Bangla Story
সুমন মালাকারের কাহিনী
‘ সেই কর্ম করাই ভাল ‘ ইত্যাদি ধর্মদেশনা ভগবান বুদ্ধ বেণুবনে অবস্থানকালে সুমন নামক মালাকারকে উদ্দেশ্য করিয়া ভাষণ করিয়াছিলেন ।
সে নাকি প্রত্যহ প্রাতকালেই রাজা বিম্বিসারকে ৮টি পুষ্পের তোরা দিয়ে সেবা করিয়া আটটি কাষাপন লাভ করিত । একদিন সে ফুল লইয়া নগরে প্রবেশ করা মাত্রই ভগবান মহাভিক্কুসংগ পরিবৃত হইয়া
স্বরবর্ণরশ্মি বিচ্ছুরিত করিতে করিতে মহা বুদ্ধ প্রভাবে মহা বুদ্ধলিলাই ভিক্ষার জন্য নগরে প্রবেশ করিলেন । ভগবান কখন ও কখন ও স্বরবর্ণরশ্মি চীবরের দ্বারা আচ্ছাদিত সাধারণ পিন্ডপাতিকের ন্যায়
বিচরণ করেন , যেমন ঃ– তিনি ত্রিশ যোজন পথ অতিক্রম করিয়া অঙ্গুলিমালের সহিত সাক্ষাত করিয়াছিলেন । কখনও বা স্বরবর্ণরশ্মি বিচ্ছুরিত করিতে করিতে কপিলাবস্তুুতে প্রবেশ করিয়াছিলেন ।
তদ্রুপ সেইদিনও তিনি শরীর হইয়তে স্বরবর্ণরশ্মি বিচ্ছুরিত করিতে করিতে মহাবুদ্ধ প্রভাবে মহা বুদ্ধলিলায় রাজগৃহে প্রবেশ করিলেন । মালাকার ভগবানের রত্নঘ্যসদৄশ শরীর দেখিয়া বত্রিশ প্রকার মহাপুরুষ লক্ষণ এবং অশীতি–অনুব্যঞ্জন সমন্নিত শরীর সৌভাগ্য অবলোকন করিয়া প্রসন্নচিত্ত হইয়া – আমি বুদ্ধের জন্য কি করতে পারি ? ইহা চিন্তা করিয়া অন্য কিছু না দেখিয়া – এই ফুল্গুলি দ্বারা ভগবান কে পুজা করিব ভাবিয়া পুনরায় চিন্তা করিল – এইগুলিত রাজার নিত্য সেবার ফুল । এইগুলি না পাইলে রাজা আমাকে বন্দি করিতে পারেন, এখন আমি কি করি ? । তখন তাহার মনে হইল যে – রাজা আমকে বন্দি করুক বা হত্যা করুক বা রাজ্য হইতে বিতারিত করুক । তিনি আমকে কি দিতে পারেন ? বড়জোর আমার বাচিয়া থাকার মত ধন দিবেন । কিন্তু বুদ্ধ পুজা করিলে তাহা অনেক কল্পকোটি জন্মে আমার হিত ও সুখের কারন হইবে । ইহা চিন্তা করিয়া সে নিজের জীবন তথাগতকেই উৎসগ করিলেন । সে যতবার না আমার প্রসন্ন চিত্ত না হয় ততক্ষন বুদ্ধ পুজা করিব । এই ভাবিয়া হ্রদতুষত ও উৎপুল্ল হইয়া ভগবান বুদ্ধকে পুজা করিল । কি ভাবে ? প্রথমে সে দুই মুষ্টি ফুল তথাগতের উপরে ছড়াইয়া দিল , সেইগুলি বুদ্ধের মস্তকোপরি বিতানের ন্যায় অবস্থান করিল । আরও দুই মুষ্টি ফুল নিক্ষেপ করিল । সেইগুলি বুদ্ধের দক্ষিণ হস্ত পাশে মালাপটের আবরণের ন্যায় অবতরণ করিয়া অবস্থান নিল । আরও দুই মুষ্টি ফুল নিক্ষেপ করিল । সেইগুলি বুদ্ধের পশ্ছাৎ দিকে অবতরণ করিয়া অবস্থান নিল । আরও দুই মুষ্টি ফুল নিক্ষেপ করিল । সেইগুলি বুদ্ধের বাম দিকে অবতরণ করিয়া অবস্থান নিল । এইভাবেই আটটি তোড়া আট মুষ্টি হইয়া তথাগতের চতুর্দিকে আচ্ছাদিত করিল । শুধু সম্মুখ গমনদ্বারই অবশিষট ছিল । পুশপস্মুহের ব্রিন্তসমুহ অন্তরমুখী এবং প্ত্রসমুহ বহিমুখী হইল । মনে হইতেছিল ভগবান যেন রজতপটের দ্বারা পরিক্ষিত হইয়া গমন করিতেছেন ।