উপাসকের পেশা কেমন হওয়া উচিত ?
লিখেছেন- জ্ঞানশান্ত ভিক্ষু।
ত্রিরত্নের উপাসক বা উপাসিকা হলে তার মিথ্যাবাণিজ্য ত্যাগ করা উচিত। বুদ্ধ বলেছেন, ভিক্ষুগণ, উপাসকের পাঁচ প্রকার বাণিজ্য করা উচিত নয়। অস্ত্রবাণিজ্য, প্রাণিবাণিজ্য, মাংসবাণিজ্য, মদবাণিজ্য, বিষবাণিজ্য (অঙ্গুত্তর নিকায়.৫.১৭৭)। এখানে অস্ত্রবাণিজ্য মানে হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করা। প্রাণিবাণিজ্য মানে হচ্ছে মানুষ বিক্রি করা। মাংসবাণিজ্য মানে হচ্ছে শুয়োর, হরিণ ইত্যাদি বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণি পালন করে বিক্রি করা। সেগুলোকে জবাই করে মাংস বিক্রি করাটাও এই মাংসবাণিজ্যের অন্তর্গত। বর্তমানে শুয়োরের খামার, মুরগির খামার, মাছের খামার এগুলোও মাংসবাণিজ্য। মদবাণিজ্য মানে হচ্ছে যেকোনো ধরনের মদ বিক্রি করা। বিষবাণিজ্য মানে হচ্ছে বিষ বিক্রি করা। এগুলো নিজেও করা উচিত নয়, অন্যদেরকে দিয়ে করানোও উচিত নয়।
অঙ্গুত্তর নিকায়ের টীকামতে, অস্ত্রবাণিজ্য করলে আপনি সেই অস্ত্র দিয়ে অপরের অপরাধের সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাই সেটা অকরণীয়। প্রাণিবাণিজ্য বা মানুষ বিক্রি করলে সেটার মাধ্যমে আপনি অপরকে দাস বা চাকর বানানোর পথ দেখাচ্ছেন। তাই সেটা অকরণীয়।
মাংস ও বিষ বাণিজ্য প্রাণিহত্যার কারণ হয়। তাই সেটা অকরণীয়। মদবাণিজ্য করলে সেটা অন্যদের প্রমত্ততা বা মাতলামির কারণ হয়। তাই এধরনের বাণিজ্য বাদ দিয়ে ধর্মত ও ন্যায়সঙ্গত পেশার দ্বারা জীবন যাপন করা উচিত। পাঁচ প্রকারের মিথ্যাবাণিজ্যের মাধ্যমে হয়তো টাকা-পয়সা বা মানসম্মান আসতে পারে। কিন্তু নিজের ভবিষ্যতের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে বুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা কোনো উপাসকের উচিত নয়।
বিশুদ্ধিমার্গ মহাটীকামতে, গৃহীরা যেসমস্ত পেশার মাধ্যমে জীবন ধারণ করে সেগুলোর মধ্যে কাঠমিস্ত্রি ইত্যাদি পেশা হচ্ছে নিম্নশ্রেণির পেশা। কৃষিকাজ, ব্যবসাবাণিজ্য ইত্যাদি হচ্ছে উৎকৃষ্ট পেশা। আবার বিভিন্ন শিল্পবিদ্যার ক্ষেত্রেও বেতের কারিগর ইত্যাদি হচ্ছে নিম্নশ্রেণির পেশা। অন্যদিকে মুদ্রা গণনা বা হিসাববিজ্ঞান ইত্যাদি হচ্ছে উৎকৃষ্ট (ৰিসু.মহাটীকা.২.৪২৭)। তবে হীন হোক বা উৎকৃষ্ট হোক, নিজের দক্ষতা ও আগ্রহ অনুসারে এধরনের যেকোনো পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবন ধারণ করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ ঘটিকার ব্রাহ্মণ অনাগামী মার্গফল লাভী হয়েও কুমোরের কাজ করে মাটির হাঁড়ি পাতিল বানিয়ে তার বৃদ্ধ বাবা-মাকে ভরণপোষণ করত।