একসময় সর্বজন পূজ্য শ্রাবকবুদ্ধ পরম শ্রদ্ধেয় বনভন্তে সমবেত দায়ক দায়িকাবৃন্দের উদ্দেশ্যে ধর্মদেশনা প্রদানকালে বলেন-তোমাদেরকে ধর্মদেশনা প্রদান করার ইচ্ছা হচ্ছে না আমার। কারণ দেশনা প্রদান করলেও তোমরা সেটা বুঝতে পারবে না। তারপরও আমি মন চিত্ত সম্বন্ধে বলছি,ভালোরূপে শ্রবণ কর। মন চিত্ত কি? সাধারণত মন চিত্ত চঞ্চল,এক স্থানে থাকে না। সর্বদা বিষয় হতে বিষয়ান্তরে বিচরণ করে। চিত্ত কেন সেভাবে ঘুরে বেড়ায়? চিত্ত দুঃখ পায় বলে সেভাবে ঘুরে বেড়ায়। প্রায় লোকজনকে বলতে শুনা যায়-‘আমি কি করব, আমি কোথায় যাবো, আমি কোথায় অবস্থান করবো? প্রকৃতপক্ষে লোকজনেরা এসব কথা বলে না, তাদের মন চিত্তই এসব চিন্তা করে। চিত্ত যদি তৃষ্ণা থেকে মুক্ত হতে না পারে, তাহলে মাররাজ্যে অবস্থান করবে, এভাবে সর্বদা ঘুরে বেড়াবে।

তোমরা কোথা (কোন লোক) হতে এসে বর্তমানে এই জন্মগ্রহণ করেছ? সাধারণতঃ কেউ কামলোক হতে, কেউ রূপলোক হতে, কেউ বা অরূপলোক হতে চ্যুত হয়ে বর্তমান এই জন্মগ্রহণ করেছ। তোমরা যেইজন যে লোক হতে চ্যুত হয়ে এসেছ তার চিত্তে সেইরূপ স্বভাব বিদ্যমান থাকবে। কামলোক হতে আসলে কামলোকের স্বভাব, রূপলোক হতে আসলে রূপলোকের স্বভাব,আর অরূপলোক হতে আসলে অরূপলোকের স্বভাব; এমন কি তির্যক প্রাণী, যেমন-বানর হতে আসলে বানরের স্বভাব, হাতি হতে আসলে হাতির স্বভাব, বাঘ হতে আসলে বাঘের স্বভাব, বিড়াল হতে আসলে বিড়ালের স্বভাব, ময়না হতে আসলে ময়নার স্বভাব থাকবে। পূর্বজন্মের স্বভাব থেকেই যাবে, সেই স্বভাবকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা যাবে না। বুঝতে পারছ তো? আমি দেখছি, তোমাদের প্রত্যেকের চিত্ত তৃষ্ণায় জট বেঁধে রয়েছে। সেই তৃষ্ণায় জট বাধা অবস্থা হতে চিত্তকে মুক্ত করতে পারবে কি তোমরা? পারবে না। চিত্ত যদি তৃষ্ণার জট দ্বারা আবদ্ধ থাকে, তাহলে চিত্ত দুঃখ পায় বা দুঃখগ্রস্ত হয়। সেই দুঃখাবস্থা হতে মুক্ত হবার জন্যে চিত্ত ছট্‌ফট্‌ করে। অন্যদিকে চিত্ত যদি অবিদ্যার জটে আবদ্ধ থাকে, তাহলে চিত্ত পাপকর্মের দিকে প্রভাবিত হয়, সর্বদা পাপকর্ম সম্পাদন করতে থাকে, দুঃখমুক্তি নির্বাণ লাভ বুঝতে পারে না, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, জায়গা-জমি নিয়ে যারপরনাই ব্যাপৃত থাকে।