পুস্পসমুহ অচিত্তক হইলেও সচিত্তকবং আচ্রণ করিতেছিলেন । অথারত কোনো পুস্প পতিত না হইয়া বুদ্ধের সঙ্গেই চলিতে লাগিল । ভগবান বুদ্ধ স্তিত হইলে ইহারাও স্তিত হইল । বুধের শরীর হইতে সহস্র বিদ্যুল্লতার ন্যায় রস্মিসমূহ নির্গত হইতেছিল। সম্মুখ হইতে , পশছাৎ হইতে , দক্ষিণ হইতে , বাম দিক হইতে এবং শীষওদেশ হইতে নিরন্তর নির্গত রস্মিস্মুহের কোনোটাই সম্মুখ স্থান দিয়া অদৃশ্য না হইয়া সকলেই বুদ্ধাকে তিন বার প্রদক্ষিন কইরা তরুণতালস্কন্দের আকার সদৃশ হইয়া সম্মুখ দিকেই ছুটিয়া চলল । ইহাতে সমস্ত নগর প্রকম্পিত হইল । নগরের অভ্যন্তরে নয় কোটি এবং নগরের বাহিরে নয় কোটি এই অষটাদশ কোটি লোকের মধ্যে কোনও পুরুষ বা কোনও স্ত্রী ভিক্ষান্ন লইয়া গৃহ হইতে বের হই নাই এমন একজন ও ছিল না । সিনহনাদ করিতে করিতে মহতি জনতা সহস্র সহস্র চেলী উতক্ষেপন করিয়া বুদ্ধের পুরুভাগে অগ্রসর হইল ।
ভগবান বুদ্ধ ( সুমন ) মালাকারের গুন প্রকট করিতে ত্রিগাবুত প্রমান নগরে ভেরিবাদন করিয়া যেন পথ দিয়া চলিয়াছেন, মালাকারের সকল শরীর পঞ্ছবন্ের প্রীতিতে পরিপূর্ণ হইল ।
সে কিছুক্ষন তথাগতের সঙ্গে যাইয়া বুদ্ধরশ্মির অন্তঃপ্রবিস্ট হইয়া যেন সিন্ধুররঙে নিমজ্জিত হইয়া বুদ্ধকে স্ততি ও বন্দনা করিয়া শূণ্যহস্তেই গৃহে ফিরিল । তাহার ভার্যা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল –
‘ফুল কোথায় ?’
‘আমি বুদ্ধকে পুজা করিয়াছি । ’
“রাজাকে এখন কি করিবে ?”
রাজা আমাকে হত্যা করুক বা রাজ্য হইতে বিতারিত করুক। আমি জিবনের বিনিময়েই বুদ্ধকে পুজা করিয়াছি । আমি এমন পুজা করিয়াছি যে সমস্ত ফুল্গুলি অস্টবিস্ট হইয়াছিল । মহতী জনতা সহস্র সহস্র প্রকার উচ্চ শব্দ করিতে করিতে বুদ্ধের সহিত গমন করিতেছে । তুমি যে বহুলোকের উচ্চ শব্দ শুনিতেছ তাহা ওই শব্দই । তখন তাহার ভার্যা ছিল অতি মূর্খ । তাই কোন প্রকার আলৌ্কিকত্বে বিশ্বাস না করিয়া রাগান্বিত হইয়া তাহাকে গালমন্দ করিল —
রাজারা হইতেছেন চন্ডাল । একবার ক্রূব্দ হইলে হস্তপাদাদি ছেদনের দ্বারা বহু অনর্থ ঘটাইতে পারেন । তোমার কৄ্তকর্মের জন্য আমারও অনর্থ হইবে । এইভাবে গালমন্দ করিয়া পুত্রকন্নাদের সঙ্গে লইয়া রাজকূলে গেল । রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন – কি হইয়াছে ?
