ছিল যে, তিনি অকিঞ্চায়তন-সমাপত্তি। লাভ করিয়াছেন। প্রধান শিষ্য সতীর্থদিগকে এই কথা বুঝাইবার জন্য পুনঃ পুনঃ চেষ্টা করিলেন; কিন্তু তাহারা তাহা বিশ্বাস করিলেন না । তপস্বীদিগকে সংশয়মান দেখিয়া বােধিসত্ত্ব ভাবিলেন, ‘ইহারা কি মূখ ; আমার প্রধান শিষের কথাতেও শ্রদ্ধা স্থাপন করিতেছে না। আমাকেই দেখিতেছি, প্রকৃত ব্যাপার প্রকট করিতে হইল। অনন্তর তিনি ব্রহ্মলােক হইতে আগমন করিয়া মহানুভব-বলে আশ্রমপাদের উপরিভাগে আকাশে অধিষ্ঠান করিয়া প্রধান শিষ্যের প্রজ্ঞাবল প্রশংসা করিতে করিতে এই গাথা পাঠ করিলেন ;
মুর্থ শিষ্য আচায্যের ক্লেশমাত্র হয় সার,
শ্রুতিমাত্র অর্থগ্রহ না হয় কখন তার।
হউক সহস্রাধিক হেন শিষ্য সমাগম,
কাঁদুক শতেক বর্ষ সেই সব শিষ্যাধম ;
তার চেয়ে প্রজ্ঞাবান এক শিষ্য প্রিয়তর,
বুঝিতে শ্রবণমাত্ৰ হয় যদি শক্তিধর। এইরূপে মহাসত্ব মধ্যাকাশে থাকিয়া সত্য ব্যাখ্যা করিলেন এবং তাহাদিগকে ভৎসনা করিতে লাগিলেন। অনন্তর তিনি ব্রহ্মলােকে প্রতিগমন করিলেন এবং ঐ সকল তপস্বীও ব্ৰহ্মলােক-প্রাপ্তির উপযােগী উৎকর্ষ লাভ করিলেন।
সুত্র ঃ জাতকসমগ্র ।