কয়েক মাস পূর্বে আমেরিকা হতে বেশ কয়েকজন ভদ্রলোক ও ভদ্র মহিলা আমার নিকট এসেছিল। তাদের সাথে একজন বড়ুয়াও ছিল। তারা সেই বড়ুয়ার মাধ্যমে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল-ভন্তে, মেয়েরা ভালো নাকি পুরুষেরা ভালো? তারা নাকি সে ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছে না। তাদেরকে আমি বলেছিলাম-যার চিত্তে বা যার নিকট জ্ঞান থাকে, সেই ভালো। পুরুষদের নিকট জ্ঞান থাকলে পুরুষেরা ভালো, আর মহিলাদের নিকট জ্ঞান থাকলে মহিলারা ভালো। অন্যদিকে যার নিকট জ্ঞান নেই সেই খারাপ। পুরুষদের নিকট জ্ঞান না থাকলে পুরুষেরা খারাপ এবং মহিলাদের নিকট জ্ঞান না থাকলে মহিলারা খারাপ। মোটকথা, যার নিকট জ্ঞান থাকে সেই ভালো, আর যার নিকট জ্ঞান নেই সেই খারাপ। যেই পুরুষের নিকট জ্ঞান থাকবে সেই পুরুষ ভালো এবং যেই মহিলার নিকট জ্ঞান থাকবে সেই মহিলা ভালো। অপরদিকে যেই পুরুষের নিকট জ্ঞান থাকবে না সেই পুরুষ খারাপ এবং যেই মহিলার নিকট জ্ঞান থাকবে না সেই মহিলা খারাপ। কেবল পুরুষেরা ভালো, মহিলারা খারাপ অথবা কেবল মহিলারা ভালো, পুরুষেরা খারাপ-এটা বলা যায় না। ভালো নাকি খারাপ-সেটা প্রমাণ হবে জ্ঞানের মাধ্যমে; পুরুষ-মহিলার বাহ্যিক পরিচয়ে নয়। তারা আমার উত্তর শুনে অত্যন্ত খুশি হয়। পরিতৃপ্ত মনে সেটা অনুমোদন করে চলে যায়। সবাই আমার সাথে বলো “চিত্তের মধ্যে জ্ঞান থাকলে পুরুষেরাও ভালো, মহিলারাও ভালো। আর চিত্তের মধ্যে জ্ঞান না থাকলে পুরুষেরাও খারাপ, মহিলারাও খারাপ।” মনে রাখবে, চিত্তের মধ্যে জ্ঞান থাকলে ভালো আর জ্ঞান না থাকলে খারাপ।

বনভন্তে আরো বলেন-জ্ঞান না থাকলে বৌদ্ধধর্ম আচরণ করা যাবে না। তোমরা যদি অজ্ঞানী হও তাহলে স্বামী-স্ত্রী হয়ে সর্বদা পাপকর্ম সম্পাদন করেই চলবে। পুরুষেরা নারী চিত্ত হয়ে পড়বে আর নারীরা পুরুষ চিত্ত হয়ে পড়বে। পুরুষেরা নারীর পিছনে ঘুরবে আর নারীরা পুরুষের পিছনে ঘুরবে। পুরুষেরা নারী ছাড়া থাকতে পারবে না, নারীরা পুরুষ ছাড়া থাকতে পারবে না। পুরুষেরা নারীর প্রতি মোহিত হয়ে থাকবে, নারীরা পুরুষের প্রতি মোহিত হয়ে থাকবে। কিন্তু তোমাদের নিকট যদি ধর্মজ্ঞান, ধর্মচক্ষু উদয় হয় তাহলে তোমরা সেসব হতে নিজকে বিরত রাখবে। আর তখনই বৌদ্ধধর্ম আচরণ করতে সক্ষম হবে। এমন কি লোকোত্তর সুখ নির্বাণও আয়ত্ত করতে পারবে। লোকোত্তর সুখ লাভ করার প্রধান অন্তরায় হল স্বামী-স্ত্রী হয়ে কাম্য সুখ ভোগ করা। স্বামী-স্ত্রী হয়ে কাম্য সুখ ভোগে রত থাকলে লোকোত্তর সুখ নির্বাণ লাভ হয় না। আমার নিকট হতে এবম্বিধ উপদেশ শ্রবণ করে রাজ চন্দ্র বলেছিল-‘বেগ মিলেগুন মরি  গেলে নির্বাণযে  পারিবো। অর্থাৎ সব মেয়েরা মরে না গেলে নির্বাণ লাভ করা যাবে না। তার সে কথা শুনে মেয়েরা রেগে গিয়েছিল। তারা বলে উঠলো-‘সে নির্বাণ যাবে যাক, তজ্জন্য আমাদেরকে মরতে হবে কেন?আমরা মেয়েরা তাকে কি করলাম?’ রাজ চন্দ্রের কথা অনুসারে সব মেয়েরা মরে গেলে, কোন মেয়ে না থাকলে সে নির্বাণ লাভ করতে পারবে। কিন্তু সেটা তার অজ্ঞানের কথা। কারণ তার চিত্তে যদি অজ্ঞানতা থাকে তাহলে মেয়েরা সবাই মরে গেলেও সে নির্বাণ লাভ করতে পারবে না। আর যদি তার চিত্তে জ্ঞান থাকে, মেয়েরা জীবিত থাকলেও সে নির্বাণ লাভ করতে পারবে। নির্বাণ লাভ করার জন্য মেয়ে (বা পুরুষ) জীবিত থাকা-না থাকা কোন ব্যাপার নয়। চিত্তে জ্ঞান বিদ্যমান থাকাই আসল কথা। বনভন্তে সমবেত দায়ক দায়িকাগণকে প্রশ্ন করেন-মেয়েরা সবাই মরে গেলে কি রাজ চন্দ্র নির্বাণ লাভ করতে পারবে? দায়ক-দায়িকাবৃন্দ একবাক্যে বলে উঠে-”না ভন্তে, পারবে না। “বনভন্তে বলেন-রাজ চন্দ্রের কথা হল মেয়েরা সবাই মরে গেলে সে নির্বাণ লাভ করতে পারবে। এটা তার অজ্ঞানেরই কথা। কারণ চিত্তের মধ্যে যদি জ্ঞান থাকে তাহলে মেয়ে থাকলেও নির্বাণ লাভ করা যায়। অন্যদিকে চিত্তের মধ্যে যদি জ্ঞান না থাকে তাহলে সংসারে কোন মেয়ে না থাকলেও নির্বাণ লাভ করা যাবে না। মোটকথা হল, চিত্তের মধ্যে জ্ঞান থাকলে নির্বাণ লাভ করা যায়, আর চিত্তের মধ্যে জ্ঞান না থাকলে নির্বাণ লাভ করা যায় না। তজ্জন্য প্রথমেই বলেছি, বৌদ্ধধর্ম আচরণ করতে হলে জ্ঞানের প্রয়োজন। জ্ঞান না থাকলে বৌদ্ধধর্ম আচরণ করা যায় না। সেই জ্ঞান কি? কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রাপ্ত বি. এ., এম. এ., ডক্টরেট ডিগ্রী নয়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী নিতে যে সকল বিষয়ে অধ্যয়ন করতে হয় তা তো সম্পূর্ণ পরের ধ্যান-ধারণা, সাধারণ জ্ঞান মাত্র। সেই পরের ধারণা দিয়ে প্রকৃত জ্ঞান, অসাধারণ জ্ঞানের উন্মেষ সম্ভব নয়। অসাধারণ জ্ঞান লাভের জন্য জ্ঞানীকে নিজের ভেতর থেকেই জ্ঞানের উন্মেষ ঘটাতে হয়। আমি একটি ব্রহ্মদেশীয় পুস্তকেও (বঙ্গানুবাদ) পড়েছি-পরের মুখের কথায়, উপদেশ শ্রবণে, পুঁথিগত বিদ্যায় অসাধারণ জ্ঞান অর্জিত হয় না। নিজের বিবেক-বুদ্ধি-চিন্তা, বিচার-বিবেচনা, গবেষণার আলোকে অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। হ্যাঁ, সেই কথাটি সম্পূর্ণ সঠিক। কারণ অগ্নিকণা বিহীন ছাঁইস্তুপে সারাদিন ফুঁ দিলেও কিছুতেই আগুন জ্বলে উঠবে না। জ্বলে উঠবে কি? “না ভন্তে, জ্বলে উঠবে না।” যেহেতু ছাঁইস্তুপে কোন অগ্নিকণা নেই। অন্যদিকে অগ্নিকণা বিশিষ্ট ছাঁইস্তুপে ফুঁ দিলে সঙ্গে সঙ্গেই আগুন জ্বলে উঠবে। ঠিক তদ্রুপ তোমাদের চিত্তে যদি জ্ঞান না থাকে,আমি সারাদিন ধর্মদেশনা প্রদান করলেও তোমাদের কিছুই হবে না। আর তোমাদের চিত্তে যদি জ্ঞান থাকে, আমি ধর্মদেশনা প্রদান করলে তোমাদের সেই জ্ঞান আরো বৃদ্ধি পাবে। বুদ্ধের জীবদ্দশায় উপাসক-উপাসিকাগণ এভাবেই বুদ্ধের নিকট ধর্মদেশনা শ্রবণ করার সঙ্গে সঙ্গে মার্গফলে প্রতিষ্ঠিত হতো। ভগবান বুদ্ধ ধর্মদেশনা প্রদান