পুরাকালে বারাণসীতে ব্রক্ষ্রদত্ত নামের এক রাজা ছিলেন। সেই বোধিসত্ত্ব সংসার জীবনে প্রবেশ না করে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে হিমালয়ে গিয়ে বাস করতে থাকেন। তিনি তপস্যা দ্বারা সমাপত্তি লাভ করেছিলেন।
বারাণসীরাজ ব্রক্ষদত্তকুমার। ব্রক্ষদত্ত কুমার যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে বহু অনুচর ও অস্ত্রসত্র নিয়ে সর্বদা ঘুরে বেড়াতেন। কুমারের এই আড়ম্বরপ্রীতি দেখে রাজার সন্দেহ হলো, কুমার হয়ত পিতাকে রাজ্যচ্যুত করে পিতার জীবিতকালেই রাজা হতে চান।
এই সন্দেহের বশে রাজা কুমারকে রাজ্য হতে নির্বাসিত করলেন। ব্রক্ষদত্তকুমার তখন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্য ছেড়ে হিমালয় চলে গেলেন। সেখানে একটি পর্ণকুটির নির্মাণ করে মাছমাংস ও ফলমূল খেয়ে জী্ন ধারধণ করতে লাগলেন।
রাজকুমারের পত্নীর নাম ছিল অসিতাভা।েএকদিন রাজকুমার িএক সুন্দরী কিন্নরীকে দেখে তার রূপে মোহিত হয়ে স্থির করলেন, তিনি সেই কিন্নরীকে পত্নীরূপে বরণ করে নেবেন। এই মনে করে তিনি অসিতাভাকে উপেক্ষা করে সেই কিন্নরীকে পিছনেই ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।
স্বামীকে কিন্নরীর প্রতি আসক্ত দেখে স্বামীর প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠলেন অসিতাভা। তিনি ভাবলেন, আমার স্বামীর সঙ্গে আর আমার কোন সম্পর্ক নেই। কারণ তিনি এখন আমাকে উপেক্ষা করে এক কিন্নরীর পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এই ভেবে অভিতাভা বোধিসত্ত্বের নিকট গিয়ে ধর্মোপদেশ গ্রহণ করলেন। তারপর ধ্যানবলে অভিজ্ঞা ও সমাপত্তি লাভ করলেন। তারপর বোধিসত্ত্বকে প্রণাম করে সেই পর্ণশালায় ফিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
এদিকে ব্রক্ষদত্তকুমার শত চেষ্টাতেও কিন্নরীর দেখা বা কোন সন্ধান না পেয়ে হতাশ হয়ে তাঁর পর্ণশালায় ফিরে এলেন। অসিতাভা স্বামীকে ফিরে আসতে দেখে আকাশে উত্থিত হয়ে একটি গাথার মাধ্যমে বললেন, আর্যপুত্র, আমি তোমার অনুগ্রহেই এই ধ্যানসুখ লাভ করেছি। যখন দেখলাম তুমি কিন্নরীর প্রেমে আসক্ত হয়ে আমায় ফেলে চলে গেলে, তখনই তোমর প্রতি আমার সব অনুরাগ দূর হয়ে গেল। করাত দ্বারা দুখণ্ড করা গজদণ্ড যেমন আর জোড়া লাগে না, তেমনি মানুষের প্রণয়ও একবার খন্ডিত হলে আর অখন্ড হয় না।
এই বলে তিনি শূন্যে আরও উপরে উঠে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কুমার দেখতে গিয়ে তাঁকে দেখতে পেলেন না। তখন একটি গাথার মাধ্যমে আক্ষেপ করতে লাগলেন, দুষ্প্রাপ্যকে পাবার লোভে মত্ত হয়ে আমি আমার সতী অসিতাভাকে হারালাম। আমি কি ঘৃণ্যমতি!
এইভাবে বিলাপ করতে করতে রাজকুমার একাই সেই পর্ণশালায় বাস করতে লাগলেন। পরে পিতার মৃত্যু হলে বারাণসীতে গিয়ে রাজপদ লাভ করলেন।
সুত্র ঃ জাতকসমগ্র