“খোড়ার গিরি লংঘন” কথাটি প্রবাদ বাক্য বলা হয়। কেননা যে খোঁড়া বা আঁতুর সে কোন দিন পাহাড় পর্বত অতিক্রম করতে পারে না। এমনকি শক্ত-সমর্থ লোকও গিরি বা পাহাড় পর্বত অতিক্রম করতে সাহস পায় না।

এ উক্তিটি শ্রদ্ধেয় বনভান্তে জনৈকা উপাসিকার উদ্দেশ্যেই করেছিলেন। উক্ত উপাসিকা বলেছিলেন- আমার যদি লক্ষ লক্ষ টাকা থাকতো আমি বন বিহারের উন্নতি কল্পে ব্যয় করতাম। বনভান্তে বললেন- ঠিক কথা, তোমার মত খোঁড়ারাও বলে- আমার যদি পা স্বাভাবিক থাকতো, আমিও পর্বত বা গিরি লংঘন করতাম (এ কথাটা বলার পর আমরা হেঁসে উঠি)।

ইহার অর্থ হল- যে ইহ জন্মে খোঁড়া সে পূর্ব জন্মে অকুশল কর্ম বা পাপ কর্মের ফলে খোঁড়া হয়েছে, আর যে ভাল, ধরতে হবে সে পূর্ব জন্মে পূণ্যকর্ম করে স্বাভাবিক হয়েছে।

অন্যদিকে দেখা যায় কেহ কেহ ধনাঢ্য বা সম্পদশালী। তারা পূর্ব জন্মে দান, শীলাদি পালন করে সম্পদশালী হয়েছে। ইহাও সুকর্মের ফল। অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায় কেহ কেহ পূণ্য কর্ম করে, আর কেহ কেহ পূণ্য কর্ম করে না। যারা পূণ্য কর্ম করে তারা ভবিষ্যৎ জন্মের জন্য সম্পদ গচ্ছিত রাখে। আর যারা পূণ্য কর্ম করে না তারা পূর্ব জন্মের ফল ভোগ করে এবং ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ গচ্ছিত রাখে না।

মহৎ পূণ্য কর্ম করতে হলে দুটি জিনিসের দরকার। তা হল, পূর্ব জন্মের জমাকৃত সম্পদ ও ইহ জন্মের স’দিচ্ছা। এখন কথা হচ্ছে, কারো সদিচ্ছা আছে কিন্তু সম্পদ নেই এখানেই সেই ব্যক্তি এক প্রকার খোঁড়া বিশেষ। যদি কারো পূণ্যকর্ম করতে ইচ্ছা থাকে তবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী পূণ্যকর্ম করে যাওয়া উচিত। পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তি অফুরন্ত পূণ্যের ফল ভোগ করতে পারবে। দান করাও এক প্রকার বাঁধা। কেননা দান করলে দানের ফল ভোগ করতে হয়। ভোগ করাও দুঃখজনক। ত্যাগই পরম সুখ। ত্যাগ করা মহাকঠিন। ত্যাগ বলতে- লোভ, হিংসা, অজ্ঞানতা, মিথ্যাদৃষ্টি, মান, সন্দেহ, শীলব্রত পরামর্শ প্রভৃতিকে বুঝায়। যতদিন পর্যন্ত অবিদ্যা-তৃষ্ণা বিদ্যমান থাকবে ততদিন পর্যন্ত আসল সুখ কি তা বুঝা কঠিন।

আর একদিন শ্রদ্ধেয় বনভান্তে আর এক জন উপাসিকার উদ্দেশ্যেই একই উক্তি করেছিলেন। উপাসিকা বলেছিলেন- ভিক্ষু-শ্রামণ বন বিহার থেকে রংবস্ত্র ছেড়ে চলে গেলে আমার বড়ই দুঃখ লাগে। আমি যদি পুরুষ হতাম সারাজীবন বনভান্তের নির্দেশ অনুযায়ী চলতাম।

বনভান্তে উদাহরণ স্বরূপ বলেন- কোন লোক ব্যবসা করতে হলে প্রথমে তার সঞ্চিত টাকার প্রয়োজন। দ্বিতীয়তঃ তার অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। তৃতীয়তঃ তার কঠোর কর্ম প্রচেষ্ঠার প্রয়োজন। এ তিনটির সমন্বয়ে সে তার ব্যবসায় উন্নতি করতে পারবে। ঠিক তেমনি ভিক্ষু-শ্রামণের বেলায়ও তাই। যেমন পূর্বজন্মের অফুরন্ত পূণ্য পারমী, ইহ জন্মের অক্লান্ত অধ্যবসায় বা প্রচেষ্ঠা এবং ভগবান বুদ্ধের আবিষ্কৃত আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ বা পথে চললে ভিক্ষু-শ্রামণ সফলকাম হতে পারে। উক্ত উপাসিকা বনভান্তের ধর্মদেশনা শ্রবণ করে বনবিহার থেকে ভিক্ষু-শ্রামণ রংবস্ত্র ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ অনুধাবন করে দ্বিধামুক্ত হন।

#লেখাটি  Subrata Barua  কর্তৃক পোস্ট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে

error: Content is protected !!