করার পূর্বে শ্রোতাগণের নিকট অন্তর্দৃষ্টিভাব উদয় হয়েছে কিনা তা দেখতেন। যখন দেখতেন শ্রোতাগণের নিকট অন্তর্দৃষ্টিভাব উদয় হয়েছে তখন তিনি স্কন্ধ, আয়তন, ধাতু ইত্যাদি পারমার্থিক দেশনা প্রদান করতেন। আর শ্রোতাবৃন্দ স্রোতাপত্তি, সকৃদাগামী, অনাগামী, অর্হৎ মার্গফলে অধিষ্ঠিত হতো। অন্তর্দৃষ্টিভাব উদয় না হলে ধর্মদেশনা প্রদান করলেও ধর্মদেশনার মর্মার্থ বুঝা যায় না। ধর্মদেশনা শ্রবণ করে মার্গফলাদি লাভ করা যায় না। ভগবান বুদ্ধ আন্দাজ (অনুমান) করে ধর্মদেশনা প্রদান করতেন না। শ্রোতাবৃন্দের চিত্তে অন্তর্দৃষ্টিভাব উদয় হলে তবেই তিনি ধর্মদেশনা প্রদান করতেন। সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাবৃন্দের ধর্মচক্ষু, ধর্মজ্ঞান উৎপন্ন হতো। ধর্মজ্ঞান শব্দের অর্থ কুশলাকুশল ও লৌকিক-লোকোত্তর ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞান। ধর্মজ্ঞান লাভ অর্থ স্রোতাপত্তি মার্গফলাদি লাভ করা। যাদের ধর্মজ্ঞান, ধর্মচক্ষু লাভ হয় তাদের চারি অপায় চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। যাদের ধর্মজ্ঞান, ধর্মচক্ষু লাভ হয় না, তাদের সর্বদা চারি অপায়ে পতনের সম্ভাবনা থেকেই যায়।

শ্রদ্ধেয় ভন্তে বলেন-এক সময় শ্রীলংকা হতে আগত জনৈক ভিক্ষু আমাকে বলেছিল, ভন্তে আপনাকে সবাই বলে অর্হৎ। আচ্ছা, আসলেই কি আপনি অর্হৎ? আমি সেই ভিক্ষুকে বলেছিলাম-ভগবান বুদ্ধ উরুবেলা কাশ্যপকে ১০৮টি ঋদ্ধি প্রদর্শন করেছিলেন। তারপরও উরুবেলা কাশ্যপ ভেবেছিল-শ্রমণ গৌতমের ঋদ্ধি রয়েছে, সে মহাঋদ্ধিশালী বটে। কিন্তু এখনও অর্হৎ হতে পারেন নাই। তখন ভগবান বুদ্ধ উরুবেলা কাশ্যপকে বলেছিলেন-মূর্খ, তুমি চিরকালই ভাববে গৌতম অর্হৎ নন। সঙ্গে সঙ্গে উরুবেলা কাশ্যপ ভগবানের পদে শির ভুলুণ্ঠিত হয়ে পড়েন। আর বুদ্ধের নিকট শিষ্যত্ব্‌ গ্রহণ করেন এবং তৃষ্ণাক্ষয় সাধন করে অর্হত্ত্ব লাভ করেন। কাজেই বাইরের শরীর দেখে তুমি কেমনে অর্হৎ চেনবে? তখন সেই ভিক্ষু বলেছিল-হ্যাঁ ভন্তে,আপনার কথা সঠিক। সে আরো বলেছিল-অর্হৎগণের উপাদান থাকে না, স্কন্ধ থাকে। সে আরো কি বলেছিল? ‘অর্হৎগণের উপাদান থাকে না,পঞ্চস্কন্ধ থাকে।’ অর্হৎগণের পঞ্চস্কন্ধ কিভাবে থাকে জান? অনাসক্তভাবেই থাকে। অর্হৎগণ পঞ্চস্কন্ধে অনাসক্তভাবেই থাকেন বা অনাসক্তভাবে পঞ্চস্কন্ধে অবস্থান করেন। পঞ্চস্কন্ধে অবস্থান না করলে অরহতকেও মরে যেতে হবে। কারণ পঞ্চস্কন্ধকে আশ্রয় করেই তো জীবনের অস্তিত্ব। তবে অরহতেরা পঞ্চস্কন্ধে সুখ ভোগ করে না। যেমন-তোমরা দান দিতেছ, আমি দান গ্রহণ করছি। কোথায় গ্রহণ করছি? পঞ্চস্কন্ধে করছি। পঞ্চস্কন্ধে দান গ্রহণ না করলে তো দান গ্রহণ করাই