পুরাকালে বােধিসত্ত্ব তক্ষশিলা নগরে একজন বিখ্যাত আচার্য ছিলেন। পাঁচশতশিষ্য তাঁর বিদ্যাভ্যাস করত। এই সব ছাত্রদের মধ্যে একজনের নাম ছিল পাপক। অন্যান্য ছারা তাকে সব সময় ‘এস পাপক’, যাও পাপক বলত। তাতে পাপক চিন্তা করতে লাগল, আমার নাম অমঙ্গল সূচক। অতএব আমি অন্য একটি নাম গ্রহণ করব। পাপক তাই আচার্যের কাছে গিয়ে বলল, গুরুদেব, আমার বর্তমান নামটা অমঙ্গলসূচক। আমার অন্য একটি নাম রাখুন। আচার্য বললেন, যাও, তুমিজনপদে গিয়ে ঘুরে একটা মঙ্গল সূচক নাম ঠিক করে এস। তুমি ফিরে এলে তােমারবৰ্তমান নামটা পরিবর্তন করে অন্য নাম রাখব। পাপক তখন যাত্রা শুরু করল। সে গ্রামে গ্রামে ঘুরে একটি নগরে গিয়ে উপস্থিত হলাে। সেই নগরে জীবক নামে একৰ্তি লােকের মৃত্যু হয়েছিল সেদিন। সুতি কুলগণ তার সৎকারের জন্য তার মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে দেখে পাপক জানতে চাইল, এই লােকটির নাম কি ছিল?তারা বলল, এর নাম ছিল জীবক। পাপক তখন আশ্চর্য হয়ে বলল, সেকি! জীবক মানেই ত যে দীর্ঘজীবি। সেই জীবকেরও মৃত্য হলাে। তখন সেই শবযাত্ররা বলল, জীবকেরও মৃত্যু হয়, অনীকেরও মৃত্যুহয়। মরা বাঁচা কি নামের উপর নির্ভর করে নাম তাে কোন বস্তু বা ব্যক্তিকেছেনার বা জানার একটা উপায়। তুমি ত দেখছি বড় মােটা বুদ্ধির লােক।এই কথা শুনে পাপক তা নাম সম্বন্ধে মধ্যমভাব অবলম্বন করল। অর্থাৎ তার নামের উপর বিরক্তি বা অনুরক্তি রইল না। পাপক এবার নগরের ভিতরে গিয়ে দেখল একটি বাড়ির দরজায় এক দাসীকে এক প্রভু ওপ্রভুপত্নী দড়ি দিয়ে প্রহার করছে।পাপক তখন সেই দাসীর প্রভুর কাছে জানতে চাইল, আপনারা একে প্রহার করছেন কেন? প্রভু তখন বলল, এই দাসী আজকের উপার্জনের টাকা পয়সা কিছু আনেনি। পাপক তখন জানতে চাইল, এর নাম কি? দাসীর প্রভু বলল, এর নাম ধনপালী। পাপক আশ্চর্য হয়ে বলল সেকি! এর নাম ধনপালী, অথচ এর একদিনের বেতন দেবার ক্ষমতা নেই। তারা বলল, নাম ধনপালী হােক, বা অধনপালী হােক, তা কি অদৃষ্টিকে এড়াতে পারে? নামে কি আসে যায়?নাম শুধু ব্যক্তি কে, এই পরিচয় পাওয়া যায়। তুমি দেখছিঅতি স্কুলবুদ্ধি। এই কথা শুনে পাপক তা নিজের নাম সম্বন্ধে আগেরবিদ্বেষ ভাব ত্যাগ করল। সে নগর হতে বাইরে গিয়ে পথ চলতে লাগল।কিছুদূরগিয়ে সে দেখল, একটি লােক পথ হারিয়েছে। পাপক তার কাছে জানতে চাইল, আপনি কি করছেন? লােকটি বলল, আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি, তাই পথ খুঁজছি। পাপক তার কছে নাম জানতে চাইল।। লােকটি বলল, আমার নাম পন্থক। পাপক একথা শুনে আশ্চার্য হয়ে ভাবল, পন্থক মানে যে অপরকে পথ দেখায়।তাই সে বল্ল, সেই! যে পন্থক সে পথ হারায় কি করে? লােকটি বলল, পন্থক হােক অপন্থকই হােক সব লােকই পথা হারায়। নামে কি আসে যায়?নাম শুধু কোন ব্যক্তি কে, এই পরিচয় জানা যায়। তােমার বুদ্ধি ত দেখছি খুবমােটা। এবার পন্থক নিজের নাম সম্বন্ধে সম্পূর্ণ রূপে বিদ্বেষ ইন হলাে। সে আচার্যের কাছে ফিরে গেল।আচার্য তাকে জানতে চাইল, কি বতস নাম নির্বাচনকরে এলে? পাপক বলল, গুরুদেব , যার নাম জীবক সেও মরে, যার নাম অজীবক, সেও মরে।যার নাম ধনপালী সেও দরিদ্র হয় আর যার নাম অধনপালী সেও দরিদ্ৰহয়।যার নাম পন্থক সেও পথ হারায়, যার নাম অপন্থক সেও পথ হারায়।নামে কিআসে যায়? এখন দেখছি নামের কোন সারবত্তা নেই।নামদ্বারা কোন বস্তু বাব্যক্তি দে কি তা শুধু জানা যায়। নামে সিদ্ধি লাভ হয় না।সিদ্ধিলাভের উপায় হলাে কর্ম। অতএব আমার অন্য নামের প্রয়ােজন নেই।আমার যে নাম আছে তাই থাকুক।পপকের সব কথা শুনে বােধিসত্ত্ব এই উপদেশ দান করলেন যে, নামে কিছু আসে যায়না।একমাত্র সিদ্ধিদাতা হচ্ছে কর্ম- এই সত্য যেন সবাই মনে রাখে।
সুত্র ঃ জাতকসমগ্র