মহারাজ, আমার স্বামী আপনার সেবার ফুল দিয়া বুদ্ধকে পুজা করিয়া শূন্য হস্তে গৃহে ফিরিয়াছে । আমি জিজ্ঞাসা করিলাম – ফুল কোথায় ? সে তখন আমাকে এইরুপ বলিল । আমি তখন তাঁহাকে গালমন্দ করিয়া বলিয়াছি –
রাজারা হইতেছেন চন্ডাল, একবার ক্রূব্দ হইলে হস্তপাদাদি ছেদনের দ্বারা বহু অনর্থ ঘটাইতে পারেন । তোমার কৄ্তকর্মের জন্য আমারও অনর্থ হইবে । এই বলিয়া তাঁহাকে ত্যাগ করিয়া এখানে আসিয়াছি । তাহার কৄতকর্ম সুকৄত হউক বা দুষ্কৃত হইক, তাহার জন্য সেই দায়ী । মহারাজ আমি তাঁহাকে ত্যাগ করিয়া চলে আসিয়াছি ।
বুদ্ধের প্রথম দর্শনেই স্রোতাপত্তিফল প্রাপ্তি শ্রদধাবান প্রসন্ন আযশ্রাবক রাজা তখন চিন্তা করিলেন– “অহো” এই স্ত্রীলোকটি কি মূর্খ ! এইরুপ গুণের প্রতিও শ্রদ্ধা উৎপাদন করিতেছেনা ! তিনি ক্রোধের প্রতিও শ্রদধা উৎপাদন করিতেছেনা ! তিনি ক্রোধের ভাব দেখাইয়া বলিলেন–
মা, বল কি ? আমার সেবার ফুল দিয়া সে বুদ্ধকে পুজা করিয়াছে ?
হ্যাঁ মহারাজ
তুমি তাঁহাকে ত্যাগ করিয়া ভালই করিয়াছ । আমার ফুল দিয়া বুদ্ধ পুজা করার শাস্তি তাঁহাকে পাইতেই হইবে । এই কোথা বলিয়া তাঁহাকে বিদায় দিয়া দ্রুতবেগে বুদ্ধের নিকট যাইয়া বন্দনা করিয়া বুদ্ধের সুঙ্গেই বিচরণ করিতে লাগিলেন ।
বুদ্ধ রাজার চিত্ত প্রসন্নতার কথা জানিয়া যে বিথিতে ভেরীবাদ্য হইতেছে ঐ বিথী দিয়া নগরে প্রবেশ করিয়া রাজার গৃহদ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। রাজা (বুদ্ধের) ভিক্ষাপাত্র লইয়া বুদ্ধকে নিজগৃহে প্রবেশ করিবার বাসনা করিলেন। বুদ্ধ রাজাঙ্গনেই উপবেশন করিবার উপক্রম করিলেন। রাজা ইহা বুঝিতে পারিয়া ততক্ষনাৎ আদেশ দিলেন– “এখানে মন্ডপ প্রস্তুত কর ”। সেই মুহূর্তেই মন্ডপ প্রস্তুত হইল । ভিক্ষুসঙ্গের সঙ্গেই বুদ্ধ সেই মন্ডপে উপবেশন করিলেন। বুদ্ধ কেন রাজ প্রসাদে প্রবেশ করিলেন না ? কারণ বুদ্ধ চিন্তা করিয়াছিলেন –
আমি যদি রাজপ্রসাদে প্রবেশ করিয়া উপবেশন করি মহতী জনতা আমার দর্শন পাইবে না । মালাকারের গুণকথাও প্রকাশ পাইবে না। আমি রাজাঙ্গনে উপবেশন করিলে সবাই আমার দর্শন পাইবে । মালাকারের গুনও প্রকাশিত হইবে । গুণবানদের গুণ বুদ্ধগণই প্রকট করিতে পারেন । অনান্যরা গুণবানদের গুনকথা বলিতে ঈর্ষাপরায়ণ হন । চারি পুষ্পপট্ট চতুর্দিকে বর্তমান ছিল । মহতী জনতা বুদ্ধকে পরিবেষ্টিত করিয়াছিলেন । রাজা বুদ্ধ ও ভিক্ষুসঙ্গদের উৎকৃষ্ট আহার দ্বারা পরিবেশন করিয়াছিলেন । বুদ্ধ আহার কৃত্য সম্পাদন করিয়া দানানুমোদন করত পূর্ববৎ চারিটি পুষ্পপট্টের দ্বারা পরইক্ষিপ্ত করিয়া সিংহনাদ করিতে করিতে মহাজনের দ্বারা পরিবৃত হইয়া বিহারে চলিয়া গেলেন । রাজা বুদ্ধের অনুগমন করিয়া ফিরিয়া আসিয়া মালাকারকে ডাকাইয়া বলিলেন–
তুমি আমার জন্য আহ্রত পুষ্প দিয়া বুদ্ধের পুজা কেন করিয়াছ ?