সম্ভব হবে না। অর্হৎগণ পঞ্চস্কন্ধে আসক্ত থাকেন না, তাই তারা সুখেই থাকেন। কিন্তু যারা অর্হৎ নয় তারা পঞ্চস্কন্ধের প্রতি আসক্ত হয়েই থাকে (বা অবস্থান করে)। তাই তারা দুঃখ পায়। তোমরাও অর্হৎ নয় বলে পঞ্চস্কন্ধে আসক্ত হয়ে অবস্থান করছ। পঞ্চস্কন্ধকে নিয়ে সুখ ভোগ করছ। ফলে বর্ণনাতীত দুঃখ ভোগ করেই চলেছ। মনে রাখবে,অর্হৎগণ পঞ্চস্কন্ধে আসক্ত থাকেন না। যারা অর্হৎ নয় তারা পঞ্চস্কন্ধে আসক্ত থাকে। অর্হৎগণ পঞ্চস্কন্ধে আসক্ত নয় বলে তারা পুনর্জন্ম ধারণ করেন না। কিন্তু যারা অর্হৎ নয় তারা পঞ্চস্কন্ধে আসক্ত বলে পুনর্জন্ম ধারণ করে।

প্রকৃত বৌদ্ধধর্ম আচরণ করতে চাইলে স্বামী-স্ত্রী হয়ে সাংসারিক জীবন যাপন করা যায় না। কোন মহিলা কোন পুরুষের স্ত্রী হতে পারবে না। কোন পুরুষ কোন মহিলার স্বামী হতে পারবে না। কারোর স্ত্রী হলেই দুঃখ পেতে হয়, পাপ অর্জিত হয়। কারোর স্বামী হলেই দুঃখ পেতে হয়, পাপ অর্জিত হয়। কারোর স্ত্রী না হলেই সুখ, পুণ্য; কারোর স্বামী না হলে সুখ, পুণ্য হয়। এটাই হচ্ছে বৌদ্ধধর্ম। তোমরা যদি স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ত্যাগ করে সাংসারিক জীবন যাপন না কর; কোন পুরুষ কোন মহিলার স্বামী না হও এবং কোন মহিলা কোন পুরুষের স্ত্রী না হও, এককথায় লৌকিক সুখ ভোগ পরিত্যাগ কর তাহলে নির্বাণ লাভ করতে পারবে। পরিশেষে তিনি বলেন-তোমরা সর্বদা জ্ঞানের সহিত অবস্থান কর। জ্ঞানের সহিত অবস্থান করলে কখনো পরিহানি হয় না। অধোপতনে পতিত হতে হয় না, দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হয় না। প্রতি পলে পলে উন্নতি, শ্রীবৃদ্ধি ও সুখ অর্জিত হতে থাকে। তোমরা কখনো অজ্ঞানের সহিত অবস্থান করবে না। অজ্ঞানের সহিত অবস্থান করলে উন্নতি, শ্রীবৃদ্ধি সাধিত হবে না। সুখ লাভ হবে না। সুখ লাভ করা সুদূর পরাহত হবে। অজ্ঞানের সহিত অবস্থান করাটা কি রকম জান? পরিহানি হবার কাণ্ড, অধোপতনে পতিত হবার কাণ্ড, দুঃখ পাবার কাণ্ড, ঠকে যাওয়ার কাণ্ড, পরাজিত হবার কাণ্ড। আর জ্ঞানের সহিত অবস্থান করাটা কি রকম? উন্নতি করার কাণ্ড, শ্রীবৃদ্ধি লাভের কাণ্ড, সুখ পাবার কাণ্ড, উতরে যাওয়ার কাণ্ড, জয়ী হবার কাণ্ড। তোমরা সবাই বলো “আমরা জ্ঞানের সহিত অবস্থান করব, অজ্ঞানতার সহিত অবস্থান করব না”। তাহলে তোমাদের সুখ লাভ হবে, উন্নতি-শ্রীবৃদ্ধি সাধিত হবে। তোমরা সর্বদিকে জয়যুক্ত হতে পারবে।

সাধু, সাধু, সাধু।

লেখকঃ ভদন্ত ইন্দ্রগুপ্ত মহাস্থবির, অধ্যক্ষ, রাজবন ভাবনা কেন্দ্র, রাঙ্গামাটি। আর্যশ্রাবক বনভন্তের ধর্মদেশনা সিরিজ গ্রন্থপ্রণেতা সহ অনেক বাংলা ত্রিপিটকীয় গ্রন্থের অনুবাদক।

error: Content is protected !!