পুরাকালে বারাণসীরাজ ব্ৰহ্মদত্তের সময় বােধিসত্ব এক বণিকের গৃহে জন্মগ্রহণ করেন। নামকরণ দিবসে তাহার নাম রাখা হইয়াছিল “পণ্ডিত।” তিনি বয়ঃপ্রাপ্তির পর অপর এক বণিকের সহিত মিলিত হইয়া ব্যবসায় আরম্ভ করিলেন। এই ব্যক্তির নাম ছিল ‘অতিপণ্ডিত।” ইহারা দুই জনে পঞ্চশত পণ্যপূর্ণ শকটসহ জনপদে গিয়া ক্রয় বিক্রয় দ্বারা বিলক্ষণ লাভবান হইয়া বারাণসীতে ফিরিয়া আসিলেন। অনন্তর লাভ-বিভাগকালে অতিপণ্ডিত বলিলেন, আমি দুই অংশ লইব (তুমি এক অংশ লইবে)।” পণ্ডিত জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি দুই অংশ পাইবে কেন ?” অতি পণ্ডিত বলিলেন, “তুমি পণ্ডিত, আমি অতিপণ্ডিত। যে পণ্ডিত, সে এক ভাগ এবং যে অতিপণ্ডিত সে দুই ভাগ পাইবার উপযুক্ত।” “সে কি কথা? পণ্যের মূল্যই বল, আর গাড়ী বলদই বল, আমরা দুই জনেই ত সমান সমান দিয়াছি; তবে তুমি কিরূপে দুই ভাগ পাইবে ?” “অতিপণ্ডিত বলিয়া।” এই রূপে কথা বাড়াইয়া শেষে তাহার কলহ আরম্ভ করিল। অনন্তর অতিপণ্ডিত ভাবিলেন, “আচ্ছা ইহার মীমাংসার এক উপায় করিতেছি।” তিনি তাঁহার পিতাকে এক তরুকোটরে লুকাইয়া রাখিয়া বলিলেন, “আমরা আসিয়া মখন জিজ্ঞাসা করিব, তখন আপনি বলিবেন, অতিপণ্ডিত দুই ভাগ পাইবে।” তাহার পর তিনি বােধিসত্বের নিকট গিয়া বলিলেন, “ভাই, আমাদের কাহার কি ভাগ প্রাপ্য, তাহা বৃক্ষদেবতার জানা আছে; চল তাহাকে গিয়া জিজ্ঞাসা করি।” তদনুসারে সঁহার দুই জনে সেই তরুতলে উপস্থিত হইলেন এবং অতিপণ্ডিত প্রার্থনা করিলেন, “ভগবতি বৃক্ষদেবতে। আমাদের বিবাদ মীমাংসা করিয়া দিন।” তথন অতিপণ্ডিতের। পিতা স্ব-পরিবর্তন করিয়া বলিলেন, “তােমাদের বিবাদ কি বল।” অতিপণ্ডিত বলিলেন, “ভগবতি, এ ব্যক্তি পণ্ডিত ; আর আমি অতিপণ্ডিত ; আমরা একসঙ্গে ব্যবসায় করিয়াছিলাম ; তাহার লাভের অংশ কে কত পাইব।” ভরুকোটর হইতে উত্তর হইল, “পণ্ডিত এক ভাগ এবং অতিপণ্ডিত দুই ভাগ পাইবেন।” বােধিসত্ত্ব এই বিচার শুনিয়। ভাবিলেন, “এখানে দেবতা আছে কি না আছে, তাহা জানিতে হইতেছে।” তিনি পলাল সংগ্রহ করিয়া কোটরে পূরিলেন এবং তাহাতে অগ্নিসংযােগ করিলেন। ধক ধক্ করিয়া অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল ; অতিপণ্ডিতের পিতা অর্ধদগ্ধশরীরে তাহা হইতে বাহির হইলেন এবং শাখাবলম্বনে ঝুলিতে ঝুলিতে ভূতলে অবতরণ পূর্বক এই গাথা পাঠ করিলেন –
সার্থক পণ্ডিত নাম ধর তুমি, সাধুবর,
নাহি ইথে সন্দেহের লেশ ; অতিপণ্ডিতের নাম নিরর্থক, হায় হায় !
তারি দোষে এত মাের কেশ। ইহার পর তাহারা সমান অংশে লাভ ভাগ করিয়া লইলেন এবং যথাকালে স্ব স্ব কৰ্ম্মানুরূপ ফলভােগার্থ লােকান্তরে গমন করিলেন।
সুত্র ঃ জাতকসমগ্র ।