মালাকার বলিল– “মহারাজ , আপনি আমাকে হত্যা করুন বা রাজ্য হইতে নির্বাসিত করুন ,আমি আমার জিবনের বিনিময়ে বুদ্ধ পুজা করিয়াছি ”।
রাজা “আপনি মহাপুরুষ ” এই বলিয়া তাঁহাকে আটটি হস্তী , আটটি অশ্ব , আটটি দাস , আটজন দাসি , অস্টসহস্র কারযাপণ মুল্যের মহাপ্রসাদন সমুহ রাজপ্রাসাদ হইতে বাহির করিয়া সরবালঙ্কারবিভূষিত আটজন নারী এবং আটটি গ্রাম – এইভাবেই প্রত্যেক কিছু অষট অষট করিয়া দান করিলেন ।
আনন্দস্থবির চিন্তা করিলেন– অদ্য প্রাতকাল হইতে সহস্র সিনহনাদ এবং সহস্র চেলোক্ষেপ হইতেছে , “ মালাকারের কি আশ্চর্য কর্ম বিপাক ! “ তিনি বুদ্ধকে জিজ্ঞেস করিলেন। বুদ্ধ তাঁহাকে বলিলেন – আনন্দ, এই মালাকার সামান্য পুণ্যকাজ করিয়াছে মনে করিও না ।
সে জিবনের বিনিময়ে আমাকে পুজা করিয়াছে । সে এইবাবেই আমার প্রতি চিত্ত প্রসন্ন করিয়া –
শতসহস্র কল্প দুর্গতি প্রাপ্ত হইবে না । এই কর্মফলে সে দেবমনুষ্য লোকে বিচরন করিতে করিতে শেষে সুমন নামক প্রত্যেক বুদ্ধ হইবেন ।
বুদ্ধ বিহারে যাইয়া যখন গন্ধকুটিতে প্রবেশ করিতেছিলেন তখন সেই পুষ্পরাশি (বিহারের ) দ্বারকোষ্টকে পতিত হইল। সেই সময়ে ভিক্ষুগণ ধর্মসভায় এই কথা উত্থাপন করিলেন– “অহো কি আশ্চর্য মালাকারের কর্ম ” নিজের জিবনের বিনিময়েই ও সে বর্তমান বুদ্ধকে পুষ্পের দ্বারা পুজা করিয়া সেই মুহূর্তে সর্বাস্টক(সমস্ত কিছু আটটি করিয়া ) লাভ করিলেন । বুদ্ধ গন্ধকুটি হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া তিন প্রকার গমনের অন্যতর গমনের দ্বারা ধর্মসভায় যাইয়া বুদ্ধাসনে উপবেশন করিয়া – হে ভিক্ষুগ্ণ , তোমরা কি কথা আলচনা করিতেছ ?
এই বিষয়ে ভন্তে ।
হ্যাঁ ভিক্ষুগণ জেই কর্ম করার পরে পশ্চাত্তাপ হই না, যতবারই মরণ করে (ঐ কর্মের কথা ) ততবারই মনে আনন্দের সঞ্চার হই । এইরুপ কর্ম সম্পাদন করা উচিৎ। – এই বলিয়া বুদ্ধ সমবধান করিয়া ধর্ম দেশনাচছলে এই গাথা ভাষণ করিলেন –
যেই কর্ম করিয়া লোকের অনুতাপ হয় না (অর্থাৎ যাহা সুখদায়ক)এবং যাহার ফল প্রফুল্ল মনে ভোগ করিতে পারা যায় , সেই কর্ম সম্পাদন করাই ভাল ।
যাহা করিয়া যে কর্ম দেবমনুষ্য সম্পত্তি প্রদানে সমথ্র সেই সুখোদ্রেককর কর্ম করিয়া অনুতাপ করিতে হই না, এমন কি ইহজগতে (সেই কৃতকর্ম) যতবারই অনুসরন করা যায় ততবারই প্রিতিবেগে প্রতিত সন্তুষ্ট এবং সৌ্মনস্যবেগে সুমন হইয়া ভবিষ্যতে প্রীতি – সৌমনস্যজাত হইয়া কর্মবিপাক ভোগ করে, সেই কর্ম করাই ভাল । — সাধু ।
Founder and Editor : Engr. Anik Barua
ka-95/5,Noddha,Gulsan,Dhaka1212. Mobile : +8801845839031 / +8801407666587