কৃশা গৌতমী
লেখেছেন- ভদন্ত সুপ্রিয় মহাথেরো
শ্রাবস্তীর এক দরিদ্র পরিবারে এক দুঃখী মেয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তাঁর দেহ ছিল অতিশয় কৃশকায় । তিনি জীর্ণ শীর্ণ কৃশকায় ছিলেন বলে কৃশা গৌতমী নামে পরিচিত ছিলেন । বিবাহিতা জীবনেও তিনি অনাদর ও অবহেলায় ছিলেন ।
লোকে তাঁকে অনাথা বলত । সংসার জীবনে তিনি এক পুত্র সন্তান প্রসব করেছিলেন । তাতেই তিনি মানুষের কাছে সম্মান লাভ করতে শুরু করলেন ।পুত্রটি যখনই শিশুকাল অতিক্রম করে শৈশবে পদার্পন করল তখন তাঁর মৃত্যু হয় ।
পুত্রের এমন মৃত্যুতে মাতা কৃশা গৌতমী শোকে উদভ্রান্ত হয়ে গেলেন ।
উন্মাদিনী হয়ে মৃত পুত্রটি কোলে নিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে বললেন – “সন্তানের জন্য ঔষধ দাও ।”
নগরবাসী বলল, ‘ঔষধ কি জন্য, ঔষধ দিয়ে কি হবে ?
মৃত সন্তান তো ঔষধে প্রাণ ফিরে পাবে না ।
কিন্তু পুত্র শোকে পাগলিনী, শোকাতুরা জননী তাদের কথা বুঝতে পারলো না ।
অবশেষে এক ব্যক্তি তাঁর বেদনা ও সম্যক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পেরে তাঁকে মহামানব বুদ্ধের নিকট গিয়ে ঔষধ প্রার্থনা করতে বললেন ।
কৃশা গৌতমী জেতবন বিহারে গিয়ে বুদ্ধের নিকট ঔষধ প্রার্থনা করলেন ।
গৌতমী বললেন – “ভগবান আমার সন্তানের জন্য ঔষধ দিন ।”
বুদ্ধ বললেন, “মানুষ মারা যায়নি এমন ঘর থেকে এক মুঠো সরিষা নিয়ে এস ।”
কৃশা গৌতমী সরিষার জন্য প্রতি ঘরে ঘরে গেলেন । কিন্তু মানুষ মারা যায়নি এমন একটিও পরিবার খুঁজে পেলেন না ।
তিনি দেখলেন জীবিতের চেয়ে মৃতের সংখ্যাই বেশী । একথা চিন্তা করতে
করতে তাঁর মনে জ্ঞান চক্ষু খুলে যায় ।
ফলে সে আসল সত্য উপলব্দি করতে সক্ষম হল । তাঁর মনের দুঃখ অনেকটা লাঘব হল ।
তিনি শশ্মানে গিয়ে মৃত পুত্রের দেহ সৎকার করলেন । তারপর তিনি বুদ্ধের নিকট আবার উপস্থিত হলেন ।
বুদ্ধ জিজ্ঞেস করলেন – তোমার মৃত ছেলের জন্য সরিষা পেয়েছ ?
কৃশা গৌতমী বললেন – ভগবান ! শস্যবীজের আর প্রয়োজন নেই । আমাকে দীক্ষাদান করুন ।
বুদ্ধ বললেন – মানুষ মরণশীল । জন্ম নিলে মৃত্যু হবে ।
বুদ্ধ একটি উদাহরণ দিয়ে উপদেশ দিলেন, “প্রবল বন্যা যেমন
ঘুমন্ত গ্রাম ভাসিয়ে নেয় তেমনি মৃত্যুও সকলকে হরণ করে ।”
বুদ্ধের উপদেশ শুনে কৃশা গৌতমী স্রোতাপন্ন হয়ে ভিক্ষুণীধর্ম পালনের প্রার্থনা করলেন ।
তাঁর প্রার্থনা পূর্ণ হল । তিনি অন্তর্দৃষ্টি লাভ করে অর্হত্ব প্রাপ্ত হন । তিনি
ভিক্ষুণীধর্মের নিয়ম যথাযথ পালন করে খ্যাতি লাভ করেন । তাঁকে জেতবনের ভিক্ষুণীসংঘে যথার্থ ও সম্মানের আসন দেওয়া হয়েছিল ।