৪র্থ শতাব্দীর চান রাজত্বে কুং ইউ নামে এক বৃদ্ধ লােক শহরে বাস করেন। তিনি
রাজপ্রাসাদে স্বল্প বেতনের নিম্নপদে চাকরি করতেন এবং অনেক দুঃখ-কষ্টে জীবন যাপন করতেন।
একদিন ভােরে তিনি লক্ষ্য করেন, এক লােক একটি কচ্ছপ বাজার থেকে কিনে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। কচ্ছপের পরিণতির কথা ভেবে কুং ইউ খুবই ব্যথিত হন। কুং ইউ কচ্ছপের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকেন। কচ্ছপটি নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষার জন্য লােকটির নিকট কুং ইউ বেশী দামে কচ্ছপটি ক্রয় করার প্রস্তাব দেন। বেশী দাম পাওয়ার লােভে, লােকটি কুং ইউর কাছে কচ্ছপটি বিক্রী করেন। কুং ইউ কচ্ছপটি কিনে নিয়ে নদীতে ছেড়ে দেন।
কচ্ছপটি বুঝতে পারে কুং ইউ তার জীবন রক্ষা করেছেন। এজন্য কচ্ছপটি নদীর গভীর পানিতে যাওয়ার সময় কুং ইউর দিকে কৃতজ্ঞতাভরে মাঝে মাঝে পিছন ফিরে তাকায়। কুং ইউ এই অভাবনীয় দৃশ্য লক্ষ্য করেন এবং কচ্ছপটি গভীর জলে ডুব দেয়া পর্যন্ত তার গমনপথের দিকে কুং ইউ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন।
এ ঘটনার কয়েক বছর পর, কুং ইউর চাকুরীতে পদোন্নতি হয়। ইতিমধ্যে রাজ্যে বিদ্রোহ দেখা দিলে সেই দেশের রাজা চিন্তিত হয়ে পড়েন। রাজ্যের এই সংকটময় মুহুর্তে কুং ইউর পরামর্শে রাজা সেই বিদ্রোহ দমন করেন। রাজা এতে খুশী হয়ে রাজ্যের খুব উচু এবং সম্মানী পদে কুং ইউকে অধিষ্ঠিত করেন।
কুং ইউ যখন উচ্চ পদে আসীন হন, তাকে লর্ড সম্মান সূচক উপাধি প্রদান করার জন্য একটি ধাতুনির্মিত সীলমােহর তৈরি করতে রাজকীয় কারিগরকে আদেশ দেয়া হয়। রাজার আদেশ পেয়ে কারিগর সীলমােহর তৈরির কাজে লেগে যায়। সীলমােহরটি তৈরির জন্য কারিগর যখন ছাচে ঢালাই দিতে যায়, তখন এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখা যায় । পিছনে ঘাড় বাঁকা তাকানাে অবস্থায় একটি কচ্ছপের ছবি সীলমােহরে ফুটে উঠে। এই দৃশ্য দেখে কারিগর বিস্মিত হয়। কারিগর পুনরায় সীলমােহর তৈরির কাজে হাত দিতেই একই ঘটনার দৃশ্য দেখা যায়। যখনই সীলমােহর তৈরির জন্য কারিগর চেষ্টা করেন, ততবার কচ্ছপের ছবি ভেসে উঠে। কারিগর এই ঘটনায় খুব হতচকিয়ে যান। কি ভুতুরে কান্ড! কারিগর মহামান্য লর্ড কুং ইউকে নতজানু হয়ে এই আশ্বর্য ঘটনা সর্ম্পকে বলেন,
“মহামান্য লর্ড, আমাদের মহামান্য রাজার নির্দেশে আপনাকে নতুন পদমর্যাদার সম্মান সূচক উপাধি প্রদানের জন্য একটি সীলমােহর তৈরির আদেশ পাই। কিন্তু যতবার সীল তৈরির প্রস্তুতি নিতে যাই, ঘাড় বাঁকিয়ে তাকানাে একটি কচ্ছপের ছবি পুনঃ পুনঃ সীলমােহরে ভেসে উঠে।” এ ঘটনা শােনার পর নতুন মহামান্য লর্ড কুং ইউ সীলমােহর করতে গিয়ে ঘাড় বাঁকানাে একটি কচ্ছপের ছবি দেখতে পান। নতুন লর্ড কুং ইউ এ ঘটনায় হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। ক্রমে ক্রমে এই অদ্ভুত ঘটনা মহামান্য রাজা জানাতে পারেন। মহামান্য রাজা নতুন লর্ড কুং ইউকে এই আশ্চর্য ঘটনা সর্ম্পকে জানতে চান। তার জন্য সীলমােহর তৈরি করতে কেন কচছপের ছবি ভেসে উঠে। রাজার এই প্রশ্নে নতুন লর্ড কুং ইউ হতবিহ্বল হয়ে চুপ করে থাকেন। একদিন কুং ইউ রাজপ্রাসাদ থেকে কাজ শেষে বাড়ীতে রওনা হতেই হঠাৎ পূর্বের ঘটনাটি মনে পড়ে। পরদিন মহামান্য রাজদরবারে লর্ড কুং ইউ পূর্বের ঘটনার কথা রাজাকে জানান।
“অনেক বছর পূর্বে আপনার দরবারে যখন নিম্নপদে কাজ করতাম, তখন এক লােক বাজার থেকে একটি কচ্ছপ কিনেন, বাড়ীতে নিয়ে রান্না করার উদ্দেশ্য। কচ্ছপটির নিশ্চিত মৃত্যু হবে – এই কথা ভেবে – আমি টাকা দিয়ে লােকটির কাছ থেকে কচ্ছপটি কিনে নিই এবং পানিতে ছেড়ে দেই। কচ্ছপটি কেন জানি বুঝতে পেরেছিল আমি তার জীবন রক্ষা করেছি এবং পানিতে ছেড়ে দেয়ার পর কচ্ছপটি ঘাড় বাঁকা করে আমার দিকে তাকিয়ে যেন বারবার আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিল।”
“মাননীয় ধর্মাবতার, বর্তমানে আমাকে লর্ড উপাধিতে ভূষিত করেছেন। সীল তৈরির সময় যে কচ্ছপের ছবি বারবার ভেসে উঠে, আমার মনে হয়, আমার বর্তমান উন্নতির প্রধান কারণ উক্ত কচ্ছপের হত্যাযজ্ঞ থেকে রক্ষার কারণে স্বর্গের দেবতাগণ খুশী হয়ে আমার জন্য আশীর্বাদ করছেন।”
মহামান্য সম্রাট রাজসভাসদগনের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, “যারা ভাল কাজ করেন, স্বর্গের দেবতাগণ তাদের পুরস্কার এবং উন্নতির জন্য আশীর্বাদ করেন। লর্ড কুং ইউ এর ঘটনা একটি প্রকৃষ্ট নিদর্শন।”
সুত্রঃ সজল কান্তি বড়ুয়ার লিখা প্রানির প্রতি দয়া বই থেকে সংগৃহীত