অরহৎ উপগুপ্ত মহাথেরর সংক্ষিপ্ত জীবনী

লিখেছেন – শ্রীমৎ প্রিয়বংশ স্থবির

সে বহুকাল আগের কথা ।একদা একদল জেলে সাগরে জাল ফেলে মাছ ধরার জন্য । সে জালে একটি সুন্দর মাছ ধরা পরল যা দেখে জেলেরা খুব খুশি হল । কিন্তু তারা দেখল মাছের পেটে কি যেন নড়া চড়া করছে ।তা দেখে সকলে চিন্তিত হয়ে গেল । অবশেষে মাছটি বিক্রি করার জন্য রাজার কাছে নিয়ে গেল । সব শুনে রাজা জেলেদের প্রাপ্য টাকা দিয়ে মাছটি কিনে নিলেন । তারপর জেলেদের বললেন খুব সাবধানে মাছটির পেট কেটে দেখ সেখানে কি পাওয়া যায় ।রাজার আদেশ পেয়ে জেলেরা আস্তে আস্তে মাছের পেট কাটল । তাতে জীবিত একটি মানব কন্যা শিশু দেখা গেল । তা দেখে সকলে অবাক হয় রইল । রাজার আদেশে তাঁকে স্নান করিয়ে ঘরে নিয়ে আসল । সেই শিশু কন্যাটি রাজ বাড়ীতে লালিত পালিত হতে লাগল । মেয়েটি যতই বড় হতে লাগল ততই তার গা থেকে মাছের গন্ধ বের হতে লাগল যা রাজাকে ভাবিয়ে তুলল । একদিন রাজা এক কাঠের মিস্ত্রি ডেকে একটা বড় নৌকা তৈরী করালেন । সে নৌকায় নানা রকম খাদ্য পানীয় ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে মেয়েটিকে নৌকায় তুলে সাগরে ভাসিয়ে দিলেন । নৌকাটি ভাসতে ভাসতে সাগরের তীরে পৌঁছল । সে জায়গায় এক বৌদ্ধ ভিক্ষু ধ্যান করতেন । নৌকাটি ভান্তের চোখে পরল । ভান্তে মেয়েটিকে দেখে করুণা বশতঃ উদ্ধার করলেন এবং নিজ আশ্রমে নিয়ে গিয়ে লালন পালন করতে লাগলেন । এভাবে মেয়েটির যখন ১৮ বছর হল তখন একদিন সে স্বপ্নযোগে অন্তঃসত্ত্বা হল । সে সবকিছু ভান্তেকে খুলে বলল এবং অনুতাপ করতে লাগল , ‘আমি তো কোন পুরুষ সংসর্গ লাভ করি নি তাইলে কেন আমার এ দশা হল ?’ ভান্তে তাকে আশ্বস্ত করে বললেন ‘ভয় পেও না । তোমার উদর হতে এক মহাপুরুষের জন্ম হবে ‘ এ বলে ভান্তে তাকে আশীর্বাদ করলেন । ভান্তের অভয় বাণী শুনে মেয়েটি আশ্বস্ত হল । ভান্তের কাছে নানা ধর্ম কথা শুনে তার দিন যেতে লাগল । ভান্তে তাকে সর্বদা সৎ উপদেশ দিতেন । এক বছর পর এক উষালগ্নে মেয়েটির এক সোনার বরণ পুত্র ভুমিষ্ঠ হল । ছেলেটিকে দেখে ভিক্ষুও আনন্দিত হলেন । কর্মের বিপাক , কর্মের বন্ধন , কর্মের ফল , কর্মের গুরুত্ব রহস্য একমাত্র ভগবান সম্যক সম্বুদ্ধ ছাড়া কেউ জানেন না । এ ঘটনাটি ঘটে বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের প্রায় ২৩০ বছর পর ।তখন সম্রাট আশোকের রাজত্ব ছিল । ভন্তে এবং তার মায়ের লালন পালনে ছেলেটি রাজপুত্রের ন্যায় সৌন্দর্য বিকশিত হয়ে বড় হতে লাগল । ছেলেটি যতই বড় হতে লাগল ভন্তে তাকে ধর্ম শিক্ষা দিতে লাগলেন । বৌদ্ধ ধর্মের গ্রহণীয় আদর্শগুলো গ্রহণ করা এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো বর্জন করা সমস্তই ছেলেটিকে শিক্ষা দিতে লাগলেন । ভন্তে মহোদয়ের কথা মত ছেলেটিও শিক্ষা গ্রহণ করতে লাগল । এভাবে ছেলেটি বড় হতে লাগল । ছেলেটির বয়স যখন ৭ বৎসর হয় , এমনি এক সময় শুভ লগ্নে ছেলেটি ধ্যান করতে করতে সকল তৃষ্ণা ক্ষয় করে অরহত্ত্ব ফল লাভ করলেন এবং আকাশ মার্গে উপনীত হলেন । অর্হৎলাভীরা জানেন তৃষ্ণা ক্ষয় হলেও প্রবজ্যা গ্রহণ করতে হয় অথবা নির্বাণ লাভ করতে হয় । বিবেচনা করে তিনি প্রবজ্যাই গ্রহণ করলেন । কিছুদিন পর একদিন তিনি ভন্তে এবং মাতা থেকে বিদায় নিয়ে অন্য একটি বিহারে চলে গেলেন । সেখানে কয়েকদিন থাকার পর অন্যান্য ভিক্ষুরা বলাবলি করতে লাগলেন ‘এই শ্রমণের গা থেকে মাছের গন্ধ বের হচ্ছে কেন ? ‘ এভাবে সবাই বলাবলি করে আর থু থু ফেলতে থাকে । শ্রমণ এ কথা জানতে পেরে একদিন চিন্তা করলেন কি করা যায় । কোথায় যাই ? পরের দিন ভ্রমণ করতে করতে এক সাগরের পাড়ে গেলেন এবং চিন্তা করতে লাগলেন । সেই সমুদ্রের তলদেশে বাস করতেন এক নাগরাজ ।সেই নাগরাজ শ্রমণের চিন্তিত বিষয় জ্ঞানবলে ধরতে পারলেন এবং সাথে সাথে মানবের বেশ ধরে তাঁর সামনে উপস্থিত হলেন । শ্রমণও তাঁকে চিনতে পারলেন কারণ তিনি তো অর্হৎ । তাঁদের দুজনের ভিতর নানা বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনার পর নাগরাজ তাঁকে যাবজ্জীবন নাগভবনে থাকার জন্য প্রার্থনা করলেন ।তখন সেই শ্রমণ তাঁর নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে নাগরাজের সাথে নাগলোকে চলে গেলেন ৷

 

 

error: Content is protected !!