পুরাকালে ব্রম্মদত্ত যখন বারাণসীর রাজা ছিলেন তখন বোধিসত্ত্ব এক ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বয়ঃপ্রাপ্তির পর তিনি তিন বেদে পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন। তারপর তিনি আচার্য হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। পাঁচশত শিষ্য তাঁর কাছে বিদ্যা শিক্ষা করত। এই পাঁচশত শিষ্যও মনোযোগের সঙ্গে অধ্যায়ন করে বিশেষ জ্ঞান লাভ করেছিল।

কিন্তু এইসব শিষ্যদের গর্ব জন্মায়। তারা ভাবলেন, আচার্য যা জানেন আমরাও তা জানি। বিদ্যা সবন্ধে আচার্যের সঙ্গে আমাদের কোন পার্থক্য নেই।

এই গর্বের বশবর্তী হয়ে তারা আর আচার্যের কাছে বিদ্যাভ্যাস করতে গেল না। আচার্যের প্রতি শিষ্যদের কি করনীয় তাও করল না।

একদিন বোধিসত্ত্ব এক বাদরীবৃক্ষের তলায় বসেছিলেন। এমন সময় তাঁর শিষ্যগন তাকে উপহাস করার জন্য সেখানে গিয়ে নখ দিয়ে বৃক্ষে আঘাত করে বলল, এই বৃক্ষটি নিঃসার অর্থাৎ এতে কোন সার নেই।

বোধিসত্ত্ব বুঝতে পারলেন, শিষ্যগণ তাকে লক্ষ্য করেই উপহাস করছে। তিনি বললেন, শিষ্যগণ আমি তোমাদের একটি প্রশ্ন করব।
শিষ্যেরা বলল, বলুন, আমরা উত্তর দিচ্ছি।

বোধিসত্ত্ব তখন একটি গাথার মাধ্যমে বললেন, কালের হাতে সবকিছুর লয় হয়। কাল সবকিছুকেই গ্রাস করে নিজেকেও ভক্ষন করে। অর্থাৎ কাল প্রতি মুহূর্তে লয়প্রাপ্ত হয়। কাল অতিবাহিত হয়। কিন্তু কে কালকে গ্রাস করে বলতে পার?

এই প্রশ্ন শূনে শিষ্যদের কেউ উত্তর দিতে পারল না। বোধিসত্ত্ব তখন তাদের বললেন, মনে ভেব না, এই উত্তর বেদের মধ্যে আছে। তোমরা ভাব যে, আমি যা জানি, তা তোমরাও জান। এই গর্বে তোমাদের বাদরীবৃক্ষের দশা হয়েছে। অর্থাৎ বাইরে সুন্দর হলেও বাদরীবৃক্ষ ভিতরে সারবান নয়, তেমনি তোমরাও বাইরে জ্ঞানের বড়াই করলেও ভিতরে অন্তঃসারশূন্য। প্রকৃত জ্ঞান এখন লাভ হয়নি। যাই হোক, তোমরা এখন যাও, আমি তোমাদের সাতদিন সময় দিলাম। চিন্তা করে দেখ।

শিষ্যগণ আপন আপন স্থানে চলে গেল। সপ্তাহকাল চেষ্টা করেও আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারল না। তাঁরা বোধিসত্ত্বের কাছে গিয়ে প্রণাম করে বসল। বোধিসত্ত্ব বললেন, কিহে উত্তর পেলে?

শিষ্যগণ লজ্জিত হয়ে বললেন, না মহাশয়, আমরা এই প্রস্নের কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না।

বোধিসত্ত্ব তখন বললেন, অনেক মানুষ দেখেছি, তাদের গলা আছে, মাথা আছে, চখ আছে কিন্তু কিন্তু দুটি কান আছে কিনা সন্দেহ। তোমরা বর অপদার্থ। তোমাদের কানে ছিদ্র আছে, কিন্তু অন্তরে প্রজ্ঞা নেই।

এরপর বোধিসত্ত্ব নিজে সে প্রশ্নের উত্তর দিলেন। যারা কামনার বশীভূত, তারাই কালের অধীন। সকল বস্তু ও জীব স্থান কাল, কার্যকারণের বন্ধনে আবদ্ধ কিন্তু যাঁরা সব কামনা বাসনা জয় করে নির্বাণ লাভ করেছেন, তাঁরা কালের অধীন নন, কাল তাদের গ্রাস বা ভক্ষন করতে পারেন না। এইভাবে জন্ম জরা মৃত্যুকে জয় করে তাঁরা কালকেও জয় করেন।

বধিসত্তের কথা শূনে তারা স্বীকার করল, ওহো আচার্যের কি জ্ঞান কি আশ্চর্য ক্ষমাতা!

এই বলে তারা আচার্যকে প্রণাম করে ক্ষমা প্রার্থনা করল। তাদের দর্প চূর্ণ হল। তারা যথারীতি আচার্য থেকে বিদ্যাভ্যাস ও তাঁকে সেবা করে যেতে লাগল।

সুত্র ঃ জাতকসমগ্র

error: Content is protected !!